জলধর সেনের আত্মজীবনী
লিপিকার
শ্রীনরেন্দ্রনাথ বত +
পবিশিষ্টে
শ্রীহেমেন্দ্রপ্রসাথ ঘোষ
লিখিত “জলধব সেন?
৫881045 (২ 10১ বি 9: ঢু সং 7/ ১৮, টে ৩ +48578৬০
প্রবর্তক পাবলিশার্স ৬১১ বহুবাজার স্ত্রী, কলিকাতা-১২
বৈশাখ £ ১৩৬৩ এপ্রিল 2 ১৯৫৬
মূল্য : তিন টাকা
প্রবর্তক পাবলিশার্স, ৬১ বহুবাজার প্রা, কলিকাতা৷ হইতে শ্রীরাঁধারমণ চৌধুরী বি* এ. কর্তৃক প্রকাশিত এবং বসাঁক ট্রেডিং কোং, ৮৩ বরদা বসাক স্ত্রী, কলিকাতা -৩৬ হইতে শ্রীপবনচন্দ্র বসাক কর্তৃক মুদ্রিত।
ভূমিক।
“জলধর সেনের আত্মজীবনী” ১৩৫১ সালের বৈশাখ মাসে পপ্রবর্তক” মাসিক পত্রিকায় যখন প্রথম বাহির হইতে আরম্ভ হয়, তখন নিবেদনে বলিয়াছিলাঁম £
“বিশ বৎসর পূর্বে, পরলোকগত সাহিত্যপাধক রায় জলধর সেন বাহাছরের- আমাদের সকলের অতিপ্পরিয় শ্রদ্ধেয় “দাদা”র, ৬৫তম জন্মদিনে “কলিকাত। হোটেলে” একটি প্রীতিভোজের আয়োজন করা হইয়াছিল । দাদার সবিশেষ অনুরাগী কয়েকজন সাহিত্যকবন্ধু তাহাতে উপস্থিত ছিলেন। সেইদিন দাদাকে অনুরোধ জানাই যে, তাহার জীবন-কথা তাহীরই মুখ হইতে শুনিয়া আমি লিপিবদ্ধ করিব। দাদা তখন কোন উত্তর প্রদান করেন নাই-_একটু হাঁসিয়াছিলেন মাত্র । তাহার পর কয়েক দিন ধরিয়। বিশেষভাবে অহন্থরোধ জানাইতে, তিনি শেষে স্বীকৃত হ'ন। কিন্তু বলেন যে, যাহা! লিপিবদ্ধ করা হইবে, তাহা তাহার জীবনকালে প্রকাশিত হইতে পারিবে না । আমি তাহাতেই সম্মত হই এবং ইংরাজী ৯১।২৩ তারিখে ত্ীহার জীবন-কথা প্রথম লিপিবদ্ধ করিতে আরম্ত করি।
নানা বিষয়-কর্ণে ব্যন্ত থাকায় এবং ছুই জনে নিশ্চিন্তে বসিবার সেরূপ স্থধোগ না ঘটায়, লেখা আদৌ নিয়মিত ভাঁবে অগ্রসর হয় নাই। ১৯২৯ এর শেষ পর্্যস্ত ২১ দিন মাত্র লেখার জন্ত উভয়ে মিলিত হইতে পারিয়াছিলাম। তাহার পর সাড়ে তিন বৎসর উহ একেবারে বন্ধ যাঁয়। ১৯৩৩ ও ১৯৩৪ থুষ্টাব্দে আবাঁর পাঁচ দিন লিখিতে সমর্থ হই ।
[৪ 3
শেষ জীবনে 'দাঁদা” ক্রমশঃ অন্ুস্থ ও দুর্বল হইয়। পড়িলেও, চিকিৎসকের ব্যবস্থানুযায়ী প্রতিসন্ধ্যাঁয় ট্রামে করিয়া বেড়াইতে বাহির হইতেন এবং কালীথাট--মনোহরপুকুরে যাইয়া কিছুক্ষণ তীহার পরম ন্নেহাম্পদ এবং আমার একজন অন্তরঙ্গ সুহৃদ শ্রীযুক্ত গৌরীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসায় বিশ্রাম লইতেন। সেই সময়ে গৌরীবাৰ্ আমার অনুরোধে আরব্ধ কাধ্যের বাকিটুকু সমাঁধা কবিবাঁর ভার ৫*ৎ কবেন । আমরা দাদীর বাল্যের, কৈশোরের এবং প্রথম যৌবনেব কথ?” তাহার .বিবৃতিমত যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করিয়াছি এবং তিনি তাহা! গ করিয়া বলিয়াছিলেন--“আমাব প্রথম জীবনের কথাই তোমাদের বশে গেলাম। পরবর্তী জীবনের কথা অনেক বন্ধুবান্ধবই ভাল করে জানেন তাদেব কাছ থেকে সে সব সংগ্রহ করা৷ তোমাব পক্ষে কষ্টকর হবে না
পাঁচ বৎসর অতীত হইল, সর্ববজনপ্রিয় শ্রদ্ধের জলধর ছ ৮ পরুলোকগত হইয়াছেন। এখন আর তাহার জীবনকথা প্রক ' বাঁধা নাই। প্রবর্তক কর্তৃপক্ষেব বিশেষ আগ্রহে সাহিত্যসাৎ জলধর সেনের প্রথম জীবনের কথা সানন্দে তীহাদের সুদ পত্রিকায় প্রকাশের জন্য প্রান কবিলাম।” « |
ক্রমশঃপ্রকাশ্ঠ “জলধর সেনেব আত্মজীবনী” ১৩৫২ সালের চেত্র মী. প্রবর্তকে? শেষ হয় । তখনই প্রবর্তক পার্িশাস+ ইহাকে পুস্তকাকা"?, প্রকাশ করিতে ইচ্ছা প্রকাশ কবেন এবং আঙ্গি সানন্দে সম্মতি দান করি। কিন্ত নানা কারণে সুদীর্ঘ দশ বৎসর কাদে মা £ কার্যে পরিণত করা সম্ভবপর হয় নাই । সম্প্রতি ' প্রধন্তক” পঞ্িকা সম্পাদক ও পাব্রিশিং বিভাগের অধ্যক্ষ গ্রীতিভী্গন বন্ধ শ্রীবাধাবমণ চৌধুরীর প্রচেষ্টায় পুমস্তকথানি বাহির হইল, সেজন্ত আমি তাহার দিক বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ রহিলাম।
[ € 1]
সুসাহিত্যিক, সাংবাদিকগ্রবর শ্রীযুক্ত হেসেন্্রপ্রসারদ ঘোষ মহাশয় আমার বিশেষ অনুরোধে, 'জলধর সেন” শীর্ষক একটি তথ্যপূর্ণ ও মূল্যবান প্রবন্ধ দিয়া আমাকে খণী ও পুস্তকের গৌরব-বর্ধন করিয়াছেন। জীবনে তাহার এই খপ পরিশোধের সাধ্য আমার নাই। ূ
ন্নেহভাজন বন্ধু শিল্পী শ্রীকাঞ্চন মুখোপাধ্যায় পুরাতন ফটো! হইতে অতি যত্ধ লইয়া পুস্তকের ব্লক কয়খানি করিযা! দিষাছেন। সেজন্য *'হাকে অমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাইতেছি।
“দাদার আত্মজীবনীর সঙ্গে পরিশিষ্টে (১) তাহার একটি সংক্ষিপ্ত গ*বন"কথা, (২) ত্বীহার সংবর্ধনার বিবরণ এবং (৩) শ্রীহেমেন্্ সাদ ঘোষ লিখিত “জলধর সেন প্রবন্ধ যোগ করিয়া দিলাম ।
থমটি “দাদা”র ব্বোহিক পণ্ডিত অমূল্যচরণ ঘোষ বিদ্যাভূষণ মহাশয়ের “বং দ্বিতীয়টি “কায়স্থ-পত্রিকা” সম্পাদক মহাশয়েব অনুরোধে লিখিয়। '*্বাছিলাম। ভবিষ্যতে যদ্দি কেহ সাহিত্যসাধক জলধর সেনের “ চটি সম্পূর্ণ জীবনী রচনায় প্রবৃত্ত হন, তাহা হইলে তিনি বর্তমান পুস্তক, »₹ ব ব্রজমোহন দ্বাস সম্পার্দিত “জলধব কথা”, বঙগীয়-সাহিত্য-পরিষদ* ” তত প্রকাশিত “জলধর সেনের জীবনী” এবং “দাদা”র নিজের লিখিত ও * দম্পা্দিত “ভারতবর্ষ” পত্রিকায়, ১৩৪২ কান্তিক হইতে ১৩৪৩ জো + স্ত প্রকাশিত ৮ জন প্রীতঃম্মরণীয় ব্যজির শ্থৃতি-তর্পণ- লেখাগুলির ভিতর ইতে তাহার জীবনী রচনার উপাদীন সংগ্রহ করিতে প1রিখেন।
দিশেদে অঙ্গার নিবেদন, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে প্রদত্ত “দাদার সন্দ্বীধণ” ১. (বৈশাখ ১৩৪২ ) বিষয়টি পরিশিষ্টে বাদ পড়িয়া! গিয়াছে” ৫০ “মি, 2খিত । 'দাঁদা?র শেষ বয়সে প্রায় ১৫ বৎসরকাঁল ধরিয়া আমি তীহম মিত্যসঙ্গী ছিলাম, এজন্ত নিজেকে বিশেষ ভাগ্যবান
[ ৬ ] মনে করি। বর্তমানে রোগে এরং শোকে দুর্বল দেহ ও মন লইয়া আমি “জলধর সেনের আত্মজীবনী” পুস্তকের প্রুফ ভাল করিয়। দেখিয়। উঠিতে পারি নাই, সেজন্য পুস্তক মধ্যে কিছু ভূল রহিয়া যাওয়ার সম্ভাবনা । যাহা হউক, সর্ধজনপ্রিয় জলধরদাদার এই আত্মজীবনী দেশবাসীর নিকট সমারূত হইবে, ইহাই আশা করি।
৪৫, আমহাষ্ট রা, শ্রীনরেজ্জনাথ বনু কলিকাতী-৯ ১ল। বৈশাখ ১৩৬৩
সূচী
ভূমিকা [৩]-[৬] আত্মজীবনী ১-১৩৪ পরিশিষ্ট £ (১) জলধর সেনের সংক্ষিপ্ত জীবন-কথ। ১৩৭--১৪৩ ৮ (২) জলধর সংবদ্ধন। ১৪ ১-২৪৪
(৩) জলধর সেন ৯৪৫-*১৫৪
জলধর সেনের আত্মজীবনী
[ আমি কিছুতেই বুঝতে পাঁরছি না নরেন, কেন তোমার এ দুর্দতি হল। জীবনকাহিনী তাহাদদেরই লিখতে হয়, ধারা জম্মগ্রহণ করে? দেশের ও দশের অনেক কাজ করে; গিয়েছেন, যাদের জল্মগ্রহণে দেশের মুখ, বংশের মুখ উজ্জল হয়েছে । আমার জীবনকাহিনীতে এ সকলের কিছু পাবার মোটেই সম্ভাবনা নেই । সত্যিই বল্ছি, বিনয়ের কথা নয়, মোটে কিছু নেই। তবে একটি কথা আছে, আমার জীবন ঘটনাবহুল । আমার জীবনে ঘোরতর দারিব্র্যের সহিত বিপুল সংগ্রাম; আমার জীবনের আগ্ভোপাস্ত দুঃখের কাহিনী ; তাই বদি শুনবার ইচ্ছা হয়ে থাঁকে তোমার, তাহলে শুনতে পার, লিখে নিতে পার। আমার মনে হ্য, তাতে হয়ত তোমার একটু উপকার হতে পারে, আর হয়ত জগতে আমারই মত হতভাগ্য দীন দরিদ্র যাঁরা, তাদের কাছ থেকে সমবেদনা লাভ করা যেতে পারে।
শিক্ষার কথা বল্ছ_--আমাঁর জীবনকাহিনীতে শিক্ষালাভের কোন কথা নেই, তা” যথেষ্ট বিনয় প্রকাশ করেও আমি বল্তে পারি না। সেটা এই যে, দরিদ্রের জীবন সংগ্রামের কাহিনী শুনে আমারই মত দরিদ্র কেউ কিঞ্চিৎ আশা! ভরস! পেতে পারে । হয়ত, তাঁরাও মনে করতে পারে, দারিক্র্য দ্বণাঁর কথা নয়, দাঁরিদ্র্যেরও একটা গৌরব আছে । এই পর্য্যস্তই ভূমিকা, এখন জীবন কথা আরম্ভ করি ]
৮ জলধর নেনের আত্মজীবনী "
১২৬৬ সালের ১ল৷ চৈত্র, (ইং ১৩ই মার্চ ১৮৬০) মঙ্গলবার আমার জন্মদিন। আমি পিতামাতার প্রথম পুত্র” প্রথম সন্তান নই। আমার পূর্বে ছুটী ভগ্নী জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বড়দিদি অনেকদিন বেঁচে ছিলেন, তাঁর পরের মেয়েটি ছ-মাসের হয়ে মারা যাঁয়। তাঁর পরেই আমার জন্ম। আমার কথা বলবার আগে আমার বংশ পরিচয় একটু দি।
'আমাদের বাড়ী নদীয়া জেলার অন্তর্গত কুমারখালী গ্রামে । আমি যখন জন্মাই, তখন আমাদের গ্রাম নদীয়া জেলার মধ্যে ছিল না, পাবনা পজলায় ছিল। আমার বয়স যখন আট কিক নয় বংসর, তখন নূতন ক'রে জেল! গঠন হয়, দেই থেকে আমাদের গ্রাম নদীয়া জেলাতুক্ত হয়। আমার বেশ মনে আছে--আমার £মজদাদা পাবনায় ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন । আর তার কিছুদ্দিন পরে আমার বড়দাদ। কৃষ্ণনগরে এন্ট৭ন্প পরীক্ষা দিতে গিষেছিলেন।
আমার পিতামহের নাম ৬গদ্াাধর সেন। আমরা দক্ষিণ রাঁট়ীষ কায়স্থ । আমার প্রপিতীমহ কুমারখাপির ইষ্ট-ইওিয়া কোম্পানীর রেশম- কুঠীর দেওয়ানীর কাজ পেষে কুমারখালিতে গিয়েছিলেন। সেই থেকেই তারা সেখানকার স্থায়ী অধিবাসী হয়ে পড়েন। তাদের আদি নিবাস ছিল চব্বিশ-পরগণাঁৰ বারাসতের নিকট দেগঙ্গ গ্রামে । তাই আমরা এখনও পরিচয় দি, আমর! দেগঙ্গের সেন, আমরা অনন্তের সম্তান। দেগঙ্গে বা অন্ত কোন স্থ।নে আমাদের জ্ঞাতি কেহ আছেন কি না, তা” আমি মোটেই জাঁনতাম না। অল্পদিন হ'ল কথা- প্রসঙ্গে জানতে পারলাম যে, প্রসিদ্ধ শিল্পী, আমার সোদরোপম শ্রীমান্ যতীন্দ্রকুমার সেন আমাদেরই জ্ঞাতি। এমন জ্ঞাতি হয়ত অনেক স্থলে আরও আছেন, সে খোজ আমি রাখিনি ।
আমার পিতামহের ছুই পুত্র ও এক কন্তা ছিল। জ্যেষ্ঠ পুত্র
জালধর সেনের আগ্মজীবনী ও
স্বগীয় রামতন্ সেন, তিনি আমার জেঠীমহাশয় । আর কনিষ্ঠ পুত্র হলধর ফেন, তিনিই আমার পিতৃদেব। আমার পিতামহ তার পিতৃশ্রীদ্ধে যথীসর্বস্ব ব্যয় ক'রে সত্য সত্যই একেবারে ফকির হয়ে পড়েছিলেন। আষার জ্েঠীমহাঁশয়ের কাঁছে শুনেছি, সেই আাদ্ধের নাম দ্বিজদম্পতী শ্রান্ধ। তাতে বৃষোৎসর্গ প্রভৃতি ত করতেই হয়েছি, তা” ছাড়া এক ব্রাহ্গণকুমার ও এক ব্রাঙ্মণকুমারী এনে বিবাহ দিয়ে, ভূপম্পত্তি দাঁন ক'রে তাদের সংসারে প্রতিষ্ঠ) ক'রে দিতে হয়েছিল। এই শ্রীদ্ধেই আমার পিতামহ একেবারে কপর্দকহীন হয়ে পড়েন। তাঁর যা কিছু ধনসম্পন্তি ছিল, সমস্তই তিনি এই শ্রাদ্ধে ব্যয় ক'রে ফেলেছিলেন । সেই থেকেই আমাদের এই দারিক্র্যের হত্রপাত । পরিবারের গ্রাসাচ্ছাদনের কোন উপায় না দেখে, আমার জেঠা- মহাশয় রাজসাহী জেলার গালিমপুরের ওয়টসন কোম্পানীর রেশমের কি নীলের কুঠীর গোমস্তাগিরি চাকুরী নিয়ে চলে যান। সেই চাকুরী তিনি অনেকদিন করেছিলেন । আমার পিতার মৃত্যুর অব্যবহিত পরে গালিমপুর থেকে ফিরে এসে, আর তিনি চাঁকুরীতে যান নি। আমার পিতা সমাঁন্ধ বাঙ্গাল! লেখাপড়া শিখে এবং হিসাঁবকিতাবে দুরস্ত হয়ে, আমাদেরই গ্রামের রামমোহন প্রামাণিকের কাপড়ের দোকানে সামান্য চাকুরীতে প্রবেশ করেন। প্রথম প্রথম তার কাজ ছিল, দোকানে যারা কাঁপড় কিনতে আসত, তাদের তামাক সেঙ্গে দেওয়। আর দোকানে গোমস্তার ফরমায়েস মত তাকের উপর থেকে কাপড় নামিয়ে দেওয়া । তখন তিনি মাসে বেতন পেতেন দেড় টাকা, আর প্রত্যহ এক পয়সার জলখাবার । সকালে উঠে হাত- মুখ ধুয়ে তিনি দোকানে যেতেন, ১১1।০--১২টাঁয় বাড়ী ফিরতেন, তারপর আহারাদি শেষ করে' ছুটার সময়ে দোকানে যেতেন, ফিরতে
জলধর সেনের আত্মজীবনী
রাত্রি ৮।মটা বেজে যেত। কখন কখনও ১০ট। হ'ত। পূজার সময়ে বেচাকেনার ধুম পড়ে” গেলে, সারা রাত্রি দোকানে থাকতে হ'ত।
এই ভাবে কিছুদিন যাঁবার পর দেশে বিলাতী কাপড়ের আমদানী স্থুরু হ'ল। এর পূর্বে আমাদের দেশের কাপড়ের দোকাঁনগুলিতে মোটেই বিলাতী কাপড় বিক্রী হ'ত না। বাঁবা ষে দোকানে কাজ করতেন, সেই দোকানের মালিক রামমোহন প্র/মাঁণিক মহাশয় বখন শুনতে পেলেন যে, কলকাতাঁর বাজারে বিলাতী কাপড় আমদানী হচ্ছেঃ তা? সম্তা, তথন তিনি বিলাতী কাপড় আমদানী করার জন্টে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। কিন্ত সে সময় রেল হয় নি, আমাদের দেশ থেকে কলকাতায় যেতে হ'লে নৌকায় যেতে হয়, আর সেও একদিন ছু'দিনের পথ নয়। আমাদের গ্রাম থেকে কলকাতায় পৌছতে গেলে তখন ১৪।১৫ দ্রিন সময় লাগত, আর পথেও নান! বিপদের সম্ভাবন। ছিল। শুধু সম্ভাবনা কেন, অতি কম নৌকাঁধাত্রীই চোঁরডাকাতের হাত থেকে পরিক্রাণ লাভ ক'রে যেতে পারতেন । রাণাঁঘাটের বিশ্বনীথ- বাবু প্রসিদ্ধ ডাকাত ছিল। তার দলের ডাকনাম ছিল বিশে ডাকাতের দ্ল। বিশে বাগীীর দক্ষিণহম্ত ছিল বগ্ঠিনাথ। তাদের এমন দুর্দান্ত প্রতীপ ছিল যে, রাঁণীঘাটের চুর্ণীনদীর ভিতর দিয়ে যেতে অনেকেরই সর্বনাশ হয়েছে । এই ভয়ে তখনকার দিনে আমাদের গ্রাম থেকে কলকাতীয় যেতে কেউ বড় একটা সাহস করতেন না।
তখন আমাদের গীয়ের লোক মোটেই কলকাতায় ছিল না, এমন নয়। তারও একটু ইতিহাস আছে। আমাদের গ্রামটিতে ব্রাহ্মণ, কায়স্থ এবং অন্যান্ত জাত অনেক থাকলেও, সংখ্যায় বেশী ছিল এবং এখনও আছে তিলিজীতি। এদের সবায়েরই ধান-চালের কারবার ছিল--এখন যদিও অনেকে জমিদার হয়েছেন, বড় বড় চাকুরে,
জলধর সেনের আত্মজীবনী ৫
হয়েছেন, ডাক্তার হয়েছেন। আগে কিন্ত আমাদের গায়ের এই জাতের কেউ অপরের চাকুরী করত না। ষাকে নিতান্তই চাঁকুরী করতে হত, সে স্বজাতীয় কারও আড়তে বা মোকামে চাকুরী করত। এই তিলি মহাশয়দের ধানচালের মোকাম ছিল রাঁজসাহী, দিনাজপুর, বগুড়া, রংপুর প্রভৃতি জেলায় । এসব জেলায় যে চাল হ'ত এবং এখনও হয়, তার নাম মুগীচাল। কলকাতার হাটখোলা, কুমারটুলীতে এই মুগীচালের অনেক আঁড়ত ছিল। ধার! ধনী মহাজন, তাঁরা কখনও কলকাতাষ আসতেন নাঁ। চোর-ডাকাত এবং পথের কষ্টের জন্ত তার! কর্মচারীদের উপরই কলকাতার আড়তের ভার দিষে রাখতেন। কলকাতার এই সব আড়তে আসল ধনীর নাম প্রচারই হ'ত না। ধিনি প্রধান কর্মচারী বা গদীয়ান থাকতেন, তাঁরই নাম চলত, তাদেরই মান-সম্ত্রম-পশাঁর প্রতিপত্তি হত। আমাদের গ্রামের ষে কয়টা আড়ত সে সময়ে কলকাতায় ছিল, সেগুণির গদীয়ান আমাদেরই গ্রামেরই লোক ছিলেন। তারা৷ গোড়ায় রংপুর, দিনাজপুর, . বগুড়া প্রভৃতি স্থানের মোকামে কাজ করে” প্রবামী হতে অভ্যস্ত হয়ে, ভবে কলকাতায় আসতেন । তাঁরা প্রায়ই ২।৪।৫ বছর অন্তর দেশে আসতেন।
আমার পিতার মনিব রামমোহন প্রামাণিক মহাশয়ের মাথায় যখন বিলতী কাপড়ের ব্যবসার খেয়াল ঢুকল, তখন তিনি প্রথমে মনে করেছিলেন, কলকাতায় যে সব গদীয়।ন আছেন, তাঁদেরই মারফতে কাপড় আনাবেন। কিন্ত শেষে ভেবে দেখলেন যে, তা” হলে ব্যবসার স্থুবিধা হবে না। কারণ এ সকল গদীয়ানের একটা অখ্যাতি ছিল। তার! মনিবের লাভ যে দেখাতেন না তা” নয়, কিন্তু নিজের লাভ ষোল আনা দেখতেন। তাই অনেকেই ৫1 বছর গরীয়ানী করে' ২০২৫ হাজারের মালিক হয়ে বসতেন। কি করে যে এ ব্যাপার হত,
জলধর সেনের আত্ুজীবনী
তা” খুলে না লেখাই ভাল। রামমোহন প্রামাণিক মহাশয় পাকা ব্যবসাদার ছিলেন। তিনি শেষে স্থির করলেন যে, নিজেদের লোঁক পাঠিয়ে, তাকে কলকাতায় রেখে বিলাতী কাপড়ের কারবার আ'রস্ত করবেন। কিন্তু এই বিপদসক্কুল পথে জীবন হাতে করে” কলকাতায় আসতে কেউ রাজি হয় না। আমার বাবা পাঠশালায় লেখাপড়। শিখলেও, কায়েতের ছেলে ত বটে; শরীরেও তার অসাধারণ শক্তি ছিল, বিপদ্-আাপদও তিনি বড় একটা গ্রাহ করতেন না। তিনি তার মনিবকে বললেন, “আপনি যদি আমাকে উপযুক্ত মনে করেন, আমি কলকাতায় বেতে রাজি আছি।” প্রামাণিক মহাশয় প্রথম একটু ইতস্তত; করেছিলেন; কায়েতের ছেলে ব্যবসা বোঝে না, তার৷ কেরাণীগিরি, গোমস্তাগিরির উপযুক্ত, জমাঁথবচই তারা লিখতে পাঁরে। তাই আমার বাবাকে পাঠাতে প্রথমতঃ ইতস্তত: বোধ হয়েছিল । শেষে আর লোক না পেয়ে তিনি বাবাকেই কলকাতা পাঠান স্থির করলেন। বেতন স্থির হল ১৮১২ টাঁকা বছরে । তা” ছাঁড়া বাঁতায়াতের খরচ পাবেন, আর কলকাতায় যা বাসাখরচ লাগবে, তা সরকার থেকে দেওয়া হবে। এই ব্যবস্থ। ষখন ঠিক হয়ে গেল, তখন আমার জেঠাইমার মুখে শুনেছি, আমাদের বাড়ীতে কান্নাকাটি পড়ে” গেল। বাড়ীর কর্তা জেঠামহাঁশয় তখন বিদেশে-_গাঁলিমপুরে । বাড়ীতে বাবার ওপর কথা বলার লৌক কেউ ছিল না। আমার ম! জেঠাইম। বা পিসীমা, এদের কারও এমন সাহস ছিল না যে বাবাকে নিষেধ করেন। কাজেই বাব! যা” স্থির করলেন, তাঁই হ'ল। শুনেছি, বাবার কলিকাত। যাত্রাব দিন স্থির হ'লে, তার পূর্ের ক'দিন তিনি আর বাড়ীতে খেতে পান নি। আত্মীয়ম্বজনের বাড়ীতে বিদায়ভোজ খেয়ে বেড়াতে হয়েছিল । তারপর তার যাত্রার দিন যেদিন উপস্থিত হ'ল, সেদিন
জলধর সেনের আহুজীবনী ণ
সকলকে চোখের জলে ভাসিম্নে তিনি কলিকাতায় যাত্রা করলেন।
বাবার ভ্রমণকাহিনী পারি ত আর এক সময়ে সুবিধা মত বল্ব 1 এখন আমাদের বাড়ীর আর সকলের পরিচয় দ্ি। আমার বাবার এক ভগিনী ছিলেন, তাঁর বিবাহ হয়েছিল যশোর জেলার বহির্গাছি । তিনি ছুটী ছেলে নিয়ে যখন বিধবা হলেন, তখন আমার জেঠা- মহাশয় তাকে আমাদের বাড়ীতে নিয়ে এলেন। তার পরে পিসীম! আর কখনও শ্বশুরবাড়ী যান নি, জীবনান্ত পধ্যস্ত আমাদের বাড়ীর কত্রী হয়ে বাস করেছিলেন। তাঁর ছুটী ছেলের নাম বঙ্কুবিহারী ব্রহ্ম ও রাসবিহারী ব্রহ্ম। তাঁরই আমাদের বড় ছুই ভাই। তারপরে আমর জেঠামহাঁশয়ের ছুই ছেলে আর এক মেয়ে। মেয়েটী সর্বব- জ্যেষ্টা ছিলেন, তিনি আমাদের বড়দিদি, তাঁর নাম ছিল মুক্তাস্নারী | তিনি আমার মায়েরও বড়। জেঠতুত ভাই ছুটীর নাম দ্বারকানাথ সেন ও কৃষ্ণনাথ সেন। পিপতুত ভায়ের আমাদের একান্নতৃক্ত হলেও এবং সকলের বড় হলেও, দ্বারকানাথই আমাদের বড়দাদা, আর কষ্ণনাথই আমাদের মেজদাদ।। কাজেই আমি বাড়ীর সেজবাবু। আমার ছোট আর একটী ভাই ছিল, তার নাম শশধর সেন। এই ছর়ু ভাই নিয়ে আমাদের সংসার । আমারও একটী বড়দিদি ছিলেন, তার নাম সুণারস্ুন্দরী |
এইবার আমার কথা সরু করি। যেদিন আমার জন্ম হয়, শুনেছি, সেদিন ঘটনাক্রমে বাবা ও জেঠীমশায় ছুঙ্গনেই বাড়ীতে ছিলেন। বাবার তখন খুব প্রসারপ্রতিপত্তি। পূর্বেই বলেছি, ১৮১২ টাকা বাধষিক বেভনে তিনি কলকাতায় গিয়েছিলেন। কিন্তু তার উপার্জন খুব হস্ত) শুনেছি, নান! রকমে তিনি বছরে ২।৩ হাজার
৮ জলধর সেনের আতুজীবনী
টাকা রোজকার করতেন। নানা রকমট1 গোঁপনের কিছুই প্রয়োজন নেই। সে সময়ে আর সকলে যেমন ক'রে উপার্জন করতেন, তিনিও তাই করেছিলেন, সছুপায় অসছুপায়ের কোন বিচার করেননি । তবে সে সময়ে আমাদের গ্রামে ধার্মিক বলেও তার প্রসিদ্ধি ছিল। কারণ, পুজাঁপার্ধণ, ঠাকুরবাড়ীতে দ্রানধ্যান এসব তিনি খুব করতেন । আমাদের গ্রামে সর্ধপ্রধাঁন বিগ্রহ মদনমোহনদেব | রথযাত্রা ও গোষ্ট- বিহারের সমযে মদনমোহন যখন তাঁর মন্দির ছেড়ে একটু দুরে রথে উঠতে যেতেন, তখন আমাদের বাড়ীতে তীকে বিশ্রাম করতে হ'ত এবং সে উপলক্ষে পূজা, অর্চনা, ব্রাহ্মণভোজন, বৈষ্ণবভোভন এসবই মহাঁসমারোহে ভ'ত। স্থতরাঁং বাবার উপার্জনের কথা কেউ ভাবতেন না, তিনি পরম ধার্মিক বলে'ই প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। আরও একটা কথ! গোপন ক'রে কোন লাভ নেই । কলকাতায় তিনি চাকুরী করতেন, এক বা দেড় বছর অন্তর বাড়ীতে আসতেন, উপাযও কম করতেন না। সুতরাং সেখানে তার একজন সেবাঁদাসী ছিল, তাতে তাঁর অনেক খরচা হত। আমি শুনেছি এবং স্বচক্ষেও দেখেছি, এই রকম সেবাঁদীসী ব1 সাধুভাষাঁষ উপপত্বী সে সমযে অবস্থাপন্ন লোকেব যেন একটা গৌরবেবই বিষয় ছিল। কেউ তাতে লজ্জাবোধ করতেন না। সমাজেও তা? নিয়ে কোন কলঙ্ক-রটন। হ'ত না। বাঁক সে কথ! ।
আমি যেদিন জঙ্মগ্রহণ করলুমঃ সেদিন বাবা আর জেঠামহাঁশয ছুই হাঁতে পয়স। খরচ করেছিলেন, কাঙ্গালীও যথেষ্ট বিদায় করেছিলেন । ছেলে ভবিষ্ভতে কাঙ্গাল হবে, এই কথা ভেবেই বোধ হয় তীদের সেদিন ছুঃখী কাঙ্গালীর খবর নিতে ইচ্ছে হয়েছিল। তবে শুনেছি, এ ব্যাপারের প্রধান উদ্ভোগী ছিলেন আমার ভবিষ্ততের শিক্ষাপণ্ডরু, দীক্ষাণ্ডর, জীবন-পথের একমাত্র পথপ্রদর্শক, পরলোৌকগত সাধকপ্রবর
বজলধর সেনের আত্মজীবনী ৯
হরিনাথ মজুমদার, যিনি এখন বাঙ্গীলীর নিকট কাঙ্গাল হরিনাথ নামে পরিচিত। আরও শুনেছি, সাধক হরিনাথ বাড়ীর সকলকে বলে গিয়েছিলেন যে, এ ছেলে যেদিন আতুড় থেকে বেরুবে, সে- দিন কেউ একে আগে কোলে করতে পারবে না, আমি কোলে করব। তার সে আদেশ কেউ অনাগত করেনি, আঁতুড় থেকে বেরিয়েই প্রথম আমি তাঁরই কোলে স্থান পেয়েছিলুম। আর, সেই- দিনই যখন আমাদের গৃহবিপ্র মধুহদন আঁচাধ্য আমার এক প্রকাগ্কায় কোঠী প্রস্তত ক'রে এনে কাঙ্গাল হরিনাথকে বললেন--কাকা, আমার এ দাঁদাভায়ের রাশিনাম যোগেন্রনাথ কোরো, এর ডাকনাম তুমি এখন ঠিক কর। তিনি তখনই না ভেবে চিন্তে বলে, বস্লেন__ হলধর কাকার ছেলের নাম আবার কি হবে, জলধর হবে । বুঝেছ ভাই নরেন, এ নামটা যে কাঙ্গাল হরিনাথ স্ুপ্রসিদ্ধ নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্রের “সধবার একাদশী” থেকে ধার করেন নি, তার গ্রমাণ এই যে, তখনও দীনবন্ধু মিত্রের কোন নটক প্রকাশিত হয় নি। নামের মিল রাঁথতে গিয়ে তিনি হলধরের পুত্রকে জলধর নাঁম দিয়েছিতেন এবং তারপর আমার ছোট ভাই জন্মগ্রহণ করলে, তারও নীমকরণ কাঙ্ষালহই করেছিলেন শশধর। তারপর তখনই আমার কোষ্ঠীর ডাক- নামের যে জায়গাটা মধুস্থদন আচার্য মহাশয় ফাক রেখেছিলেন, আমাদের বাড়ীতে বসেই সেই শূন্যস্থান পূর্ণ হ/ল, আমার এই নিরাকার নাম দিয়ে এবং আমার কোণ্ঠীপত্রেও দেখেছি, সে নামটা কাঙ্গাল হরিনাথেরই শ্বহস্ত-লিখিত। কোঠীখানি হারিয়ে গিয়েছে, নইলে আমার পরমারাধ্য কাঙ্গালের হাতের লেখাটা ঠিক ঠিক ছাপিয়ে দিতাম । এইখানেই আমার রাশিচক্রটা তুলে দি, তার থেকে সকলে আমার অদৃষ্ঠ বিচার করুন।
১০ জন্ধর েনেব আত্মজীবনী *
|
ব ১২ প্র ১২০ বু ২০৭ রর শু ১০ ব ৪২” ৯ ৰ | ৃ কে ১৭০ ৰ শ ২৮২০ বা ৯৭০ | ূ | ূ / জা ্ | | চি ম ৪২০ ৃ ২ ৰ ] রং চি ূ ৮২ ূ এ | | চ২২ই সু ূ
পপ পপ পাপ ০ পপ শপ পপ ০
১৭৮১1১১1০9৪ 01২৩ ১লা চৈ* মঙ্গলবার ১২৬৬ রাত্রি ১০ট| ২২ মিঃ | ইং ১৩ই মার্চ ১৮৬০।
দেখ শ্রীমান্ নরেন্দ্রনাথ, যে ভাবে বলতে আরম্ভ কবেছি, এমন ক'রে বল্লে জীবনের বাকী কয়টা দিনেও আমার বাকী কথা শেষ হবে না। তার বদলে ছেলেবেলার কথাট1 একটু ডিঙ্িষে চলা যাঁক।
আমার ব্যস যখন তিন বছর», আমার ছোট ভাই শশধরের বয়স যখন ছ' মাস, সেই সমযে আমার পিতীর মৃত্যু হয। তখন শিয়ালদহ থেকে পূর্ববঙ্গ রেলপথ কুষ্টিযা অবধি খুলেছিল। এই রেলপথ কবে
জলধর সেনের আত্মজীধনী ১১
খোলে, তার সন-তাঁরিখ আমার মনে নেই। এই রেলপথ খুলতে বাবা একবার বাড়ীতে এসে, আমার পিস্তুতো। বড় ভাই বন্ধুবিহারী ব্রহ্ষকে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে এক চাউলের মহাজনের আড়তে চাঁকরি করে দেন। নির্বান্ধব স্থানে অন্ততঃ ভাগ্নেটি কাছে থাকে, এই তার অভিপ্রায় ছিল। আমার পিসীমার ছোট ছেলে রাসবিহারী ব্রহ্দও তখন আমাদেরই গ্রামে এক মহাজনের চাকরিতে নিধুস্ত হন। আমার বড়দাদ।, অর্থাৎ আমীর জেঠতুতো! ভাই শ্রীযুক্ত দ্বারকানাথ সেন তখন আমাদের গ্রামে ইংরাজী স্কুলে পড়েন, আর তার ছোট ভাই কৃষ্ণনাথ সেন বাঙ্গলা স্কুলে পড়েন। জেঠাঁমশায় তথন রাজসাী জেলার গালিমপুরে চাকুরী করেন। এই সময়ে একদিন কোন সংখাঁদ না দিয়ে আমার পিস্তুতো ভাই বাবাকে বাড়ী নিয়ে এলেন। কলকাতায় বাবার জ্বর হয়ে গায়ে ছুটে! একটা বসম্ত বেরুত্তেই আমার পিস্তুতো! ভাই বুদ্ধি খাটিয়ে কাপড়-চোপড় ঢাকা দিয়ে, জর হয়েছে বলে তাঁকে রেলে কুষ্টিয়ায় নিয়ে আসেন। সেখান থেকে, নৌকা করে আমাদের বাড়ীর ঘাটে এসে পৌছান। নদী থেকে আমাদের বাড়ী দূর ছিল না। কিন্তু বসম্তরোগী বলে বেহারারা ভাঁড়া নিতে চাইল না। শেষে কোনরকম ক'রে খাটে শুইয়ে াকে বাড়ীতে আনা হণল। বাড়ীতে এসে তিনি এগারদিন বেঁচে ছিলেন। আমার বড়পিদি অর্থাৎ আমার জাঠতুতে। বড় ভগ্লী দিন-রাত তাঁর সেবাগুশ্রণা করতেন। আমাদের গ্রামের মধুন্দ্ন মালাকর সে সময়ে আমাদের অঞ্চলে সর্বপ্রধান বসস্ত-চিকিৎসক ছিলেন। তিনি কত চেষ্টা করলেন, কিছুতেই কিছু হ'ল না। জেঠামহাশয়কে বাড়ী আসবার জন্য চিঠি লেখা হ'ল। কিন্তু তখন ত আর একালের মত ডাকের সুবিধা ছিল না, টেঙ্লিগ্রাফের
১২ জলধর সেনের আতুজীবনী
ব্যবস্থাও হয় নি, এবং যাতীয়াঁতেরও সুবিধাও ছিল না। কাজেই বাবার মৃত্যুর ছুদিন পরে জেঠামশায় বাড়ী এলেন।
বাবা ষে ঘরে ছিলেন, সেঘরে বড়দিদি ছাড়া আর কারও প্রবেশাধিকার ছিল না। বড়দিদির কাছে পরে আমরা শুনেছি, মৃত্যুশয্যাঁয় পণডে বাবা সর্বদাই বলতেন, ওরে তোরা কিছু ভাবিস্ নি, আমি তোদের ভাসিয়ে দিযে যাচ্ছি না, দাদা আমন কোথাঁষ কি আছে সব ব'লে যাঁব। ক্রমেই যখন অবস্থা খারাপ হ'তে লাগল, তখন একদিন বড়দিদি জিজ্ঞাসা কবেছিলেন, কাকা, বাবা ত আজও এলেন না, তুমি ত কিছুই বল্ছে! না, এদের নিযে কি শেষে ভিক্ষা ক'রে খাব! তাতে বাবা উত্তর দিয়েছিলেন--তোঁদের তয় নেই রে, দ্বারকাঁনাথের এখানকার পড়া শেষ হ'লে বিলেত যাবার জন্যে পনের হাজার টাকা রেখে দিয়েছি, তাঁকে আমি হাকিম করব, স্থসারের বিয়ের জন্য পাঁচ হাজার টাকা রেখে দিয়েছি । আব এদিক ওদিক ছড়ানও দশ-পনের হাজার আছে। তোরা ত সব বুঝবি নে, সে সব কাগজপত্র বঙ্কুব কাছে আছে, দাদ! এলেই বুবিষে দেব। সে বোঝান আর হ'ল না, বাবার মৃত্যুর দুর্দিন পরবে জেঠামশায় বাড়ী এলেন। আমার পিস্তুতো ভাই জেঠামশায়কে বললেন--ছোটমামা কোথাও কিছু রেখে যান নি, বরঞ্চ আমার মনে হয, তাঁর কিছু ধারই আছে। কিন্তু বড়দার মুখে শুনেছি, সেদিনও তিনি বলতেন--“কাঁকার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ ক'রে এসে, সেই রাতিিতে আমাদের পিস্তৃতো ছুই ভাই একটা ঘরের মধ্যে দোর দিযে অনেক কাগজ পত্র পুড়িয়েছিলেন। আমাব ঘুম হচ্ছিল না, কাগজ পোড়ার গন্ধ পেষে উঠে গিয়ে দোরের ফাঁক দিরে স্বচক্ষে দেখেছি, অনেক দলিলপত্র, অনেক হিসাবের খাতা তারা পুড়িয়ে
জলধর সেনের আত্মজীবনী ১৩
ফেলেছিলেন ।” স্থতরাং আমার পিতার মৃত্যুর পর আমরা শুধু পিতৃঙীন হলাম না, পথের ভিখারী হয়ে পড়লুম।
হ
বাবা মারা যাবার ত"দিন পরে জেঠামশায় বাড়ীতে এলেন। তিনি আর চাঁকরীতে গেলেন না। কিন্তু এমন কিছু সম্পত্তি ছিল না, যাঁর উপর নির্ভর করে? বাড়ী বসে" থাকা যেতে পারে । স্থতরাং এত বড় পরিবারটা চেপে পড়ল আমার ছুই পিসভুতো৷ ভাইয়ের ওপর । তারাই আমাদের সকলের ভরণপোষণের ভার গ্রহণ করলেন। কিন্তু বছর ছুই যেতে না যেতেই গেঠামশায় বুঝতে পারলেন যে, এ তার বইতে তার ভাগ্নের সম্পূর্ণ ইচ্ছুক নন, অথচ একথা মুখ ফুটে বলতেও পারেন না। জেঠামশায় তাদের ভার কিঞ্চিৎ লঘু করবার অভিপ্রান়্ে আমাদের গ্রামের জমিদার ঠাঁকুরবাবুদের তহশীলদারী গ্রহণ করলেন এবং তার সঙ্গে সঙ্গে ্্যাম্প ভেগারও হলেন । আমাদের গ্রামে তখন ফৌজদারী ও মুনসেফি আদালত ছিল । কুমারখালি তখন একটা সবডিভিশীন । কুষ্টিয়া থেকে গোয়ালন্দ পধ্যস্ত রেলপথ বিস্তৃত হলে, এই কুমারখালি সবডিভিশানই গোয়ালন্দে চলে, যাঁয় এনং আমাদের গ্রাম নদীয়া জেলার অন্তর্গত হ'য়ে, কুষ্টিয়া সবডিভিশানতুক্ত হয়। এই সবডিভিশানের কথা পরে আরও বলতে হবে, এখন সে কথা থাক।
জেঠামশায় যখন আমাদের সংসারে কিছু কিছু সাহায্য করতে লাগলেন, তখন আমার যে পিস্তুতে৷ ভাই কলকাতায় চাকরী করতেন, তাকে আর মাসে মাসে বাড়ীর খরচ পাঠাতে হত নাঁ। জেঠামশায়ই নিষেধ ক'রে দিয়েছিলেন। আনার সেই পিস্তুতো! ভাই তথন প্রস্তাব কয়ূলেন যে, বড়দাদাকে তিনি কলকাতায় নিয়ে পড়াবেন। তিনি
১৪ জসধর সেনের আত্মজীবনী
বলেছিলেন, ছোট মাসার ভারি ইচ্ছ। ছিল ষে, দ্বারিককে ভাল রকম ইংরেজী লেখাপড়া শেখাবেন। গীয়ের ইংরাজি স্কুল থেকে কলকাতায় স্কুল অনেক ভাল, আমি ওকে কলকাতায় নিয়ে যাই--এই ব'লে তিনি বড়দাদ্াকে কলকাতাধ নিরে গেলেন এবং দেখানে ডাীফ কলেজে ভন্তি ক'রে দ্িলেন। সেইবারই বড়দাদ। প্রবেশিকা পরীক্ষা! দেন, ছুর্ভাগ্যক্রমে পাশ হতে পারেন নি। তারপরের বছরও তিনি পাঠ আরম্ত করেন। মেজদা দাও তার পূর্বের গ্রামের স্কুল থেকে হাঁত্রবৃত্বি পাশ ক'রে ইংরাজি স্কুলে পাঠ আরম্ভ করে” দেন । আমিও তখন বাঙ্গলা স্কুলে যাই-আমি ; কিন্তু আমার আর পড়া হয় না। ছ*মাস পড়তে পাই আর ছ'মাস পড়া বন্ধ। এই পড়া-বন্ধের ইতিহাসটা বলে" নি।
আমার বয়ল যখন ছয় কিসাঁত বছর, তখন বুঝতে পারা গেল যে, আমার চোখের কিছু একট! অস্থুথ হয়েছে । তখন আমাদের পাঁড়াগীয়ে এত ডাক্তারের ছড়াছড়ি ছিল না, হাতুড়ে কবিরাঁজই একমাত্র সম্থল ছিল। স্থতরাঁং আমার চোখে যে কি অস্গুখ হ'ল, তা” আমাদের গ্রামের কবিরাজ হৃরিমোহন সেন ধরতেই পারলেন না। সেই সমযে হালিসহর থেকে প্যারিমে।হন গুপ্ত নামক একটী ভদ্রলোক এলোপ্যাথিক চিকিৎসা করবার জন্যে আমাদের গায়ে গিয়ে উপস্থিত হলেন । তিনিও আমার চোখ দেখে কিছু ঠাহর করতে পারলেন ন।। অনেক টোঁটকাটুটুকি ব্যবহার করা হ'ল, তাতে উপকার না হয়ে অপকারই হ'ল। শেষে এই হ'ল যে, বেশাখ থেকে ভাত্র-আশ্বিন পর্যন্ত এই ৫৬ মাস আমি মে।টেই চোখে দেখতে পেতৃম না। একবারে অন্ধ হয়ে যেতুম। চোখের ভেতরে একট! সাদ পরদা উঠে সেট। ধীরে ধীরে বিস্তৃত হয়ে, আমার চোখের তারক! ঢেকে ফেলত, দৃষ্টিশক্তির লোপ হয়ে যেত। আবার শীত পড়তে না৷ পড়তেই সে পরদাটা স'রে যেত, আমারও দৃষ্টিশক্তি ফিরে
জলধর সেনের আত্মজীবনী ১৫
আঁসত। সুতরাং আমি সে সময়ে ৬ মাস অন্ধ, ৬ মাস চক্ষুম্মাণি। পে জন্যে আমার লেখাপড়াও আধাআধি মত হত।
বাঙ্গলা স্কুলে আমি বাঙ্গলাসাহিত্যে খুব কৃতী হয়ে উঠলুম । অবশ্য সেটা আমার নিজের গুণে বত না হউক, কাঙ্গাল হরিন।থের আশীর্ববাদে আর তার শিক্ষার গুণে । আমি যখন বাঙ্গালা স্কুলে প্রথম ভর্তি হই, সেই সময়েই হরিনাধ তার প্রাণাধিক প্রি বঙ্গবিগ্ঠালয়েব ভার তার কৃতী ছাত্র পুলিন্চন্দ্র সিংহেব ওপব দিয়ে, আমাদের গ্রামে বাঁলিকাবিদ্ালয় প্রতিষ্ঠা করবার ভাঁর নিষেছিলেন এবং সেই বিদ্তালিয়েরই শিক্ষক তাকার্ধ্য গ্রহণ কবেছিলেন। সে-নব কথা পবে বিশেষ করে” বলতে হবে; কারণ আমার ক্ষুপ্র নগণ্য জীবনের কথা, কাঙ্গাল হরিনাথের জীবন-কথার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জডিত। সুতরাং তার বিস্তৃত বিবরণ প্রয়োজন । আমার বাঙ্গলা বিদ্যালয়ের বৎসরের ছ*মাসের শিক্ষার সপক্ষিুসীর এই ঘে, আমি সে সমযে দ্বিতীয় শ্রেণীতে অধ্যযন করলেও, বাঙ্গল! সাহিত্য সম্বন্ধে শুধু বাঙ্গলা স্কুল কেন, ইংরাজী স্কুলের ছাত্রগণেরও অগ্রগণ্য ছিলাম। সব গোল বাধিয়েছিল এ অস্কশান্ত্র । অস্কবিগ্তায় আমার মত গাধা গ্রামের স্কুলে কেন, গ্রামের সীমানার মধ্যে ছিল কিনা সন্দেহ । এ ক্ষেত্রতব আর পাঁটাগণিত, এই ছুটো! কিছুতেই আমার মাথার মধ্যে প্রবেশ করত না, অথচ সে সময়ে সকলেই বলতেন যে, আমাৰ দেহের গঠনের অনুপাতে মাথাটা নাকি বড় ছিল। সেমাথার ভেতর বোধ হয় বাঙ্গলা সাহিত্যই সবখানি বাঁয়গ। জুড়ে বসেছিল । আঁর তার জোবেই একবার যখন স্কুলসমূহের ইন্স্পেক্টর পৃজ্যপাঁদ *ভূদেব মুখোপাধ্যায় মহাশয় আমাদের স্কুল পরিদর্শন করতে যান, সে সময়ে কি যেনকি একটা করুণ রসাত্মক আবৃত্তি ক'রে তার চোথের জল টেনে বার করেছিলুম, আর তার কাছ থেকে তিনথানা বাঙ্গল! বই তখনই পুরস্কার আদায় করেছিলুম ।
১৬ জলধর সেনের আত্মজীবনট,
এই চাপরাসের জোরে, আর কাঙ্গাল হরিনাথের আদরে আমি প্রতি বছরে ক্লাস প্রমোশন পেতাম। কিন্ত কোনবারও অক্কের পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে ৫ নম্বর পেয়েছি কিনা, সন্দেহ। আর এখন হয়ত দাগ মিলিয়ে যেতে পারে, কিন্তু সে সময়ে আমাদের দ্বিতীয় পণ্ডিত ব্রাক্মণ প্রবর কেদারনাথ জোয়ারদার মহাশয়ের এমন দিন যায় নি, যেদিন একখানি খেজুরের ভাল বেত্ররূপে পরিণত হয়ে আমার পৃষ্ঠে তার উদ্ভিজ্জীবন পরিসমাপ্তি করে নি। এতযে মার খেতাম, তবুও পাটাগণিত আর ক্ষেত্রতত্ব আমার বেত্রাঘাত-যন্ত্রণাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা ক'রে মাথার বাহিরে দাড়িয়ে হাসত |
চোখে দেখিনি, তবে শুনেছি, ল্যাপল্যাণ্ড দেশে নাকি ছ'মাস রাত্রি থাকে, ছ” মাস দিন হয়। ভগবান বোধ হয় আমাকে সেই ল্যাপল্যাণ দেশে পাঠাবার জন্টে গড়েছিলেন, এমন সময়ে আমার মা-বাপের কাতর প্রার্থনায় তাঁর আসন টলেছিল, তাই আমাকে ল্যাঁপল্যাণ্ডে না পাঠিয়ে একবারে বাঙ্গালাদেশে পাঠিয়েছিলেন । এমন করে, প্রতি বৎসর ছ' মাস অন্ধ হয়ে বসে" থাকলে, বড় মানুষের ছেলের হয়ত চলতে পারে, কিন্ক আমার মত কপর্দকহীন গরীব কায়স্থের ছেলের ভরণপোষণ নির্বাহ হওয়া একেবারেই অসম্ভব । দেশে যতটুকু চিকিৎসা হ'তে পারে, তা” করেও যখন কোন ফলই হ'ল না, তখন জেঠীমহাশয় হাল ছেড়ে দিলেন, মা ও প্েঠীইম1 কানন সুর করলেন। সকলেরই আশঙ্কা হ'ল যে, ছ মাঁসেয় অন্ধত্ব বাড়তে বাড়তে বাঁরমানে গিয়ে পৌছবে। আমি চিরজীবন অন্ধ হয়েই থাকব ।
সেই সময়ে কয়েক দিনের জন্যে আমার পিস্তুতে৷ ভাই বঙ্কুবিহারী বাড়ী এসেছিলেন। মাও জেঠাইম। তাকে ধরে' বসলেন যে, আমায় কলকাতায় নিয়ে গিয়ে একবার ভাল ডাক্তার দ্রিয়ে চোখ ছুটো পরীক্ষ!
জলধর সেনের আতুজীবণী ১৭
করাতে হবে। আমার পিস্তৃতো ভাই কি করেন, বাড়ীর সকলের কাতর অনুরোধে তিনি আমায় কলকাতায় নিয়ে যেতে স্বীকার করলেন। চোখের চিকিৎসা হউক না হউক, অন্ধত্ব ঘুচুক না৷ ঘুঢুক, রেল চা হবে, কলির সহর কলকাতা দেখা হবে, এই আনন্দ আমাকে বিভ্রান্ত করে ফেলেছিল । কোনদিন বাড়ী ছাঁড়া হইনি, দূরদেশে যেতে হবে, সেখানে মা-বোৌন কেউ নেই, হয়ত কত কষ্ট হবে--এসব কিছুই আমার মনে হ'ল না। আমি কলকাতা যাবার জন্তে প্রস্তত হলুম। শুভ দিনে আমার সেই পিস্তৃতে। ভাইয়ের সঙ্গে কলকাতাঁষ চলে” এলুম । সেটা কোন সাল, তা” আমি পু'খিপত্র ন। দেখে মুখে-মুখেই বলতে পারচি নে। ধীরা এতিহাসিক, তারা সালটা ঠিক ক'রে নেবেন, কারণ সেই সালেই হাইকোর্টের বিচারপতি নর্্মীন সাহেবকে আবদুল্ল। নামে এক পাঠান টাউন-হলের সিঁড়ির মধ্যে খুন করে। তখন নূতন হাঁইকোট-বাড়ী হয় নি, টাউনহলেই হাইকোট বসত। আর তার অব্যবহিত পরে ভারতের বড়লাট লর্ড মেও আন্দামান দ্বীপে একজন দায়মালী বন্দী সিয়ার আঁলির হাতে নিহত হন! আর এইটুকু মনে আছে, সেদিনটা সরম্বতী পূজার আগের দ্িন। কারণ সরম্বতী পুজার দিন জোড়াস কো শ্যাম মল্লিকের বাড়ী আমার পিস্তৃতো৷ ভাইয়ের নিমন্ত্রণ ছিল। সেখানে অনেক গানবাজনা, আমোদপ্রমোর হবে বলে দাদা সন্ধ্যার সময়ে আমায় সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন । শ্ঠান মল্লিকের বাড়ী গিয়ে দেখি সব নিস্তব্ধ, পৃজা- গ্রাঙ্গনে অল্প কয়েকটা আলো! জলছে। তখন জানতে পারা গেল, আন্দামানে বড়লাট সাহেব খুন হয়েছেন, তাইতে সহরের সরম্বতীপৃজার আমোদ, আনন্দ, সমারোহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে । আমি ছেলেমান্থষ, সবে কলকাতার এসেছি, সাতপুকুরের বিখ্যাত বাগানের মালিক শ্যাম মল্লিকের বাড়ী কত নাচ গান দেখব শুনব, সে সব কিছুই হ'্ ২
১৮ জলধর সেনের আত্মজীবনী
না সেই নৈরাশ্টের কথাটা এই বুড়ো বয়েস পধ্যস্ত আমার মনে আছে।
তখনকার কলকাতার কথাও একটু বলি। তখন গঙ্গার ধারে রাস্তা হয়নি, হাবড়ার পোল তখন তৈরী হচ্ছে। সহরের অলিগলিতে তখন শিয়াল ডাকত । মিউনিসিপ্যালিটার এমন সুবন্দোবস্ত ছিল না । ঘোড়ার গাড়ী আর পাহ্থী ছাড়া যানবাহনের কোন ব্যবস্থাই ছিল না। জলের কল তথন সবে হয়েছে, কি হব-হব হয়েছে, ঠিক আমার মনে নেই। ব্রাঙ্গসমাজের কেশব সেন অগ্র-পশ্চাৎ সেই সময়েই বোধহয় বিলেত থেকে ফিরে এসেচেন। মেছোবাজারে ভারতবরীয় ব্রহ্মমন্দির স্থাপিত হয়েচে। একথাটি বলছি এই জন্য যে, আমার সেই পিসতুতো৷ ভাই কেশব সেনের চেল। হয়েছিলেন। তার সঙ্গে আমিও ভারতবর্ষীয় ব্র্থমন্দিরে প্রতি রবিবারে যেতাম । কেশববাবু, বিজয়রুষ্ণ গোস্বামী, অঘোরবাবু, গৌরগোবিন্দবাবু ও আরও বড় বড় ব্রাঙ্ম আমাকে ভাল বাসতেন। দাদার সঙ্গে আমি আদি ত্রার্-সমাজেও গিয়েছি । একদিন মহধি দেবেন্রনীথ ও গায়ক ঝিষ্ণবাবুর সন্মুথে আমি পড়েছিলুম। দাদা আমাকে তাঁর ছোট ভাই বলে” পরিচয় করে” দিলে, আমি তাঁদের দুজনকেই প্রণাম করেছিলুম। মহষি আমার মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন। সে আশীর্বাদের কথা আমি এখনও ভুলিনি ।
সে কথা থাক, যে জন্য কলকাতায় এসেছিলুম, সেই কথাটাই বলেনি ।
সেটা আমার চোখের চিকিৎসার কথা । চোরবাঁগানের পরলো কগত লালমাধব মুখোপাধ্যায় সে সময়ে কলকাতায় একজন বেশ বড় চিকিৎসক ছিলেন। চক্ষুরোগের চিকিৎসায় তাঁর বেশ সুযশ ছিল। প্রথম মাঁসথানেক তিনিই চিকিৎসা করলেন। কোনই স্থুফল হ'ল
ভঁলধর সেনের আতুজীবনী ১৪
না। আমি যেমন অন্ধ তেনই থাকলাম। তখন কলিকাতায় চক্ষু রোগের সর্বপ্রধান চিকিৎনক ছিলেন 101. 1412077912819, শুনতে পাই তার মত চক্ষুরোগের চিকিৎসক ভারতবর্ষে আর কখনও আসে নি। লালমাধববাবুর চিকিৎসায় যখন কোন ফল হ'ল না, তখন মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে 1):, 507091028কে দেখানই স্থির হল। কলেজে 0৮৭০০: রোগী হয়ে দেখালে, চিকিৎসকেরা কোন রকমে ব্যাগার শোধ দেন, এ বিশ্বাস তখনও লোকের ছিল। সেইজন্য একজন খ্যাতনাম! ব্যক্তিকে মুরব্বি স্থির করার ব্যবস্থা হণল। সৌভাগ্যক্রমে আমার দাদার সঙ্গে লব্বপ্রতিষ্ঠ চিকিৎসক পরলোকগত ছুগাদাস কর মহাশয়ের বিশেষ বদ্ধুতত ছিল। ছুর্গাদাসবাবু সমগ্ অবস্থা শুনে, নিজেই আমাকে সঙ্গে নিয়ে 25070210218 সাহেবের বাড়ীতে গেলেন। আমার অবস্থার কথা শুনে সাহেবের দয়ার সঞ্চার হ'ল। তিনি নানারকম যন্ত্রের সাহায্যে আমার চন্ষু পরীক্ষা ক'রে বললেন যে, চোখে অস্ত্র প্রয়োগ করে কোন ফল হবেনা। আবার তেমনি পর্দা বেড়ে চোখের শ্ষেত্র ঢেকে ফেলবে। তিনি তখন ওষধ প্রয়োগেরই ব্যবস্থা করলেন এবং প্রতি সপ্তাহে রবিবারে তার বাড়ীতে গিয়ে ওষুধ নিয়ে আসতে আদেশ করলেন। আমি গরীব বলে তিনি যে ছ"মাস আমার চিকিৎসা! করেছিলেন, সেই ছ'মাসই প্রতি রবিবারে পরীক্ষা করার জন্যে কোন পারিশ্রমিক ত নেনই নি, ওষুধের দাম পধ্যস্ত নেননি । ছ-মাস চিকিৎসা করে'ও যখন কিছু হ'ল না তখন তিনি বনলেন-_ওষুধে বা অস্ত্র করে কিছু হবে না, বয়স একটু বাড়লে আপনিই সেরে যাবে। অত বড় চিকিৎসকের কথায়ও কিন্ত দাদ! আস্থা স্থাশন করতে পারলেন না। তখন সকলের সঙ্গে পরামর্শ করে হোমিওপ্যাথিক চিকিসার ব্যবস্থা কর! হ'ল।
২০ জলধর সেনর আত্মজীবনী
তখনও হোমিওপ্যাথির তত পসার হয় নি। তা” না হলেও, সে সময়ে কলকাতায় যিনি প্রধান হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ছিলেন, তার পসার-প্রতিপত্তি যথেষ্ট ছিল । তাঁর নাম ভাক্তার বেরিনি। বেরিনি সাহেবের ডাক্তারখানা৷ তখন লালবাঁজারের মোড়ের উপর ছিল। তখনও ছিল, এই অল্লদিন পূর্বব পধ্যস্তও ছিল। সেই ডাক্তারখানায় গিয়ে বেরিনি সাহেবকে চোখ দেখান হ'ল, তিনি চিকিৎসা আরম্ভ করলেন। সে এক কৌতুকজনক ব্যাপার । এখন ঘরে ঘরে হোমিও- প্যাথিক, ওষুধ দেখি, ব্যবহারের তেমন কড়াকড়ি নেই, পথ্যেরও তেমন কঠোর বিধান নেই। কিন্তু তখন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা! শুচিবায়গ্রস্ত ছিল। সপ্তাহান্তে একদিন করে সাহেবের ভাক্তারখানায় যেতে হত। তিনি তার বাক্স খুলে অতি সন্তর্পণে ছোট একটি শিশি বার করে”, তারই এক ফোটা, চার আউন্স একটা শিশিতে সমস্তটা জল ভরে” তাঁতে ফেলে দ্িতেন। তারপর ১০৯৫ মিনিট সেই শিশিটা নেড়ে চেড়ে, সেই জলের কাঁচ্চা পরিমাণ ছোট একটা কাচের প্লাসে ঢেলে আমাকে খাইয়ে দিতেন । বাস_-এই সাত দিনের ওষুধ। সাতদিনের মধ্যে আর কোন ওষুধ খেতে হ'ত না। তারপর পথ্যের কথা। শুন, লঙ্কা একবারে বাদ। মশলার মধ্যে একটু জিরে বাঁটা। ভরকারী একবারে বন্ধ। মাছ খেতে দিতে আপত্তি নেই; কিন্তু খেতে হবে মাছ পিদ্ধ করে? একটু জিরে বাটা! মেখে। মিষ্টি জিনিষের মধ্যে খুব বেশী হলে সারাদিনে এক ছটাঁক মিছরি, তাছাড়া কিছু নয়। স্তরাং মোটের ওপর পথ্য দাড়ালো, এক বেলা ছুধ-ভাত, ছোট একটুকরো! মিছিরি, আর এক বেল! ছুধ-সাগু। অন্য সময়ে ক্ষিদে পেলে, একটু ছুধ। এই কঠোর নিয়মে পথ্য করে” ছ"মাঁসেও চোখের অস্থথ সারলো! না বটে, কিন্তু আঁহীর-সংযম অভ্যাস হয়ে গেল। সে বম এখন পধ্যস্ত আমার আছে।
জলধর সেনের আল্মজীবনী- ২১
প্রায় দু-বছর এমনি করে কাটিয়ে, যখন কিছুই হল না, তখন অন্ধত্ব সম্বন্ধে কৃতনিশ্চয় হয়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে গেলাম ।
আমি যখন চে|খেব চিকিৎসার জন্য কলকাতায় এসেছিলাম, তখন আমার বড় দাদা ্ধারকানাথ দেন ডাফ কলেজে পড়তেন। তাঁর আগের বছরে এণ্টান্স পরীক্ষায় ফেল হয়ে, সেবার পুনরায় পরীক্ষা দেবার জন্তে প্রস্তুত হচ্ছিলেন। কিন্ত অহ্বশাস্ত্রে এমনই কাঁচা ছিলেন যে, দ্বিতীযবারও তাঁর পাস হবার কোনই সম্ভবনা ছিল না। আবার ফেল হবার ভয়ে একদিন কাউকে কিছু না বলে কলকাতা থেকে পলায়ন করলেন। দাদাকে না দেখে, এই বিদেশে আমিও কেঁদে আকুল। আমার পিসতৃতে! ভাই সহরময় অনুসন্ধান করলেন, পুলিসে পর্্য্ত থবর দিলেন । কিন্তু বড়দ্রাদর কোন পাত্তাই পাওয়া গেল লা। প্রায় পনেব দিন পরে বাড়ী থেকে জ্যেঠামহাশয় চিঠি লিখলেন যে, বড়দাঁদা পালিয়ে একেবারে রাজমহলে গিয়েছেন এবং সেখানকার ইংরাজি স্কুলে (?) হেডমাষ্টারী (?) চাকরী নিষেছেন। সেখান থেকে মাস ছয়েক পরে, গ্রীষ্মের ছটিতে বড় দাদা বাড়ী এলেন, আর তার রাজ- মহলে ফিরে যাওয়া হ'ল না। আমাদের গ্রামে তখন সবডিভিশান ছিল, তিনি সবরেজেন্ত্রী অফিসে হেড ক্লার্কের পদ পেলেন। মাসিক বেতন ২০২ টাকা । সে সময়ে আমাদের কুমারখালির সবডিভিশনাল অফিসর ছিলেন পরলোকগত কৃষ্ণচন্দ্র রাঁয়। তার কিছুদিন পরেই আঁমি কলকাতায় থাকতে থাকতেই ইষ্টার্ণ বেঙ্গল ষ্টেট রেলওয়ে কুয়া থেকে গোয়ালনন্দ পর্য্যন্ত রেল লাইন খুলেছে । আর সেই সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের গায়ের সবভিভিশান গোয়ালন্দে স্থানাস্তরিত হ'ল। বড়দাদাও গোয়ালন্দ চলে' গেলেন ।
চোখের চিকিৎসায় কিছু না হওয়ায়, আমি বাড়ী ফিরে আসবার
২২ জলধর সেনের অয্সজীবদী
আয়োজন করছি, সেই সময়ে বাড়ী থেকে পত্র এল আমার জ্যেঠামশায় ওলাওঠা রোগে গ্রাণত্যাগ করেচেন। তখন আর আমার বিলম্ব সহে না, আমার পিসতুতো ভাক্ের সঙ্গে বাড়ী এলুম। কোন রকমে জ্যেঠা- মশায়ের শ্রাদ্ধ হয়ে গেল। বড়দাদা গোয়ালন্দে চলে গেলেন, মেজ দাদা তখন আমাদের গ্রামের ইংরাজি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়তেন, সেই সময়ে কু-সঙ্গে পড়ে তিনি পড়াশুনা ছেড়ে দিলেন ।
আমি বাড়ী এসে দেখলুল, আমার ছোট ভাই শশধর আমাদের গ্রামের ' ছাত্রবৃত্তি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়চে। আমি যদি তথন বাঙ্গলা স্কুলে ভর্তি হই, তা” হলে সম্ভবতঃ তাঁর নীচের শ্রেণীতে আমার ভর্তি হতে হয়। ছোট ভায়ের নীচের ক্লাসে বড়ভাই পড়বে, এ কিঃ ক'রে হয়! আমি বললাম, আমাকে ইংরাজি স্কুলে ভর্তি করে দাও । ভাতে বাড়ীর সকলেরই আপত্তি, বিশেষতঃ বড় দাদার। তিনি নিজে ভুক্তভোগী কিন । গোড়া থেকেই ইংরাজি স্কুলে পড়ে” তার বাঙ্গলার বিষ্টে অতি চমতকার হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতাবশেই তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন, ভাল করে' বাঙ্গলা না শিখিয়ে, তিনি আমাদের ছু'ভায়ের কাউকেই ইংরাজি পড়তে দেবেন নী । শেষে স্থির হ'ল, আমি গোয়ালন্দে গিয়ে সেখানকার মাইনর স্কুলে পড়ব। গোয়ালন্দে তখন সবে একটী মাইনর স্কুল বসেছে।
আদি গোয়ালন্দে গেলে বড় দাঁদা বললেন, স্কুদে ভণ্তি হতে গেলে একেবারে 4. 8. 9:10. ক্লাসে ভন্তি হতে হবে। তার থেকে তুই যি বাসায় আমার কাছে মন দিয়ে পড়তে আরম্ভ করিস, তা'হলে ছ'মাসের মধ্যে মাইনর থার্ড ক্লাসের মত ইংরাজি আমি শিখিয়ে দিতে পারব । আমিও তাই স্বীকার করলুম। কিন্তু ভয় সেই অন্ধত্ব-_-আর ছু" মাস পরে যখন অন্ধ হয়ে পড়ব, তখন পড়ার ফি হবে? এই কথা ভেবে আমি
“জতাধর সেনের আত্মজীবনী ২৩
সত্যি সত্যিই ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলুম। আমার বয়স তখন এগার বৎসর। গোয়াললন্দে এক আত্মীয়ের গলগ্রহ হয়ে ছুই ভাই থাকি, সে
অবস্থায় আমার মন যে কি ব্যাকুল হয়ে পড়েছিল, তা” এখনও আমার মনে আছে। আমার বেশ মনে আছে, প্রতিদিন রাত্রে যখন সকলে ঘরের আলো নিবিয়ে ঘুমৃতেন, আমি তখন সেই অন্ধকারে বসে" ভগবানের কাছে প্রার্থন! করতুম--“হে ঠাকুর, আমার চোখের অসুখ সারিয়ে দাও 1” পিতৃহীন দরিদ্র সন্তানের এই কাতর আবেদন, এই আর্ত প্রার্থনা সত্য সত্যই ভগবানের চরণে পৌছেছিল, নইলে কলকাতার সর্ধপ্রধান চিকিৎসকের! যেব্যধি আরোগ্য হবে না বলে আমায় নিরাশ করে? ছেড়ে দিয়েছিলেন, সেই ব্যাধি দূর করবার জন্গে পল্মাতীরে দরিদ্রের কুটারে সহসা এক চিকিৎসকের আবির্ভাব হু'বে কেন! কি আশ্চর্য্য উপায়ে আমার চোখের অন্থ চিরদিনের মত সেরে গিয়েছিল, সে কথ! বলতে গেলে এখনও আমার অবিশ্বাসী হৃদয় বিশ্ববিধাতার চরণে নত হয়ে আসে, এখনও তাঁর মঙ্গল-হম্ত আমার ওপর প্রসারিত দেখতে পাই । এখনও প্রাণ খুলে বলতে ইচ্ছ! করে-_
“একি করুণা তোমার ওহে করুণানিধান--
অধম সন্তানে প্রভু, এত তোমার করুণা! কেন?
আমি সতত তোমারে ছেড়ে, থাকিতে চাই দূরে দুরে
তবু তুমি প্রেমভরে কর মোরে আলিঙ্গন ।”
সকালে ও রাত্রে বড় দাদার কাছে একটু একটু ইংরেজি পড়ি,
পড়ায় মোটেই মন লাগে নাঁ। শুধুই মনে হয়, আর ক'দিন পরেই যখন চোখের দৃষ্টিলোপ হু'বে, তখন সেই পাঁচ ছ'মাসের অন্ধকারের মধ্যে সব ডুবে ধাবে। তারপরে আবার দৃষ্টি ফিরে এলে, নুতন করে
২৪ জলধর সেনের আত্মজীবনী '
4 80 আরম্ভ করতে হবে । এই ভেবেই পড়ায় আমার মন লাগত না। আমার বয়সের ছেলেরা কত খেলাধূলা করে, দৌড়াদৌড়ী করে, আমোদ আহ্লাদ করে, আমি তাতে যোগ দিতেই পারি না, সে ইচ্ছাই আমার করে না। আমি চুপ করে" এক স্থানে বসে থাকি। এই ভাবে কিছুদিন গেলে এক অভাবনীয় ঘটনায় আমার ভাগ্য প্রসন্ন হল । আনর। ধার বাসায় থাকতাম, তিনি আমাদের স্বগ্রামবাসী । আমাদের বাড়ী আর তাদের বাড়ী গায়ে-গায়ে লাগা । তিনিও কায়স্থ। আমরা তাঁকে ঠাকুরদাদা বলে ভাঁকতুম। তার নাম ৬হরিমোহন সরকার। তিনি কণ্টণকক্টরী করে, অনেক টাঁকা উপার্জন করতেন । তা” ছাড়া তাঁর কয়েকট! নীলকুঠীও ছিল। আমাদের এ অঞ্চলে প্রসিদ্ধ নীলকর মিষ্টার কেনি বখন প্রজাবিদ্রোছে বিব্রত হয়ে নীলকুঠী বেচে দ্রেশ্নে পালিয়ে যান, সেই সময়ে তার প্রধান নীলকুঠী সালঘর বুদিয়া আমার এই দাদামশায়ই ক্রয় করেন। তাহার পর কয়েক বৎসর নীলের কাজে ক্ষতি স্বীকার করে সব বেচে ফেলেন। তখন তিনি ঢু. 8. 9. চ..-এর 108028 .. 812199078-এর কণ্টাক্টার হন। ইতিপূর্বে রেলওয়ে লইন নির্মাণের কণ্ট্ণক্টরী করায় তাঁর বথেষ্ট স্থনাম ও অর্থাগম হয় এবং সেই শ্ুত্রেই তিনি এই বুহৎ কণ্ট কট লাভ করেন । এই কন্টাক্ট কাঁধ্য উপলক্ষ্যে তাহাকে প্রতি মাসেই ১০।১৫ দিন গোঁয়ালন্দে থাকতে হ'ত । তারই বাসায় আমরা থাকতাম ।
একদিন সকালে আমর! তার বাসার বাঁরন্দায় বসেছিলাম, তিনিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এমন সময়ে একজন পশ্চিমদেশী মুসলমান সেখানে উপস্থিত হ'ল। তাঁর পোষাঁকপরিচ্ছ্দ ভদ্রলোকের মত। মাথায় প্রকাণ্ড টুপী, পরিধানে পায়জামা ও চাপকাঁন, পায়ে নাগর! জুতা, হাতে একটা ক্যা্থিসের ব্যাগ। সেই লোকটি এসে ঠাকুরদার
'জলধর সেনের আত্মজীবনী ২৫
কাছেষে আত্মপরিচয় দিল, তার সারমর্ম এই যে, সে লক্ষৌএর রহেনেওয়াল! এবং সেখানকার একজন নামজাদা হেকিম। দেশভ্রমণে বাহির হয়েছে । গোয়ালন্দ স্থানটী অতি মনোরম, এখানে দিনকতক অবস্থিতি করবে, তারপর পূর্ববঙ্গে চলে যাবে । তাঁর এই কথা শুনে' ঠাকুরদা তাঁ"কে খুব খাতির করে” বসবার আসন দিলেন এবং দিল্লী, লাহোর, লক্ষ প্রভৃতির গল্প জুড়ে, দিলেন। বথাপ্রসঙ্গে ঠাকুরদা বললেন, হেকিম সাহেব, আমার এই নাতিটার একটা কঠিন রোগ হয়েছে, আপনি রুপা করে” যদি পরীক্ষা করেন, তবে বড় ভাল হয়। এই বলে তিনি আমার চোঁথের রোগের বিবরণ আন্ুপৃব্বিক বর্ণনা করলেন । সমস্ত কথা শুনে হাকিম সাহেব আমাকে তাঁর কাছে ডেকে বসালেন এবং অনেকক্ষণ ধরে” চোখ পরীক্ষা করে বললেন-_-এ ব্যাধি অতি সামান্য, আমি অতি সহজে আরাম করে" দিতে পাঁরব। ওষুধপত্র কিছু দিতে হবে না, শুধু চোঁথে অস্ত্র করতে হ'বে। অস্ত্র করার কথা শুনেই ঠাকুরদাদা ভীত হলেন। বল্লেন, চোঁথে অস্ত্র করতে দিতে সাহস হয় না, এখন তবুও ছ*মাঁস দেখতে পায়, অস্ত্র করে শেষে তাও পাবে না। হেকিম সাহেব বল্লেন, চোখের ভেতরে অস্ত্র করা হবে না, বাইরে চোখের পাতার পাশে সামান্ত একটু ছিদ্র করে' দিতে হবে, চোখে কোনই আঘাত লাগবে না। কথা শেষ করে? তিনি তার ব্যাগ খুলে অনেকগুলি কাগজ বার করলেন। সেগুলি তার সার্টিফিকেট । কয়েকথানা ইংরাজিতে লেখা, কয়েকখানা হিন্দী, কয়েকখানা উর্দু । ঠাকুরদ! হিন্দী ও উর্দু জানতেন, ইংরাজি জানতেন না। ইংরাজি সার্টিফিকেটগুলো আমার বড় দাদা তরজমা করে” সকলকে বুঝিয়ে দিলেন। হিন্দী ও উর্দ. প্রশংসাপত্রগুলি ঠাকুরদাদা পড়ে শুনালেন।
২৬ জলধর সেনের আজ্জীবদী
এই সকল দেখেশুনে তাদের সকলেরই বিশ্বাস জন্মাল যে, হেকিম সাহেব প্রকৃতপক্ষে একজন নামজাদ। সুচিকিৎসক। ঠাকুরদা তখন তাঁর ফী”র কথ জিজ্ঞেন করলেন। হাকিম সাহেব হেসে বললেন, টাকাঁকড়ি কিছুই দিতে হ'বে না, আমি এমনিই চিকিৎসা করব ॥ তখন স্থির হ'ল যে, সেদিন আর অস্ত্র করা হবে না, পরদিন গ্রাতঃকালে হেকিম সাহেব অস্ত্র করবেন।
সে দিনরাত আমার যে কি ছুর্ভাবনাষ্ব গেল, ত এতকাল পরে এখনও মনে আছে । কোথাকার কে, চিনি না, জানি না, তার হাতে চোখ ছুটে সমর্পণ কর! বড় সহজ কথা৷ নয়। ষে অবস্থা তখন ছিল» তাতে অন্ততঃ ছ'মান ত দৃষ্টি থাকত, এবার হয়ত চিরদিনের মত অন্ধ হ'তে হ'বে। বড়দাঁদাও বার বার এই কথাই আন্দোলন করতে লাগলেন । কিন্ত হেকিমের ওপর বুদ্ধ ঠাকুরদার এতই বিশ্বাস জম্মেছিল বে, তিনি কোন কথাই কর্ণপাত করলেন না। বড়ই উদ্বেগে সেই দিনরাত কেটে গেল।
পরদিন প্রাতঃকালেই হাকিম সাহেব এসে হাজির হলেন, তার সঙ্গে অন্ত কেউ ছিল না। তিনি বসেই তাঁর দীর্ঘ চাপকানের পকেট থেকে, কাগজে মোড়া লম্বামত কি একটা বার করলেন। আমার ত সেই জিনিষটা! দেখেই মুখ শুকিয়ে গেল, বুক ছুড় ছুড় করতে লাগল, চোথেও জল এল । আমার সেই অবস্থা দেখে, হেকিম সাহেব আমার পিঠ চাপড়ে বল্লেন, “রো! মত, বাচ্চা, কুচ দরদ নেই হোগা ।” তারপর কাগজের মোড়ক খুললেন, দেখা গেল স্থচের মত তীক্ষাগ্র একখানি অস্ত্র। হেকিম বললেন, আমাকে শুতেও হু'বে না, যেমন বসেঃ আছি, তেমনি বসে” থাকলেই চল্বে। কোন অনুষ্ঠান আয়োজনের দরকার হ'ল না। হাঁকিম আমার ডান চোখের ওপরের পাত। বন্ধ
জলধর সেনের আত্মজীবনী মু
করে, নাকের ঠিক পাশে তার সেই তীক্ষাগ্র শলাক৷ সামান্ত একটু বিধিয়ে দিলেন । সামান্ত একটা কাট ফুটে যেমন বেদনা বোঁধ হয়» আমি ততটুকুই বেদনা বোধ করলুম। স্থৃত্তরাঁং চীৎকার "আহা, উহ্ন করতে হ'ল না। তিনি যখন শলাকাটা টেনে বার করলেন, তখন তাঁরই সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ছু'ইঞ্চি মাঁপের একট সরুশিরা বাঁর হয়ে চোখের ওপর ঝুলতে লাগল । সেই শিরার এক অংশ অস্ত্র করার স্থানেই আটকে রইল। হেকিম সাহেব তার পকেট থেকে একট! কোটা বার করলেন। সেই কোটার মধ্যে একটা মলম ছিল। ক্ষুত্র একটু কাগজে সেই মলম লাগিয়ে ক্ষতস্থীনের ওপর বসিয়ে দিলেন। তারপব বললেন, চাঁর পাঁচ দ্রিনের মধ্যে ক্ষত শুকিয়ে যাবে, আর এ শিরাটা আপনা হতেই পড়ে যাবে । তিন দিন প্লান বন্ধ । আহারের ব্যবস্থা হ'ল, এ তিন দিন ভাত চিনি, আর কিছুই নয়। হেকিম সাহেব বললেন, তিনি ছু'একদিন অপেক্ষা করবেন, তার পরই ঢাকায় চলে" ঘাবেন। ঢাকা থেকে ফেরবার সময়ে, এখানে ছু'চার দিন থেকে অপর চোখেও আন্ত্র প্রয়োগ করবেন। এই বলে তিনি বিদায় হলেন।
দ্িনমান ভালই গেল, কোন রকম অস্ুখই বোধ করলুম না সন্ধ্যার মুখে ভয়ানক জবর এল, সারারাত্রি জরের জালায় ছটফট করতে লাগলুম ॥ চোখেতে কিন্তু কোন রকম যন্ত্রণা অনুভব করলুম না। বাসার সকলে চিন্তিত হলেন, কোন রকমে রাত্রি কেটে গেল। গ্রাতঃকালে উঠেই বড়দাদ1। হেকিমের বাসায় গেলেন । তিনি ষ্টেশনের কাছে একট! দোকানে বাঁপা করেছিলেন ৷ বড়দাদ! সেখানে গিয়ে শুনলেন, একটু পূর্ব্বেই ষে সীমার ছেড়েছে, হেকিম সাহেব সেই ট্রামারে ঢাক যাত্রা করেছেন। তিনি বাসায় ফিরে এলেন, সকলে মহাচিস্তিত হয়ে পড়ল ॥ সৌভাগ্যক্রমে বেল। ৯১০ টাঁর সময়ে আমার জ্বর ছেড়ে গেদ। তখন
২৮ জলধর সেনের আত্মজীবনী
হেকিমের ব্যবস্থামত ভাত ও চিনি পথ্য পেলুম। তিনদিন এ ভাবেই চললো । চতুর্থ দিন প্রাতঃকালে সেই শিরাটা আপন হতেই পড়ে” গেল। দেখ গেল, ক্ষতস্থানও শুকিয়ে গেছে। অত্যাশ্চধ্যের ব্যাপার এই যে, সেই সময় থেকে আরস্ত করে আজ পর্যন্ত, এই প্রায় ৬০ বছরের মধ্যে আমার চোখে কোন অসুখ হয় নি, ছ' মাসের অন্বত্বও ঘুচে গেছে । আরও আশ্চর্যের বিষয় এই যে, যে চোঁখে অস্ত্রোপচার হয়নি, সেটাঁরও অস্ুথ সেরে গেছে । তারপর থেকে অনুসন্ধান করেও সে হেকিম সাহেবের খবর মেলেনি । ঢাঁকা থেকে ফেরবার সময়ে আমাদের বাসায় আসবেন বলেছিলেন, সে কথাও তিনি রক্ষা করেন নি। এই অদ্ভুত উপায়ে আমার ছ-মাসের অন্ধত্ব ঘুচে গিয়েছে
এইবার আমার লেখাপড়া শেখার কথা গোড়া থেকে বলি। আমাদের সময়ে সকল ছেলেকেই গোড়ায় পাঠশালাষ পড়তে হত। যেখানে ইংরেজী বা বাঙ্গলা স্কুল ছিল না এবং যেখানকার ছেলেদের অভিভাবকেরা সঙ্গতিসম্পন্ন ছিলেন না, সেখানে তাদের ছেলেদের লেখাপড়া এঁ পাঠশালা পধ্যস্তই । সেকালের পাঠশাল! সম্বন্ধে এইখানে দু'একটা কথা বলতে চাই, যদিও আমি কখনও পাঠশালায় পড়িনি। প্রাতংস্মরণীর বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রথম ভাগ “বণ পরিচয়” হাতে করে বাঙ্গল। স্কুলেই প্রবেশ করেছিলুম, তা” ছলেও আমাদের গ্রামে যে পাঠ- শীল। ছিল তা” আমি দেখেছি । এখনও তার চিত্র আমার স্থৃতিপথে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে ।
আমাদের গ্রামে, আমাদের পাড়ায় একজন খুব অবস্থাঁপন্ন তন্তবায় ছিলেন। গ্রামের বাজারে তার দেশী কাপড়ের দোকাঁন ছিল, বাড়ীতে ৩০৪০ খানি তাঁত চল্ত। বাঁড়ীও বড় ছিল, দোতালা অট্রালিক!। সুন্দর পূজার মণ্ডপ ছিল। সেই তন্তবায়ের নাম রামমোহন প্রামাণিক ।
জলধর সেনের আতুজীবনী ২৯
তীর ছুই ছেলে ছিল । জ্যে্ট ব্জনাথ প্রামাণিক বিষয়কর্্ম দেখতেন; কনিষ্ঠ দ্বারকানাথ প্রামাণিক গ্রামের ইংরেজী স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ হুয়ে ভাকবিভাগে চাকরী নিয়েছিলেন। ইনি ৩৫ বছর সুখ্যাতির সঙ্গে চাকরী ক'রে অবসর গ্রহণ করেন। তারপর ২৫ বছর ধরে? পেন্সন ভোগ করে, ইংরেজি ১৯২২ সালের শেষে দেহত্যাগ করেছেন। তাঁদের অবস্থা এখন অত্যন্তই মলিন হয়েছে । বাড়ীতে তাতের সম্পর্কই নেই। বিলাতী কপেড়ের প্রতিযোগিতায় দোকান উঠে গিয়েছে । প্রকাণ্ড অদ্টালিক ভেঙ্গে পড়েছে। তারা যে পাড়ায় বাস করতেন, সে পাড়ার নামই তাতিপাড়া ছিল। আমর! বাল্যকালে দেখেছি, এই তাতিপাঁড়ায় কম করে হলেও ১৫০ তাত চল্তো!। এই পাড় থেকে যুবক-বৃদ্ধ-বাঁলকে চার-পাঁচ শত তাঁতী বার হু'ত। এখন সে পাড়ায় একথানাঁও তাঁত নেই, তাতিপাড়া প্রায় জনশূন্য হয়েছে । ছু'তিন ঘর তাঁতী কোন রকমে আছে। কেউ বা বিলাতী কাপড়ের দোকান করে ; কেউ ব! বিলিতী সুতা বিক্রি করে কোন গতিকে দিন চালাচ্ছে। এই তাঁতী পাড়ার কবি-গানের দল, সক্কীর্তনের দল আমাদের গ্রামে অপরাজেয় ছিল। অন্ত পাড়ার কোন দলই এদের সঙ্গে পেরে উঠত না। এখন আর সেদিন নেই, সব শ্শানগ্রায় হয়েছে । এই ভগ্না- বশেষের মধ্যে রামমোহন গ্রামাণিকের চণ্তীমণ্ডপ এখনও অক্ষত শরীরে বিমান আছে। আর এই চণ্তীমণ্ডপের পাশ দিয়ে এখনও যখন আমাঁদের বাড়ী যাই, তখন মানস চক্ষে সেই চণ্তীমণগ্ডপে আমার বাল্য- কালের সেই পাঠশালার দৃশ্য দেখতে পাই। এই পাঠশালার যিনি গুরুমহাঁশয় ছিলেন, তার নাম আমার মনে নেই। আমার অপেক্ষাও বয়সে বড় ধারা এখনও গ্রামে আছেন, তাদেরও জিজ্ঞাসা করেছি, তারাও আমারই মত সেই গুকুমহাঁশয়কে “বর্ধমেনে মশাই” বলে?
২১০ জলধর সেনের আস্মজীবনী
জানতেন ও ডাকতেন। অর্থাৎ সেই গুরুমশয়ের বাড়ী বর্ধমান জেলার কোন গ্রামে ছিল। তিনি জাতিতে ব্রাহ্মণ ছিলেন । কি উপলক্ষে, কবে আমাদের গ্রামে বিগ্ভা বিতরণের জগ্ত তার শুভাগমন হয়েছিল, গ্রামের ইতিহাসে তা” লেখা নেই। এখনকার মত অন্ুুসন্ধিৎসা1 যদি সেকালে থাকত, তাহলে আমার পরমপুজনীয় কাঙ্গাল হরিনাথের কাছে জিজ্ঞাস! করলে নিশ্চয়ই জানতে পাঁরতুম। তারযে স্বলিখিত ডাষেরী আছে, তাতেও এই প্বর্ধমেনে মশায়ের” উল্লেখ আছে, কিন্তু কোন পরিচয় নেই। এই “্বদ্ধমেনে মশায়”গোরবর্ণ দীর্ঘাকার পুরুষ ছিলেন। মাথায় প্রকাণ্ড শিখ! ছিল। তার কণ্ঠম্বর উচ্চ ছিল। তিনি যখন বেত ভাতে করে, হুঙ্কার দ্দিয়ে উঠতেন, তখন আমর! দুরের কথা, অন্তঃপুরচারিণী মহিলারা পথ্যন্ত ভয়ে কম্পিত হতেন। এই গুরুমহাশয় ছুদ্ধর্য হলেও শিক্ষাদান বিষয়ে অতি নিপুণ ছিলেন। তার কাছে শিক্ষা গ্রহণের স্থযোগ আমার না হলেও, বার! তার ছাত্র ছিলেন, তাদের লেখ! যে ছাঁপার অক্ষরের মত হত, তাঁর! শুভঙ্কয়ী ও বাজার হিসেবে সুদক্ষ হতেন, তার প্রমাণ আমাদের গ্রামে বিস্তর ছিল। তার নিয়ম ছিল শিক্ষার্থীকে প্রথমে মাটিতে “অ-আ+ ক-খ' দাগ! বুলাতে হবে। একজন ছাত্র মাটিতে “ক-খ' দেগে দিত, অন্য ছাত্ররা তারই ওপর বাশের কঞ্চির কলম বুলাত। এই ছিল প্রথম অধ্যায়। দ্বিতীয় অধ্যায়ে কলাপাতায় ও তালপাতায় “অ-আ-ক-খ' লিখতে হ'ত। হাতের লেখা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও স্বন্দর হওয়া প্রধান শিক্ষার বিষয় ছিল। মুখে মুখে শতকিয়া, কড়াকিয়া, গঞণ্ডাকিয়া, নামতা শিখান হ'ত। প্রথম হতে ছু'তিন বছরের মধ্যে পাঠশালায় কোন বই পড়ান হ'ত না। যে সব ছেলেরা “কাগজের ক্লাসে প্রমোশন পেত, তারাই বই পড়বার অধিকারী হ'ত। পাঠশালার সেই
'ব্জলধর সেনের আত্ম্দীবন ৩১
একমেবাদ্বিতীয়ং বইএর নাম পশিশুবোৌধক”। এখনও বোঁধ হয় খোঁজ করলে কলকাতাঁর বটতলায় সে বই পাওয়! যেতে পারে। আমি পাঠশালায় না! পড়লেও, জ্যাঠামহাশয়ের কাজে শুনে শুনে পগঙ্গাবন্মনা” প্দাতীকর্ণণ মুখস্থ করে ফেলেছিলাম। এখনও মনে পড়ে--জাঠামশীয়ের সামনে পাড়িয়ে করজোড়ে স্থর করে প্গঙ্গ। বন্দনা” বলতাম-_ বন্দ মাতা হরধুনী পুরাণে মহিমা শুনি পতিতপাবনী পুরাতনী
এখনও মনে পড়ে--পিসীমা মুখে মুখে শেখাতেন, একে চন্দ্র, ছুয়ে পক্ষ, তিনে নেত্র, চার বেদ, পঞ্চ বাণ, ছয় খতু, সাত সমুদ্র, অষ্ট বস্তু, নবগ্রহ, দশ দ্রিক। সে পাঠশালার শিক্ষা এখন উঠে গিয়েছে; সে দীতাঁকর্ণ, সে গঙ্গাবন্দনা নেই। এখনও পাঠশালা আছে; কিন্তু সে “বর্ধমেনে গুরুমশীয়”ও নেই, সে শিক্ষাপদ্ধতিও নেই । এখন তাদের নাঁম হয়েছে, নিম্নপ্রাথমিক বিদ্যালয় ! |
এবার আঁমার পড়ার কথা বলি! আঁমি কোন পাঠশালায় পড়িনি। খড়ি প্রভৃতি যে সকল অনুষ্ঠান শিক্ষারন্তে করার ব্যবস্থা ছিল, সে উপলক্ষে পাঠশালার গুরুমহাশয় ও গৃহস্থের পুরোহিত মহাশয় কিছু পেতেন। আমার শিক্ষারন্তে গুরু-পুরোহিত দু'জনেই ফাকিতে পড়েছিলেন । বোঁধহয় সেই জন্যই মা সরন্বতীর অরুপায় আমার বিগ্তাও ফশাকিতে পড়েছিল। আমি একেবারেই বিষ্ভাসাগরের “্বর্ণপরিচয়” হাতে করে ছাত্রবৃত্তি স্কুলে প্রবিষ্ট হয়েছিলাম । সে সমম্নে আমাদের গ্রামের উচ্চ ইংরাজি বিদ্যালয়ে আমার বড় দাদা ও মেজ দাদা দু'জনেই পড়তেন। তথনকার ইংরাজি বি্যার মাদকতায় বিহ্বল হয়েই বোধহয় বড়দাদ' 'আমাকে পাঠশালা ডিঙিয়ে একেবারে বঙ্গবিস্তালয়ে প্রবি& করিয়ে
৩২ জলধর সেনের আত্মজীবনী
দিয়েছিলেন । কিন্তু তাহলেও জ্যাঠীমশায় আমাকে দাঁতাকর্ণ, গঙ্গাবন্দন। আর পিতৃকুল ও মাতৃকুলের উর্ধীতন সাতপুরুষের নাম কণস্থ না করিয়ে ছাড়েন নি। এখনকার ছেলেদের কেন, যুবকদেরও জিজ্ঞ/সা করলে তার! পিতামহের ওপর পর্য্যন্ত যেতে পারেন কিন! সন্দেহ! আমরা কিন্ত তখন নাম, গোত্র, এমন কি প্রবরও পর্যন্ত বলতে পারতাম! বিশেষতঃ সে সমষে শ্রাদ্ধ-তর্পণাদি সকলের ঘরেই হ'ত, সে উপলক্ষেও এ সকল শিক্ষা! হ'ত । এখন বাৎসরিক বা পার্বণ শ্রাদ্ধ একরকম উঠেই গেছে। যাক সে কথা, আমার বি্যারস্তের কথাই বলি। বাঙ্গলা স্কুলেই প্রথম প্রবেশ করার অপরাধ বড় দাদার স্বন্ধেই দিলাম বটে, কিন্তু আমার মনে হয় এ ব্যাপারে আর এক মহাপুরুষের হাত ছিল। তিনি আর কেউ নন আমার শিক্ষাগ্তরু, আমার দীক্ষাগুরু, আমার জীবনের আদর্শ স্বর্গীয় হরিনাথ মজুমদার মহাশয়, ঘিনি পরে কাঙ্গাল হরিনাথ
নামে পরিচিত হয়েছিলেন । আমার জীবনের কথা বলতে গেলে, কাঙ্গাল হরিনাথের কথাও বলতে হয়। সুতরাং এখানেই তাঁর জীবনের
পূর্বাভাস একটু দিয়ে রাখি ।
কাঙ্গাল হরিনাথ অথবা হরিনাথ মজুমদার বাঙ্গলা ১২৪০ সালে [ শ্রাবন মমসে, ইং ১৮৩৩ ] জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জাতিতে তিলি ছিলেন। আমাদের গ্রামে তখনও এবং এখনও তিলি জাতি প্রধান । বিগ্ঠায় প্রধান ন! হ'লেও, ধনে-জনে তখনও তারা প্রধান ছিলেন, এখনও আছেন। এই তিলিজাতীয় মজুমদার বংশে হরিনাথ জন্মগ্রহণ করেন। আমার বোধ হয়, আমাদের গ্রামে মজুমদার মহাশয়ের! সর্বপ্রধান না হ'লেও, বড় ধনী ছিলেন । এই ধনী মজুমদারদের এক শাখায় জন্মগ্রহণ করলেও" কাঙ্গাল হরিনাথের পিতা বিশেষ সঙ্গতিসম্পন্ন ছিলেন ন। হরিনাথের বয়স যখন দু” বছর, তথন তাঁর পিতৃবিয়োগ হয়। তারই
জলধর সেনের আত্মজীবনী ৩৬
বছর দুই-তিন পরেই তাঁর মাভাঠাকুরাণীও মারা ধান। হরিনাথের আত্মীয়ন্ব গন অবস্থাপন্ন হ”লেও, কেউই পিতৃমাতৃহীন বালকের ভার গ্রহণ করেন নি। বালক সত্যসত্যই নিবাশ্রষ হ'য়ে পড়েছিলেন। কেউই , তাকে সাহাধ্য করতে অগ্রসর হ'ন নি। তার এক বুদ্ধ পিতামহী ছিলেন, তিনিই এই অনাথ বালককে আশ্রয় দিয়েছলেন। এই বিধণাবও গ্রাসাচ্ছাদনের বিশেব উপায় ছিল না। তান কটসংগৃহীহ অন্ধের ভাগ হরিনাথকে দিয়ে, তাকে অন্নভাবে-মূত্যুর হাত থেকে কিছুদিন রক্ষা করেন। ঘার অন্নের সংস্থান নেই, তর লেখাপড়ার ব্যবস্থা কে করবে! স্থতরাং ইরিনাথের ব|ল্যকালে লেখাপড়া শিখবার স্থযোগ মোটেই হয় নি। গ্রামে গুরুমশ[যের যে পাঠশালা ছিপ, তাতেই তিনি কয়েক দিনের ভন্যে প্রবেশ করেন। একে অভিভাবকহীন তাতে নিঃসন্থল ; কাজেহ হরিনাথ পাঠশাল।র শিক্ষায় একেবারেই উদাসীন ছিল। তাঁরই মুখে শুনেছি লেখাপড়ার দিকে তার মোটেই মন ছিল না। এমন কি, পাঠশালায় যাবার ভয়ে একদিন তিনি সকাল থেকে খিকাল পধ্যস্ত তাদের বাড়ীর কাছের একটা কুয়ায় মধ্যে লুকিয়েছিলেন। তাহলেও পাঠশালার যা? প্রধান শিক্ষা, তা? তিনি আহত করেছিলেন । বার বছর বয়সে তার হাতের লেখা অতি স্বন্দর হয়েছিল, খার সামান্য হিসাবপত্রও তিনি করতে পারতেন । এই সময়ে তার আশ্রবদাত্রী সেই বিধবাও মারা যান। তখন ঠিনি দুপুর বেল! কে।ন ঠাকুর বাড়াতে গিয়ে বসে থাকতেন। বিগ্রঠ্র ভোগ হয়ে গেলে, অতিথি-অভ্যাগতেরা যখন প্রসাদ পেতো, তিনিও সেহ প্রসাদ পেয়ে ক্ষুধার নিবুত্তি করতেন । রাত্রে কেউ ঘর্দি ডেকে দিত, তা"হ'লেই তার আহার হত নতুবা উপবাস। তিনি আমাদের কাছে গল্প করেছেন যে, তার পরার একথানি মাত্র
কাপড় ছিল। সেখনি যখন এমন শতচ্ছিন হয়ে গেল যে, লজ্জ। মত]
৪ জলধর সেনের আত্মজীবনী,
নিবারণের আর কোন উপায় নেই, তখন গাঁয়ের এক ভদ্রলোকের একথানি গ্রন্থ নকল ক'রে দিয়ে একথানি কাপড় পাঁন, আর তাতেই তাঁর লঙ্জ। নিবারিত হয়।
তার এই অবস্থা দেখে বাজারের এক দোকানদার তাকে দোকানের চাকরীতে বাহাল করেন । তার বেতন স্থির হয় প্রতি দিন দু'টো ক'রে পয়সা । দোকানে যাঁরা কাপড় কিন্তে আস্ত, তাদের জন্তে তামাক দেওয়। আর তাদের কাপড় গুছিয়ে দেওয়। তাঁর দিনের বেলার কাজ ছিল। সন্ধ্যার পর যখন দোকানে কোন খরিদ্দার থাকত না, সে সময়ে তাকে দোকানে খাতা লিখতে হ'ত । ছুপুরে ঠাকুরবাড়ীর প্রসাদ আর রাত্রে ছু'পয়সার জলপান এই ছিল তাঁর সম্প। কিন্তু এ চাঁঝরীও তাঁকে বেশী দিন করতে হ'ল না। তিনি যে অনন্যসাধারণ মনম্থিতা ও সত্যনিষ্ঠার জন্তে পরে বরণীয় হয়ে গিয়েছেন, এই বাল্যকালেই তার পরিচয় পাঁওয়। গিয়েছিল । তিনি যে দোকানে কাঁজ করতেন, সেই দোকানদারের অপর এক লোকের কাছে কাপড়ের হিসাবে কিছু পাওনা ছিল। এই পাওনা নিয়ে উভয় পক্ষে বিবাদ হওয়ায়, দোকানদার প্রতিশোধ নিতে দোকানের খাতা জাল ক'রে অপর পক্ষের কাছে অনেক দাবী করার মতলব করেন। দোকানদার হরিনাথকে এই খাত। জাল করতে বলেন। বার বছরের বালক হরিনাথ এমন মিথ্যা কাজ করতে ্বীকত হ'ন না। তিনি আমাদের বলেছিলেন, যখন তার কাছে এই প্রন্তাব ক'রলে, তথন দ্বণায় তার সর্বশরীর শিউরে উঠেছিল। তিনি তখন ভুলে গেলেন যে, ভিক্ষার অন্ধে তাঁকে উদ্দরপূর্ণ ক'রতে হয়-- দোকাঁনের এই সামান্ত চাকরীট! গেলে তার আর কোন উপায়ই থাকৰে না। এক বেল! অনাহারেই কাটাতে হবে, কাপড়ের অভাবে দ্বিগন্বর হ'তে হ'বে--এ কম কষ্টের কথা নয়। কিন্তু তখনই তাঁর প্রাণের মধ্যে
জলধর সেনের আত্মজীবনী ৩৫
থেকে কে বলে উঠল, ছিঃ ছি অমন কাজ কর ন!, জাল করা মহাপাপ । বার বছরের বালকের মনে তখন অমানুষিক বলের সঞ্চার হল। তিনি সেই মুহুর্তেই দোকানের চাকরী ত্যাগ ক'রে চলে এলেন। সত্যের ওপর এই অবিচলিত শ্রদ্ধা, হৃদয়ের ভেতর দেবতার বাণী এই দিন থেকে জীবনের শেষ মুহুর্ত পধ্যন্ত তাকে পরিত্যাগ করে নি। আর কোন দিন কোন থিগ্ভালয়ে লেখাপড়া না শিথেও, কাঙ্গাল হরিনাথ অদ্ধিতীয্ব সাহিত্যিক ও অশেষ শাস্ত্রজ্ঞ হয়েছিলেন ।
এইবার আঁমার লেখাপড়া শিক্ষার কথা বলি। পূর্বেই বলেছি যে, আমাদের দেশের প্রচলিত নিয়ম লজ্ঘন করে আমি পাঠশালার পরিবর্তে প্রথমেই বাঙ্গলা-স্কুলে প্রবেশ করি। আমাদের গ্রামে তখন একটি উচ্চশ্রেণীর ইংরাজী স্কুল ছিল। ইংরাজী স্কুল যখন গ্রতিষ্ঠিত হয়, তখনকার একটি গল্প এ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা, আমাদের গ্রামের সে সময়ের সর্বপ্রধান ধনী পরলোকগত মথুরানাথ কুণ্ডু মহাশয়ের মুখে আমি শুনেছিলাম। তিনি বলেছিলেন-_“আমাদের এ অঞ্চলের মধ্যে ইংরাজী লেখাপড়া শিক্ষার জন্তে কোন স্কুল না থাকায়, আমি চেষ্টা করে ছোটথাট একটা ইংরাজী স্কুন প্রতিষ্ঠা করি। আমাদের গ্রামের কৃষ্ধন মজুমদার সেই সময় ঢাকা কলেজ থেকে সিনিয়ার পরীক্ষায় পাশ হন, আমি তাকেই আমার স্কুলের শিক্ষক নিযুক্ত করি। তখন আমাদের গৌরী নদী দিয়েই বড় বড় স্টীমার ষাতায়াত করতো । রেলগাড়ী তখনও আমাদের দেশে আসেনি । লাটনাহেব ও বড় বড় রাজপুরুষের। ট্টামারে করে পূর্বববঙ্গে যাবার সময় আমাদের গ্রামের নীচের নদী দিয়েই যেতেন। সেই সমন একদিন খবর পেলুম যে; হাতকাট। গভর্ণর জেনারেল লর্ড হাডিঞ্জ ট্টামার করে এদিক দিয়েই যাবেন। তাকে পাকৃড়াও করবার জগ্কে আমি আয়োজন করলুম। নদীর ভাটিতে ঘোড়সওয়ায় পাঠিয়ে তাকে বলে
৩৬ জলধর সেনের আত্মজীবন*
দিলুম, দূরে ষ্টিমারের ধেঁণয়। দেখলেই সে ধেন ঘোড়া জোরে চালিয়ে এসে আমাকে খবর দেয়। এদ্দিকে আমি বারো দীড়ওয়ালা একখানা নৌকা স্থন্দর করে সাজিয়ে নদী হীরে অপেক্ষা করতে লাগলুম । আমার পোষাক পররচ্ছদ ব্যখহার করার কোন অভ্যাস ছিল না। ইংরাজী ত দূরে থাক, বাঙ্গলা লেখাপড়াও আমি ভাল শিখিনি। কিন্তু আমার অতুল সাহস ছিল। আর দেই সাহসে নির্ভর করেই আমি বড়লাট সাহেবের ট্টাগার আঁটক করতে গিছলুম । আমার দৃঢ় বিশ্বান ছিল যে, গভর্ণর জেনারেল সাহেবকে আটক করে, গ্রামে এনে, আমার ইংরাজী স্কুল দেখাতে পারবই । এই বিশ্বাসের জোরেই আমি সকালেই যতটা সম্ভণ নানারকম বাঙ্গালীর খাগ্ঠ সামগ্রীর তৈরী করিয়েছিলুম |
“বেল! বাঁরট1র সময় ঘোঁড়সওয়ার এসে খবর দিল--লাট সাহেবের ধুয়ৌোকল আসছে । আমি তখন আমার সেই বাব-দাড়ি নৌকা নিয়ে নদীর মধ্যে গেলুম । ম।ঝিদের উপদেশ দিয়ে রাখলুম, ধুঁয়োকল এগিক্ে এলেই ঠিক তাঁর সামনেই যেন নৌকা নিয়ে চীলিয়ে দেষ। আমি নিজে এক লাল নিশান হাতে কুরে নৌকার বাইরে দাঁণ়ষে রইলুম । ধুঁয়োকল যখন নদীর ঝক ফিরে আমাদের গ্রামের ঠিক সাঁমনে এলো, আমি তখন মাঝ নদীতে নৌকার ওপর দীড়য়ে লাল নিশান দেখাতে লাগলুম। কোন বিপদের সম্ভাবনা মনে করে ধুয়োকল যেই থেমে গেল, অমনি মাঝিরা বারোখানা প্লাড় ফেলে ধুঁয়োকলের পাশে লাগিয়ে দিলে। ধু'য়োকলের কর্মচারীরা ও লাট সাঁভেবের সঙ্গী সাহেবরা কি ব্যপার বুঝতে না পেরে, যে দিকে আমার নৌব1 লেগেছিল, সেই দ্রিকে এসে পড়লো । তাঁদের মধ্যে একজন জিজ্ঞাসা করলে “তোম কোন্ হায়), আমি ইংরাজী ত জানিই না, হিন্দিও জীনতুম না। সাহেব যেই বল্লে €তীম কোন্ স্ট্যায়।” আমি তাড়াতাড়ি জবাব দিলু
জলধর সেনের আত্মজাবনী তই
“আমি মথুর কু হায়) তখন আবার প্রশ্ন হোল 'ক্যায়। মাংতা।, আমি বললুম, "লট সাঁহেব মাতা | এই বলেই কোন আদেশের অপেক্ষা না ক'রে এক লাফে ধুঁয়োকলের ওপর চড়লুম। তখন একজন সাহেব ধুঁয়োকপের একটা কামরা থেকে বার হয়ে এলেন। আমি চেয়ে দেখলুম, তার একখান! হাঁত কাঁটা | তখনই বুঝলুম ইনিই লাট সাহেব । আমি হাটু পেতে বসে দু'হাত তুলে তাঁকে সেলাম করলুম । লাটসাহেব ইংরাজীতে আমায় কি গিজ্ঞাসা করলেন । আমি উত্তর দিলুম_-“হুজুর নো ইংলিস |, লাট সাহেব হেসে পাশের একজনকে কি বললেন। সে সাহেবটি বালা জাঁনতেন। হিনি আমাকে ডিজ্ঞাসা করলেন, “কি চাও তুমি? আমি তাকে বললুম --'আমাঁর নাম মথুর কুণ্ডু, এই পাশের কুমারখালি গ্রামে আমার বাস। আমি নিজের জন্য কিছুই চাই না। আমার গ্রামের ছেলের! ইংরাঁগী শিখতে পায় না, সেইজন্যে এক ইংরাজি স্কুল বসিয়েছি। লাঁট সাহেবকে সেই স্কুলে পায়ের ধূলে! দিতে হবে |” সাচ্বটি লাট সাহেবকে আমার প্রার্থনা জানাল্ন, লাট সাহেব হেসে আমার পিঠ চাপড়ে বল্লেন--“ওয়েল কুওু, আই উইল গে। নাউ । ভখন আর কি, লাট সাহেব ও তার সঙ্গে পাচ ছ'জন সাহেব আমার নৌকায় উঠলেন। নৌকা এসে স্কুলের থাঁটে লাগল । সাহেব স্কুল দেখে খুসী হলেন। হেডনাষ্টার কষ্ণধন মজুমদারের সঙ্গে কথা বলে আরও খুণী হলেন। তারপর বল্লেন, আমি কল্কাতায় ফিরে গিয়ে তোমায় স্কুলের জন্তে য1 করতে হয় করবো ।” তখনও গভর্ণমেপ্ট মফঃস্বলের স্কুলের জন্তে কোঁন ব্যবস্থাই করেননি । লর্ড হাড়িঞ্জ তাঁর কথা রক্ষ। করে গিয়েছিলেন । তিনি দেশে ফিরে যাবার সময় আমার স্কুলের কথা ভাল করে লিখে রেখে গিয়েছিলেন। সেইজন্তেই লর্ড ভালহৌসির সময়ে বথন প্রথম মফঃব্বলের স্কুলে সাহায্য দেবার প্রথার প্রবর্তন হয়, তখন আমার স্কুলই প্রথম
৩৮ জলধর সেনের আত্মজীবনী
সাহায্য পেয়েছিল । আমার স্কুল দেখে লাট সাহেব যেই ্টীমারে যেতে প্রস্তুত হলেন, তখন আমি হাত যোড় করে বল্পুম-_-“হুজুর একটু জলষোগ করতে হবে।' কুষ্থধনবাবু সেই কথা লাট সাহেবকে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি বললেন-_"অল রাইট |, পাঁশের একট! ঘরেই টেবিলে নানারকম অগ্নব্যঞ্জন, পাঁয়স, পিষ্টক, মিষ্টান্ন সাজিয়ে রাঁথা হয়েছিল। লাটস'হেব ও সঙ্গীরা এই 'আয়োজন দেখে মহ] খুসী হলেন । যাঁরযা ইচ্ছা খেতে লাগলেন। একটা জিনিষ লাট সাহেবের বড়ই মুখপ্রিয় হয়েছিল । একথাঁনা থালাতে পোস্ত দিয়ে বকফুল ভেজে রাখা হয়েছিল। লাটসাহেব তার তিনচারটে খেয়ে ভারী খুসী। তিনি আমাকে বললেন--'ওয়েল মথুর কু, ভেরি গুড থিং।” তারগর তারা চলে গেলেন। এই বকফুল ভাজ। খাইয়েই আমি আমার স্কুলের জন্তে সাহায্য আদায় করেছিলুম 1৮ আমার পড়াশুনার কথ! বলতে গিয়ে এতক্ষণ আমাদের গ্রামের ইংরাজী স্কুল কি রকমে আরম্ভ হ'ল তারই বিবরণ বললুম। এখন আমার বিষ্তারস্তের কথা ৰলি। আমি যখন প্রথম পড়াশুনা আরম্ভ করি, তখন আমাদের গ্রামে একট উচ্চ-ইংরাজী স্কুল, একটী বঙ্গ বিষ্ভালয়, একটি বালিকা] বিগ্তালয়» আর ছু” তিনটা পাঠশালা ছিল। এসব ছাড়া ৪1৫টি টোল ছিল। আমার বড়দাঁদা ত বাঙ্গল। স্কুলেই পড়েন নি। তার শিক্ষারস্তই ইংরাজী লে। মেজদাদা বাংল! ছাত্রবৃত্তি পাশ করে ইংরাজী স্কুলে ভন্তি হ'ন। আমার যখন স্কুলে পড়বার কথা হ'ল, তখন বড়দাদা ও মেজদাদার পরামর্শে জ্যাঠামশাই আমাকে পাঠশালায় না দিয়ে একেবারে বাংল! স্কুলে ভত্তি করে দিলেন । সে সময় বাংল! স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন ্ব্গীয় হরিনাথ মজুমদার । তিনিই পরে সাধক কাঙ্গাল হরিনাথ নাসে গেঁশবিখ্যাত হয়েছিলেন । বাংলা স্কুলের নিম্ন শ্রেণীতে কি পড়েছিলাম
'জলধর সেনের আতুজীবনী ৩৯
না পডেছিলাঁম, তা আমার মোটেই মনে মেই। আমার মনে পড়ে, ষখন তৃতীয় শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণীতে উঠলুম। কারণ সেই সময় থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রমোশন পাওয়! পর্যাস্ত আমাকে যে লাঞ্ছনা ও নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছিল, তা এখনও আমাঁব মনে আছে। বাংল! সাহিত্য, ইতিহাস, ভূগোল, এই তিন বিষয়ে আমি ক্লাসের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছাত্র ছিলুম । কিন্ত গোল বাঁধত অক্ষের বেলায় । অন্বশান্্ আমার কাছে বাঘের চেয়েও বেশী ভয়ের ব্যাপার ছিল। সে তিন বছরের মধ্যে এমন দিন যাঁয় নি, যে দ্রিন অঙ্কের মাষ্টাবের কাছ থেকে বেতের মার ব! কানমল! না খেষেছি। এত নির্যাতনেও কিন্তু আমাদের অঙ্গের মাষ্টার খ্ব্গীয় কেদারনাথ জোয়ারদার আমার মাথার মধ্যে পাটিগণিত বা ভ্যানিতি প্রবেশ করাতে পারেন নি। আমি যে সময়ের কথা বলছি, তখন পুজনীয় হরিনাথ মজুমদার মহাশয় বাংলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকতার ভার শ্ুযোগ্য ছাত্র নর্মাল স্কুলের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পুলিনচন্দ্র সিংহ মহাশয়ের ওপর দিষে নিঞ্জে বালিকা বিদ্তালয়ের উন্নতির চেষ্টায় বেণী মনোযোগ দিয়েছিলেন। তা হলেও বাংলা" বিদ্যালয়ের কর্তৃহ ভার তাঁর ওপরেই ছিল। বিগ্ালয়ের ছাত্রদের বাধিক পরীক্ষার তিনিই সাহিত্যের পরীক্ষক হতেন। আমি সে সব পরীক্ষায় সাহিত্যে সকল্বে চেয়ে বেশী নম্বর পেতুম | কিন্তু অস্কে যেবার১০র মধ্যে ৫ নম্বর পেতুম সেবার নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে করতুম। কাঙ্গাল হরিনাথ যদি মাথার ওপরে না থাকতেন, তাহলে এ তৃতয়ী শ্রেণীতেই আমাকে জীবন কাটাতে হ'ত। গণিতে এত বড় মুর্খকেও শিক্ষকমহাশয়ের। ওপরের শ্রেণীতে উঠিয়ে দিতেন। সাহিত্যে আমি সর্ধ্বশ্রেষ্ঠ ছাত্র, সুতরাং হরিনাথের কাছে আমার সাতখুন মাপ। এই কারণে বিষ্ভালয়ের শিক্ষকেরা আমার প্রমোশন বন্ধ করতে পারেননি ।
০৪০ জলধর সেনর আত্ুজীবনী '
অঙ্কের শিক্ষক কেদাঁর জোয়ারদার মশায় বেতের জোরে যা করতে পারেন নি, তা প্রধান শিক্ষক পুলিনচন্দ্র সি"্হ মহাশয়ের একদিনের একটা কার্যে সুসম্পন্ন হয়েছিল । তিনি একদিন আমাকে বিশেষ রকমে শাস্তি দেবার জন্যে এক সছুপায় অবলম্বন করেছিলেন । আমার বেশ মনে আছে আর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মনে থাকবে, দেনিন আমদের ক্ষেত্রতত্ব ব। জ্যামিতির পাঠ ছিল। তাঁর আগের ঘণ্টাতেই সাহিত্য পড়া হয়ে গিয়েছিল, সুতরাং আমি ক্লাসের সকলের উপরে ছিলুম | এখন স্কুলে একটা নিয়ম উঠে গেছে, কিন্ত আমাদের সমযে সে নিয়ম ছিল! কোন ছাত্রকে শিক্ষক মহাশয় একটা প্রশ্ন করলে সে যদি উত্তর নাদিতে পাবে, আর তার পরের ছাত্র সেই প্রশ্নেব উত্তর ঠিক দেয়, তাহ'লে তাকে সবিষে পক্রে ছাত্রহই সেই স্থানে বস্ছে পেত। এর প্রচলিত নাম ছিল ক্লাসে উঠা-নামা। অন্ত দিন যখনই অক্কের ক্লাস আরম্ভ হ'ত তখনই আমি ভয়ে ভয়ে নিজের জাগা ছেড়ে একবারে সকলের শেষে অর্থাৎ লাষ্ট গিয়ে বসতুম। (সদ্দিনও তাই করেছিলুম। কিন্ত প্রধান শিক্ষক যখন দেখলেন যে, আমি লাষ্ট বসে আছি, তিন তখন আমার কান ধরে টেনে তুলে একবারে ফাষ্ট বসিয়ে দিলেন । স্থতরাঁং প্রথমেই আমার ওপর জ্যামিতির প্রশ্ন হ'ল, আমি উত্তর দিতে পারলুম না । আমার পরে যে ছাত্র ছিল সে ঠিক উত্তর দিলে । তখন শিক্ষক মশায় অ|দেশ দিলেন যে, সে আমার ছুই কান মলে ওপরে গিয়ে বসবে । এইভাবে ক্রমাগত আমার ওপর প্রশ্ন হ'তে লাগল, আর আমার নীচের ছাত্র সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে অসার কাঁন মলে ওপরে গিয়ে বস্তে লাগল । আমাদের ক্লাসে সেদিন আমরা ১৩জন ছাত্র ছিলুম। ১২ জন ছাত্রের হাতে ২৪ট1 কাঁন মল। খেয়ে, আমার হৃদয় মধ্যে গণিত- অধিষ্ঠাত্রী দেবীর সত্যিই নিদ্রীভঙ্গ হ'ল। সেইদিন কানের যন্ত্রণায় আর
'জলধর সেনের আতুজীবনী ৪১
অপমানে আমি দুর্জয় প্রতিজ্ঞা করলুম, যে করেই হোক আমি অঙ্শাস্ত শিখ“ই শিখব । সত্যিই সেই কানমল! থেকেই আমার মাথার মধ্যে গণিতশাস্ত্র প্রবেশ লাভ করেছিল। তাবই ফলে, পরে আমি মাইনর পরীক্ষা গণিতে পূর্ণ নম্বব লাভ করেছিলুম । বিশ্ববিগ্ঠালয়ের প্রবেশিকা! পরীক্ষায় পূর্ণ নম্বর পেয়ে, গণিতে সর্ধোচ্চ স্থান লাভ করেছিলুম, আর এল, এ পরীক্ষার সময় জেনাবেল এসেমব্লি কলেজে পূজনীয় অধ্যাপক গৌবশঙ্কব দে মহাঁশযেব সর্বশেষ্ঠ ছাত্র হযেছিলুম । এল, এ পরীক্ষাও গণিতে সর্ব্বোচ্চ নম্বব পেযেছিলুম । এখন যদিও অনেক ভূলে গিয়েছি, তবুও মনে আছে, আমি যখন জেনাবেল এসেম্র্রি কলেজে দ্বিতীয় বাধিক শ্রেণীতে পড়ি, তখন বাড়িতে বসে গণিশান্ত্র এত চট্চা করেছিলুম যে, সে সমযেব এম, এ ক্লাসেব গণিহের সমস্ত পাঠ্য আমার আযত্ত তয়ে গিষেছিল। এমন কি তার কয়েক বৎসর পরে আমি যখন "তথাকথিত সন্গ্যাস অবলম্থন কবে লক্ষ্যত্রষ্ট ধূমকেতুর মত হিমালয়ের কোলের ডেরাছুন সহবে উপস্থিত হযেছিলুম, তখন সেখানকার 1হ070922666169] 981৮৩% অফিসের প্রধান 0০79796০7 প্রসিদ্ধ গণিতজ্ঞ পণ্ডিত অধুনাপরলোকগত পূজনীষ কাঁলীমোহন ঘোষ মহাঁশয আমার গণিত-বিগ্তা পরীক্ষা করে অবাঁক হয়ে গিয়েছিলেন । মনে পড়ে আমার বিদ্যা পরীক্ষার জন্তে টিনি একটা জ্যামিতির প্রশ্ন আমাকে দেন, আমি ক্রমাগত তিনদিন অবিশ্রাস্ত পরিশ্রম ক'রে ও তিনশ রেখাস্কন ক'রে সেই উৎকট প্রশ্নের সমাধান করি।
আমার বাঙ্গলা স্কুলের পড়া আর বেশীদিন আগাল না। প্রথম শ্রেণীতে উঠেই আমার চোখের অস্থথ এমন বেড়ে উঠল যে, গ্রামের ডাক্তার আমার পড়াশুনা একেবারে বন্ধ করার হুকুম দিলেন, আর যত শীপ্র সম্ভব কলকাতায় চিকিৎসার জন্তে পাঠাবার ব্যবস্থা! করতে বললেন ।
৪২ জলধর মেনের আত্মজীবনী
আমার পিশতুতো! বড় ভাই স্বর্গীয় বঙ্কুবিহারী ব্রক্ম কলকাতায় থাকতেন । আমাদেরই গ্রামের নিকট-প্রতিবেণী নবকৃষ্ণ সাহা মহাশয়ের কলকাতায় চাউলের কারবার ছিল, দাদা সেই আড়তের প্রধান গদিয়ান ছিলেন। আমার জেঠতুতে। বড় ভাই তার আগের বছরেই গ্রামের ইংরাজী স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় ফেল করে কলিকা তাঁর ফ্রি চাচ্চ ইনষ্টিটিশনে পড়তে এসেছিলেন। তখন ইষ্টার্ণ বেঙ্গল রেল লাইন কুষ্টিয়া পর্য্যন্ত গিয়েছিল। আর পল্মাতীরে গোয়ালন্দ পর্য্যন্ত রেল লাইন করবার ব্যবস্থা হচ্চছিল। ঢাকা ও পূর্ববঙ্গের যাত্রীদের কুষ্টিয়ায় নেমে নৌকো করে যেতে হ'ত। ট্রীমার যাতায়াত তখনও হয়নি । জ্যাঠামশায় তখন বেচে ছিলেন, তিনি আমার পিশতুতো। ভাইকে লিখে পাঠালেন । চিঠি পেয়ে বড় দাদা! একদিন কলকাতী থেকে এসে আমায় সেখানে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করলেন। আমি তখন বালক। কলকাতায় গিয়ে সেই বয়সে আড়তে কেমন করে থাকবো» এই বিষয় চিন্তা করে জেঠামশায় আমার পিসিমাকেও সঙ্গে পাঠাবেন, ঠিক করলেন । সেই সময়ে আমাদেরই প্রতিবেশী স্বীয় হরিনাথ মজুমদার সপরিবারে কলকাতায় থাঁকতেন। স্থির হ'ল যে, তাঁর বাসাতেই গিষে উঠবো । কোন সালের কথা তা আমার মনে নেই। আমরা একদিন বাড়ি থেকে নৌকো! করে কুঠিয়ায় গিয়ে, সেখানে থেকে রেলে চড়ে কলকীতায় উপস্থিত হলুম। তারপর আমার চিকিৎসা আরম্ভ হ'ল। মে চিকিৎসার সব কথা পূর্বেই বলেছি।
হেকিমের চিকিৎসায় যখন আমার চোঁখের অসুখ সেরে গেল, তখন আবার লেখাপড়া শেখা আরম্ভ করতে হ'ল। কিন্ত একমুক্ষিলে পড়লুম। ছু”তিন বছর আগে পড়াশুনা ছেড়েছিলুম, এখন দেখলুম বাঙ্গালা স্কুলে পড়া আরম্ভ করতে গেলে, আমাকে আবার তৃতীয়
জলধর সেনের আতুজীবনী ৪৩.
শ্রেণীতে ভন্তি হতে হয় । আমার ছোট ভাই শশধর তখন বাঙলা স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ছিল । আমি বড়দাঁদাকে বললুম ছোট ভায়ের সঙ্গে এক ক্লাসে আমি পড়বো না। তিনি মহ] ভাবনায় পড়লেন। তখন গোয়ালন্দে আমাদের বাসা ছিল না, বড়দাদাই পরের বাসায় থেকে চাকরী করতেন, সেখানে আমাকে কি রকমে রাখা যায়? শেষে স্থির হ'ল যে, গোয়ালন্দে একটা বাসা করে, বড়-বৌ আর ছু" একজনকে নিয়ে যাওয়া! হবে, তাহলে আমি গোয়ালন্দে গিয়ে নতৃন মাইনর স্কুলে ভগ্তি হ'তে পারি। তাতেও আর এক অনস্থুবিধা উপস্থিত হ'ল । তখন আমার ইংরাজি বর্ণপরিচয়ও হয় নি। মাইনর স্কুলে নিম্মশ্রেণীতে ভর্তি হয়ে, মাইনর পরীক্ষা দিতে গেলে, আমাঁব বয়স ১৭।১৮ বছর হয়ে যাবে । আমি বড়দাদাকে বললুম, আপনি বদি রোজ সকালে ও সন্ধ্যার পর এক ঘণ্টা করে ইংরাজি পড়ান, তাহলে আমি ছু*মাসের মধ্যে মাইনর স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর উপযুক্ত ইংরাজি ভাষা শিখতে পারবো । বড়দাদ। বললেন, সে কি সম্ভব, তোমার অক্ষর পরিচয় হয়নি, আর তুমি হু'মাসের মধ্যে 1০1 01895 7০০% পড়তে পারবে? আমি বললুম, নিশ্চয় পারবো । তারপর ছু'মাসকাল আমি যে ইংরাজি পড়েছিলুম, সে কথ। আমার এখনও মনে আছে। ঠিক দু'মাস পরে আমাকে যখন গোয়ালন্ব মাইনর স্কুলে ভর্তি করার জন্যে বড়দাদা নিয়ে গেলেন, তখন স্কুলের হেডমাষ্টীর মশায় আমায় ইংরাজি পরীক্ষা করে প্রশংসা করলেন ও আমাকে তৃতীয় শ্রেণীতেই নিলেন।
তিন বছর গোয়ালন্দ স্কুলে পড়ে আমি মাইনর পরীক্ষা দিলুম ও ফরিদপুর জেলার সমস্ত পরীক্ষার্থীর মধ্যে শীর্ষস্থান অধিকার করে মাসিক ৫. টাকা বৃত্তিলাভ করলুম। সেই পরীক্ষায় আমি আরও একট। পুরস্কার পেয়েছিলুম । রাজবাড়ীর রাজা সু্যকূমার গুহরায়, ঢাকা বিভাগে
৪৪ জলধর সেনের আত্মজীবনী
মাইনর পবীক্ষাষ যে ছাত্র ইতিগসে সর্ধোচ্চি নম্বর পাবে, তাকে ঠিনি একটী রৌপ্যপদ্ক দিতে প্রতিশ্রত ছিলেন । আমি ইঠিহাঁসে সর্বোচ্চ স্থান পেয়ে সেই পুরস্কর লাভ করেছিলুম। বডদাঁদা মনেও করেননি যে আমি এমনভাবে পরীক্ষায উত্তীর্ণ হ'ব। তিনিস্থিব করেছিলেন যে, কোন রকমে মাইনর পাশ কবে আমি মোক্তারী পরীক্ষার জন্তে প্রস্তুত হ'ব। তখন মাইনর পাশ করলেই মোক্তারী দেওয়া যেতো । সে সময়ে আমাদের যে অবস্থা, তাতে উচ্চ শিক্ষালাভেব কল্পনা কারও মনে হয়নি । কিন্তু মাইনর পরীক্ষা আম।ব কৃতকার্যাত দেখে বড়দাদা তার দে সন্কল্প ত্যগ করলেন। আমার প্রবেশিক৷ পরীক্ষার জন্য প্রস্তত হওয়াই স্থিব হ'ল।
পণীক্ষা দেবার আগে ফি দাখিল কববাব সমযে যে ফবম পুরণ কবতে হয, তাঠে বৃত্তি পেলে কোন স্কুলে পডবে, লিখে দিতে হয। আমাদের হেডমাষ্টাব স্বর্গীয় কালীপ্রসন্ন বস্ব মশাষ আমাকে জিজ্ঞাসা না কবেই, বৃত্তি পেলে ফরিদ্রপুব জেলা স্কুলে পড়বে1, এহ লিখে দিয়েছিলেন । আব তিনি যদি জিজ্ঞাসা করতেন, তাহলেও আমি যে কোন স্কুলের কথা লিখে দিতে বলতুম, বলতে পাবি না । কাঁবণ আমি যে পবীক্ষায় পাশ হয়ে বৃত্তি পাঁবো, একথা স্বপ্নেও মনে করিনি । কোন রকমে পরীক্ষায় পাশ হয়ে, মৌক্তারী পরীক্ষা দেবো, এই আমার স্থির ছিল। সুতরাং যথন বৃদ্ভি পেলুম, তথন বিষম বিপদ উপস্থিত হ'ল । মাসিক ৫২ টাঁকা বৃত্তি নিষে ফবিদপুরের মত জায়গায় পডার খরচ চাঁলান বডদাঁদার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব ছিল। মাসে আর তিন চার টাকা হ'লে, কোন রকমে ফরিদপুরে পড়া চলতে পারতো । কিন্ত সে তিন চাঁব টাকা দেওয়াও বড়দাদার সাধ্যের বাইরে । আমার সৌভাগ্যক্রমে সেই সময়ে আমাদের গ্রামের পরলৌকগত মোঁহিনীমোহন চক্রবর্তী ফরিদপুরের
জলধর সেনের আত্মজীবনী ৪
ডেপুটা ম্যাঞ্িষ্টেট ছিলেন। «এই মোছইনীবাবুই পরে রাজকার্্য থেকে অবসর গ্রহণ করে কুষ্টয়াষ 'মোঁহুনী মিল” স্থাপন করেন এবং সে মিল এখন বাঙ্গল! দেশের প্রতিষ্ঠাপন্ন কাপড়ের কল কয়টার অন্ততম হয়েছে । প্রথমে মনে করেছিনুম ফরিদপুরে গিয়ে তাই আশ্রষ ভিক্ষা করবো । কিন্ধ একট কারণে প্রথমে তার আশ্রয়ে যাওয়া ত'ল ন।।
গোয়ালন্দ স্কুল থেকে আমার সঙ্গে একটী ছাত্র মাইনর পাশ কবেহিলেন। তাব নাম শ্রীযুক্ত দক্ষণারঞ্জন সেন। তিনি বি-এ পাশ করে এখনও গোয়ালন্দেই ওকালতি করছেন। তার বাবা উমেশচন্দ্ সেন তথন 'গোষালন্দের একজন বড় উঞ্চিল ছিলেন । ঠিনি দক্ষিণা রঞ্জনকে ফরিদপুরে পড়তে পাঠালেন । দক্ষিণা ফরিদপুরে একটি মেসে বাস স্থির করলেন আর আমাকে লিখলেন যে, তার বাবা মাসিক তার খরচের জন্যে ১৫২ টাকা দিবেন ও আমার «২ টাকা, এই ২০২ টাকায় আমাদের দুই বন্ধুরহ ফরিধপুবের পড়ার খরচ চলে যাবে । দক্ষিণারঞ্জনের সেই সাহায্য ও বন্ধুত্বের কথা আমি এই বুদ্ধ বয়সেও ভুলতে পারিনি । অযাচিতভাবে মোহিনাবাবুর গণগ্রহ হওয়ার চেযে বন্ধু দক্ষিণারঞরনের সাহ।য্য লওখাই আমি শ্রেয়; মনে করেছিলাম ।
ফরিদপুরে গিয়ে দক্ষিণাগ্ীনের সেই মেসে উপস্থিত হয়ে দেখলুম, সেটা মেস নধ, ফ রদপুরের কালেক্টরার এক কেরাণীর বাসা । তিনি কেরাণীগিথিও করেন আবার বাসার যে ঘরখানি রাস্তার দিকে, তাতে একট! মদেপ দোকানও খুলেচেন। পিছনদিকের তিনথানি ঘরে জনকয়েক ছাত্র আর কয়েকটী অফিসেব ক্রে।ণী নিয়ে বাস বেধেছেন। বাসাটা। এমন স্থানে যে, সেকথা মনে করলে এখনও হাদ্কল্প হয়। বাসার পেইনেই বড় বেশ্ঠাপল্লী । একদ্দিকে বেশ্যাপল্লী আর বামহাত্েই মদের দোকান, আম।র তো দেখেই চক্ষুস্থির ! যখন সেখানে উপস্থিত
৪৬ জলধর সেনের আত্মজীবনী
হয়েছি, তখন হঠাৎ চলেও যেতে পারলুম না । সেখানেই রয়ে গেলুম, আর গভর্ণমেপ্ট স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হলুম। তখন কালিদাস রায় মহাশয় এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক । দ্বিতীয় শিক্ষকের নাম আমার মনে নেই, তৃতীয় শিক্ষক ছিলেন নরেন্দ্র দেব রায় ।
কোন রকমে দ্িন পনের সেই নরকে বাস করে আমি অতিষ্ঠ হস্তে পড়েছিলাম । মাতাল আর বেশ্যার গোলমাল অসহ্য হয়ে উঠেছিল। অন্য কোন উপায় না পেয়ে একদিন মোহিনীবাবুর সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। তিনি প্রথমে আমাকে চিনতে পারলেন না। কিন্তু যখন আমার পরিচয় দিলুম, তিনি উঠে এসে আমাকে একেবারে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলেন। বল্লেন--“তুমি দ্বারীর ভাই, ফরিদপুরে এসেছ কেন?” আমি তখন আমার সমস্ত অবস্থা তাঁকে বল্লুম। তিনি হা হই করে উঠলেন--“আরে সর্বনাশ, বেশ্টাপাড়ার মধ্যে মদের দোকানে বাস! নিয়েচ ! যাও, এখনি জিনিষপত্র নিয়ে এখানে চলে এস।” আমি বল্লুম, “এমাসের কটা দ্িন গেলে হয় না?” তিনি হেসে বল্লেন-_ “ওঃ বুঝেছি, বাড়ী থেকে টাঁকা না এলে বুঝি তাদের মেসের খরচা মিটিয়ে দিতে পারবে না বলে আসতে চাচ্ছ না? পনের দিন ত সেখানে আছ, বড় বেশী হয তো তাদের ৪২1 ৫২ টাকা পাঁওন। হয়েচে।৮ এই কথ। বলে তিনি ঘরের মধ্যে চলে গেলেন, আবার মিনিট ছুই পরে বাইরে এসে আমার হাতে ১০ ২. টাঁক' গু'জে দ্রিয়ে বল্লেন--“এই টাকা দিয়ে যার যা দেনা! আছে শোধ করে এক ঘণ্টার মধ্যে এখানে চলে আসবে 1” আমি একটু ইতস্তত; করে বল্লুম--“আমার কাছে এখনও ৩।৪ টাকা আছে, তাতেই মেসের দেনা শোধ হয়ে যাবে।” তিনি বল্লেন--বেশ তো, তা তোমার হাঁতেই থাকুক, এই টাকাটাই খরচ কর না। আজই তোমার দাদীফে চিঠি দিয়ে দাও যে, আজ থেকে তোমার এখানে পড়ার
ঝলমর দেনের আত্মজীবনী ৪৭
সমস্ত ভার আমি নিলুম”, আমি কি বলবো ভেবে পেলুম না । তাকে প্রণাম করে উঠতেই, তিনি “তুমি সম্বোধন ছেড়ে বল্লেন--“চ্ঠাখ, তোর কোন সঙ্কোচের কারণ নেই। আমি তোর দাদা দ্বারীরও বড় ভাই। আমি তোর সাহাধ্য করতে বাধ্য । এটা আমার দান নয়, কর্তব্যকার্যয |” এর ওপর আর কথা বল! চলেনা । আমি তাকে প্রণাম করে বাসায় চলে এলুম। তখনই মেসের দেন! পাওনা শোধ করে দিয়ে, বন্ধু দক্ষিণারঞুনকে সমস্ত কথা বলে, আমার সাঁমান্ত কখানি বই আর বিছানা নিয়ে মোহিনীবাবুব বাঁসায উপস্থিত হলুম।
মহতের আশ্রয় পেলুম বটে, কিন্তু এ আশ্রয়ে বেশী দিন থাকতে পারলুম না। মোহিনীবাবু ফরিদপুরের ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট । এখন্ হাকিমের কি করেন জানি না, কিন্তু সেকালে হাকিমেবা ১২।১টার আগে কেউ ক/ছারী যেতেন না। বিশেষতঃ মোহিনীবাবু পরমনিষ্ঠাবান্ হিন্দু ছিলেন, তার পূজা আহ্বিক শেষ হতেই বেল! ১১টা বেজে যেত। তাঁরপর আহারাদি সেরে তিনি কাছারী যেতেন। তার বাসায় স্কুলের ছাত্র কেউ ছিল না। তার বড ছেলে শ্রীমান্ সত্যগ্রসন্ন তখন ৫1৬ বছরের বালক । সুতরাং মোহিনীবাবুর বাসায় ১০টার মধ্যে আহার করার স্থবিধা হ'ত না। আমারও এমন সাহস হ'ত না যে, একটু সকাল সকাল রান্নার জন্যে তাগাদা করি। মোহিনীবাঁবুর গৃহিণীও সে কথা বুঝতে পারেন নি। কাঁজেই আহারেব জন্তে অপেক্ষা করলে আমার স্কুলে যাওয়া দেরী হয়েযেত। এই কারণে মাঝে মাঝে আমাকে অনাহারে স্কুলে যেতে হত।
ঘটনাক্রমে একদিন মোহিনীবাবু এই কথা জানতে পারলেন । শুনলুম, সেদিন আহার করতে বসে তিনি বানুন ঠাকুরকে আমার ওপর দৃষ্টি রাখতে বল্লেন । ব্রাঙ্গণ অসন্কোচে বলে ফেল্লে, “সকাল সফাল
৪৮ জলধর সেনের আতুজীবনী
তে। অব দিন রান! হয়ে ওঠে না, তারি জন্তে স্কুলের ছেলেটিকে অনেক দিন না খেয়েই স্কুলে যেতে হয়।” এই কথা শুনে মোহিনীবাঁবু আঁপন ছেড়ে উঠে প্লাড়ালেন, আর অন্ন স্পর্শ করলেন না। অমন বে ধীর শান্ত মানুষ তারও ধৈধ্যচ্যুতি হ'ল। তিনি চীৎকার করে বন্লেন--“এমন অপরাধের প্রতিবিধান না হ'লে, আঁমি এ বাড়ীতে অন্ন গ্রহণ করবো না।”৮ এই বলে তিনি বাহরে গিযে, অভুক্ত অবস্থায় কাছারীতে চলে গেলেন। তার আর দেরী সইল না। তিনি কাছাবীঙে গিষেই আমাদের হেডমাষ্টটর হরিদাসবাবুকে চিঠি পিখে তার আবদ।৮ পাঠালেন । আর আমাকে তখনই তার সঙ্গে দেখা কবতে ছেড়ে বার জন্যে চেডমাষ্টারের অনুমতি চাইলেন। হেডমাষ্টটরর মশায় আশাকে লাইব্রেরাতে ডেকে নিয়ে বল্লেন--“ডেপুটী মোহিনীবাবু এখনি তোমাকে তার সঙ্গে দেখ করতে বলেছেন, এই আরদালির সঙ্গে এখনই যাঁও, আজ তোমার ছুটী।৮ এই কথা শুনে ভয়ে আমার মুখ শুকিয়ে গেল, হঠাৎ আমাকে কেন ডাকিয়ে পাঠালেন কিছুই বুঝতে পারলুম না ।
গভর্ণমেণ্ট স্কুল থেকে কাছারী বেশী দূর নয়। আমি এক রকম কাপতে কাপতে আরদাণির অনুসরণ করলুম । আরদালির সঙ্গে এজলাসে ঢুকতেই মোহিনীবাবু বিচার আসন ছেড়ে নেমে এলেন। আমার হাত ধরে নিজের খান কামরায় নিয়ে গেলেন। মনের আবেগে তখন তার ক্রোধ হয়ে গিয়েছিল। তিনি প্রথগে কিছুহ বল্তে পারলেন না। তারপর ধারে বল্লেন--“গ্ভাথ জলধর, তুই যে অনেক দিন না খেয়ে স্কুলে আপিস্, একথা একদিনও আমায় বণিস্নি! এযে আমার কি অন্ত।য়, কত অপরাধ হয়েছে, তা তুই ছেলেমানুষ বুঝবিনি। আজই এ কথ। আমি শুনচি আর তোরই মত ন| থেয়ে কাছারীতে এসেচি। তুই কিছু মনে করিসনি, এমন আর কখনও হবে না।৮
জলধর সেনের আতুজীবনী ৪৪
সেই থেকে যথাপময়ে আমার আহারের ব্যবস্থা হোল। আমি কিন্ত এতে বিশেষ অসোয়াস্তি বোধ করতে লাগলুম । মোহিনীবাবু দয়া করে আশ্রয় দিয়েছেন; তার ওপর এই ভাবে আবদার কর! কিছুতেই আমার মনঃপৃত হোল না।
আমি যে সময়ের কথা বলছি, সেটা ইংরাজী ১৮৭৬ সাল। তখন ফরিদপুরে রেল যায় নি। ট্রিমার ষ্টেশন ছিল কিন ঠিক মনে নেই। আর থাকলেও, আমার এমন সঙ্গতি ছিল না যে, স্ীমারের ভাড়া দিয়ে মাঝে মাঝে গোয়ালন্দে আসি। বাড়ী যাবার দরকার ছিল না) কারণ, আমার ধারা আপনার জন, তারা সকলেই তখন গোয়ালন্দে থাকতেন। দেশের বাড়ীতে আমার পিসীমা আর পিস্তুতো ভায়ের স্ত্রী বাস করতেন। আমি প্রাতি শনিবার ফরিদপুর থেকে গোয়ালনে আসতুম, আর সোমবারে অতি ভোরে যাত্রা করে যথাসময়ে স্কুলে পৌছতুম। তখনকার গোয়ালন্দ ফরিদপুর থেকে ন' ক্রোশ রাস্তা, আমি প্রতি শণিবার স্কুলের পর ১॥ ট।র সময়ে বাহির হয়ে রাত্রি ৭৮ মধ্যে অতিক্রম করতুম। পনের বছর বয়েসের এই পথ চলার অভ্যাস, পরের কালে আমার অনেক কাজে লেগে গিয়েছিল ।
এক শনিবারে গোয়ালন্দে এসে আমার অন্ুবিধার কথা জ্যেঠাইম! ও বৌদিদিকে বললুম। বড়দাদাকে কোন কথ! বলার সাহস হ'ত ন1। বৌদিদি বড়দাদাকে সমস্ত কথা বলায়, তিনি আমাকে ডেকে বপলেন-_ “ফরিদপুরে থেকে কাজ নেই, তুমি বাড়ী গিয়ে কুমারখালি স্কুলেই পড়! আরম্ভ কর। বাড়াতে পিসীগ! আছেন, তোমার কোন কষ্ট হবে না। তুমি এইবার ফরিদপুরে গিয়েই তোমার স্কলারশিপ, কুমারথালিতে ট্রাঞ্ফার করবার আবেদন কর. আর ত1 মঞ্জুর হলেই চলে এসো |”
ফরিদপুরে ৩।৪ মাস থাকার পরই আমি কুমারখালিতে চলে' এলাম ॥
৪
$0 জলধর সেনের আত্মজীবনী
তথন আমাদের গ্রামের স্কুলের অবস্থা অতি শোচনীয় । পুজনীয় কৃষ্খধন মজুমদার মহাশয় তখন প্রধান শিক্ষক, প্রসন্নকুমার সান্তাল মহাশয় দ্বিতীয় আর ব্রজনাথ মৈত্রেয় মহাশয় তৃতীয় শিক্ষক ছিলেন। যখন কুমারখালি স্কুলে ভত্তি হলুম, তখন স্কুলের অবস্থা এত শোচনীয় যে তার আগের পাঁচ বছর একটী ছাত্রও প্রবেশিক। পরীক্ষায় পাশ হয়নি। স্কুলে গিয়ে দেখলুম যে, সংস্কত পড়বার কোনই ব্যবস্থা নেই। বাংলাভাষাতেও প্রবেশিকা দ্বেওয়া যেত, অগত্যা আমি বাংলাই নিলুম। তাঁর ফল যে কি বিষম হয়েছিল, 'ত1 বিশ্ববিষ্ঠালয়ে প্রবেশ করে" হাড়ে হাড়ে বুঝতে পেরেছিলাম । সে যথাসময়ে বলব ।
কুমারখালির স্কুলের প্রথম ছু* বছর য। পড়েছিলাম, সে কথা বলে আমার পৃজনীয় পরলোকগত শিক্ষক মশায়দের স্মৃতির অপমান করব ন!। বল্্তে গেলে, পড়াই হ'ত ন1। দ্বিতীয় শ্রেণীতে হেডমাষ্টার মহাশয় মধ্যে মধ্যে এক-আধ ঘণ্টার জন্তে :27291509 শিখাতে আসতেন, সেইটুকুই যা শিক্ষা । হেডমাষ্টার কৃষ্খধন মজুমদার মহাঁশয় সেকালের 96710 পাশ ছিলেন । এই স্থদীর্থ জীবনে অনেক শিক্ষক দেখেছি, কিন্তু আমার মনে হয়, ইংরাজী স্কুলে সে সময়ে তাঁর মত ইংরাজীনবীশ খুব কমই ছিল। তিনি তখন এতই বৃদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন যে, যথাসময়ে স্কুলে আসতে পারতেন না, আর ইংরাজি সাহিত্য যা পড়াতেন, তা বিশ্ববিস্তালয়ের পরীক্ষায় পাশ করার সাহাধ্য করত না। তীর দৃষ্টি ছিল, ইংরাজি ভাষা ও ইংরাজি লিখন পদ্ধতি শিখাবার দিকেই। তাঁর আদর্শ ছিল 4১01910. আর .7০17507,| সুতরাং তাঁর ছাত্রের সেকালের ইংরাজি বেশ শিখত, পরীক্ষার পাশ করার শিক্ষা মোটেই পেত না। এই কারণেই তার আগের পাচ বছর একটা ছাত্রও পাশ করতে পারে নি।
আমরা যখন প্রথম শ্রেণীতে উঠলাম, সেই সময়ে স্কুলের একটা
জলধর সেনের আত্মজীবনী ৫১.
পরিবর্তন হ'ল। প্রধান শিক্ষক কষধন মজুমদার মশায় অবসর গ্রহণ করলেন, আর দ্বিতীয় শিক্ষক প্রসন্নকুমার সা্তাল মশায় কমিটী পরীক্ষা পাশ করে ফরিদপুরে ওকালতি করতে গেলেন। নিম শ্রেণীর শিক্ষকেরাও অনেকে অবসর গ্রহণ করলেন । তথন প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত হয়ে এলেন নীললোহিত মুখোপাধ্যায়, আর দ্বিতীয় শিক্ষক নিযুক্ত হলেন শ্রীনাথ চক্রবর্তী । এরা ৩৪ মাস শিক্ষকতা করেই চলে গেলেন। নীললোহিতবাবু মুনসেফি নিলেন, শ্রীনাথবাবু কুষ্টিয়া! স্কুলের হেড মাষ্টার হলেন। তাদের পরিবর্তে হেড মাষ্টার হয়ে এলেন অভয়াচরণ চট্টোপাধ্যায় ও দ্বিতীয় শিক্ষক হয়ে এলেন উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্ধ। অভয়াবাবুর বাড়ী কলকাতার কাছে পানিহাটিতে। তিনি আজগ্ পশ্চিমে ছিলেন ও লক্ষৌ ক্যানিং কলেজ থেকে বি-এ পাশ করেন। তার পিতার মৃত্যু হওয়ায় তিনি দেশে চলে আসেন ও সেই সময় আমাদের স্কুলের হেড মাষ্টারী পদ খালী হওয়ায় তিন বছরের এগ্রিমেণ্টে ১০০২ টাক! বেতনে নিষুক্ত হ'ন। অভয়াবাবুর ইংরাজি খুব ছুরস্ত ছিল। তিনি যখন ইংরাজি, হিন্দি ও উ্দতে কথা৷ বলতেন, তখন কেউই তাঁকে বাঙ্গালী বলে মনে করতে পারতেন ন!। আমাদেরই সৌভাগ্যক্রমে পরীক্ষার ৪1৫ মাস আগে এমন হেড মাষ্টীর ও সেকেণ্ড মাষ্টার পেয়েছিলাম । বলতে কি, এই ৪1৫ মাসে তারা ঘা শিখিয়েছিলেন, তা অন্ত কেউ ৪1৫ বছরেও শিখাতে পারতেন না। তাদেরই শিক্ষার গুণে পাচ বছর পরে কুমারথালি স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় ছাত্র পাশ হল। আমরা চার জন ছাত্র সেবার পরীক্ষা দিয়েছিলাম, তার মধ্যে যে ছু'জন পশি করি সেই ছু'জনই এখনও বেঁচে আছি। একজন শ্রীযুক্ত রাঁধবল্লভ দে, পাবনার সব জজ আঁফিসে সেরেম্তাদারি করে অল্পদিন হল অবসর নিয়েছেন।
৫২ জসধর সেনের আন্জীবনী
আঁর দ্বিতীয় জন আমি। বাধাবল্লভ তৃতীয় বিভাগে আর আমি দ্বিতীয় বিভগে উত্তীর্ণ হয়েছিলাম । সেবার বিশ্ববিগ্ালয়ের গ্রবেশিকা পরীক্ষার ফল অতি শোচনীয় হয়েছিল। তা না হ'লে দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেও, প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ কৃষ্ণণগর এ, ভি» স্কুলের ছাত্র স্বনামগ্রসিদ্ধ ছিজেন্্লাল রায়ের (ডি, এল রায়ের) সঙ্গে ব্রাকেটে ১০২ টাকা বৃত্তি পেতাম না। কুমারথালি স্কুলের ভাগ্যে ১২ বছর পরে এই বৃত্তি লাভ, আর সে সৌভাগ্য আমারই হয়েছিল। |
যে তিন বছর বাড়ীতে ছিলাম, সে সময় আমার অতিকষ্টে দিন কাটাতে হয়েছিল। পিস্তুতে। ভাই কলকাতায় চাকরী; করতেন, এ কথা আগেই বলেছি। বাড়ীতে তখন পিসিমা, পিস্তৃতে। ভাইয়ের স্ত্রী আর তার তিনটি মেয়ে ছিল। এদের খরচের জন্ত আমার পিস্তুতো। ভাই মাসে ১৬২ করে দিতেন। সেই ১৬২ টাকা থেকে তার স্ত্রী, আমাদের বড় বৌ, প্রতি মাসে ২।৩ টাকা করে সরিয়ে রাথখতেন। সুতরাং সংসার খরচ ১৩।১৪ টাকার মধ্যে কুলীতে হ'ত। সে সময় আমার বড় দাদা বাড়ীতে কোন খরচ পাঠাতেন না, অথচ আমার পিশিমার উপরই সংসার চাপিয়ে দিলেন। অবশ্য থাবার জিনিষ চাল, দাল, ঘি, তেল, ময়দা সবই অতি সম্তা ছিল। আমার বেশ মনে আছে, আমরা ১।০ কি ১1%০ মণের মোটা চাল খেতাম। তরিতরকারীও সন্ত। ছিল। তা হ'লেও প্র কটা টাকায় একট! সংসার চলে না। কাজেই আমাদের থাওয়াদাওয়ার অত্নস্ত কষ্ট হ'ত। আমার বেশ মনে আছে, রবিবার ও ছুটীর দিন ছাড়া রোজ স্কুল বাবার সময় মোটা চালের ভাত আর কাচকল৷ ভাতে ছাড়া আর কিছুই
জলধর সেনের আতুজীবনী ৫
পেতে পাইনি। অনেক দিন আবার তাও জুটত না, অনাহারে স্কুল যেতে হত। চারটার পর স্কুল থেকে ফিরে এসে দুপুরের রানা ভাত-তরকারী খেতাম । রাত্রিতে রা্লাও হত না, আমিও খেতে পেতাম না। দাদার মেয়ের ও বড় বৌ দুপুরের রাঙ্গা ভাতই সন্ধ্যার আগে খেত। সে সময় অনেক দিন আগার একাহারই হ'ত। আমার এ কষ্টের কথ! আমি কোন দিন কাউকেও জানাইনি। মা, জ্যেঠাইমা, আমার বড় দাদার ভ্ত্রী এরা এ বথ! শুনলে মনে কষ্ট পাবেন ভেবে আমি নীরবেই সমস্ত সহ করতূম।
মাইনর পরীক্ষায় মাসিক ৫২ টাকা বৃত্তি পেয়েছিলাম, সে টাকারও হিপাব দিচ্ছি। যারা বৃত্তি পায় গভর্ণমেণ্ট স্কুলে তাদের মাইনে দিতে হয় না। আমি ফরিদপুর গভর্ণমেণ্ট স্কুলে মাইন। দিই ন। গভর্ণমেপ্ট সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে মাইন দিতে হয়। কুমারখালি স্কুলের উচ্চ তিন শ্রেণীতে তখন মাসিক ১০ মাইনা ছিল। আমার বৃত্তি খেকে মাইনার জন্যে ১০ খরচ হোঁত। আমার মা, বিধবা বোন ও ছোট ভাই তখন গোয়ালন্দে বড় দাদার কাছে থাকতেন, তাদের থরচ ঝড় দাদাই বহন করিতেন। তা হ'লেও আমি বেশ বুঝতে পারতাম, তাদের ছ'চার পয়সা কোন কারণে দরকার হোলে বড় দাদা বা বৌদিদ্ির কাছে চাইতে তারা সঙ্কোচ বোধ করতেন। এই কারণে আমি প্রতি মাসে বড় দাদা ও বৌদ্দিদির অজ্ঞাতে মাকে ৩২ টাক। পাঠিয়ে দ্রিতাম। মা অনেকবার বারণ করেছিলেন, কিন্ত আমি ত! শুনিনি । «২ টাক। বৃত্তির 81০ টাকার ত হিসাব দিলাম, বাকি রইল ॥* আন । আগার কেমন একট। বদ অভ্যাস ছিল, এবং এখনও আছে যে, সম্পূর্ণ নির্জন না হ'লে আনি লেখাপড়া করতে পারি না। ছাত্রাবস্থায় আমি কোন দিন দিনের
যু জলধর সেনের আজ্মজীবর্দী
বেলা লেখাপড়া করতাম না। আমার পড়ার সময় ছিল রাত্রিবেলা। আমি রোজ রাত্রি ৮্টার প্র পড়তে বসতাম, আর ১২।১ট। পধ্যস্ত লেখাপড়া করতাম। কোন কোন দ্দিন এমন তায় হয়ে যেতাম যে» কোন দিক দিয়ে যে রাত্রি প্রভাত হ'ত তাও জানতে পারতাম না। সার! রাত্রি পড়তে গেলে আলোর দরকার। আমি আমার সেই ৪৪ আন! পয়সা! তেল কিনেই পরচ করতাম । দু"চাঁর পয়সা যা বাঁচাতাম তা এদিক ওদিক খরচ হয়ে যেত। কাগজ, কলম, পেনসিল বড় দাদা গোয়ালন্দ থেকে মাঝে মাঝে পাঠাতেন, পাঠ্যপুস্তকের অধিকাংশই পরের কাছ থেকে চেয়ে পড়তাম। মনে আছে সহপাঠীরা যে সমস্ত বই ছাড়তে চাইত না, আমি তাদের বাড়ীতে বসে পড়া শেষ করতাম, আর না হয় সমস্ত বইগুলি নকল করে আনতাম ।
প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হ,লাম। অভাবনীয় সৌভাগ্যবলে ১*২ বৃত্তিও পেলাম । কিন্তু তারপর ? বিশ্ববিগ্ভালয়েব নিয়ম আছে, প্রবেশিকা পরীক্ষার আবেদন পত্র দাখিল করবার সময় লিখে দিতে হয়। যদ্দি বৃত্তি পাই কোথায় পড়ব। আমার বেশ মনে আছে, আমাদের সেই সময়ের প্রধান শিক্ষক অধুনা পরলোকগত অভয়াচরণ চট্টোপাধ্যায় মহাশয় আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন-_-'ওরে, তুই যদি ্কলারসিপ পাস কোথায় পড়বি? সেটা যে এখনি লিখে দিতে হবে !” আমি হেসে বলেছিলাম, ষে স্কুলের ছেলেরা ছ” বছর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পরেনি, ১২ বছর কেউ বৃত্তি পায়নি সে স্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়ে পাস হওয়াই অসম্ভব, তার আবার বৃত্তি 1? অভঙ্বাবু বললেন--“তা বললে কি হবে, ওট। লিখে দেওয়! দস্তর | আমি বল্লাম, তাহ'লে লিখে দিন 0151] 10027)6675176 09116£০, আমার তখন গণিত শাস্ত্রের দিকে বিশেষ ঝোঁক ছিল, তাই এঞ্জিনিয়ারিং কলেজের
জলধর সেনের আত্জীবনী . ৫৫
কথা মনে হয়েছিল। আমি জানতাম, বৃত্বি আমি পাব না। বখন লিখে দিতে হবে, তখন আর ছোট কথা লিখি কেন; তাই এঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কথা লিখেছিলাম । এটা ১৮৭৮ খৃষ্টানদের কথা । তখন এক্জিনিয়ারিং কলেজ শিবপুরে স্থানাস্তরিত হয়নি, কলিকাতার প্রেসিডেন্দী কলেজেরই অস্তভূক্ত ছিল। লিখতে হ'ত ৮1631067707 0০91168৩, 0511006069১ 0, 05১ 106109006106, মাসিক; ১০২ টাকা বৃত্তি পেয়ে এঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়া বাতুলের স্বপ্ন, ১০২ টাকায় যে কলকাতার থেকে সাধারণ কলেজেই পড়া হয় না। আমাদের গ্রামের অনেক ঝড় মধন্ুষের কলকাহাঁয় কারবার ছিল, এখনও আছে । কলকাতার হাটখোলায় তাদের বড় বড় আড়ত ছিল। আমি গ্রামের অনেক বড়মান্ষেরই দ্বারস্থ হল।ম, তাদের কলকাতার বাড়ীতে থেকে দুই বেল! ছুই মুষ্টি অন্নের প্রার্থনা করলাম । কিন্তু কেহই এই দীন দরিদ্র শিক্ষার্থীর কাতর নিবেদনে কর্ণপাত করলেন না, কেহই একটু স্থান ব1 ছুটি অন্ন দিতে স্বীকার করলেন না। 17876673708 0০11685 8635101, জুন মাসে আরম্ভ হ'ত। আমার পরীক্ষার ফল ডিসেম্বর মাসেই বাহির হয়েছিল। আমি জুন মাসের প্রতীক্ষায় বাড়ীতেই বসে রইলাম । এপ্জিনিয়ারিং কলেজে প্রবেশের আশা ত্যাগ করতে পারলাম না। নির্ভর করলাম ভগবানের ওপর । এই সময় আমার সব ব্যবস্থা উল্টাইয়া গেল। কলিকাত। সিটি কলেজের বর্তমান প্রিম্দিপাল ডক্টর শ্রীযুক্ত হ্েরম্চন্ত্র মৈভ্রেয় মহাশয় আমাদের গ্রামেরই লোৌক। তিনি সেই সমন্ন বি-এ পাস ক'রে এম-এ পড়ছিলেন। তিনি আমার বড়দাদার বিশেষ বন্ধু ছিলেন। কি একটা উপলক্ষে হেরম্বদাদা কুমারখালি গিয়েছিলেন। সেখানে আমার বড় দাদার বাড়ীতে ছিলেন। হেরঙ্বদাদা শুনলেন যে,
৫৬ জলধয় সোনর আত্মজীবনী
আমি এঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়বার অসাধ্য সাধন করবার জন্ত বাড়ীতে বসে আছি। তিনি বড় দাদাকে বুঝাঁলেন যে আমাদের মতন দরিদ্র লোকের এঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বায়ভার বহন কর! একবারেই অসম্ভব। তিনি আমাকে জেনারেল লাইনে প্রবেশ করিয়ে দেবার জন্যে পরামর্শ দিলেন। বললেন, “১৯২ টাক! স্কলারসিপ আছে, আর ৪1৫ টাকা হ'লেই কলকাতার ব্যয় চলে যাঁবে। এবং কলকাতায় গিয়ে দয়ার সাগর বিদ্যাসাগর মহাশয়কে ধরলে বিনা বেতনে তার কলেজে ভত্তি হ'বার সম্ভাবনা! আছে ।” বড় দাদাও সেই কথাহ বুঝলেন । আমাকে বললেন, এঞ্জিনিয়ারিং কলেজে প্রবেশের চেষ্টা অসাধ্য সাধন । তার চাইতে তুমি আ্ কলেজেই প্রবেশ কর। আমি যেমন কোরে পারি, যত কষ্টই আমার হৌক না কেন, তোকে মাসিক ৪৫ টাকা দেবো | তখন আর কি করি, বড় দাদার আদেশ শিরোধার্যয কো'রে আমি কলকাতায় আসলাম । পৃর্ধেই বলেছি, আমাদের গ্রামের অনেক বড় মানুষের কলকাতায় 'আড়ত আছে। তাদের দ্বারস্থ হয়ে যখন ছু'বেল। ছুঃমুঠি অন্নের সংস্থান কলকাতায় করতে পারলাম না, তথন কলকাতায় গিয়ে ছুশ্চার দিনের জন্যেও তাদের দ্বারস্থ হ'তে আমার মত দীন দরিদ্রেরও কুগ্ঠা বোধ হোল । তাই বাড়ী থেকে বেরুবার পূর্ধেই আমার এক পুরাতন বন্ধুর কথ! মনে হোল। গোয়ালন্দে আমি তাঁর সঙ্গে পড়েছিলাম, একসঙ্গেই মাইনর পাশ করেছিলাম । তার সহায়তায় নির্ভর করেই ৫২ টাকা বৃত্তি সম্থল কো*রে ফরিদপুর জেলা স্কুলে পড়তে গিয়েছিলাম | তার নাম দক্ষিণারঞন সেন, তিনি তখনকার গোয়ালন্দের খ্যাতনামা উকিল উমেশচন্দ্র সেনের একমাত্র পুত্র। আমি ফরিদপুর ছেড়ে দেশের স্কুলে চলে এলাম, দক্ষিণা ফরিদপুরেই পড়তে লাগলো । আমি যে বছরে প্রবেশিকা পরীক্ষা! দিলাম, দক্ষিণাঁও সেই বছরে ফরিদপুর জেল স্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়ে
বলধর সেনের আতুজীবনী ৫৭
পাশ হয়েছিল এবং কলকাতায় এক মেসে থেকে মেট্রোপলিটান ইনষ্ি।চউসানে ( অধুন! বিদ্তাসাগর কলেজে ) প্রবেশ করেছিল । কলেজে ভত্তি হয়েই, তিনি আমাকে পত্র লিখেছিলেন । সেই পত্রে তার ঠিকানা ছিল, নয়ানটাদ দত্তের স্ত্রী । বাড়ীটার কথা মনে আছে কিন্ত নম্বর মনে নেই । আমি বাড়ী গিয়ে দক্ষিণাকে লিখলুম, আমি অমুক দিন কলকাতায় যাচ্ছি। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে আর পড়া হোল লা, আমি 'এল-এ পড়বে । কঙ্গকাতায় আমার অন্ত পরিচিত থাকলেও, আমি দু'এক দিনের জন্তে তার আতিথ্য গ্রহণ করবো! । সে যেন নির্দিষ্ট দিনে নিদ্দিষ্ট সময়ে শিয়ালদহ ষ্েশনে আসে ।
যথাসময়ে শিয়ালদহ ষ্েশনে নেমে দেখি দক্ষিণ আমার জন্তে অপেক্ষা করছে । আমি ষে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়বার ইচ্ছা ত্যাগ করেছি, সেজন্ত সে খুব ধন্তবাদদ করলে। সেরাত্রি তার বাসায় কাটালাম। তার পরেও ছু*দিন তাঁর বাসায় পরম যত্বে ও আদরে ছিলাম । এই- খানেই আমার পরম বন্ধু দক্ষিণারপগ্রনের কথা শেষ করতে চাই।
কলেজে প্রবেশ করলাম । বৃত্তি পেয়েছিলাম বলে প্রবেশিকায় ফী দিতে হল না। মাইনেও ছয় টাকার জায়গায় পাচ টাকা হল। হাঁটখোলায় বন্ধুর আড়তে আশ্রয়ও পেলাম । আড়তের হিসাবে আমার বাস! খরচ বলে, মাসিক তিন টাকা দেওয়া! স্থির হয়ে গেল । আড়তের কর্ত। রামলালবাবু বল্লেন__বুঝলে জলধর, ও তিনটে টাক! আর তোমাকে দিতে হবে না । আমরাই মাসে মাসে জমা ক'রে দেব। অর্ধাৎ কাগজপত্তরে খোরাকী দেবার কথ! থাকলেও» আমাকে তা” ধিতে হবে না--এই ব্যবস্থা হয়ে গেল।
এদ্রিকের ত সবঠিক হয়ে গেল। গোল বাধল পড়াশুনে নিয়ে । ইংরাজি সাহিত্যে ষে খান-ছুই বই পড়া হচ্ছিল, তা” 'একটাী বন্ধু দিলেন।
৫৮ জলধর সেনের আত্মজীবনী
সেগুলি তার পড়। হয়ে গিয়েছিল । তিনি তখন বি-এ পড়েন । লঙ্জিক ফিলজফি ওহিষ্রি তাও কিনতে হ'ল না। এর ওর কাছ থেকে চেয়ে নিলাম । কিনতে হুল--নবীন পণ্তিতের বিশালকায় রখুবংশ, আর কার সঙ্কলিত নাম মনে নেই--ভর্টিকাব্য । এই বই ছু'খানি দেখেই আমার চক্ষুস্থির | 'স্ত সাহিত্যের শীর্ষস্থানীয় এই ছুইখানি কাব্য পড়তে হবে কিনা প্রীজলধর সেনকে-যার দেবনাগরী বর্ণপরিচয় পর্য্যস্ত হয়নি, বিদ্কাসাগর মহাশয়ের সংস্কৃত উপক্রমণিকার 'গো” শব্দের যে কি “রূপ, তাও তার চক্ষু বা কর্নগৌচর হয়নি । কথাটা একটু খুলে বলি। আমাদের গ্রামের স্কুলে সংস্কৃত পড়াবার ব্যবস্থা ছিল না । তখন সংস্কৃত ও বাংলা উভয় ভাষাতেই পরীক্ষা দেওয়া যেত। আমাদের পণ্ডিতমচাঁশয় ছিলেন--ঈশ্বরচন্দ্র ভট্টাচার্য মহাশয়। তিনি খুব নিষ্ঠাবান্ ব্রাহ্মণ ছিলেন। পৌরহিত্য তাহার ব্যবসায় ছিল। যজমানের বাড়ী গিয়ে ক্রিয়!-কলাঁপের জন্য যতটুকু বিশুদ্ধ ও অবিশুদ্ধ সংস্কত জ্ঞানের প্রয়োজন--তা+ তার ছিল। আমাদের গ্রামে ইংরাজী দুল স্থাপিত হওয়ার কিছুদিন পরেই তিনি পণ্ডিত নিষুক্ত হন এবং আমর! যখন পল, তখন তিনি খুব বেণী বুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন । ছাত্রদের সংস্কৃত পড়াবার জন্ত যতটুকু জ্ঞানের দরকার, পণ্ডিত মহাশয়ের তা” ছিল না। তাকে স্কুল থেকে সরিয়ে দেবার চিন্তাও কারও মনে হ'ত ন1, তাঁকে গ্রামের লোকে এতই শ্রদ্ধা করত। পণ্ডিত মহাশয়ের ঘণ্টা ছিল আমাদের বিশ্রামের সময় । বুদ্ধ ব্রাহ্মণ ক্লাসে এসে চেয়ারে হেলান দিয়ে টেবিলের ওপর পা ভুলে দিয়ে--“ওরে গোপ করিস্ নে নব পড়, পড়'--বলে' নিদ্রা দেবীর শরণ নিতেন । আমর! কিন্তু স-জাগই থাকতাম। যেই দেখতাম হেডমাষ্টার মঠাশয় আমাদের ক্লাসের দিকে আসছেন, অমনি কেউ না কেউ তার চেয়ারে একটু ঠেপা। দিতাম--তাই ছিল হেডমাই্টার
জলধর সেনের আত্মজীবনী ৪
মহাশয়ের আগমনের সঙ্কেত। পণ্ডিত মহাশয় তাড়াতাড়ি টেবিলের ওপর থেকে পা নামিয়ে নিয়ে উচ্চৈঃশ্বরে বলতেন--বানান কর বেটা, তীকৃখন” |
হেডমাষ্টার মহাশয় ক্লাসে প্রবেশ করে বলতেন-_ঈশ্বর, ওদের ভাল করে বাংল! পড়িও। হরিনীথের (কাঙাল) নাম যেন রক্ষা করতে পারে। পণ্ডিত মহাশয় সোঁৎসাহে বলতেন--সে খুব পারবে । পণ্ডিত মহাশয় অপেক্ষাও বয়োবুদ্ধ হেডমাষ্টার মহাশয় পরিদর্শনকাধ্য শেষ করে' চলে যেতেন। এইভাবে ইংরাজি স্কুলে স্থদীর্ঘ তিন বৎসর বাংলাভাষা শিক্ষা করেছিলাম ।
তাতে আমার, কিছু ক্ষতি হয়নি। কাঙাল হরিনাথের কপায় আমি তখন বাংলা সাহিত্যের রী মহারথী না হয়ে থাকলেও, বড় রকম জমাদার হয়ে পড়েছিলাম, এবং তারই জন্ত প্রবেশিকা! পরীক্ষায় আমি বাংলা সাহিত্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকাঁর করেছিলাম । পৃজনীয় শিবনাথ শাস্ত্রী মহাশয় সেবার প্রবেশিক! পরীক্ষায় বাংল! সাহিত্যের পরীক্ষক ছিলেন ।
কলেজে প্রবেশ করবার পর একদিন তাকে প্রণাম করতে গিয়ে- ছিলাম, তিনি হেসে বলোছিলেন-_ “দূর জলধর, হরিনাথ মজুমদার মশায়ের নামই তুবিয়েচিস্। বাংলায় ফাষ্ট হতে পারি নি। ফাষ্ট কে হুয়েচে জানিস? কাদদ্বিনী বোস।” ইনিই পরে মেডিকেল কলেজের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যশস্থিনী চিকিৎসক হয়েছিলেন, এবং সে সময়ের প্রপিদ্ধ স্দেশসেবক সাহিত্যিক ত্বারকানাথ গাঙ্গুলীর সহিত তার বিবাহ হয়।
সে কথা থাক। আমি যে কলেজে পড়তে এসে অকুল সমুক্রে পড়লাম--তারি কথা বলি। কলেজে পড়তে আসবার সময়ে আমার অভিভাবকগণের কারও মনে হ'ল ন! যেঃ আমি অসাধ্য সাধন করতে।
ক জলধর সেনের আত্মজীবনী
ষাচ্ছি। দেবনাগরি অক্ষর পরিচয় যাঁর নেই, সংস্কৃত ব্যাকারণের প্রথম পৃষ্ঠাও যে পড়েনি, তার হাতে একেবারে উঠল কিন! সর্বশ্রেষ্ঠ রঘুবংশ ও ভটি।
অভিভাবকের। হয়ত মনে করেছিলেন, থে ছেলে পাড়াগায়ের একট! এঁদে। স্কুল থেকে পরীক্ষ। দিয়ে বুত্ত পেয়েছে, সে একেবারে চতুভূর্জ, তাঁর শক্তি অসাধারণ । আমি কলেজে প্রবেশ ক'রে চারিদিক অন্ধকার দেখলাম।
সকল বিষয়েই আমি কীচা। সংস্কতে ত একেবারে বর্ণজ্ঞানহীন। যা একটু জোর ছিল--গণিতশান্ত্রে। আমি যখন কলেজে প্রবেশ কবি, তখন ফাষ্ট আটস কেন, বি-এর গণিতশান্ত্ও আমার পড়! হয়ে গিষেছিল। কিন্ত তাতে তো কুলোবে না বন্ধু! বিশ্ববিস্ভালয় যে মণিহারির দোকান! প্রত্যেক দ্রব্টী চকচকে ঝকঝকে করে? রাখা চাই । বিশ্ববিগ্ঠালয়ের যদি নিয়ম থাকৃত--যার যে বিয়য়ে ইচ্ছা, সে শুধু সেই বিষয়েই পবীক্ষা' দিতে পারবে, তাঃ হ'লে এই বুদ্ধ বষসেও গর্বব কবে” বলতে পারি যে, প্রবেশিকা পরীক্ষার পর দু-তিন বৎসরের মধ্যেই গণিতে পর্ব্বোচ্চ নম্বর পেয়ে আমি এম-এ, পাস করতে পাবতুম ।
তাতে! হল না আমি সংস্কতের অকুল পাথারে ভাসতে ভাসতে এল-এ ফেল করে? নামকাঁট! সেপাই হযে বেবিয়ে এলাম চেষ্টার ক্রটি করিনি। অসাধারণ পরিশ্রম করেছি। এমন কি পরীক্ষার পূর্বে এক একদিন কোন্ দিক দিয়ে রাত কেটে যেত, তা৷ জানতেও পারতাম না । তাবপুব থাকি আড়তে । সেই বেলা ন”্টার সময় ডাল ভাত, কোনদিন একটু তরকাবি, কোনদিন বা তাও নয়, এই খেয়ে কলেজে ছুটতাম, আর ওদিকে রাত্তির ১২টার আগে আড়তের থাওয়! হ'ত না। এই পরিশ্রম আর এই আহার শরীরে সইবে কেন?
জলধর সেনের আত্মজীবনী ৬১.
পরীক্ষার দুইদিন পূর্ধের জরে পড়লাম, সেই জর-গায়েই ক'দিন পরীক্ষা দিলাম । কিধে লিখলাম--তা, ভগবানই জানেন। অতি ঝষ্টে পরীক্ষ। শেষ হলে, বাঁড়ী চলে এলাম। তখন পরীক্ষার ফল বের হ'ল» তখন সংবাদ নিয়ে জানতে পারলাম, আমি সংস্কৃতে তিন নম্বরের জন্তু ফেল হয়েছি। রঘুবংশের কাগজে ২৩ নম্বর পেয়েছিলাম । কারণ পরীক্ষক রেভারেও কে, এম, ব্যানাজ্জি অনুবাদ বড় ভালবাসতেন। সংস্কতে বিদ্তা না থাকলেও, অন্থবাদের জোরেই বেশী নধর পাওয়া যেত। তাই আমি ২৩ নম্বর পেয়েছিলাম ।
আর ভঙ্টিকাব্যের পরাক্ষক ছিলেন--নীলমণি চ্যায়ালঙ্কার মহাশয় । তিনি বোধ হয় বিশেষ অনুগ্রহ করে, আমাকে ৭ নম্বর দিয়েছিলেন । দুয়ে জড়িয়ে ৩ হ'ল। ৩৩ না হলে পাস হয় না । আমি ফেল হলাম।
কলেজে গিয়ে দেখা করতে গণিতের অধ্যাপক থ্যাতনাম। গৌরীশঙ্কর দে মহাশয় অনেক দুঃখ করলেন, কারণ গণিতে আমি ভাল ছাত্র ছিলাম। প্রিম্সিপাল হেষ্ি সাহেবও ছঃখ প্রকাশ করে” বললেন, “তুমি আর এক বৎসর পড়, আসছে বার নিশ্চয়ই পাস হবে। তোমাকে কলেজের মাইনে দিতে হবে না।”
আড়তওয়ালারাও আর এক খ্ছর আমার অন্ন সংস্থান করে দিতে চাইলেন । কিন্ত তা” আর হ'ল না।
আমার ছোট ভাই শশধর সেহবারই গ্রামের স্কুল থেকে দ্বিতীয়, বিভাগে গ্রবেশিক। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। বড়দাদা ও মেজদাদ! উভয়েই প্রস্তাব করলেন যে, আমি আর এক বছর পড়ি। শশধরের আর পড়ে কা নেই। সেনিক়শ্রেণীর ওকালতি পরীক্ষার জন্ত প্রস্থত হোঁক। তখন প্রবেশিকা পাস করেও ওকালতি পরাক্ষা দেওয়া যেত। শশধরেরও, সেই মত হ'ল।
৬২ জলধর সেনের আত্মজীবনী
আমি কিছুতেই এ প্রস্তাবে সম্মত হতে পারলাম না। আমার একমাত্র ছোট ভাই--তাকে তিন মাসের রেখে বাব। মারা যান। যেমন করে হোক, তাকে লেখ! পড়া শেখাব। বড়দাদা আমাকে অনেক বোঝালেন। আমি তাদের অনুরোধ রক্ষা করতে পারলাম না।
আমি যেমন তেমন একটা চাকরি নিয়ে শশধরের কলেজে পড়বার ব্যয় চালাব। আমার এই দৃঢ় সঙ্কল্লে কেহই বাধা দিতে পারেন নি। ' বড়দাঁদা তখন গোয়ালন্দের ফৌজদারি আদালতের পেস্কার। তারপর তিনি সেখানে হেড-ক্লাকও হয়েছিলেন । তিনি সেই সময়ে ছয় মাসের ছুট নিয়ে পাবনায় কি একটা কাঁজে গিয়েছিলেন। সেইথান থেকেই আমাকে সংবাদ দিলেন যে, গোয়ালন্দ স্কুলের থার্ড মাষ্টারী খালি আছে। তিনি স্কুলের প্রেসিডেণ্ট ম্যাজিষ্ট্রেটে সাহেবকে পত্র লিখেছিলেন। প্রেসিডণ্ট আমাকে ২৫২ টাঁকা বেতনে থার্ড মাষ্টারীতে নিতে স্বীকার করেছেন।
মে গোয়ালন্দে কৈশোর কাঁল কাটিয়েছি, যে গোয়ালন্দ স্কুল থেকে সর্বপ্রথম মাইনর পাস করে ৫-২ পাঁচ টাক। বৃত্তি পেয়েছিলাম-_-সেই স্কুল এণ্টাণন্স স্কুলে পরিণত হওয়ার বছর ২৩ পরে আমি সেখানেই মাষ্টার হয়ে গেলাম ।
গোয়ালন্দে আমাদের একটা! বাড়ী ছিল। সেট! দ্বাদা নিজেই তৈরী করিয়েছিলেন । দাঁদ! পাবনায় চলে যাওয়ায় সে বাড়ী বন্ধ ছিল। তিনিই ব্যবস্থা করে, পাঠীলেন যে, রেজেন্ত্রী অফিসের হেড-কার্ক ব্রজেন্্ নাথ বিশ্বাস মহাশয়ের বাসায় আমি থাকব। দাদার ফিরে আসতে তখনও ছুই মাঁস বিলম্ব ছিল। ব্রজেন্ত্রবাবুর ছোট ভাই লোকনাথ তখন ওখানকার স্কুলের ফোর্থ মাষ্টার ।
আমি গোয়ালন্দে গিয়ে ব্রজেনবাবুর বাসায় উঠলাম । তখন স্কুলের
গলধর সেনের আত্মঙগীবনী ৬
হেড মাষ্টার ছিলেন--অধুন! পরলোৌকগত মদনমোহন সরকার মহাশয়। তিনি মাইনর ক্কুলেরও হেড মাষ্টার ছিলেন। আমি তার কাছ থেকেই মাইনর পাশ করি।
স্কুল এণ্টন্দে পরিণত হওয়ার পর তিনিই হেডমাষ্টার হন। তখন আর কি! স্যাটসিনি-গারিবন্ডি আকাশ-কুসুমের মত আকাশেই মিলিয়ে গেল। “হেন করব--তেন করব--স্বদেশের সেবা করব--বাংল! সাহিত্যের সেবায় জীবন অতিবাহিত করব। কাঙাল হরিনাথের উপযুক্ত শিল্প হবার জন্ প্রাণপাত করব । চিরকুমার জীবন অতিবাহিত করব । ইতাদি কত সঙ্কল্প মনে মনে ছিল। এল-এ ফেল করে সব আঁশা- আকাজ্কা চূর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে গেল। আমি পাড়াগায়ের এক স্কুলের তৃতীয় শিক্ষক হলাম। মনকে সান্তনা দিলাম--কঠোর কর্তব্যের কাছে আমি আত্মনিবেদন করলাম। নইলে আমার ছোট ভাইয়ের লেখাপড়! শিখবার কোন পন্থাই আর ছিল না। বড়দাদা, মেজদাদার সামান্ত আয়ে সংসার চলাই কঠিন ছিল।
সেকালে--আ'র সেকাল বলি কেন? এখনও- ফৌজদারী পেস্কার মহাশয়দের যথেষ্ট 'উপরি" প্রাপ্তি ছিল। দাদ! যদি তা” নিতেন, তাহলে ছোট ভাইয়েরও পড় চলত, আমার পড়ার ব্যাঘাত হত না। কিন্তু তিনি ছিলেন ব্রাঙ্গ মানুষ ) কোনদিন একটি পয়সাও “উপরি,-গ্রহণ করেন নি। ৪০২ বেতন--আর মেজদাদীর ১৫২--এতে সংসার চলাই ভার--পড়ার খরচ কোথা থেকে আসবে? আমি বৃত্তি পেয়েছিলাম-__তাইতে ছু” বছর আমার পড় হয়েছিল। এ অবস্থায় আমার চাকরি গ্রহণ করা ব্যতীত গত্যন্তর ছিল না। আর সে চাঁকরিও মাষ্টারী--একেবারে রেডিমেড” । তার জন্য শিক্ষানবিশীও করতে হয় না_কিছুই করতে হয় না। ক্ষুলে গিয়ে চেয়ারে বসলেই মাষ্টারী হয়। তাইতেই তে! আমাদের দেশে শিক্ষার এমন দুরবস্থা ।
৪ জলধর সেনের আতজীষনী
মাস ছুই পরে দাদা! ফিরে এলেন। আমি আমাদের বাসায় গেলাম । মাসে পচিশটি টাকা পাই--অবশ্ত এক আনা কম--সেটা রসীদ ষ্্যাম্পের দাম । টাকা কয়টি এনে বড় বৌদিদির হাতে দিই। তিনি শশধরের কলিকাতায় পড়াবাব খরচ পাঠান । আমি নিশ্স্ত মনে থাই-দাই ছেলে পড়াই। আর পূর্বব-সংস্কীর-বশে একটু-আধট স্বদেশীও করি, বক্তৃতাও করি-- গোয়ালন্দে ধার৷ নেতৃস্থানীয়, তাদের সমস্ত অনুষ্ঠানের পেছনেও থাকি।
সেই সময় গোয়ালন্দে যিনি ফৌজদারী হাকিম ছিলেন, ভিনি জাতিতে পার্শী-_-সিভিল সাঁভিস পাস করা । তার নাম মিঃ কে, জে, বাদশ!। বৎসরথানেক পূর্বের বাংল! দেশে এসে কিছুদিন আলিপুরের সদরে শিক্ষা- নবিশী করেছিলেন। তার পরই গোয়ালন্দ মহকুমার ভার পান। লোকটি বড় ভাল এবং তিনি আমাদের স্কুলকমিটির গ্রেসিডেণ্ট হয়েছিলেন । সেই উপলক্ষেই তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। নইলে সাধারণ স্কুল মাষ্টার আমি--হাকিমদের কাছে মোটেই ঘেষতাম ন|।
একদিন বাদশা সাহেব আমাকে ডেকে পাঠিয়ে বললেন যে, তিনি “হাই-গ্রফিসিয়েন্সী ইন্ বেলী” পরীক্ষা। দেবেন। তা” নইলে তার পদোন্নতি হতে দেরী হবে। পরীক্ষার ছয় মাস দেরী আছে। এই ছয় মাসের মধ্যে তীকে বাংল! ভাষায় লায়েক করে' দিতে হবে। তখন তার বাংলায় বিস্ত! বিদ্ভাসাগর মহাশয়ের দ্বিতীয় ভাগ পর্যন্ত ।
তিনি আমাকে মাসিক ৩০২ টাকা দ্রিতে চাইলেন। এ যেন খাজনার চাইতে বাঁজন। বেশী হ'ল। স্কুলের ৫ ঘণ্টা পরিশ্রম করে” ২৪৮০ পাই, আর এ রবিবার বাদে ৬ দিন প্রাতঃকালে এক ঘণ্টা করে সাহেবের বাংলায় হাজির! দিতে হবে--যেদিন তার কাজকর্মের চাপ থাকবে না! সেই দিন কাকে পড়ার সাহাধ্য করতে হবে। এ শ্রেণীর
গালধর সেনের আত্মজীবনী ৬৫
শিক্ষিত লোকের শিক্ষকত। করবার ধরণ আলাদা । আমি তাকে কি করতে হবে, তাই ঝলে আসতাম। ইংরাজী থেকে যেটাকে বাংলা কবতে হবে বা বাংলা থেকে যেটাকে ইংরাজী করতে হবে, তাই দেখিয়ে দিয়ে আসাম । আর যে সব পাঠা পুস্তক ছিল, প্রতি দিন তার অংশ বিশেষ পড়তে বলে, আসতাম । সাচ্বে ঠিক ঠিক তাই করতেন। পাঠ্য পুস্তকের 'য কথার মর্ম গ্রচণ করতে পারতেন ন, সেইটুকু মাত্র জিজ্ঞেস করতেন এবং যা অনুবাদ করতেন তা সংশোধন করে দিতে হ'ত। অর্থাৎ তাঁকে নিয়ে ঘণ্ট। খানেক বক বক করতে মোটেই হ'ত না।
এমনও হ'ত ফে, তিনি ৪1৫ দিনের জন্য মফংম্বলে চলে, গেলেন-- আমার তখন ছুটী। মাইনে কিন্ত বরাবর দিতেন।
ছয় মাসের মধ্যেই সাহেবকে বাংলা ভাষায় লায়েক করে” পরীক্ষ! দিতে পাঠালাম । তিনি ফিরে এসে বল্লেন--:9০77১ 010 ৮৩7/ 611,” আমি তীর বিগ্ভা পরীক্ষা করপার জন্তে গ্রশ্নপত্রের একট! বাংলার কি অনুবাদ করেছেন জিজ্ঞাসা করলাম । দেই বাংলাটা--'তদস্তে জানিতে পারিলাম ঘটনা সত্য |,
সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলাম--এটার তিনি কি অন্থবাদ করেছেন। তিনি বল্লেন--এ আর শক্ত কি--4৯5 00261 02009 00 10057 05
006 0256 ৬/23 0010,+
আমি হেসে উঠলাম । তিনি বল্লেন, “কেন? ঠিক হয়নি !? আমি
বল্লাম--'মোটেই না। ণ্তদস্ত” কথার অর্থই তুি বুঝতে পার নি।
“তদন্ত'র ইংরেজী হচ্ছে-_ [77630890077 সাহেব লাফিয়ে উঠে বল্লেন
“তা কি করে হবে? তুমিই তবার বার ব'লে দিইছিলে--যে শব্দের অর্থ
না বুঝবে-তার সন্ধিবিচ্ছেদ করতে হবে। তোমার কথা অনুসারে €
স জলধর সেনের আত্মজীবদী
“তদন্ত শবের সন্ধিবিচ্ছেদ করে আমি পেলাম ত২+অস্তে অর্থাৎ *৩7 09৮ আর এই লিখিছি। ওটা “তদন্ত তা কি করে বুঝব ?
এই বিচ্যে নিষে ত সাহেব পরীক্ষা দিয়ে এলেন । মাস দেড়েক পরেই পরীক্ষার ফল বের হ'দ। সাছেব আমাকে ডেকে গেজেট দেখিয়ে বল্লেন_-“এই দেখ আমি পাস হয়েছি । আর হাজার টাকা পুরস্কার পেয়েছি । তবে ছুঃখের কথা এই যে, এঁ গেজেটেই আমাকে ট্রান্সফার করেছে । যাক, ও টাকা আমি কি করব? আমার বাপের যথেষ্ট টাকা আছে। এ হাজার টাকার ৫০০২ টাঁকা তোমাকে পুরস্কার দিলাম মাষ্টার, আর ৫০০২ টাক! এখানকার পাবপিক লাইব্রেরীতে দিয়ে যাঁব। যা” হোক, ছয় মাস তিরিশ টাঁক। করে? পেয়েছি-_-তাঁরপর ৫০৭২ টাঁকা। এসব টাকা এনে বড় বৌদিদ্ির নামে সেভিংস ব্যাঙ্কে জমা করে, দিয়েছিলাম । বলেছিলাম--এর এক পয়সাও কেউ খরচ করতে পারবেন না । এটাক! দিয়ে বড়দার মেয়ের বিয়ে দেব। বৌদিদি বল্লেন-_বেশ, তাই হবে।
এহেন উপযুক্ত ও রৌজগেরে ছেলেকে আর অবিবাহিত রাখা যায় মা, জেঠাই মা, ছু* একবার বলেছিলেন, কিন্তু তাদের আমল দিইনি । শেষে তাঁরা একেবারে হাইকোর্টে আপিল করে” বসলেন । এ হাইকোর্ট হলেন--কাঙাল হরিনাথ । এ আপিলে তিনি রায় দিলেন- আমাকে বিবাহ করতেই হবে।
এর প্রতিবাদ কর। আমার পক্ষে একেবারে অসাধ্য । তিনি ষা+ আদেশ করবেন, বিন। বিচারে অবনত মন্তকে সেই আদেশ পালন করতেই এতকাল শিথেছি। সুতরাং নাকি স্থুরে একথা বলতে হয়নি-- কি করব, যা! ছাড়লেন ন।! এক্ষেত্রে সে কথা বলার যে! নেই । আঙি
ছালধয় সেনের আকজীবনী নু
খাকে দেবতার মত ভক্তি করি, মাও ধাকে তেমনি ভক্তি করেন--তারই 'আদেশ--বিবাহ করতেই হুবে।
বড়দাদ| মেয়ে খু'জতে আরম্ভ করলেন। চারিদিকে অন্সন্ধান করে তিনি নিজে গিয়ে মেয়ে দেখে এলেন। বাড়ী এসে সকলকে বল্লেন-- পরমাসুন্দরী মেয়ে। আমাদের কায়েতের ঘরে হাজারে একট! মেলে কিনা সন্দেহ । খুব বড় বংশের মেয়ে। মহাকুলীন। কিন্তু মেয়ের বাপের অবস্থা এতই মলিন হয়েছে যে, তিনি অলঙ্কারপত্র বা দানদামগ্রী কিছুই দিতে পারবেন না । অতি কষ্টে শাখাশাড়ী দিষে মেয়ে দান করবেন। এবং সেই উপলক্ষে ধারা পায়ের ধুলো! দেবেন তাদের যথা- সাধ্য অভ্যর্থনা করবেন।
বড়দাদ1 একেবারে পাকা কথা দিয়ে এসেছেন। তিনি কিছুই নেবেন না । তবে বরধাত্রী শতাধিকের কম হবে না। আমার শ্বশুর মহাশয় বলেছিলেন, তাই হবে। যে করে পারি তাদের অভ্যর্থনা করব। তার নাম অস্থিকীচরণ মিত্র। নদীয়া জেলার- মহামহিম মহারাজ কৃষ চন্দ্রের দেওয়ান ছিলেন, রঘুনন্দন গিত্র। মহারাজের আদেশে এখন ষে স্টেশনের নাম শিবনিবাস--তারই নিকটে চারিদিকে গড়থাই বা বেড় দিস্বে দেওয়ান রঘুনন্দন নৃতন গ্রাম পত্তন করলেন- ব্রাহ্মণ কায়স্থ অন্যান জাতিরও লোকজন এনে গ্রামে বাঁস করালেন। গ্রামের নাম হ'ল-_ “দেওয়ানের বেড় । ৫সই দেওয়ান রঘুনন্দনের প্র-পৌন্রী স্ুকুমারী দাসী হবেন আমার গৃহলক্্ী--এই আমার বড়দাদ। স্থির করে এলেন। কাঙাল শুনে বল্লেন--বেশ করেছ ছারকানাথ। খুব উচ্চ বংশের অবস্থ। অত্যন্ত মলিন হয়ে গেলেও সে ঘরের মেয়ের! খুব ভাল হয়। তাঁরা একেবারে মাটিরও অধম হয়ে থাকে।
এই স্থানে রঘুনন্দন মিত্র মহাশয়ের একটু সংক্ষি্চ পরিচন়্ দিই । তিনি
গল জলধর সেনের আত্মজীবনী
মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের একজন কর্মচারী ছিলেন। প্র যে খুব উচ্চ ছিল তা নয়, কিন্তু এই কায়স্থ সন্তানের কর্মকুশলতা ও কাঁধ্যতৎপরতা গুণগ্রাহী মহারাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল । তিনি রঘুনন্বমনকে বিশেষ স্নেহের চক্ষে দেখতেন। সেই সময় নদীয়া-রাঁজ্যে নান। শিশ্জ্ঘলা উপস্থিত হয় । মহারাজ খণভারে জড়িত হয়ে পড়েন। তিনি এই খণ শোধ ও রাজ্যের বিশৃঙ্খল] দূর করবার জন্তে বিশেষ উদ্দিগ্ন হয়ে পড়েন। তখন একদিন রঘুনন্দন মহারাজকে বলেন-_মহারাজ, যদি আমার ওপর রাজ্যের সমস্ত ভার অর্পণ করেন তা হলে আমি কিছুদিনের মধ্যেই আপনার সমস্ত খণ শোধ করে দিতে পারি এবং রাজ্যের আয় বুদ্ধি ও শৃঙ্খলা-সাঁধন করতে পারি।
রঘুনন্দনের এই কথা৷ শুনে মহারাজ বড়ই প্রীত হলেন এবং তাকে দেওয়ানী পদে নিযুক্ত করে রাজ্যের সমন্ত ভার তাঁর উপর অর্পণ করলেন । রঘুনন্দন তথন নান! উপায়ে রাজ্যের আয় দ্বিগুণ বদ্ধিত করে দিলেন» আর এদিকে অবথা-ব্যয় সঙ্কোচ করলেন। এই ব্যয় সঙ্কোচ উপলক্ষে তিনি রাঁজকুমার, রাজমাতা এবং রাজ-আত্মীয়গণকে রেহাই দিলেন না । এই কারণে অনেকেই তার শত্রু হয়ে উঠল এবং রাজকুমার থেকে আরম্ভ করে অনেক উচ্চপদস্থ কন্মচারী তার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করতে লাগলেন । মহারাজের কানেও নানা কথা তুলতে লাগলেন। কিন্তু মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র কাহারও কৌন কথায় কর্ণপাত করলেন না। কাজেই সকলকে নিরস্ত হতে হল।
তারপর দেওয়ান বঘুনন্দনের অনৃষ্টে ষে শোচনীয় ও অভাবনীয় ব্যাপার সঙ্ঘটাত হল তার বিবরণ দেওয়ান কাত্তিকেয়চন্দ্র রায় মহাশয় প্রণীত “ক্ষিতীশ বংশাবলী চরিত” হ'তে উদ্ধত করে দিলাম £
জলধর সেনের আত্মজীবনী ৬৯
“একদ| মুরশিদাঁবাদে নবাবের সভায় বর্ধমান ও রাজসাহী প্রভৃতি নান! প্রদেশীয় রাজা দিগের দেওয়ান; উকীল এবং অস্থ অন্য অনেক সন্তাস্ত ব্যক্তি আসীন আছেন, এমত সময়ে, রঘুনন্দন এ স্থানে উপনীত হইলেন। সভা মধ্যে শূহ্য স্থান অতি সন্কীর্শ ছিল। একারণ, তন্মধ্যে প্রবেশ কালে তাহার পরিচ্ছদের নিশ্নদেশ বন্ধমানাধিপতির দেওয়ান মাণকঠাদের অঙ্গে লাগিল। ইহাতে মাণিকচাদ অতিশয় কোপপ্রকাশপূর্ধক তাহাকে হিন্দি ভাষায় কহিলেন, “দেখ তে নেহি পাজি ।” রঘুনন্দন বলিলেন, “ই! নওকর সবহি পাজি হ্যায়, কোই ছোটা কোই বড়া” এই কৌতৃকাবহ ও সমুচিত উত্তর শ্রবণে সভাস্থ যাবতীয় ব্যক্তি, উচ্চ" স্বরে হাস্ত করিয়া উঠিলেন। এইরূপ উপহাসিত হওয়াতে তদবধি তাহার সহিত মাণিকটাদের বিষম বৈরান্নবন্ধন ঘটাল । কিয়ৎকাল পরে মাণিকচাদ নবাবের দেওয়ানী পদ প্রাপ্ত হইলেন। এ পদে নিযুক্ত হইবামাত্ বৈরনির্ধ।াতনের উপায় চিন্তা করিতে লাগিলেন। তৎকালে একপ উচ্চপদস্থ ও ন্গমতাপন্ন ব্যক্তি রঘুনন্দন সদৃশ লোকের অনিষ্ট সাধনে প্রতিজ্ঞারট হইলে, কোন ন! কোন ছল করিয়! অনায়াসে সফলষঃ ও পূর্ণমনৌরথ হইতে পারিতেন। বর্ধমানের রাজার কয়েক লক্ষ টাকা রাজ্বন্ব হুগলি হইতে মুরশিদাবাঁদে প্রেরিত হইয়াছিল। এঁটাকা রাজ! কৃষ্ণ চন্বর জমীদারীর অন্তভুক্ভু পলাশী গ্রামে পেহুছিলে রাত্রিষোগে বহুসংখক দন্য আগিয়া প্রহরীগণের মধ্যে কাহাকে হত কাহাকে আহত ও পরাভূত করিয়া সমন্ত্র ধন হরণ করে। কৃষ্চণ্জে র কর্মগারিগণ অপরিমেয় চেষ্টা পাইয়াও হৃতধনের বা অপহারিগণের কোন অনুসন্ধান করিয়া উঠিতে পারিলেন না। কুষ্চন্ে র ষড়যন্ত্রে অথবা তাহার শাসন দোষে এই ব্যাপার ঘটয়াছে বলিয়! রায় মাণিকচাদ তাহার প্রধান কণ্মাধ/ক্ষ রঘুনদ্দনকে অপরাধগ্রন্ত করিলেন, এবং প্রথমে তাহাকে সমধিক অবমানন! করিয়া, পরিশেষে কামানের দ্বার! উড়াইয়। দিলেন। রাজবাটাতে অতিদ্রঃখাবহ এই এক প্রবাদ আছে যে, রঘুনন্দন ইতিপূর্বে নিতান্ত প্রয়োজন বশতঃ রাজকুমারদের সঙ্গে যে আপাতঃ কঠিন আচরণ করিয়াছিলেন, তাহার| এ বিষয় ম্মরণ পুর্ধক তাহার এই দর্দশায় দ্ুঃখিত-চিত্ত না হইয়। বরং পুলকিত হইয়াছিলেন। একারণ যখন যুরশিদাবাদে রঘুনন্দনকে গর্দিভারোহিত করিয়্য নবাবের লোকেরা নগর ভ্রমণ করায়, তখন তিনি কৃষ্তন্ত্রের বাসস্থানের সমীপস্থ বর্ষে সমাগত হইলে, রাজপুত্র শিবচন্র তাহার প্রতি নয়ন-পাঁত করিয়া ঈষৎ হান্ত করেন। তদর্শনে রঘুনন্দদ অতীব বাধিত হাদয় হইয়া তাহাকে কহিলেন যে, “এই অবমাননাতে আমার যাদৃশ যগ্গপা বোধ হইতেছে, তাহার সহন্বগুণ তোমাদের ব্যবহারে হইল। অবোধ রাজনন্দন, আমার এই অবমাননাতে কাহার অবমাননা)
ৰও জলধর সেনের আত্মজীবনী
হইতেছে, ইহ! যে তৃমি বুবিলে না, এই বড় পরিতাপের বিষয় । আমি যে গর্দভে আরোহন করি নাই, তোমার পিতাই করিয়াছেন জানিবে
৮ ধর ক রি রঃ
আমার শ্বশুরের নাম অস্থিকাচরণ মিত্র। সে সময় দেওয়ানের বেড়ের অবস্থা অতি শোচনীয় হয়েছিল। বড় বড় অট্টালিকার অস্তিত্ব একেবারে ইইকস্তপে পরিণত । পূজা-বাড়ীতে প্রকাণ্ড চণ্তীমগ্ডপই স্থুধু অক্ষত শরীরে দাড়িয়ে ছিল । তাঁর সম্মুখের বৃহৎ নাটমণ্ডপ স্থানে স্থানে ভেঙ্গে পড়েছিল, তা হলেও ইট-কাটগুলে! সরিয়ে সেখানে বসবার জায়গা হতে পারত। অন্দর মহলে সেই ইষ্টক স্তরপের পার্থে খান চারেক একতলা ঘর ছিল। সেইগুলি কোনরকমে সংস্কার করে আমর শ্বশুর মহাশয় বাস করতেন। শ্বাপুড়ী ছিলেন অন্ধ। শ্বপ্ডর মহাশয়ের এক দূরসম্পর্কীয় বিধবা ভগ্মী তাদের তত্ববধান করতেন ।
শ্বশুর মহাশয়ের তিন কন্যা এবং এক পুত্র। পুত্রটাই সর্ধকনিষ্ঠ। তার নাম অন্পদাচরণ। তিন কন্তার মধ্যে আমার স্ত্রী সর্বকনিষ্ঠ । বড় দুই জনের বেশ ভাল ঘরে বিবাহ হয়েছিল। আমার বড় ভায়রাভাই স্থুলের সাবইনস্পেক্টার ছিলেন । মেজ ছিলেন গোয়ালন্দ ই. বি. আর. এ গুড অফিসে বড়বাবু। এ'রই আবস্থা ভাল ছিল। তিনি যদিও, ৬০২ টাকা বেতন পেতেন কিন্তু তাঁর উপার্জন ছিল ছয় সাতশো৷ টাকা।
আমার যখন বিবাহ হয় তখন আমার বড় শ্যালিকার একটি মাত্র পুত্র । পরে আর সন্তানাদি হয়নি । মেজ শ্ঠালিকার তখনও সন্তানদি হয়নি। আমার বিবাহের ৫1৬ বৎসর পরে তার একটা পুত্র হয়।
এইবায় আমার বিবাহের কথা | বড়দাদা তো মেয়ে দেখতে গিয়েই আশীর্বাদ করে আসেন। তার কয়েকদিন পরেই এক শনিবারে আমার শ্বণ্তীর মহাশয় স্বয়ং আমাকে আশীর্বাদ করতে এলেন। পূর্বে
জলখর সেনের আতুজাবনী ৭১
সংবাদ পেয়ে বড়দাদা শুক্রবার রাজ্রেই বাড়ী এসেছিলেন। আমি কিন্তু তার সঙ্গে আসিনি । রবিণারে আশীর্বাদ হবে, ছুদন আগে হুল কামাই করে বসে থাকি কেন? বিশেষ সে সময় আমার আ-বাল্য বন্ধু অক্ষয়কৃমার মৈত্রেয় বাড়ীতে ছিলেন। বড়দাদা ও অক্ষয় ষ্টেশন থেকে আমার শ্বশুর মহাঁশয়কে অভ্যর্থনা করে এনেছিলেন । কোন বিষয়েই ক্রুটি হয়নি।
অক্ষয় আমার শ্বশুর মহাশয়ের সঙ্গে খুব ঘনিষ্টত! জমিয়ে তোলে। পরে শুনেছিলাম, অক্ষয় বলেছিলেন- ছেলে আর কি দেখবেন, আমাঁকে দেখলেই তাকে দেখা হবে। এই আমারই মত রোগা, আমারই মত কালো, আমারই মত লম্বা চুল, আর আমারই মত অল্প অল্প দাড়ী। বিগ্াসাধ্যি দুই জনেরই সমান । আপনি যদি ইচ্ছা করেন তো! আমাকেই আশীর্বাদ করে যেতে পারেন।
আমি রাত্তির ১১টার সময় বাড়ী এলাম । আমার শ্বশুর মহাশয় তখন আহাঁরাদি শেষ করে নিদ্রিত হয়েছেন। শুনলাম, কাঙাল হরিন!থ এসে তাকে আপ্ায়িত করে গিয়েছেন এবং আমার গুণগানও করেছেন । প্রাতঃকালে পাড়ার ২৪ জন এলেন । অক্ষয় তো ছিলেনই ।
আশীর্বাদ হয়ে গেল। শ্বপণ্তর মহাশয় তথন অক্ষয়কে সঙ্গে করে গ্রামের অনেকের বাড়ী গেলেন এবং সকলেই তাঁর বাড়ীতে পদধূলি দেবার জন্ত বিশেষ ভাবে অনুরোধ করলেন । কাঙাল যে কোথাও যেতেন নাঁতিনি পধ্যন্ত যেতে সম্মত হলেন। বাড়ীতে এসে অক্ষয় বল্লেন--'আপনি তো নারদের নিমন্ত্রণ করে এলেন, এদিকে বড়দার কাছে গুনেছি- আপনার বর্তমান অবস্থায় কোন প্রকার সমারোহ কর সম্ভবপর হবে না।?
তিনি বল্পেন_ অক্ষয়কুমার, আমার বড় আদরের কন্তা। দেওয়ান
৭২ জলধর সেনের আত্মজীবনী
রঘুনন্দনের সম্মান অবশ্য রক্ষা করতে পারব না) কিন্তু যে একশো-দেড়শো! বরযাত্রী যাবেন যথাসাধ্য তাদের অভ্যর্থনা করব_-এ ভরসা আমার হয়েছে । কারণ, আমার দ্বিতীয় কন্ত। বরযাত্রীদের অভ্যর্থনা করবার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করবেন। আমি কেবল কোন রকমে কন্তা সম্প্রদান করব। হয়েছিলও তই । আমরা প্রায় দেড়শো বরযাত্রী গিয়েছিলাম । সেই জীর্ণ নাটমণ্ডপ পরিষ্কার করে মকলের বাসের বাবস্থা আর সেই প্রকাণ্ড চত্তীমণ্ডপে আহারের স্থান হয়েছিল। বরধাত্রীদের হাঙ্গামা তাদের বেশী পোহাতে হয়নি। তিনটের গাড়ীতে আমরা পৌছি। গোধূুল লগ্নে বিবাহ । রাত্রি ১০টার মধ্যেই আহরাঁদি শেষ করে ১২টায় গোয়ালন্দ" মেলে বরযাত্রীরা সব ফিরে আসেন।
অভ্যর্থনার কোন ক্রটী হয়নি এবং ভোঁজের আয়োজনও দেওয়ান বাড়ীর উপযুক্ত হয়েছিল । শ্বশ্তর মহাশয় কিন্তু ৫টি হরতকী দিয়েই কন্তা উৎসর্গ করেছিলেন।
কাঙাল সে রাত্রি সেখানেই ছিলেন । পরদিন আমাদের নিয়ে বাড়ী এলেন।
এ বিবাহে বড়দাদাও অবস্থার অতিরিক্ত ব্যয় করেন। আমার জ্যাঠাইম। ছুইগাছি সোনার বাল! দিয়ে আশীর্বাদ করেন। সেই ছুই গাছি বালা ব্যতীত বিবাঠ্তি জীবনে তাঁর অঙ্গে আর “সানা ওঠেনি। কোন বিলাস দ্রব্য তার আড়াই বখসর বিবাহিত জীবনে সে পায়নি। মোট। ভাত মোটা কাপড়েই সে সন্তষ্ট ছিল। তার সম্বন্ধে একই কথ! বলতে পারি যে, সে সমস্ত পৃথিবাটাকে হেসেই উড়িয়ে দিতে পারত। তিরস্কার করলেও হাসি, কারণে অকারণেও হাসি। কোনপ্রকার অভাবকেই সে জীবনে আমল দেয়নি। সবই সে হেসে উড়িয়ে দিত।
জলধর সেনের আত্মজীবনী ৭৩
এই হাসি সঙ্গে করেই সে এসেছিল-কিন্ধক যাবার সময় €স হাসিমুখে যেতে পারেনি । সে কথ! পরে বলব ।
এখন আমার গোয়ালন্দের মাষ্টারী-জীবনের ছুই চারিটি ঘটনার কথা বলি। সেখানে আমি প্রায় ৫ বৎসর ছিলাম। সে সময়ে আমার স্টায় সামান্ত ্কুল-মাষ্টারের জীণনে এমন কিছুই ঘটতে পারে না, যা? উল্লেখযোগ্য । অবশ্য গোয়ালন্দের চাকুরি শেষ হবার সময়ে আমার জীবনধারা আমূল পরিবত্তিত হয়--সে কথ! পরে বলব!
সে ইংরাজী ১৮৮৭ অবের কথা। মাষ্টারী করা ছাড়া তখন আমার উপায়ান্তর ছিল না। একটু রয়ে-বসে চেষ্টাচরিত্র করলে, কিছুদিন কোন সরকারী আফিসে ঘরের খেয়ে শিক্ষানধিশী করলে হয় ত কোন একটা ভাল চাকুরী জুটতে পারত । কিন্তু তখন আমি এমনই বিপন্ন, আমার তথন অর্থের এমন প্রয়োজন হয়েছিল যে, ১৮৮০ খুষ্টান্দে এল-এ ফেল করে? তার পর বতসরই আম।কে চাকুরীতে প্রবিষ্ট হ'তে হয়েছিল। যে খসর আম এল-এ ফেল করলাম, সেই বসরই আমার একমাত্র কনিষ্ঠ সহোদর শশধর আনাদের গ্রামের ইংরাজী বিগ্তালয় থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। আমি বৃত্তি পেয়েছিলাম, তাই ছু” বৎসর কলেজে পড়বার পৌভাগ্য আমার হয়েছিল। আমার ভাই শশধর বৃত্তি পান নাই। তারই পড়াবার খরচ সংগ্রহের জন্ত আমাকে মাঞ্টারী চাকুরী গ্রহণ করতে হয়েছিল। আমার ছোট ভাই শশধর খুব বুদ্ধিমান্ ছিলেন । কেন যে তিনি ভালভাবে পাস করতে পারলেন না, তা” আমি বুঝতে পারলাম না।
আমরা ছুই ভাই $ শশধর আমার আড়াই বছরের ছোট ছিলেন তার বয়স যখন ছয় মাস, তথন আমর! পিতৃহীন হই, বড় হয়ে তিনি আমাকে তার জ্যেষ্ঠ ভাই বলে” যে শ্রদ্ধা করতেন তা” নয়, আমাকে
পু জলধর সেনের আত্জীবদী
তিনি তার জীবনের অবলম্বন বলে'ই মনে করতেন। তাই আমি যখন ফেল হলাম, আর তিনি পাস হলেন, তখন তিনি জেদ করতে লাগলেন যে, আনি আর এক বত্সর পড়ি। তিনি পড়াশুন! ত্যাগ ক'রে পনর কুড়ি টাকার একট। মাষ্টারী কি অন্ত চাকুরী নিয়ে আমার পড়ার খরচ চালাবেন এবং নিজেও ঘরে পড়াশুনা করে” মোক্তীরী পরীক্ষা! দিবেন । পিতৃহীন একমাত্র কনিষ্ঠ ভ্রাতার এ প্রস্তাব আমি গ্রহণ করতে পারি নি-আমি যে তার দাদা--সে যে আমার বড় আদরের পিতৃহীন ছোট ভাই! আমাদের সংসারের কর্তা. আমাদের বড় দাদা শশধক্রে এই প্রস্তাব অন্থমোদ করলেন ; কিন্তু আমি আমার পরম পৃজনীয় বডদাদার আদেশ অমান্য করেছিলাম ।
তথন বড়দাদ1 গোয়ালন্দের ফৌজদারী আদালতের পেস্কার ছিলেন, পরে হেড-ক্রার্ক হন। তিনি চেষ্টা করে আমাকে গোয়ালন্দ স্কুলে তৃশীয় শিক্ষক-পদে নিষুক্ত করিয়ে দিলেন। বেতন হ'ল নগদ চব্বিশ টাকা, পনর আনা--অর্থাৎ বেতন পঁচিশ টাকাই হল, তার থেকে মাহনে প্রাপ্তির রদিদস্ট্যাম্পের দাম এক আন! কেটে নিয়ে স্কুলের কত্তারা আমাকে চববুণ টাকা, পনর আনা ধিতেন। কলেজে পড়বার সময়ে স্থগ্রদিদ্ধ বাগী স্থখ্ভ্্রনাথ ও কালীচরণের বক্তৃতা শুনে,ম্বদেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করব, ম্াাটুসিনি-গা'রবন্ডি হব, দেশের মধ্যে দশজনের একজন হব বলে, আকাশে যে বাড়ী তৈরী করতাম, এক আঘাতে তা চূর্ণ হয়ে গেল-_ভখিষ্যুৎ দেশ-সেবার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল-__বিধাতার বিধানে আমি হলাম এক গ্রামের স্কলের পচিশ টাকা বেতনের থার্ড মাষ্টার। কি করব--এ কয়টী টাক না হ'লে যে আমার ছোট ভাহয়ের কলেজে পড় বন্ধহয়! তাই, আমি এ £5৪০/-78৫০ চাকুরী নিতে বাধ্য হয়েছিলাম --অপেক্ষা করবার আমার সময় ছিল না।'
জলধর সেনের আতুজীবনী ৭৬
আর এই মাষ্টারী চাকুরীটি বেশ! ওকাজের জন্য কোন প্রকার আয়োজন করতে হয় না, শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়না । বিশ্ব-বিগ্তালসের কোন পরীক্ষায় পাস বা ফেল হ*লেই মাষ্টারী করবার সনন্দ পাওয়৷ য।য়। অমন সোজ! চাকুরী আর নেই; একদিনের জনও মাষ্টারীর শিক্ষাগ্রহণ করতে হয় না। ছেলে পড়ানো বিষ্যাটা আমবা এতই সঙ্গজ করে নিয়েছিলাম! ওর ভন্ত সাগরেদী করতে হয় না--একেবারে ওস্তাদ শিক্ষক । তা” যাই বলি না কেন” ও সহজপ্রাপ্য ( এখন কিছু দুল্রাপা ) চাকুবীর পথ খোল! ছিল বলে আমাদের মত ফেল-করা মুর্খেরাও পার হয়ে গিয়েছিল।
থাকুক সে কথা। ১৮৮১ অন্ধে পচিশ টাকা বেতনে গোয়ালন্দ স্কুলে থার্ড মাষ্টার হয়েছিলাম । দাদার কাছে থাকি, কোন ভাবনা নেই । মাইনের টাঁক। এনে বৌদ্দিদির হাতে দিই ) তিনি আমার ছেট ভাইয়ের পড়ার থরচ পাঠিয়ে দেন। থাই-দাই, ছেলে পড়াই, পূর্ব সংস্কার বশে স্বদেণীও করি, ছেলেদের নিয়ে সভাসদিতঠি করি, বড়দের সঙ্গ 'মশে দেশোদ্ধারেরও পাগ্ডাগিরি করি। গোয়ালন্দের উকিল মোক্তার বড় বড় কর্মচারী সকলেই ক্ষামাকে ভালবাসতেন ও আদর করতেন, কারণ আমি বাল্যকাল থেকেই গোয়ালন্দে ছিলাম । গোয়ালন্দের মাহনর স্কুল থেকেই পরীক্ষা দিয়ে পাঁচ টাক! বৃত্তি পাই, তারপর অবন্থানিপর্যায়ে সেই মাইনর স্কুল এপ্টান্স স্কুলে পরিণত হলে আমি শিক্ষক হয়ে আদি । এই জন্ই আমি সকলের কাছে আবদার করতে পারতাম এবং তার! সানন্দে আমার অন্রোধ রক্ষা করতেন ।
সেই যে ৮১ অন্দে ২৫-২ টাকা বেতনে মাষ্টারী আরম্ভ করেছিলাম, ৮৫ অকের মধ্যভাগ পধ্যস্ত আমার সে মাহনে আর বাড়েনি। এর সালের শেষ ভাগে স্কুলের কর্তৃপক্ষের শুভদৃষ্ঠি আমার উপর পড়ল। তারা আমার
পপ জলধর সেনের আত্মজীবনী
বেতন ৫২ টাঁক। বাড়িয়ে দ্িলেন। এযে আমার যোগ্যতার পুরস্কার, সে কথা মনে করবেন না বন্ধু! পাড়াগীয়ের স্কুলের মাষ্টারদের যোগ্যতার পুরস্কার তখনও কেউ দেয়নি; এখনও দেয় না। আমার এ বেতন- বৃদ্ধির কারণ এই যে, স্কুলের কর্তৃপক্ষের নানাভাবেই জানতে পেরেছিলেন যে, আমাদের দরিদ্র সংসারে আর একটী লোকবুদ্ধ হয়েছে । সেই নবাগত লোকটীর খোরাকি বাবদ তারা আমার ৫২ টাকা বেতন বৃদ্ধি করে, দেন। সে নবাগত আর কেহ নন--আমার স্ত্রী। লেই বৎসরের প্রথম ভাগে আমি বিবাহ করি।
এইবার আসল কথ! বলি। ১৮৮৬ অবন্দের শেষভাগে ডিসেম্বর মাসে কলিকাঁতা নগরীতে জাতীয় মহাসমিতির (কংগ্রেসের) দ্বিতীয় অধিবেশন হয়। সেই অধিবেশনে আমি গোয়ালন্দে জনসাধারণ কর্তৃক প্রতিনিধি নির্বাচিত হযে যাই। তখনও কিস্ক আমার মধ্যে ম্যাটুসিনি, গ্যারিবল্ডির 'অস্তিত্ব লোপ পায়নি । ১৮৮৫ অন্দে বোম্বাই, প্রথম কংগ্রেস হয়। আমাদের দেশপুজা উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (৮.0. 8০০০1) সেই কংগ্রেসের সভাপতি হন। তিনিই দ্বিতীয় বৎসবের কংগ্রেসকে কপিকাতাঁয় আহ্বান কবেন। দ্বিতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হন সর্বজনমান্ত দাদাভাই নৌরজী মহাশয়, অভার্থনা-সমিতির সভাপতি হন রাজ! রাজেন্দ্লাল মিত্র মহাশয় । দেশের অনেক গণ্যমান্ত বাক্তি এই কংগ্রেসে যোগদান করেন, এমন কি মহারাজ যততীন্দ্রমোহন ঠাকুর মহাশয় পর্য্যন্ত এই কংগ্রেসে বর্তৃত। করেন। আমি গণ্যমান্য না হলেও, আমায় প্রবাস-স্থানের প্রতিনিধি হয়ে এই কংগ্রেসে যোগ দিই।
প্রথম দিনের কংগ্রেসের অধিবেশন হয় টাউন হলে। কলিকাতার কার্য্যনির্বাহক সমিতি মনে কণেছিলেন-_নান। স্থানের প্রতিনিধি ও
জলধর সেনের আতুজীবনী ৭4
দর্শকে এত অধিক লোক হবে, যাঁদের স্থান বৃটিশ ইয়ান এসোসিয়েশন হলে নাও হতে পারে।
কোন প্রকারে প্রথম দিনের কার্য্য শেষ হয়ে গেল। অভ্যর্থনা- সমিতির সভাপতি ও মূল সভাপতি তাঁদেব অভিভাষণ পাঠ করলেন। দ্বিতীয় দিনের অধিবেশন ব্রিটিশ ইপ্ডিয়ান এসোসিয়েশন গৃহে হাল। সেইদিনের সভা শেষ হওরার পূর্বেই স্থুরেন্্রনাথ জলদগন্ভীর শ্বরে ঘোষণা করলেন যে, পরদিন টাউন হলে আবার কংগ্রেসের অধিবেশন হবে।
পরদিন যথাঁসময়েব পূর্ধেই টাউন হলে গেলাম। পূর্ব ছুই দিন যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলাম, তার জন্তই সভারস্তের প্রায় এক ঘণ্টা পূর্ব্ব টাউন হলে উপস্থিত হয়েছিলাম । আর সেই জন্যই প্রতিনিধিদের, নির্দিষ্ট আসনের প্রথম শ্রেণীতেই স্থান সংগ্রহ করতে পেবেছিলাম । তাতে আমার পক্ষে দেখা-শোনার যথেষ্ট স্থবিধা হয়েছিল । প্রথম দিনের অধিবেশন আরম্ভ হবার আধ ঘণ্ট। পূর্বেই দেখতে পেলাম--একট্রী গৌরবর্ণ যুবক মঞ্চের উপর এবং মঞ্চের চারিপাশে ব্যন্ত-সমত্ত হয়ে ঘোরাঘুরি করছেন। যুবকটি দেখতে যেমন সুন্দর, তার পর্িচ্ছদও তেমনি পরিপাটা ; দেখলেই বুঝতে পারা যায় তিনি খুব সন্ত্ান্ত ঘরের সন্তান। চোখে সোণার চশমা, গায়ে লম্বা একট কোট, গলায় একটা আলোয়ান জড়ানো-সেই আলোফানের ওপর ছু দু.টা ব্যাজ._-একটি অভ্যর্থনা সমিতর সদন্তেরঃ আর একটী গ্রতিনিধির । আর তিনি যে ভাবে বড় বড় রথাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, সস্ত্াস্ত অভ্যাগতর্দিগকে অভ্যর্থনা করছিলেন, তা দেখে বুঝতে পারলাম যে, তিনি যুখক হলেও কংগ্রেসের একজন বড় পাণ্ড। আমার পার্খে যে বাঙ্গালী প্রতিনিধিটি বসে ছিলেন, তীঁকে এ যুবকের পরিচয় জিজ্ঞাসা করতে তিনি অবাক
৮ জলধর সেনের আত্মজীবনী
সয়ে বল্লেন, সে কি মশায় !--গুকে আপনি চেনেন না । উনি বরিশালের 'অশ্বিনীবাবু। আমি বিনীতভাবে বল্লাম, গুর নাম অনেক শুনেছি, কিন্ত পাঁড়াগায় থাকি, তাই চিনতে পারি নি।
অনেকের স্বভাব আছে লোকের সঙ্গে গায়ে পড়ে আলাপ করে। আমার সে স্বভাব মোটেই তখনও ছিল না, এখনও নেই। আমি কারও সঙ্গে আপন! হ'তে আলাপ জমাতে পারি নে, এখন তো! মোটেই পারি নে, যৌবন কালেও পারতাম না । কাঁজেই দেশমান্ত অশ্বিনীবাবুর সঙ্গে পরিচিত হবার সৌভাগ্য আমার হ'ল না । আমি সেই সৌম্যুস্থি যুবককে দূর থেকে দেখেই তৃপ্তি লাভ করলাম।
যথাসময়ে সভা আরম্ত হ'ল। সেই দিনের দুইটি ঘটন। আমার বেশ মনে আছে। তার মধ্যে একটী- উত্তরপাঁড়ার অশীতিপর বুদ্ধ অন্ধ জমীদার জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের সভায় আগমন। ছুইজন লোকের স্বন্ধে ভর দিয়ে মুখোপাধ্যায় মহাশয় যখন মঞ্চের উপর এলেন, তখন সকলেই দণ্ডায়মান হয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা করলেন। আমি তাঁকে চিনতাম না _-তবুও সকলের দেখাদেখি আমিও গড়িয়ে নমস্কার করলাম। আমার পাশের সেই ভদ্রলোকটিকে হ্গিজ্ঞাসা করে' জানতে পারলাম--ইনিই স্থগ্রসিদ্ধ জয়ক্* মুখোপাধ্যায় । মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের ক্ষীণ কণ্ঠ হ'তে যে বাণী প্রদত্ত হ'ল তার একটা কথা উদ্ধৃত করবার প্রলোভন আমি সংবরণ করতে পারছিনে। অশীতিপর অন্ধ বৃদ্ধ বল্লেন-_
£৫]0 13 280 ৮0106701886 010]600 50001) 23 07656 31507101৮৬৩ 057 015028013150 26001610561) 08 21] 02103 ০01 00৩ ০0791)07১ 0061৮ 00. ঠি00 21011150010 102 1150 1099৩] 0£ 79 96215 01 86৩ 0615018)6 006] 076 19017010555 01 9৮6১ 62011
2 08:03 0106 06111951200105,),
বলধর সেনের আস্তজীবনী গড
আর একটি যুরক সেদিন সত্যসত্যই আমাকে অভিভ্ৃত করে' ফেলেছিলেন। একটা প্রস্তাব সমর্থন করবার জন্ত যখন তিনি মঞ্চের উপর এসে দীড়ালেন, তখন সমবেত প্রতিনিধি অবাক্ হযে সেই মৃত্তির দিকে চেয়ে রইলেন। যুবকের বয়স তখন পঁচিশ-ছাব্বিশ বৎসর । পায়জামা-পরা, গায়ে লম্বা! সাদা! চাপকান, একথানি সাদা চাদর গলায় জড়িয়ে তার ছুই প্রান্ত বুকের উপর দুইপাশে ঝুলিয়ে দিয়েছেন, মাথায় পাগড়ী, কপালে শ্বেত চন্দনের ফৌটা। সত্যসত্যই অপূর্ব-দর্শন মুত্তি ! তিনি এসে দীড়াতেই আমি পাশের সেই ভদ্রলোকটিকেও তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করলাম,_তিনি বল্লেন--চিনি নে মশায়। বোধ পাঞ্জাবী কেউ হবে। তখন আর কাউকে জিজ্ঞাসা করবার অবকাশ পেলাম না। সুবকটি গম্ভীর স্বরে টাউন হলের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রাস্ত পর্য্স্ত প্রতিধবনিত করে বক্তৃতা আবস্ভ করলেন। আর বক্তার কি উদাত্ত স্বর !--এই বুদ্ধ বয়সেও সেরৃশ্য যখন মনে করি, তখন আমি অতুল আনন্দ উপভোগ করি। এই যুবকের নাম অধুন! বিশ্ববিখ্যাত পণ্ডিত মদনমোহন মালবীয় মহাঁশয়। তিনি তখন এলাহাবাদ যাঁইকোটের উদীয়মান ব্যবহারজীবী।
কংগ্রেসের কথা এইখানেই শেষ করি।--ভারত-উদ্ধার করে, যথাকালে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এলাম । আবার “সেই শিক, সেই দাড়, সেই একঘর | রাজনীতি তখন ধামা-চাপ! রইল । সংসারধাক্র! যথাঁনিয়মে চলতে লাগল ।
ডিসেম্বর মাসের শেষে কংগ্রেস হয়ে গেল । জাহ্য়ায়ীর প্রথম ভাগে একদিন বিকেল বেলা আমার একটা প্রিয় ছাত্র আমার কাছে এসে বললেন যে, তিনি বরিশালের অশ্ষিনীবাবুর কাছ থেকে একখানি পত্র পেয়েছেন । আমার এই ছাব্রটির নাম শ্রীমান পঞ্চানন ব্রচ্ষচারী । এঁর
৮০ জলধর সেনের আতুজীবনী
বাড়ী বরিশালে এবং ইনি অশ্থিনীবাবুর অতি প্রিয় শিষ্প ছিলেন। তার মাতুল বা কেউ গোয়ালন্দে ব্যবসা বাণিজ্য করতেন, পঞ্চানন সেইখানে থেকে আমাদের স্কুলে পড়ত। তারি কাছেই ইতঃপূর্বেরে অশ্বিনীখাবু সম্বন্ধে অনেক কথা শুনেছিলাম। সে সময়ে একটা ব্যাপার দেখতে পেতাম, অশ্বিনীবাবুর ছাত্র, বন্ধু ও শিপ্কেরা যেখানেই যেতেন, সেথানকারই আবহাওয়ার একটা পরিবর্তন সাধিত করতেন--এমনই তাদের চরিত্রথল ছিল-_-এমনই উচ্চ আদর্শে তারা গঠিত হয়েছিলেন ।
শ্রীমান পঞ্চাননও সেই প্ররূতির মাচষ ছিলেন । বরিশাল ব্রাহ্ম সমাজের বর্তমান আচাধ্যঃ আমার পরম শ্রদ্ধয় বন্ধু শ্রীযুক্ত মনোমোহন চক্রবর্তী মহণশয় এখনও কলিকাতায় এলে আমার সঙ্গে দেখা করে” পর্াননের গুণগান করেন। আর তার চরিত্র-মাধুর্্য যে আমিই বিকশিত করে দিয়েছিলাম, একথা বলে আমাকে লজ্জিত করেন। প্রকৃতপক্ষে পঞ্চাননের জীবন অশ্বিনীবাবুর আদর্শে ই গঠিত হয়েছিল।
যাক সে কথা। পঞ্চানন আমাকে বললেন যে, অশ্বিনীবাবু কংগ্রেসের মতগ্রচারের জন্ত অতি শীঘ্রই ফরিদপুর ও ঢাকা অঞ্চলে আসবেন। তার ইচ্ছা যে গোয়ালন্দে একদিন সভা করে' কংগ্রেসের বার্তা প্রচার করেন। তিনি লিখেছেন যে, গোয়ালন্দে তার পরিচিত কেউ নেই, তবে বিগত কংগ্রেসে গোরালন্দ থেকে আমি প্রতিনিধি হয়ে গিয়েছিলাম--কংগ্রেসের কাগজপত্রে এ-কথ। তিনি দেখেছেন । আমি তাঁকে সাহায্য করতে পারি কি না, এই কথা তিনি জিজ্ঞাসা করে" পাঠিয়েছেন এবং একদিনের জন্য তার অবস্থানের কি সুবিধা হবে, সে কথাও পঞ্চাননের কাছে জানতে চেয়েছেন। এ নিতীস্তই অপ্রত্যাশিত অভাবনীয় ব্যাপার । যে অশ্বিনীকুমারকে কংগ্রেসমগ্ডপে দেখে তার সঙ্গে আলাপ-্পরিচয় করবার বাসনা আমার মনে উদ্দিত হয়েছিল, সেই
জলধর সেনের আত্মজীবনী ৮৯
অশ্বিনীকুমার অযাঁচিতভাবে আমার আতিথ্য গ্রহণ করতেও উৎসুক !
অশ্বিনীকুমারের নির্দি্ট দিনে গোয়ালন্দে সভার ব্যবস্থা আমি অনায়াসেই করতে পারি । কিন্তু তার মত বড়-মানুষের ছেলেকে আমার ক্ষুদ্র কুটাবে একদিনের জন্যও আতিথ্য গ্রহণ করবার অনুরোধ করতে আমাঁব সঙ্কোচ বোধ হ'ল । তখন পঞ্চাননকে বাইরের ঘরে বসিয়ে বেখে, আমি বাড়ীর ভিতর বড়দাঁদার কাছে গেলাম । তাঁকে সব কথা বলতে তিনি বল্লেন--তাই তো_কি করা যায়! আমাদের এই ছোট চালা-ঘর-_খড়ের চাল--দরমাঁর বেড়া । এ কুঁড়ে ঘরে তার মত মহামান্ত অতিথিকে ডেকে আনি কি করে?
বডবৌদিদি বল্লেন_-“তাতে কি হয়েছে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যে বিছুরের ক্ষুদ থেষেছিলেন ! ঠাকুরপো, তাকে আসতে লিখে দাও। আমরা প্রাণপণে তার অভ্যর্থন। করব। কি বলিস্ সেজে!” এই বলে তিনি তার পশ্চাতে দণ্ডায়মান 'আমার স্ত্রীর গায়ে ঠেলা দিলেন । বভদাদার সন্মুথে তো তিনি আর কথা বলতে পারেন না-_ঘাড় নেড়ে বৌদিদির প্রস্তাবে সম্মতি দান কবলেন। আমি উৎফুল্লচিত্তে বাইরে এসে পঞ্চাননকে বললাম--“দেখ পঞ্চানন, অশ্বিনীবাবু হয় ত মনে করেছেন-_ আমি গোয়ালন্দের অতি গণ্যমান্ত পদস্থ ব্যক্তি। তুমি তার সেত্রম ঘুচিয়ে দাও। তাঁকে লেখ, আমি ২৫২ টাকা মাইনের গরীব স্কুল- মাষ্টার । আমার ঘর সত্যসত্যই কুটার। তিনি এই শুনে যদি আমার বাড়ীতে পদধূলি দেন-আমি ধন্ত হয়ে যাব। তুমি তাকে চিঠি লেখ-_ আমিও কাল তাঁকে চিঠি লিখব।
পঞ্চানন অশ্ষিনীবাঁবুকে কি লিথেছিল জানি নে--খুব সম্ভব আমি যা” বলেছিলাম তাই লিখেছিল । আমিও এভাবেই বরিশালে অশ্থিনীধাবুফে পত্র লিখেছিলাম। তার উত্তরে ঘিনি আমাকে ধা লিখেছিলেন--সে
ঙ
ই জলধর সেনের আত্মজীবনী
কথাগুলে! ঠিক ঠিক বলতে পারব না_-তবে এটুকু বেশ মনে আছে যে, গোয়াদন্দে য্দি ঢাকার মাননীয় নবাব বাহাদুরের রাজপ্রাসাদ থাকত আর সেখান থেকে তার নিমন্ত্রণ আসত, তা” হলেও তিনি সে নিমন্ত্রণ অস্বীকার করে আমার ক্ষুদ্র কুটারে আসতেন ।
তার পাঁচ ছয় দিন পরে এক বুধবারে অশ্বিনীবাবুর পত্র পেলাম । তিনি পরবর্তী শনিবার প্রাতঃকালে গোয়ালন্দ ষ্টেশনে উপস্থিত হবেন, আঁমি যেন সেইদিন অপরাহ্ছে সভা করবার ব্যবস্থা করি এবং তাঁকে আমার বাড়ীতে নিয়ে আসি।
যথানি্দিষ্ট শনিবারের প্রত্যুষে মেল-গাঁড়ীতে অশ্বিনীবাবু গোয়ালন্দ ষ্টেশনে পৌছলেন। একটী চাকর ব্যতীত সঙ্গে আর কেহ ছিল না। তাঁর আসবার দুইদিন আগে থেকেই আমর! সভার বিজ্ঞাপন ও নিমন্ত্রণ- পত্র সকলকেই দিয়েছিলাম । বাজীরের নিকট প্রশস্ত ময়দানে সভার স্থান কর! হয়েছিল । আমরা স্থির করেছিলাম- উন্মুক্ত আকাঁশতলেই সভা হবে, কিন্ত বাজারের আড়তদ্বার ও দোঁকান্দারগণ সে প্রস্তাবে সম্মত হলেন না। তাঁরাই সভামণ্ডপ প্রস্তত করার ভার নিলেন, আর আমার প্রকাণ্ড রেজিমেণ্ট স্কুলের ছাত্ররা তাঁদের সহায়তা করতে লাগলেন । 'নিমন্ত্রণপত্র ও বিজ্ঞাপন গ্রচারের ভার স্কুলের ছাত্ররাই গ্রহণ করেছিলেন ।
গোয়ালন্দের সর্ববপ্রধান উকিল যাঁদবচন্দ্র সরকার মহাশয় সভাপতির পদ গ্রহণ করতে স্বীকৃত হয়েছিলেন ও শনিবার প্রত্যুষেই ষ্টেশনে গিয়ে তিনিই সর্বপ্রথম অশ্বিনীবাবুকে অভ্যর্থনা করবেন, এ কথাও স্থির হয়েছিল। আমাদের আরও একট! সুবিধা হয়েছিল। শনিবার কি উপলক্ষে অফিস, আদালত, স্কুল, সমস্তই বন্ধ ছিল। তার জন্ত আমাদের লোকবলও বেড়েছিল এবং ষ্টেশনে অশ্বিনীবাবুর সংবদ্ধনার বিপুল আয়ৌোজনও আমরা করতে পেরেছিলাম ।
জলধর সেনের আত্মজীবনী ৮৩
শনিবার প্রত্যুষে সত্যসত্যই ষ্টেশনে লোকারণ্য হয়েছিল । গোয়ালন্দের গণ্যমান্য ব্যক্তি সকলেই সেই শীতেও &্রেশনে সমবেত হয়েছিলেন। আড়তদার, দোৌকানদীর, মুটে-মজুর সবাই বরিশালের অশ্বিনীবাবুকে অভ্যর্থনা করতে এসেছিল, আর আমাদের স্কুলের আড়াই শত ছেলে লাল নিশান হাতে করে" ষ্টেশনের সন্মুথে সারি বেঁধে দাড়িয়েছিল। যথাসময়ে গাড়ী ষ্টেশনে পৌছিলে একখানি দ্বিতীয় শ্রেণীর গাড়ী থেকে নামবার পূর্বেই যাদববাবু গাড়ীর ভিতর উঠে তাঁর গলায় মাল! দিয়ে অভ্যর্থনা ক'রে প্লাটফরমে নামালেন। তখনও “বন্দেমাতরম্* দেশে আনে নি, কাষেই সমবেত জনমগ্ডলী করতালি দিয়েই এই মহামান্ঠ অতিথিকে অভ্যর্থনা করলেন।
অশ্বিনীকুমার গাড়ী থেকে নামলে সম্মুখে ধারা ছিলেন, যাঁদববাবু তদের সঙ্গে অশ্বিনীবাবুর পরিচয় করিয়ে দিলেন । শিষ্টাচার-বিনিময়ের পর অশ্বিনীবাবু জিজ্ঞাসা করলেন--“কই, জলধর কই?” এ সমস্ত ব্যাপারে আমি কোনদিনই এগিয়ে দাড়াই নে--তথনও দাড়াতাম না, এখনও না। আনি সে সময়ে কতকগুলি লোকের পিছনে ধাড়িয়েছিলাম।
অশ্বিনীবাবুর প্রশ্ন শুনে যাদববাবু এদিক্-ওদিক্ চেয়ে দেখলেন যে, আমি পিছন দিকে দাঁড়িয়ে আছি । তিনি তখন দৌড়ে গিয়ে আমাকে টেনে অশ্বিনীবাবুর সম্মুখে এনে বললেন--“এই নিন আপনার জলধর।”
অশ্থিনীবাবু সহাস্তবদনে বললেন--“কথাট! ঠিক হল না-_বলুন, এই নিন “আমাদের জলধর।৮ সকলে আনন্দধবনি করে” উঠলেন। আমি তাঁর পায়ের ধুলো নিতে গেলাম । তিনি হো-হে। করে” হেসে বললেন-_- “পায়ে কি আর এখন ধূলো৷ আছে ভাই” এই বলেই আমাকে কোলের ভিতর জড়িয়ে বললেন--প্রণাম আর কর! হল না।
৮৪ জলধর সেনের আক্জীবণী
ষ্টেশনের বাইরে এসে কে একজন বলঙেন, “আপনার জগ্ঠ পাহ্নীর ব্যবস্থা করা হয়েছে।” সেই সদা-প্রফুল্প-বদন অশ্বিনীকুমার জিজ্ঞাসা করলেন--“জলধরের বাড়ী এখান থেকে ক' ক্রোশ ?”
যাদববাবুই জবাব দ্রিলেন--“ক্রোশ তে! নয়--আঁধ মাইলের কম 1”
অশ্বিনীবাবু বললেন--“আপনারা তুলে যাচ্ছেন আমি বরিশালের বাঙ্গাল অশ্বিনী দন্ত । এখনও প্রতিদিন সকালে উঠে আমি তিন চার ক্রোশ হাঁটি।” তখন সকলে মিলে হাটতে হাটতেই আমার বাসায় এলেন । আমার বড়দাদা ষ্টেশনে যাঁন নি, বাড়ীর ব্যবস্থাতেই ব্যস্ত ছিলেন। তিনি আমাদের বাসার সম্ঘুখেই দাড়িয়্ছিলেন। আমরা সকলে নিকটস্থ হলে, যাঁদববাবু দাদাকে দেখিয়ে বললেন--“ইনিই জলধরের দাঁদ দ্বারিকবাবু-আজ আপনি এরই অতিথি ।” বড়দ।দা নমস্কার করবার জন্ত হাত তুলতেই, অশ্বিনীবাবু নতজানু হয়ে তার পদধূলি গ্রহণ করলেন। তারপরই দাদা অতি মূহু স্বরে বললেন, --“আমার পরম সৌভাগ্য যে, আপনি দয়া করে আমাদের বাড়ীতে এসেছেন ।”
সে কখার উত্তরে তিনি ঘা” বললেন, তা” তাঁর মত সদাশয় মহত হৃদয় ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব। তিনি বললেন,_-“আমি কি আপনার বাড়ী এসেছি? আমি আমার বাড়ীতেই এলাম--কোন শিষ্টাচার দেখাবেন না দাদা । আমি আপনার ছোট ভাই অশ্বিনী ।৮
এমন করে, কেউ যে নিতান্ত অপরিচিত ব্যক্তিকে একান্ত আপনার জন করে” নিতে পারে, এ আমি পূর্বে কখনও দেখি নি। অশ্বিনীবাবুর কথ! শুনে উপস্থিত সকলে ধন্য ধন্য করে উঠলেন। আমার বড়দাদাও উপযুক্ত দাদ1--তিনি বললেন, “আমার একটু তুল হয়েছিল অশ্বিনীকুমার -যাঁও, তোমার বাঁড়ী-ঘর ভূমি দেখে নাও ।৮
বনধ্র দেনের আহুজীবনী ৫
তারপর আঁদাদের বাইরের যে ঘরে তাঁর থাকবার ব্যবস্থা হয়েছিল, সেই ঘরে প্রবেশ করে' চারিদিক একবার চেয়ে দেখে বললেন--“এ কি করেছেন দাদ।--এ ষে রাজ-অভ্যর্থন। !”
কর! হয়েছিল তে। ভারী! একথানা-চৌকির উপর বিছাণীন। পেতে রাখা হয়েছিল--আর প্রতিবেশীদের বাড়ী থেকে ধার ক'রে খানকতক ভাল চেয়ার, দু"খাঁনা টেবিল ও একটি আল্না আঁনা হয়েছিল । এই হল তার রাঁজ-অভ্যর্থনা ।
দাদা বললেন, “আমি ওর কিছুই করিনি । ধীর করেছেন, যাও তাঁদের সঙ্গে বোঝা-পড়া কর গিয়ে |”
“তাই যাচ্ছি” বলেই কাপড়-চোপড় না ছেড়েই অশ্থিনীবাবু ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। তাঁরপর আমার হাত ধরে বলেন--“চল জলধর-_ গৃহলক্মীদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আসি। বাড়ীতে কে আছেন ন' আছেন, সে খবর আমি পঞ্চাননের চিঠিতে জানতে পেরেছি ।”
আমি তীকে সঙ্গে করে বাড়ীর ভেতর নিয়ে গেলাম। বড়বৌদিদি তখন বারান্দায় জলথাবার সাজাচ্ছিলেন। অশ্বিনীকুমার তার সন্ধুখে গিয়ে তাঁকে প্রণাম করে, বল্লেন--“আ।পনি যে বড়বৌদিদি, তা" আমি বুঝতে পেরেছি । কথা বলে” আমাকে আশীর্বাদ করুন ।”
বড়বৌদিদি বুঝলেন__আচ্ছ! লোকের হাতে পড়েছেন। কথা না বলে পারলেন না, বললেন--“আশীর্বাদ করি- ধনে-পুত্রে লক্মীলাভ হোক।” অশ্বিনীবাবুর সেই হাসি! বললেন--"ওর একটাও আমি চাই নে। যাক সে কথা পরে হবে। কই আর এক লক্ষ কই !”
বৌদি বল্পেন_“আপনার আসবার সাড়া পেয়েই মে এঘরে পালিয়েছে ।”
৮৬ জলধর সেনের আত্মজীবনী
অশ্থিনীকুমারের কোন দ্বিধা-সঙ্কৌোচ নেই-আমার শয়ন-ঘরের ভিতর প্রবেশ করে” আমার স্ত্রীর হাত ধ'রে টেনে এনে বল্লেন--“আমি ও লজ্জা-টজ্জা! মানব না। এ জীবটিকে কোথায় পেয়েছেন বৌদিদি ?*
বড়বৌদ্িদি বল্লেন-_-“শিবনিবাসের কাছে দেওয়ানের বেড়ে ।*
“ওরে বাবা! শিবনিবাস ?” এই বলে*ই ছড়া কাঁটলেন-_
“শিবনিবাঁসী তুল্য কাশী-__ ধন্য নদী কঙ্কন! 1”
বৌদ্দিদি, আমি দেওয়ানের বেড়ের ইতিহাসও পড়েছি । মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান রঘুনন্দনের স্থাপিত এই দেওয়ানের বেড় ।” বড়বৌদি বল্লেন_-“এতও আপনি জানেন !_এ সেই দেওয়ান রঘুনন্দনের প্র-পৌত্রী। এখন এসে আমার স্কন্ধে ভর করেছেন ।”
“আচ্ছা । সে পরিচয় পরে কর! যাবে, এখন বাইরে গিয়ে হাত-পা ধুইগে।”
বাইরে এসে সভার কথা জিজ্ঞাসা করতেই আমি তাকে বললাম, “আজই সাঁড়ে তিনটেয় সভা হবে, বাজারের কাছে । সবই ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে । আপনি জলটল থেয়ে বিশ্রাম করুন--আমি একবার দেখে আসি সবঠিক হচ্ছে কি না।” এই বলে আমি চলে” গেলাম। যখন ফিরে এলাম, তথন বেল। প্রায় একটা ।
বাড়ী এসে তাড়াতাড়ি ভিতরে গিয়ে দেখি--দাদার ঘরের বারন্দায় অশ্বিনীবাবু আহার করতে বসেছেন। তিনি তখন নিরামিষাশী ছিলেন। আমাকে দেখেই বললেন__“দেখ জলধর, আমি তোমার জন্তে অপেক্ষা করতেই চেয়েছিলাম । তা তোমার এ লক্ষ্মীটী আমাঁকে বুঝিয়ে দিলেন যে, তুমি হয় তে! এ বেলা আসবেই না, একেবারে সভা শেষ করে? আসবে । আমি ওর কথা বিশ্বাস করে তোমাকে ফেলেই থেতে বসেছি ।
জলধর সেনের আত্মজীবনী ৮
দাদাকে বাইরের ঘরে নির্বাসিত করে” ওরা ছুইজনে আমাকে নিয়ে পড়েছে । বড়শক্ত বাধনেই ভাই ফেললে আমাকে !» তারপর যে কত কথা--কত হাসি-তাঁমাস। সে সব কথা মনে হলেও এখন আমার চোখে জল আসে।
তারপর যথানির্দিষ্ট সময়ে অপরাহ্ন সাড়ে তিনটায় সভার অধিবেশন হ'ল। আমাদের স্কুলের পণ্ডিতমশায় স্বরচিত সংস্কত শ্লোক আউড়ে অশ্বিনীকুমারকে অভ্যর্থনা করলেন । অশ্বিনীবাবু আমাদেব দেশের শাসন ও বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ সম্বন্ধে এক ঘণ্টার উপর বক্তৃতা করলেন। সকলের শেষে আমি ধন্যবাদ করলাম! সভার কাধ্য শেষ হ'ল। অশ্বিনীকুমার এই অনুষ্ঠান দেখে বড়ই সন্তুষ্ট হলেন।
তারপর আমরা বাড়ী ফিরে এলাম। অশ্থিনীবাবু বড়ই ক্লাস্ত হয়ে পড়েছিলেন । রাত্রে খাঁনিকট! ছুধ ব্যতীত আর কিছুই থেলেন ন1। গরীবের যা” কিছু আযোজন হয়েছিল, আমরাই তার সদ্ধ্বহার করেছিলাম।
শয়নের কিছু পূর্বে অশ্বিনীকুমাব একবার বাড়ীর ভিতর গিকে আমারই সম্মুখে বড় বৌদিকে বল্লেন--“বৌদি, যা মনে করেছেন-_তা” নয়। অশিনীকুমীর কাল সকালে যাচ্ছেন না ।”
এ কথার জবার আমার স্ত্রী দিলেন--“কে আপনাকে যেতে বলেছে মশায়! থাকুন না দশ-পনর দিন আমাদেব এখানে !”
“সত্যসত্যই তাই ইচ্ছে করছে”, এই বলে” মাথা চুলকোতে চুলকোতে অশ্বিনীবাবু বেরিয়ে গেলেন ।
পরদিন প্রীতঃকালে তার চাঁকরটিকে বাড়ীতে রেখে আমাদের চাঁকরকে সঙ্গে নিয়ে অশ্থিনীবাবু বেড়াতে বেরুলেন। বেলা প্রায় আটটার ' সময়ে যখন ফিরলেন_- তখন তাঁর পেছনে আমাদের চাকরের মাথায়
৮৮ জলধর সেনের আত্মজীবনী
একটা ঝাণীক। আর একট! নগদ! কুলীর মাথায় একটা ঝুড়ি। এই দৃশ্য দেখে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “এ সব কি দীদ1!” অশিশীকুমার হিন্দী বাত. আওড়াঁলেন-_“তফাঁৎ যাও । কোঁছি বাত মত, বোলো ।” এই বলে” লোক ছুটেকে নিয়ে বাড়ীর ভেতর চলে গেলেন আমি আর তাঁর অনুসরণ করলাম না, কারণ জানতাম তখন বড়দাঁদ। বাঁড়ীর ভেতরে আছেন। বড়দাদ| একটু পরেই বেরিয়ে এসে বললেন--“দেখ গিয়ে জলধর, তোমার পাঁগলের কাঁও। বাজারের আর কিছু বাঁকী রাখেনি |”,
তাঁর খানিকটা! পরেই বাড়ীর ভেতর গিয়ে দেখি-_-উঠাঁনের দড়ীর ওপর তার গরম কোট ও শাল ঝুলছে ; পায়ের জুতা-মোজা খুলে উঠানে ফেলে দিযে-_মহাপুরুষ বসে? কুটনো কুটছেন। পাশে আর একখানা বটা নিয়ে আমার স্ত্রীও তার সাহাধ্য করছেন ।
আঁমি বললাম, “দাদা ও কি, হাত কাটবেন যে ?”
আমার স্ত্রী জবার দ্িলেন-_“ভগবান, তাই বেন হয-যতদিন কাটা ঘ। না শুকোবে, ততদিন তো! আমাদের কথ। মনে থাকবে !”
অশ্থিনীকুমার বললেন-_-“জলধর, তোর এই গৃহিণীর জালা আমি অস্থির হয়ে পড়েছি। এর কথাঁরও অন্ত নেই-_-হাঁসিরও অন্ত নেই !”
তারপর অশ্বিনীকুমার একবার রান্নীয় যোগ দিচ্ছেন, আর একবার বা বাইরে এসে ধারা তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তাদের বলছেন-- “আমি কালকের অশ্থিনীকুমার নেই মশীয়--আমি আজ এ বাড়ীর রশাধুনী।”
এই ছুই দিনে অশ্থিনীকুমার আমার ক্ষুদ্র কুটীরকে একেবারে আনন্দের স্রোতে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন । পরদিনের ভোরের '্টীমারে তিনি যখন চাকা রওন! হন, তখন তিনিও চোঁখের জল ফেলেন, আমার বৌদিদি ও
কালধর সেনের আতুজীবনী ৬
আমার গৃহিণীও চোখের জল ফেলেন। কথা আর কেউ বলতে পারলেন না, উভয় পক্ষের চোখের জলেই বিদীয়াভিনন্ন হয়ে গেল।
ভার পর! তার পরের কথাও বলতে হবে?
পূর্ববর্তী ঘটনার নয় মাস পরে একদিন অপরান্কে গোলদীঘির ধারে ফুটপাতের উপর অশ্থিনীকুমারের সঙ্গে আম।র দেখা-আমি তখন হিমালয়ের যাত্রী।
অশ্বিনীকুমাঁর সেই রাস্তার মধ্যেই আমাকে জড়িয়ে ধরে, তিরস্কার করে' বল্লেন, “হারে জলধর, এত নিষ্ঠুর তুই--এই ন মাসের মধ্যে একটা! খবরও দিলি নে।” আমি শুমুখে বল্লাম_“থবর তো কিছু নেই দাদা, সব খবর শেষ হয়ে গিয়েছে!”
“সে কি, আমি বে বুঝতে পারছিনে !” আঁমি বললাম--“শুনবেন দাদা! আপনার সঙ্গে শেষ দেখার চার মান পরে আমার একটি কন্তা- সন্তান হয়। বারদিন পরেই সেটি মারা যায়। তার বারদিন পরেই আমার গৃহিণীও সেই পথে যাঁন। তার তিন মাস পরে আমার মাতা- ঠাকুরাণীও চলে? গিয়েছেন । এখন আমি হিমালয়-যাত্রী |”
“এ'যা-কি বলিস!” এই বলে সেই মানবশ্রেষ্ঠ গোলদীঘির পার্থর রেলিং-এ ভর দিয়ে নতমুথে দাড়ালেন । ছুই চোখ দ্দিয়ে জল পড়েত লাগল। আমি চুপ করে তার সম্মুথে দাড়িয়ে রইলাম।
দুই-তিন মিনিট পরেই আত্মনংবরণ করে” অশ্থিনীকুমার ধীরে ধীরে বল্পেন-_“জলধর--এ আনন্দের হাট সকলের ভাগ্যে বেশীদিন টি'কে না। হিমালয়ে যাচ্ছ, যাঁও। দেখ, যদি শাস্তি পাও ।”
আমার গোয়ালন্দে অবস্থান-কালে সর্বপ্রধান ঘটনা-_ আমার প্রবাস- ভবনে কাঙাল হরিনাথের পদধূলি-দান। ইহার বিস্তৃত বিবরণ আগার
৯০ জলধর সেনের আত্মজীবনী
“কাঙাল হরিনাথ” গ্রন্থের ১ম খণ্ডে দিয়েছি । প্র গ্রন্থ থেকেই তার বিবরণ এখানে উদ্ধৃত করে দিচ্ছি £
আমি তখন গোয়ালন্দে থাকি । কাঙাল আমাকে পত্র লিখলেন যে, তিনি দল লইয়া! ফরিদপুর কুষিপ্রদর্শনীতে গান করিতে যাইতেছেন। আমাকেও তাহাদের সঙ্গী হইতে হইবে । তখন বড়দিনের ছুটি ছিল। আমি প্রস্তত হইলাম। . তাহারা শেষরাত্রির গাড়ীতে গোয়ালন্দ পৌছিলেন। আমি প্রস্তত হইয়! ষ্টেশনেই ছিলাম। এক সঙ্গে ট্টামারে চড়িয়া ফরিদপুরে গেলাম। আমাদের গ্রামবাসী এক্ষণে পরলোকগত প্রসন্নকুমার সান্যাল মহাশয় ফরিদপুরে ওকালতি করিতেন। তিনি কাঙালের ছাত্র এবং আমাদের মাষ্টার । আমরা তাহার বাসায় উঠিলাম। সেদিন আর গাঁন হইল না। তাহার পরদিন মেলাকমিটার সেক্রেটারী মহাশয় বলিয়া গেলেন যে, সেইদিন অপরাহ্কালে মেলার মণ্ডপে ফিকিরঠাদের গান হইবে।
আমর ফরিদপুরে যাইয়াই গুনিলাম যে, প্রসিদ্ধ পাগলা কাঁনাই ফরিদপুরে গান করিতে আসিয়াছে । পাগলা কানাইয়ের নাম কলিকাতা অঞ্চলের লোক না জানিতে পারেন; কিন্তু এক সময়ে পাগল! কানাইয়ের গানে যশোহর, ফরিদপুর, পাঁবনা1! ও নদীয়া জেলার অংশ- বিশেষ ভাসিয়। গিয়াছিল। পাগলা কানাইয়ের গান শুনিবার জন্ত এক এক সময়ে চল্লিশ পঞ্চাশ হাজার নিয়শ্রেণীর হিন্দু-মুসলমান একস্থানে সমবেত হইত। একদিনের পথ হাঁটিয়। লোকে পাগল! কানাইয়ের গান গ্তনিতে আসিত। আমরা যে সময়ের কথা বলিতেছি, তখন পাগলা, কানাই বৃদ্ধ হইয়াছিল। কিন্ত তখনও তাহার গলার এমন আওয়াজ ছিল যে, পঞ্চাশ হাজার লোকের মধ্যে দীড়াইয়া গান করিলেও, সকলে তাঁহার গান শুনিতে পাইত। আমরা ফরিদপুরে উপস্থিত হইয়
জলধর সেনের আতুজীবনী ৯১
গুনিলাম যে, আমাদের যে সময়ে গান করিবার ব্যবস্থা হইয়াছে, তাহার" পূর্বে অর্থাৎ মধ্যাহ্ন বারটা'র সময় পাগল! কানাইয়ের গান আরম্ভ হইবে। কাঙাল বলিলেন, “তোরা ত সে গান শুনিস্ নাই, কানাইয়ের গান গুনিলে লোকে পাগল হইয়া যায়!”
আমরা বেলা ১২টার সময়ে মেলার মাঠে গিয়া দেখি, সে এক আশ্্ধ্য দৃশ্ত ! অনুমান ত্রিশ হাজার হিন্দু হিন্দু-মুসলমান কানাইয়ের গাঁন শুনিবাঁর জন্য উপস্থিত হইয়াছে । একটু পরেই মাথায় লঙ্গা-লদ্থা চুলওয়ালা! দশ বার জন লোক কাঁনাইকে সঙ্গে লইয়। সেই স্থানে উপস্থিত হইল। জনসংঘের হিন্দুগণ “হরিবোল” এবং মুসলমানগণ “আল্লা-আল্লা” ধ্বনি করিয়া! অভ্যর্থনা করিল । সে যেকি আনন্দ, সে যে কি উন্মাদনা, তাহা আমি ভাষায় প্রকাঁশ করিতে পারিব না। যাহারা গান করিতে আসিয়াছে, তাঁহাদ্দিগের জন্স একটি কাষ্ঠের মঞ্চ নিশ্মিত হইয়াছিল ; তাহারই উপর দঈীড়াইয়া গাঁন না করিলে, কাঁনাইকে কেহ দেখিতে পাইবে না বুঝিয়াই মেলাব কর্তৃপক্ষ এই ব্যবস্থা করিয়াছিলেন। কানাই ও তাহার দলের লোকেরা মঞ্চের উপর আরোহণ করিল; প্রত্যেকের হস্তে একথানি করিয়! থগ্জনী ; আর কোন বাছ্যন্ত্র নাই। একটু পরেই তাহার! গান আরম্ভ করিল। এই যে ত্রিশ হাজার লোক, ইহার! মন্ত্রমুগ্ধের মত গান শুনিতে লাগিল । তাহারা যে কয়টা গান গাহিল, সমস্তই অনিত্যত। সম্বন্ধে । আমরা অবাক হইয়া এই দশটা লোক ও বৃদ্ধ কানাইয়ের স্বররাজি, সবরের খেলা শুনিতে লাগিলাম । ধন্ত আওয়াজ ! ধন্য শিক্ষা ! আমি সে গানের বর্ণনা! করিতে পারিলাম না ; বাহার! পাগলা কানাইয়ের গান শুনিয়াছেন, তাঁহারাই আমার কথা বুঝিতে পারিবেন ।
পাগলা কানাইয়ের গান চারিট! পর্য্যন্ত চলিবে, তাহার পরেই ফিকিরঠাদের গান আর্ত করিতে হইবে। সৌভাগ্যের কথা এই,
৯২ জবলধকু সেনের জাতুজীবনী
তাহাদিগকে মেই মঞ্চের উপর দীড়াইয়া গান করিতে হইবে না) তাহ হইলে আমি যোগ দ্বিতেই গারিতাম না । মেলার জন্ত যে মণ্ডপ প্রস্তত হইয়াছিল, সেই মণ্ডপেই ফিকিরঠাদের গান হইবে; সহরের ভদ্রলোক, স।হেব-বিবি ও মফ:স্বলের নিমন্ত্রিত ভদ্রলোকগণ সেইখাঁনেই সমবেত হইবেন।
তিনটা বাজিয়। গেল, তখন আমর! আর পাগল! কানাইয়ের গান গুনিবার জন্য সেখানে থাকিলাম না। মেলার মধ্যেই একটি ঘরে আমাদের দলের সাঁজপরঞ্রীম রক্ষিত হইয়াছিল। কাঙালের ত আর সাজের প্রয়োজন ছিল না-ত্ীহার ফকিরেরই বেশ! আর সকলে ফকির সাজিবার জন্য ঘরের মধ্যে গেল। কাঙাল ঘাসের উপর বসিয়। পড়িলেন। তাহার দৃষ্টি উদাস ; তিনি কি যেন ভাবিতেছিলেন। আমি তাহার পাশ্বে উপবিষ্ট । তিনি একটু পরে বলিলেন, “কানাইষ়ের গান শুনলি ত। এরপরে কি তোদের গান জম্বে, তোরা কি পারবি? আমি তাই ভাবছি ।” এ কথার কি উত্তর দ্রিব! আমি নীরবে বসিয়। রহিলাম। একটু পরেই তিনি বলিলেন, “তোর কাছে কাগজ-পেন্সিল আছে? আমি বলিলাম “আছে ।” তিনি বলিলেন, এই যে জনসমুদ্্ দেখছিস, ইহাদের মধ্যে আজ মায়ের নাম ছড়াইয়৷ দ্বিতে হইবে। তুই কাগজ ধর, নৃতন গাঁন দিই । সেই গান নিযে প্রথমে আসরে যেতে হবে।” এই বলিয়া তিনি গান বলিতে লাগিলেন, আমি লিখিয়! বাইলাম। গানটী এই-_
আমার আজ এই নিবেদন, লজ্জীবারণ, কর ম! লঙ্জারপিণী।
মা, তোমার যে নাম জপে, হৃদয়-কুপে নিরজনে যোগী-সুনি ;
সেই নাম আজ জনসমাজে, ফকির সাজে, গাইতে এলাম ও জণনি ! মা, আমার হ'তেছে ভয় কাপে হৃদয়, হৃদে এস বীপাঁপাঁপি !
জলধর সেনের আত্মুজীধী ৯৬
মা, তুষি আপনি বাজাও, আপনি গাও, আপনার নাম আমি শুনি । মা, তুমি মা নাম দিয়ে, জাগাইয়ে, জাগালে কুলকুগুলিনী ,
এ হাদয়-বীধ ছুটিয়ে, ঢেউ উঠিয়ে, ভাবে নাচায় ভাবরূপিণী | কাঙ্গালের গেছে সজ্জা, লৌকলজ্জা, তোমার নামে পাগল দিনরজনী, নামে না হয় কলঙ্ক, সেই আতঙ্ক, দেখিন্ অনন্তভবপিণী |
দেখিতে দেখিতে উপরিলিখিত গান প্রস্তত হইয়া গেল। কাঙাল তখন বলিলেন, “এ গান লাগবেই, তোদের ভয় নাই।” আমি গান লইয়া ঘরের মধ্যে গেলাম । প্রফুল্ল, নগেন্দ্র সকলেই গান দেখিল।
প্রফুল্ল বলিল, “ই ঠিক হয়েছে । আমিও সেই ভাবছিলাম । দেখব, আজ ম হারে কি পুত্র হারে !” প্রফুল্লের কথা শুনিয়া আজ সকলেই প্রফুল্ল হইল, সকলেরই হৃদয়ে বলের সঞ্চার হইল। প্রফুল্ল বলিল, “আজ আর অন্ত যন্ত্রে হবে না । সবাই একথান! করিয়! থঞ্জনী হাতে লও।
কে একজন বলিল, “আমাদের এত খঞ্জনী নাই।” উকিল প্রসন্নদাদ! সেখানে ছিলেন, তিনি বলিলেন, “তাহার জন্থ ভাবনা নাই । কানাইয়ের দলের নিকট হইতে থঞ্জনী আনিয়া! দিব ।” প্রসন্নদাদার সেদিন আনন্দ দেখে কে? তিনি শুধু বলিতেছেন, “দেখিস্ প্রফুল্প, আজ আমাদের গ্রামের নাম রাখিম্, আজ কাঁডালের নাম রাঁখিস্।”
কানাইয়ের গান ভাঙ্গিয়া গেল। আমাদিগের আসরে যাইবার জন্ত অনুরোধ আমিল। কাঙাল তখনও তৃণাসনে বসিয়া আছেন। আমি তাহার নিকট যাইয়া! বলিলাম, “এখন গাইতে যেতে হবে।” তিনি চকিত হইয়া! বলিলেন, “বেশ, চল 1” আমরা কাঙাল হরিনাথকফে দলের সম্ুথে প্রথম সারির মাঝথানে লইয়। সকলে মগুপাভিমুখে যাত্রা করিলাম ৷ কাঙাল বলিলেন, “এখান হইতেই গান ধর।”
৯৪ জলধর সেনের আত্মজীবনী
তখন একসঙ্গে পনরখানি থঞ্জনী বাঁজিয়া উঠিল, পনর জনের স্বর
সপ্তমে চড়াইয়। গান আরম্ভ হইল-_ “আমার আজ এই নিবেদন...৮
চারিদিক হইতে লোঁক একেবারে ভাঙ্গিয়া পড়িল। আমরা তখন সত্যসত্যই কি এক ভাবে অনুপ্রাণিত হইয়। গান ধরিয়াছিলাম। মণ্ডপের ঘারে পৌছিতেই গান জমিয়! গেল, সুরের একটা জমাট বাঁধিয়া গেল । আমরা ধীরে ধীরে মণ্ডপের মধ্যভাগে উপস্থিত হইলাম। তখন আর আমাদের জ্ঞান ছিল না। আমরা প্রাণ খুলিয়া! গান গাহিতে লাঁগিলাম। মণ্ডপের মধ্যে প্রায় দুই-তিন হাজার লোক। সকলে নিঃশব্দ গান শুনিতে লাগিল । যখন শেষের অন্তরা আমরা ধরলাম, তখন কাঙাল আর স্থির থাকিতে পারিলেন ন1 ; তখন নৃত্য আরস্ত হইল। তখন আর দল বে-দল থাকিল না। মগ্ুপের লোকেরাও আসিয়া গানে যোগ দিলেন। বড়-ছোট, ধনী-দরিদ্র ভেদ থাঁকিল্ না। সে এক অপূর্ব দৃশ্ঠ ! আমার ত মনে হইতে লাঁগিল- চারিদিক হইতে সহস্র ক গাঁহিতেছে-_
“নামে ন। হয় কলঙ্ক-- মা নামে না হয় কলঙ্ক”-_
প্রায় তিন কোয়াটণর এই একটী গানই হইল । তাহার পরই ফকিরের দল মণ্ডপ হইতে বাহির হুইয়া আমিল। চারিদিকে ধন্ত ধন্য পড়িয়া গেল। কত জন আসিয়া কাঙালের পদধূলি ল্ইবার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করিতে লাগিলেন, কিন্ত তিনি তাহাতে অসম্মত হইলেন । বড় বড় রাজকন্মনচারী আসিলেন। ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব ধন্যবাদ জ্ঞাপন করিলেন এবং বলিয়! গেল্নে, সেদিন যেন আমাদিগকে আর গান করিবার জন্ত আহ্বান কর! না হয়। পরের দিনও গান হইয়াছিল। সেদিনও এ ব্যাপার। তাহার পরের দিনই আমর। ফরিদপুর ত্যাগ করি ।
জলধর সেনের আতুজীবনী ৯৫
ফরিদপুর হইতে প্রত্যাগমনের সময় ফিকিরঠাদদের দল এবং কাঙ্গাল হরিনাথ তাহার এই অযোগ্য শিষ্কের গোয়ালন্দের বাসায় ছুইদ্দিন অবস্থিতি করিয়াছিলেন । আমি তখন গোয়ালন্দে মাষ্টারী করিতাম।
কাঙ্গাল হরিনাথ ফিকিবঝঠাদের দল সহ গোয়ালন্দে উপস্থিত হইলে সহরময় একটা সৌঁরগোঁল পড়িয়া! গেল। আমাদের ক্ষুদ্র কুটিরে লোক আর ধরে না। গোয়ালন্দ ও তন্লিকটবন্তী স্থানসমূহ হইতে দলে দলে লোক ফিকিরটাঁদের গান শুনিবার জন্ত এবং কাঙ্গালকে দেখিবার জন্য আসিতে লাগিল। |
এই ঘটনার অল্পদিন পূর্বে গোয়ালন্দে একটা ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। কলিকাতা হইতে পূজনীয় হেরম্বচন্দ্র মৈত্রেয় ও এক্ষণে পরলোকগত কালীশঙ্কর স্থুকুল মহাশয় এই ব্রাঙ্গসমাজ স্থাপনের উপলক্ষে গোয়ালন্দে আগমন কবিয়াছিলেন। গোয়ালন্দে যে কয়েকজন ব্রাহ্মধর্ে বিশ্বাসী ব্যক্তি ছিলেন, ত্তীহাঁর! এই উৎসব উপলক্ষে বিশেষ ধুমধাম করিয়াছিলেন। এই উৎসবের পরেই গোয়ালন্দে মহ! দলাদলি আরম্ভ হইল ; হিন্দুসমাজতুক্ত মহোদয়গণ ব্রাহ্মসমাজের ঘোর বিরোধী হইয়। উঠিলেন। অবশ্য ধাহীর! ব্রাহ্মমমাজের প্রতিষ্ঠায় যোগদান করিয়াছিলেন, তাহাদিগের কেহই আনুষ্ঠানিক ব্রাহ্ম ছিলেন না। কিন্তু হিন্দুসমাজতুক্ত ব্যক্তিগণ এই কয়েকটা ভদ্রলোককে নানাগ্রকারে নির্যাতিত করিতে আরম্ভ করিলেন। তাহাদের নিমন্ত্রণ বন্ধ হইল। এমনকি আমি জানি যে, এই দলের একজন ভদ্রলোক কোন হিন্দু-সমাজভুক্ত উকিলের বাসান্স গমন করিয়া তাহার ফরাসে উপবেশন করিয়।ছিলেন বলিয়া! সেই ভদ্রলোকের সন্মুখেই হকার জল ফেলিয়া দ্দিবাঁর জন্ত উকিলবাবু চাকরদ্িগকে আদেশ করিয়াছিলেন ।
ফরিদপুর হইতে প্রত্যাগমনের সময় এই কথা আমি কাঙ্গালকে
৯৬ জলধর সেনের জাঙজীবনী
বলিয়াছিলাম। তিনি আমার কথা গুনিয়া বলিলেন “তবে আজ আমার বাড়ী যাওয়া! হইবে ন1। ছুইদিন তোর বাসাতেই থাকিতে হইতেছে ।” এই কারণেই কাঙ্গাল হরিনাথ দলবলসহ গোয়ালন্দে আমাদের ক্ষুদ্র কুটারে উপস্থিত হইয়াছিলেন।
সন্ধ্যার সময়ে সকলে আমাদের বাসায় পৌছিলেন। আমার বড়দাদ। এবং আমাদের বাসার সকলে হাতে স্বর্গ পাইলেন । রাত্রিতে কাঙ্গাল হরিনাথ বড়দাদাীর নিকট স্থানীয় দলাঁদলির কথা সমস্ত শুনিলেন। তাহার পর ধখন সকলে শয়ন করিবার আয়োজন করিতে লাগিলেন, তখন কাঙ্গাল আমাকে ডাকিয়া বলিলেন, “দেখ, আমি এখানকার দলাঁদলি মিটাইয়! দিয়। তবে বাড়ী যাইব” আমি বলিলাম “পারিবেন কি?” তিনি তখন গম্ভীরভাবে বলিলেন “নিশ্চয়ই পারিব । দেখতে পাচ্ছি না,কি অমৌঘ অস্ত্র তোরা আমার হাতে দ্িইছিস্। এই ফিকিরঠাদ অস্ত্রে তোরা যে পৃথিবী জয় ক'রতে পারিস, এ কথা কি এখনও বুঝতে পারিস নাই ।” কাঙ্গালের কথাগুলি আমার নিকট দৈববাণী বলিয়! বোধ হইতে লাগিল ; আমি তাহার মুখের দিকে চাহিয়! রহিলাম। কতদিন চলিয়! গিয়াছে, জীবনের উপর দিয়! কত ঝড়, কত বঞ্ধা বহিয়! গিষাছে; কিন্ত এখনও কাঙ্গালের সেই রাত্রির মুর্তি আমার নয়ন সম্মুখে প্রতিভাত রহিয়াছে । কত কথা ভুলিয়া গিয়াছি, কত লোকের কত উপকার বিশ্বৃত হইয়াছি। তখনকার নিষ্কলঙ্ক জীবন কত কলক্ককালিমায় মলিন হইয়! গিয়াছে, কিন্তু কাঙ্গালের সে দিনের সে মুত্তি আমি এখনও ভূলিতে পারি নাই বলিয়াই কাঙ্গালের এত শিগ্তু থাকিতে সর্বাপেক্ষা অযোগ্য আমি তাহার জীবনকথা কীর্তন করিবার প্রয়াসী হইয়াছি; কাঙ্গালের সেই গৌরক্ান্তি, সেই দীর্ঘ শবশ্রু, সেই তেজব্যঞ্ক মুদ্তি তখন যেন এক হ্বর্গীয় জ্যোতি:তে পূর্ণ হইয়াছিল । আমার
জলধর সেনের আতুজীবলী ৯৭
মনে হইতেছিল এই মৃত্তির সন্মুথে পাপ, তাপ, মলিনতা, দ্বেষ, হিংসা, পরশ্ীকাঁতরতা। এক মুহূর্তের জন্ও দীড়াইতে পারে না। এই মুখের বাণী গুনিলে সকলকেই অবনত মন্তক হইতেই হয়। আমাকে নীরব থাকিতে দেখিয়া কাঙ্গাল বলিলেন “কী ভাবছিস্?” আমি অন্তমনস্কভীবে বলিলাম “না, তেমন কিছু না।” কাঙ্গাল আমাকে আর কিছু না বলিয়া উঠিয়া দাড়াইলেন এবং ধীরে ধীরে সেই ঘর হইজে। বাহির হইয়। আমাদের বাড়ীর মধ্যে ধাইতে লাগিলেন , আমিও তাঁহার অনুসরণ করিলাম । তিনি আমাদের বাড়ীর মধ্যে যাইয়া আমার দিদিকে ডাকিলেন। আমার দিদি কাঁজালের বড়ই প্রিয়পাত্রী ছিলেন। কাঙ্গাল খন প্রথম কুমারখালিতে বাপিক! বিগ্ভালয় প্রতিষ্ঠিত করেন, তখন প্রথম ষে কয়েকটী ছাত্রী ছিল তঁ।হাদ্দের মধ্যে তিনি অন্ততমা। আমার এই দিদিকে কাঙ্গাল মৃত্যুকাল পধ্যন্ত একইভাবে দেখিয়াছিলেন। আমার দ্রিদিকে ডাকিয়া তিনি বলিলেন, “দেখ, আমি একটা গান বাধব, তুই লেখ দেখি।” দিদি তখন তাড়াতাড়ি উঠানেই আসন পাতিয়া দ্রিলেন এবং নিজে কাগর্ম কলম লইয়া বসিলেন। বাড়ীর মেয়ের এবং আমি উঠানেই দীড়াইয়া রহিলাম। কাঞঙ্জাল সুর করিয়া গান বলিয়া! যাইতে লাগিলেন। গানটা এই £ “ও ভাই বল্রে বল্ সবাই রে।
দলাদলি, গালাগালি, ধর্দের কি ফল রে।
সত্রী-পুরুষে যার এঁক্য নাই, সহোদর যত ভাই ভাই,
সকল কাঁজেতে ঠাই ঠাই, সমাজ টপমল রে;
এখন সাকার আর নিরাকার তুলে,
দিচ্ছ খড়ো ঘরে আগুন জেলে, বাতাস দিয়ে অনলে হাসে শক্রদল রে।
৬
জলধর সেনের আঙ্মকীবনী
অসীম আকাশ মাথার "পরে,
দেখ একবার বিচাঁর ক'রে, শুরধ্য তার! ঘোরে ফিরে, উদয় অস্তাচল রে, ওরে, তারার মাঝে যারা আছে,
দেখ তিনিও আছেন তাঁদের কাছে, কেউ নেই তার আগে পিছে, সমান তার সকল রে। কি ভাবে কে ভাবে কোথায়, ঠিক নাহি হয়রে কথায়, ভাবের ঠাকুর ভাবেতে পায় প্রকাশ যে কেবল রে; ওরে, যে ভাবে যে হৃদয় গড়ে, তিনি,
সেই ভাবে তার হৃদ-মন্দিরে, নিজ স্বরূপ প্রকাশ ক'রে করেন ষে লীতল রে। শুন ভাই সাধুর বচন, তিনি যে সাধনের ধন, সাধন বিনে ধর্মকথন সকলি বিফল রে; ওরে, যে ভাবে যেনৃদয় গড়,
কিন্ত মনে প্রাণে সাধন কর, বৃথা তর্ক বিচার ছাড় বুদ্ধির কৌশল রে। যে রূপ সে রূপ স্বরূপ ধরে,
বদ্দি সিদ্ধ হও ভাই সাধন ক'রে, তখন বক্তৃত! ক'রে, খাবে না আর জল রে; তখন একটী কথার তেজো বলে,
কত পাষাণ শিলা যাবে গঃলে, হবে এক সত্য বলে পূর্ণ ধরাতভল রে। কাঙাল কয় সকাতরে, ভারতের পায় ধরে, সাঁধনহীন এ বিচারে হবে গণ্ডগোল রে;
কলধর দেনের আকজীবনী ৯৯
ওরে, সাধন ক'রে সবতনে, যিনি পেয়েছেন সেই সত্যধনে, তার উপদেশ বিনে সকলই গরল রে।”
কাঙ্গালের গানের শব্দ পাইয়া দলের ধাহারা বাহিরে নিদ্রা ধাইবার আয়োজন করিতেছিলেন, তাহারা আর স্থির থাকিতে পারিলেন না; সকলে আমাদের বাড়ীর মধ্যের উঠানে আসিয়। দীড়াইলেন। তপন আর কি-ত্র গান আরম্ভ হইল। আমার দাদা একটা লন হাতে লইয়া কাগজ দেখিয়া গানের কথাগুলি বলিয়া দিতে লাগিলেন, আর দলের লোকেরা গান করিতে লাগিল । তখন পাড়ার সকলে ছুটিয়া আপিল; আম!দের বাড়ীর উঠানে আর লোক ধরে না; বাড়ীর মেয়ের! যেখানে দাড়াইয়াছিলেন, সেই থানেই ধ্লাড়াইয়া রছিলেন, লঙ্জা, সক্কোচ কিছুই তখন থাকিল না। সে এক অদ্ভুত ব্যাপার! আমি অবাক হইয়া এই দৃশ্য দেখিতে লাগিলাম__বুঝিতে পারিলাম কাঙ্গালের একটু পূর্ব্রের সেই কথা, “দেখতে পাচ্ছিম না কি অমোঘ অস্ত্র 'তোরা আমার হাতে দিই ছিস্”।
রাত্রি বোধহয় এগারটার সময় গান আরম্ভ হইয়াছিল, রাত্রি ছুইট! বাজিয়া গেল তবুও গাঁন থামে না; একজন যদি চুপ করে, তবে আর একজন গান ধরে ! চারিটি গানেই রাত্রি শেষ হইবার রকম হইল । তিনটার পর কাঙ্গালের হু'ষ হইল, তিনি তখন গ্রকৃতিস্থ হইলেন । যেন কোন্ এক আনন্দলোক হইতে আবার আমাদের পৃথিবীতে তিনি ফিরিয়া আসিলেন। গান ভাঙ্গির গেল, কাঙ্গাল বিশ্রাম করিতে গেলেন। দলের অন্তান্ত লোকেরাও বিশ্রাম করিতে গেল ।
তখন আমি আর প্রফুল্লচজ্জ্র বাহিরে ষাইফ্বা ঘাসের উপর বসিলাম। প্রফুল্ল বলিলেন, “আজ রাত্রিতে আর ঘুম হইবে না, এস আমর! বলিয়াই
৯9০ জলধর সেনের আত্মজীবনী
রাত কাটাই ।” কিন্ত কতক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া থাকা যায়। প্রফুল্ল কিছুক্ষণ নীরব থাকিয়া বলিলেন, “কালকের জন্যে আমিও একটা গান বাধি।৮ আমি বলিলাম “বেশ ।” তখনই কাগজ কলম আলে! ঘাসের মাঠে আনিয়। দিলাম; প্রফুল্লচন্ত্র গান বীধিলেন | সে গানটি এই-- “আছে কি কোন ঠিক তার, কখন তোমার নথী উঠে পেশ হইবে। কিবা রাত কিব! সকালে, সাজ বিকালে, যে কালে সে মন করিবে; তখনই নথী ধরে, অবোধ তোরে, জবাব দিতে তলব দ্দিবে। সে তলব চিঠি লয়ে, হুকুম পেয়ে, যথন ধেয়ে দূত আপিবে ; তখন তোর আত্ম-স্বজন, স্ত্রী-পরিজন, ক'রে যতন কে ঠেকাবে । যখন সেই আদালতে জজের হাতে, অবোধ রে তোর বিচার হবে; তখন তোর সপক্ষেতে সাক্ষী দিতে, দুটো! কথ। কে বলিবে। বাদের তুই ভেবে আপন, করিস যতন, তার! আপন ন। হইবে , দেখিস্ তোর বিপক্ষেতে ছয় সাক্ষীতে, তার সাক্ষাতে সাক্ষ্য দেবে। যাদের তুই হেলা করিস্, দেখতে নারিস্, দেখিন্ রে বিষ শক্র ভেবে;
হআলধর দেনের আত্মজীবনী ১০১
হয়ত তার কেহ গিয়ে তোমার হয়ে দুটো! কথা তায় বলিবে। ফিকিরটাদ বলে তোরে, তৈয়ার ভরে, কি ব'লে জ'ব তখন দেবে; হ'লে জব খেঁচা নেষ। সাক্ষী কাচা, পেয়ে সাজা ম্যাদে যাবে ।” এই গানটা শুনিয়া আমি বড়ই আনন্দিত হইয়াছিলাম। গোয়ালন্ব সাব-ডিভিসন স্থান; সেখানে আমাদের পাড়ায় দিনরাত্রি শুধু মাসল! আর মোকর্দমা, মোকর্দিম। আব মামলা, শুধু হাকিম আর শামলা। এ অবস্থায় শেষ মামল।র সম্বন্ধে উকিল মোক্তার বাবুদিগকে সজাগ করিয়। দেওয়া বেশ সময়োপযোগী হইয়াছিল । যাহা হউক, পবের দিন প্রাতঃকাল হইতেই গান আরম্ভ হইল। সেদিন রবিবার ছিল, কাছাবী সমস্তই বন্ধ। কাহাকেও সংবাদ দিতে হইল না, কাহাকেও নিমন্ত্রণ করিতে হইল ন1; কাঙ্গালের গৃহে কাজলের গান, তাহাতে আর নিমন্ত্রণ কি! কিসে কি হয়, তাহা আমরা কেমন করিয়া বলিব। প্রাতঃকালে প্রায় আটটার সময় গান আরম্ত হইয়াছিল, অপরাহ্ন তিনটা বাঁজিয়া যা তবুও কেহ উঠে না । ব্রাহ্মদল, হিন্দুদল সকলেই উপস্থিত । যে কয়জন প্রধান উকিল হিন্দুর্দলের নেতা ছিলেন, তাহারা এ যে আসি বসিয়াছিলেন, আর উঠিলেন না । সকলের প্রাণ মন ভিদ্বিয়া গেল; কোন দলাদলি, কোন প্রকার হিংসা দ্বেষ কিছুই কাহারও মনে থাঁকিল না! তিনটার সময় যখন গান ভাঙ্গিয়া গেল, তখন কাঙ্গালের নিকট সকলেই উপস্থিত হইলেন । তিনি তখন করষোড়ে সকলকে বলিলেন পআপনাদের নিকট আমার একটি প্রার্থনা আছে।” বড় বড় ধাহারা
১০২ জলধর সেনের আবুজীননী
উপস্থিত ছিলেন, ধাহারা হিন্দু সমাজপতি তাহারা একবাক্যে বলিয়া উঠিলেন, “অমন কথ! বলিবেন না, আঁপনি কি অনুমতি করিবেন বলুন ।” কাঙ্গাল সহান্য বদনে বলিলেন, “আমার বড় পাধ যে, আজ রাত্রিতে আমার এই ভাইয়ের বাড়িতে আপনারা সকলে গ্রীতি-ভোজন করেন ।” তখন সকলেই একবাক্যে স্বীকার করিলেন ; এত দলাদলি, এত যে হকার জল ফেলিয়। দেওয়া, এত যে ঠাষ্টাবিজপ, সে সব কোথায় চলিয়া গেল,। সকলেই সাগ্রহে বলিলেন, “রাত্রিতে গানের পর আমরা! সকলেই এখানে জলযোগ করিব ।” আমার তখন ইংরাজ কবির সেই কথা মনে হইল £ 17956 ৮/1)0 ০2055 00 5০০7 চ২০7791050 00 [9712%,
তথন আমাদের স্থায় গরীবের ক্ষুদ্র কুটীরে মহে1ৎসবের আয়োজন হইতে লাগিল । সেকি উত্সাহ, কি আনন্দ, তাহা আর বলিতে পারি না। আমাদের বন্ধুগণ, আমাদের প্রিয় ছাত্রগণ তখন পরম উৎসাহে মহোৎ- সবের বন্বোবস্ত করিতে লাগিলেন। কোথা হইতে কে কি পাঠাইভে লাগিলেন, কে কি আনিতে লাগিলেন তাহার ঠিকান। হইল না। আমর! দরিদ্র ব্যক্তি; আমাদের সাধ্য কি যে এগুলি ভদ্রলোকের সামান্ত জলযোগের ব্যবস্থা করিতে পারি। কিন্তু কাহাকেও কিছু ভাবিতে হইল ন1, ধাহার কাধ্য--ধাহার মহোৎসব, তিনিই সমন্ত যোগাইয়া! দিতে লাগিলেন। দ্রব্যের অভাব হইল না_-আমার এক একটী বালক ছাত্র তিনটা যুবকের কাধ্য একাকী করিতে লাগিলেন।
পাঁচটার সময় আবার গান আরম্ভ হইল। এবার অন্ত রকমের গান হইতে লাগিল । এবার ফিকিরঠাদ শুধু মায়ের নাম-কীর্তন করিতে লাগিলেন । সেই “মা নাম শুনিয়া পাষাণও গলিয়। যায়, মানুষ ত দুরের কথা । আমাদের মনে হইতে লাখিল সে স্থানের গগন-পবন যেন
জলধর সেনের আতুজীবনী ১০৩ “মা' নামে পূর্ণ হইয়া গিয়াছে, চারিদিক হইতে সমস্ত প্রকৃতি ষেন “মা” নাম গান করিতেছে । এক একবার মমবেত জনমগ্ডলী যখন উচ্চৈম্বরে বলিয়। উঠিতেছেন “মাগে। মা” তথন মনে হইতে লাগিল, ম৷ ব্রহ্মদয়ী যেন সকলের সম্মুথে দণ্ডায়মান! থাকিযা] অভষ প্রদান করিতেছেন। সত্য সত্যই ফিকিরচাদের গানে তখন অসম্ভব সম্ভব হইয়াছিল ।
রাত্রি এগারটার সময় গান শেষ 5ইল। তখন গ্রীতিভোজন। সেও এফ আশ্চর্য্য দুশ্ট । কিছু বিচার নাই, অহষ্কার নাই, কোন গর্ব নাই-_ সে সময় সব এক হইয়! গেল। মুত্তিকাসনে বসিয়! ধনী, দরিজ্র, পণ্ডিত, মুর্খ, জ্ঞানী, অজ্ঞানী, ব্রাহ্মণ, শুদ্র সকলে জলযোগ করিলেন । সকলেরই হদয় তথন মাষের নামে নৃত্য করিতেছিল, তখন কি আর ভেদাভেদ থাকে? মায়ের এমনই খেল! খটে। কাঙ্গাল এই মহোৎসৰ ক্ষেত্রে খুরিয়া৷ বেড়াইতে লাগিলেন, আর এক একবার বলিতে লাগিলেন--“এ ষে আনন্দ-বাজার !”
আমার জন্মভূমি কুমারথালি থেকে প্রকাশিত এবং অ'মার শিক্ষা গুরু ও জীবনের আদর্শ__কাঙাঁল হরিনাথ ( তখন শ্রীযুক্ত হরিনাথ মন্ধুমদার মহাশয়) সম্পাদিত “গ্রামবার্তী প্রকাশিকা” পত্রিকাব কণ৷ পূর্বেই বল! উচিত ছিল। গ্রসঙ্গতঃ দু এক স্থলে তার উল্লেখও করেছি, কিন্ত “গ্রামবার্তী”র ধারাবাহিক ইতিহাস কোথাও লিপিবদ্ধ করিনি । এই স্থানে সেই কাজট। শেষ করি।
আমি আমার সাহিত্যসেবার প্রেরণা পেয়েছিলাম কাঙাল হরিনাথের কাছে । আর সুযোগ পেয়েছিলাম-_”গ্রামবার্তাপ্রকাশিকা*র সধ্য দিয়ে। *গ্রামবার্তাগর জীবনের শেষ ছুই বৎসর আমি নানা] ভাবে &ঁ পত্রিকার সঙ্গে সংগ্লি্ই ছিলাম এবং তার অস্ভিম সৎকার আমার ও
১০৪ জলধর সেনের আত্মজীবনী
আর ছু' চারজন বন্ধুর হাতেই হয়। সুতরাং, *গ্রীমবার্তী "গর কথা বলতে গেলে আমার জীবনের একটা! প্রধান কথা ।
বড়ই আনন্দের কথা যে, “গ্রামবার্ড। প্রকাঁশিকা”র বিবরণ প্রকাশ করবার জন্ধ আমাকে আরাস স্বীকার করতে হবে না। খ্যাতনাম! ধত্ডিহাসিক--আমার পরম স্নেহভাজন ব্রজেন্ত্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ভায়া বাংল! সাময়িক পত্রের ইতিহাস সঙ্কলনে প্রবৃত্ত হয়েছেন। তার প্রথম খণ্ড পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়েছে, তাতে ১৮১৮ থেকে ১৮৩৯ সন পর্যন্ত বাংলায় মুদ্রিত সাময়িক পত্রের একখান নির্ভরযোগ্য ইতিহাস তিনি প্রকাশ করেছেন। পগ্রামবার্তী” এ সময়ের পরে প্রকাশিত হওয়ার জন্য শ্রীমান্ ব্রচ্ছনদ্রনাথের প্রকাশিত ১ম খণ্ডে তার স্থান পায়নি । কিন্ত শ্রীমান্ ব্রজেন্দ্রনাথ “সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা”র দ্িচত্বারিংশ ভাগের দ্বিতীয় খণ্ডে “গ্রামবার্তা গ্রকাশিকা”র একটী বিবরণ প্রকীশিত করেছেন। এই বিবরণটী উদ্ধত করে দিলেই “গ্রামধার্তা” সন্বন্ধে সকল বিবরণই পাঠকগণ জানতে পারবেন । ইহার সংগ্রহে কাঙালের ভ্রাতুষ্পুত্র পরম কল্যাণভাজন শ্রীমান্ ভোলানাথ মজুমদার সাহাধ্য করেছেন। শ্রীমান্ ব্রজেন্দ্রনাথের ম্তায় খ্যাতনান! এ্রতিহাসিকের বিবরণ যে অভ্রান্ত, এ কথা আমি অকুষ্ঠ- চিত্তে বলতে পারি। নিম্নে সেই সঙ্কলিত বিবরণই প্রদত্ত হ'ল £--
১৮৬৩ সনের এপ্রিল মাসে (বৈশাখ ১২৭০) কুমারথালীর বাংলা পাঠাশালার পণ্ডিত হরিনাথ মজুমদার (কাঙাল হরিনাথ ) 'গ্রামবার্তী- প্রকাশিকা” নামে একথানি মাসিক সমাচারপত্রিকা প্রকাশ করেন। ইহার সমালোচনা প্রসঙ্গে 'সোমপ্রকাশ' ( ১জুন, ১৮৮৩) লেখেন-__
“গ্রামবার্তী। প্রকাশিকা” | ইহা! অভিনব মাপিক সমণচা1রপত্রিকা । গত বৈশাখ মাস অবধি কলিকাতা অপর সফিউলার রোড বাহির মুজাপুরের শ্রীযুক্ত গিরিশচন্দ্র বিদ্তারত্বের “বিগ্যারত্ব যন্ত্র হইতে প্রচারিত হইতেছে ।
জলধর সেনের আত্মজ্ীবন ১০৫
কুমারখালিনিবাসী শ্রীযুক্ত বাবু হরিনাথ মজুমদার ইহার সম্পাদক। গ্রামের বৃত্াস্তাদি বাহুল্যরূপে ইহাতে লিখিত হইবে। আমরা ইহার প্রথম সংখ্যা প্রাপ্ত হইয়াছি। পাঠ করিয়া দেখা গেল লেখ মন্দ হইতেছে না। ইহাতে গন্ভ ও পন্চ আছে। সম্পাদক যদি পরিশ্রষ করিয়া লেখেন, তাহ! হইলে ইহার উন্নতি হইতে পারে । ইহার মাসিক যুল্য পাঁচ আনা, বাঁধিক ৩ টাঁক1 ৮
গ্রামবার্তী প্রকাশিবা"র কে নিয়লিখিত ক্লোকটি শোভ। পাইত, শ্লোকটি গিরিশচন্ত্র বিদ্যারত্বের রচিত £
“€ণালোকপ্রদা দোষ-প্রদোষ-ধবাস্ত-চঙ্িক]। রাজতে পত্রিকা! নাম গ্রামবাতাপ্রকাশিক1 1”
১২৭৬ সালের বৈশাখ মাস হইতে 'গ্রামব।ত্ী প্রকাশিকাণর একটি পাক্ষিক সংস্করণও প্রকাশিত হয়। ১২৭৭ সালের বৈশাখ মাস হইতে পাক্ষিক পত্র সাগ্ডাহিকে পরিণত হয় ।
'গ্রামবার্তা প্রকাশিকা” পরিচালন। করিয়। কাঙ্গাল হরিনাথ খণগ্রস্ত ভন। এই কারণে নয বৎসর কায়ক্রেশে কাগজথানি চালাইবার পর তিনি উহার প্রচার বন্ধ করিবার সম্থল্প করিয়াছিলেন, কিন্তু সহাদয় বন্ধুরা চাদ! করিয়। কাগজখানি বজায় রাখেন । ১২৮৭ সালের ৬ই বৈশাখ (১৭ এপ্রিল ১৮৭৩) তারিখে অমৃত বাজার পত্রিকা-সম্পাদক লিখিয়াছিলেন £--
“আমরা গত সংখ্যক গ্রামবান্ত। পত্রিক। পাঠ করিয়া! অত্যন্ত দুঃখিত হইয়াছিলাম। গ্রামবার্তার সম্পাদক আক্ত কয়েক বতনর শারীরিক, মানসিক ও বেষয়িক নান! কষ্ট স্বীকার পূর্বক এই পত্রিকাঁখানি চালান। ক্রমে খণগ্রন্ত হন এবং আপাততঃ তিনি খণভারে এরূপ ভারাক্রান্ত হইয়া পড়েন যে, কাগজখানি বন্ধ করার সংকল্প করেন এবং পত্রিকায় সেহরপ প্রকাশ করেন । কিন্তু ১ল! বৈশাখে তিনি পত্রিকা সন্বক্ধে নিজ গুছে
১০৬ জলধক সেদের আত্খজীবদ
একটি উৎসব করিয়া থাকেন। এবার সেই উপলক্ষে তাহার আত্মীষ বন্ধু-বান্ধধষের নিকট পত্রিকা রহিত করিবার গ্রন্তাব করায়, তাহারা অত্যন্ত দুঃখিত হন এবং একটি চাদ! করিয়া পত্রিকাথানি আপাততঃ রাখিয়াছেন। গ্রামধার্তার সম্পাদক কুমারথালীতে একটি যন্ত্রাল় [স্থাপন করিবার ] উদ্যোগ করিতেছেন ।৮
এই সংখ্যা 'অমৃতবাজার পত্রিকা”য় প্রকাশিত একখানি *প্রেরিড
পে” প্রকাশ £
“কুমারথাপি-- প্রতিবাদ ।:*-গতকল্য গ্রামবার্তা গ্রকাশিকার সাস্বংসরিক উৎসব হইয়া গিয়াছে । সাপ্তাহিক কাগজ বন্ধ হইবার কথ! হইয়াছিল, কিন্তু একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি তাহার সমন্ত ব্যয় চালাইতে স্বীকার করায়, সকল সভ্যগণে সেই ভার কুলাইতে স্বীকৃত হইয়াছেন ।...কেযাঞ্চিৎ, কুমারথালীবামিনাম্।৮
১২৮* সালের প্রারন্ধে কাঙ্গাল হরিনাথ কুমারখালিতে একটি মুদ্্রীষন্ ( মথুরানাথ-যন্ত্র )স্থাপন করেন, অতঃপর এ মুদ্রাযন্ত্র হইতেই 'গ্রামবার্ত। প্রকাশিকা” মুদ্রিত হইতে থাকে । ১২৮০নালের ১৭ই শ্রাবণ তারিখে “অমৃতবাজার পত্রিকায় প্রকাশ :--
“সংবাদ 1-*.আমর! শুনিয়া আনন্দিত হইলাম যে কুমারথালিতে কটি মুদ্রীষন্ত্র স্থাপিত হইয়াছে এবং তত্রত্য স্থানীয় সম্বাদ্পত্র “গ্রামবার্তী- প্রকাশিক।' উক্ত যঙ্ত্রে মুদ্রিত হইতেছে ।”
১২৮১ সালের মাসিক গগ্রামবার্তা”র বৈশাখ সংখ্যার প্রথম পৃঙটক *১২ ভাগ--১ম সংখ্যা” লেখা আছে ; জ্যেষ্ঠ সংখ্যার উপর লেখ! আছে "১২ ভাগ--২ক় সংখ্যা” । তবে পরবর্তী বৎসরের প্রথম কমেেক মাস পত্রিকা বথারীতি প্রকাশিত ন! হওয়ায়, ১২৮২ সালের আশ্বিন সংখ্যায়
জলধর সেলের আত্মজীবনী ১০৭
লেখা আছে “১৩ ভাগ---১ম সংখ্যা” । এ সংখ্যার সম্পাদক কৈক্ষিয়ত দিতেছেন £
“গত বৎসর নানা বিপদ্দে বিপন্ন হইয়। গ্রামবার্ত। মৃত্যু-শধায় শয়ন করে। তাহার তাদৃশী অবস্থাবলোকনে অনেক গ্রাহক নিদয় হইয়! তাহাকে পরিত্যাগ করেন এবং অনেক দাতা তাহার নাম পধ্যস্ত ভূলিযঃ যান। কেবল দীনপালিনী শ্রীমতী মহারাণী স্বর্ণময়ী মহোদয়ার সাহাধ্য- ঘবানের উপর নির্ভর করিয়া, সে জীবন রক্ষা করিয়াছে। অন্যথ এতদিন তাহার চিহ্ন পর্যন্ত থাঁকিত না", **? আমরা নান! কারণে আশ্বিন মাস হইতে মাসিক গ্রামবার্তার নূতন বৎসর আরগ্ত করিলাম”
এই ভাবে পত্রিকা দুই বৎসর চলে । তাহার পর পুনরায় বৈশাখ হইতে উহার বৎসর গণনা করা হয় ।
মাসিক “গ্রামবার্তা'র বয়স উনবিংশ বৎসর পূর্ণ হয় ১২৮৮ সালের চৈত্র মাসে । ১২৮৯ সালের বৈশাখ হইতে উহার প্রচার বন্ধ হইয়া বায়। সম্পাদক মহাশয় ১২৮৮ সালের চেত্র সংখ্যায় গ্রাহকগণকে আনাইতেছেন £
“গ্রাহকগণ ! অনুগ্রহপ্রকাশে আমাদিগের মাসিক গ্রামবার্তীর প্রাপ্য মূল্যগুলি সত্বরে প্রেরণ করিয়া আমাদিগকে খণজাল হইতে মুক্ত করিবেন । মাঁসিক গ্রামবার্তী যে এই হইতে বন্ধ 'হইল, ইহার কারণ গ্রাহক দিগকে পূর্বেই জ্ঞাত করা হুইয়াছে। স্তরাং এক্ষণে সে বিষয়ের পুনরুল্েখ করিতে আর ইচ্ছা করি না। তবে গ্রাহকগণ রীতিনত সময়ে ্রামবার্তার দেয় মূল্য না দেওয়াই যে বন্ধ হুইবার প্রধান কারণ, তাহ বোধ হয়, কাহাকেও বুঝাইয়া দিতে হইবে না।”
সাপ্ডাহিক *গ্রামবার্তা'র প্রচার গ্রথম বন্ধ হয় ১২৮৬ সালে। ১২৮৭
১০৮ জলধর সেনের আত্মজীবনী
সালেব বৈশাখ সংখ্যা মাসিক “গ্রামবার্তী£ঃর গোড়ায় সম্পাদক লিখিতেছেন £
“নান! কারণে মধ্যে মধ্যে মাসিক পত্রিকা বন্ধ হইয়াছে, কিন্ত কখন সাপ্তাহিক পত্রিকা বন্ধ হয় নাই,--ছুর্ভাগাবশতঃ গণ বৎসর তাহাও সংঘটিত হইয়াছে । এক দিকে ভারতাকাশে মুদ্রাশাসনী ব্যবস্থার জন্ব উদ্ভত বজ্র মায় গর্জন * এবং তচ্জুবণে "বঙ্গভাঁষার সংবাদপত্র কেবল সাক্ষীগোপাল মনে করিয়া” অন্দ্দিকে তাহার প্রতি লোকের "মনোযোগ, গ্রাহকগণের মূল্য প্রদানে ওদাসীন্ত অবলম্বন, নান! চিল্তায় উতকট রোগাক্রান্ত হইয়া সম্পাদকের শযাশ্রষ ইত্যাদি ঘটনাসমুক্ সাপ্তাহিক গ্রামবার্তী বন্ধ হইবার কারণ ।.. গ্রামবার্তভীব কতিপয় সহদক়্ বন্ধু সাপ্তাহিক পত্রিক] গ্রচারেব নিমিত্ত বিবিধ প্রকারে যত্ব করিতেছেন । যদি তাহারা কৃতকাধ্য হইতে পারেন, তাহা হইলে সত্বরেই সাপ্তাহিক পত্রিক1 প্রকাশিত হইবে, অন্তথ| তাহার জীবনাশ। আব নাই ।”
মাসিক “গ্রামবার্তী” বন্ধ হইলে, ১২৮৯ সালে বৈশাখ মাস হইতে পাণ্ডাহিক “গ্রামবার্ডা” পুনঃগ্রকাশিত হইতে লাগিল-_“গ্রামবার্ভা”র দরদী বান্ধবগণের যত্ব ও চেষ্টাষ। তখন ইহাব পরিচালন-ভার গ্রহণ করেন রায় বাহাদুর জলধর সেন ও এঁতিহাপিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় । এই সাপ্তাহিক সংস্করণ একেবারে বন্ধ হইয়া যায় ১২৯২ সালে আশ্বিন মাসে । ' কাঙ্গাল হরিনাথেব অপ্রকাশিত ডায্নেরীতে “গ্রামবার্ত। প্রকাশিকা, সন্থন্ধে যেটুকু সংবাঁদ পাওয়। যায়, তাহার সবটুকু উদ্ধত করা হইল £
“আমি শুনিলাম, বাংল! সংবাদপত্রের অনুবাদ করিয়া গবর্ণমেপ্ট তাহার মন্ত্র অবগত হইতে সঙ্কল্প করিয়াছেন, তন্নিমিতত একটি কার্য্যালয়ও
পট সি পরিসর শপ শী শশীশিক্ী
০ শিস
* বড়লাট লর্ড লিটনের শাসনকালে
জলধর সেনের আত্মজীবনী ১০৯
স্থাপিত হইবে । “ঘরে নাই এক কড়া, তবু নাচে গায় পড়া,। আমার ইচ্ছা হইল, এই সময় একথানি সংবাদপত্র প্রচার করিয়া, গ্রামবাসী প্রজার! যে যে ভাবে অত্যাচারিত হইতেছে, তাহা গবর্ণমেণ্টের কর্ণগণ্ত করিলে, অবশ্যই তাশার প্রতিকার এবং তাহাদিগের নন! প্রকার উপকার সাধিত হইবে, নন্দেহ নাই। গ্রাম ও গ্রামবাসী প্রজার অবস্থা প্রকাশ করিবে বলিয় পত্রিকার নাম 'গ্রামবার্তী প্রকাশিকা; রাখিয়। গিরিশযস্ত্রের কর্ত। গিরিশচন্দ্র বিদ্যারত্ব মহাশয়কে একটি শিরোমুকুট অর্থাৎ হেডিং আর একটি ক্লোক প্রতিশ্রুত করাইণাম ॥ (১৯২৪ পঃ)
“কুমারথানী বাঙলা পাঠশালার যে ছাত্র ছাত্রবৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়! কলিকাতায় নর্মীল স্কুলে প্রবেশ করিয়াছিলেন, সেই পুলিনচন্্র সিংহ দ্বিতীয় শিক্ষকের পদ গ্রহণ করায়, (প্রধান শিক্ষক আমি) আমার শ্রম অনেক লাঘব হইল। উক্ত পাঠশালার যে যে ছাত্র তখন নিজ নিজ পৈতৃক বিষয়কা্্য করিয়া উন্নতিপ্রদর্শনে প্রশংসালাভ করিতেছেন, সেই কৈলাসচন্ত্র প্রামাণিক ও গোবিন্দচন্দ্র চাঁকীর সঙ্গে পরামশ করিয়া! অবধারিত করিণাম, তাহারা মূলধন সংগ্রহ করিয়। একটি পুস্তকালয় স্থাপন করিবেন। উক্ত পুম্তকালয় হইতে সম্বাদপত্রিক গ্রামবার্তীও প্রকাশিত হইবে । আমি পত্রিকার সম্পাদক হইয়া এবং নিজ স্ষন্ধে দায়িত্ব রাখিয়। লিখিবার ভার বহন করিব। কিন্তু আধখিক ক্ষতিবৃদ্ধির নিমিত্ত দায়ী হইব না, পুস্তকালয় যেমন লাভগ্রহণ তন্ত্রপ ক্ষতিও স্বীকার করিবে । যদি পুস্তকালয় পত্রকাঁর নিমিত্ত বিশেষ লাভবান হয়, তবে আমি তখন ভাতাম্বরূপ কিছু কিছু পাইব। (১৪২৫-২৬ পৃঃ)
“ «গ্রামবার্তা। প্রকাশিক1” সংবাদপন্রিকার প্বার। গ্রামের অত্যাচার নিবারিত ও নান! প্রকারে গ্রা্বাসীদিগের উপকার সাধিত হইবে এবং তৎসঙগে মাত। বঙ্গভাযাও সেবিত] হইবেন, ইত্যাদি নান প্রকার আশ!
১১০ জলধর সেনের আত্মজীবনী
করিয়া পুশ্যকাঁলয়ের অধ্যক্গদিগের উক্ত নিয়মে অগত্যা বাধ্য হইস্কা “গ্রামবার্তা গ্রকাশিকা'র কাধ্য আরম্ভ করিলাম । ১২৭ বারশত সম্তর সাল, বৈশাখ মাসে কলিকাতা! গিরিশ বিগ্যাবত্ব-যন্ত্রে মুদ্রিত হইয়া প্রথমত: মাসে একবার চারি ফণা করিয়! “গ্রামবার্তী প্রকাশিকা”র প্রচার আরস্ত হইল। প্রথম বৎসর লাভ দেখিয়া! দ্বিতীয় বৎসর পুমস্তকালর গ্রামবার্তার ব্যয়ভার বহন করিতে হ্বীকার করিলেন। দ্বিতীয় বৎসরে ক্ষতি হইল দেখিয়া তাহার অধ্যক্ষর! তৃতীয় বৎসরে পুম্তকালয়ের কাধ্য বন্ধ করিলেন, স্থতরাং “গ্রামবার্তী* প্রচারের উপায়ও তৎ্সঙ্গে বন্ধ হইল। সংবাদপত্র পিখিয়! ল।ভবান হইব, আমি এই ইচ্ছায় তাহার কার্যযভার গ্রহণ করি নাই। সুতরাং লাভ ন। দেখিয়া লাভাভিলাষী পুস্তকালয়ের অধ্যক্ষগণের স্ঠায় গ্রামবার্তী প্রচারের ইচ্ছ। আগার সঙ্কৌোচিত হইল না, বরং আরও বলবতী হইয়া আমি উক্ত অনিবারণী ইচ্ছার অনুগামী ভইয়া নিজেই তাহার ব্যয়ভার বহন করিতে কৃতসংকল্প হইলাম এবং লজ্জা ও অভিমান পরিত্যাগ করিয়া ভিক্ষার ঝুলি স্বন্ধে ধারণ করিলাম । পুম্তকালয়ের সাহাষ্যে দুই বৎসর গিরিশ বিস্ারত্ব যন্ত্রে “গ্রামবার্ভ।” এবং তৎব্যতীত “চারুচরিত্র নামক একখানি পুস্তক ছাপা করিয়া আমি তাহার শিকট পরিচিত ও বিশ্বস্ত হইয়াছি। সুতরাং তৃতীয় বৎসরের নিষিত গ্রাষবার্তার কাধ্য আরম্ভ করিতে আশু টাকার প্রয়োজন হইল ন1।"-'১৪২৭-২৮ পৃঃ]
“গ্রামবার্তীর প্রবন্ধাদ্দি এবং আগত পত্রে সংবাদাদি বিচার ও সংশোধন করিয়া চারি ফরমার উপযুক্ত আদর্শলিপি অর্থাৎ কাপি হাতে লিখিয়া ষথাসময়ে যন্ত্রালয়্ে প্রেরণ কর! অল্প সময়ের প্রয়োজন নহে, ইহার পর মুল্যাদি আদার ও অন্ঠান্ত কারণে [ ১৪৩০ পৃঃ ] এবং পত্রপ্রেরক প্রভৃতি নানা লৌকের নিকট পত্রাদিও সর্বদ1 লিখিতে ও নিজের স্ত্রীপু্রাদির রক্ষণাবেক্ষণ সাংসারিক কাধ্য গ্রভৃতিতেও অনেক সময়ের আবশ্ঠক
জলধর সেনের আবু জীঘনী ১১১
হইত।...অতএব আমি শ্যাম ও কুল উভয় রক্ষা করিতে না পারিয়া... পাঠশালার কার্যরূপে মাতৃভাষার সেবা হইতে অবসর গ্রহণ করিলাজ এবং গ্রাষবার্থ। প্রচারে গ্রামবাসী ও মাতৃভাষার সেব। করিতে ব্রতপরায়ণ হইলাম । জীবিকানির্বাহের নিমিত্ত পাঠ্যপুন্তকাদি বিক্রয়ের পুস্তকালয় স্কাপন করিয়া! অতি কষ্টে দিনপাত করিতে লাগিলাষ [ ১৪৩২ পৃঃ]
“আমি এইকপে গ্রামবার্তী প্রকাশের ছার! গ্রামবাসী ও গ্রামবার্থার সেব। করিতেছি । গ্রানবার্তার ভূতীয় বৎসর অনায়ামে অতিবাহিত হইল । চতুর্থ বৎসরে পত্রদ্বারা অবস্থা অবগত করিয়। গ্রাহকগণের নিকট প্রাপ্য মূল্য আদায় ক্রমেই কঠিন হইয়। উঠিল। এক দিন, ছই দিনের দুরবন্তী স্থানে নিজেই গমন করিয়া মূল্য আদায় করিতে লাগিলাম। ভৎসঙ্গে ছুই একজন গ্রামবৎসল ব্যক্তি নৃতন গ্রাহকও হইতে লাগিলেন। আমিই লেখক, আমিই সম্পাদক, আমিই পত্রিকার লেফাফ। লেখক ও বিলিকারক এবং আমিই মূল্য আদায়কারী । দীনজনের দীনতার দিন এইভাবে দিন দিন গত হইতেছে । ( ১৪৩৯ পৃঃ]
“***এতদিনে ক্রমান্বয়ে অনেকে বুঝিতে পারিলেন, পূর্বে অনেক ধনবানাদি সবল লোকের! ছুর্বলের প্রতি প্রকাশ্ঠয়পে সহস। বে প্রকার অত্যাচার করিতেন, এক্ষণে যে তঙ্জপ করিতে সাহসী হইতেছেন ন1 "' “গ্রামবার্তা প্রকাশিকা'ই তাহার কারণ। অতএব স্থাক্ববান কতিপয় গ্রামবাসী গ্রামবার্তার উন্নতির নিমিত্ত একটি ভবন-সভ। করিয়া মাসিক গ্রামবাস্তীকে পাক্ষিকরূপে প্রকাশ করিতে বলিলেন এবং আপনারা সাধ্যামুসারে ছুইশত হইতে দশ টাঁকা পর্য্যন্ত একদা! দান অঙ্গীকা রপূর্ধবক দানপত্রে স্বাক্ষর করিলেন । আমি তাহাদিগের আদেশ অনুসারে ' '" [ ১২৭৪? ] সালের বৈশাখ মাস হইতে “গ্রামবাত্তা” পক্ষান্তরে প্রচারের করিয়। তাহার কাধ্য সম্পাদন করিতে লাগিলাম। [১৪৪২ প:] প্রান
১১২ জলধর সেনের লায্মজীবনী;
ছুইমাঁস গত হইল কেহই টাক আদায় করিলেন না। আমি ঘোর বিপদে পতিত হইয়। “কিরূপে গ্রামবার্তীর জীবন রক্ষা হইবে” অস্ঠমনস্ক হইয়। দ্দিবারাত্রি যে প্রকার চিন্তা করিতে লাগিলাম, তদ্রপ তত্বজ্ঞানলাভের নিমিত্ত চিন্তা করিলে তত্বজ্ঞানী হইতে পারিতাঁম, সন্দেহ নাই।*** কুমারখালীনিবাপী রাধাগোবিন্দ মজুমদারের নিকট হইতে ১০০২ একশত টাকা হাওলাত লইয়া! উপস্থিত বিপদের আশু গ্রতিকার করিলাম । কতক দিন পরে ধিনি ২০০২ ছুইশত টাকা স্বাক্ষর করিয়াছিলেন, তিনি একশত আদায় করিলে আশু খণ পরিশোধিত হইল। কিন্ত এই একশত টাক! ব্যতীত, যিনি ২০০২ টাকা স্বাক্ষর করিম্নাছিলেন» [ ১৪9৩ পৃঃ ] তিনি যেমন অবশিষ্ট টাক! দিলেন না, তন্রপ অন্য স্বাক্ষরকারিগণ বিন্দুবিসগও আদ]য় করিলেন না। স্থতরাং কিরূপে গ্রামবার্ভার জীবন থাকিবে, এই এক বৎসর সেই চিন্তায় অনেক রাত্রি অনিদ্রায় গত হইতে লাগিল । উক্ত প্রকার চিন্তার পর, কোথা হইতে কোন্ বিষয়ে কি প্রকারে প্রয়োজন লাধন হইয়। গ্রামবার্তীর জীবন রক্ষ। করিয়াছে, সে সমুদাস় ধারাবাহিকরূপে এক্ষণে আমার স্মরণ নাই । তবে এম্থলে কেবল এই মাজ বলিতেছি, গ্রামবাসীদিগের-হিতৈষী অনেক ধনাঢ্য লোকের বাধিক ও একদ। দানে পাক্ষিকের পর শশ্রামবার্তা প্রকাশিকা” ১২৭৭ সালের বৈশাখ মাস হইতে সাপ্তাহিকরূপে প্রচাখিত হইয়াছিল। যথন গ্রামবার্তা মাসিক ছিল, তখন ধর্মনীতি ও সমাজনীতি প্রভৃতি সাহিত্যমষ়্ প্রবন্ধ এবং রাজ্নীতিময় প্রস্তাব, গ্রামের ঘটনা সম্বাদ সহকারে গ্রামবাসীদিগের জ্ঞাতব্য রাজার অভিপ্রায়, মন্তব্য ও বিবিধ সংবাদ প্রকাশিত হইত । পাক্ষিকাবস্থায় ধর্মনীতি-সাহিত্য ব্যতীত পূর্ববং আর সকলেরই ( ১৪৪৪ পৃঃ ] প্রচার হইয়াছে। সাপ্াহিকাবস্থার সাহিত্যময় প্রবন্ধা্দি প্রচার রহিত হইয়া বাছল্যরূপে রাজনীতিরই আলোচনা হইতে লাগিল ॥
জলধর সেনের আত্মজীবনী ১১৩
কিন্ত সাহিত্য, দর্শন ও বিজ্ঞানাদি আলোচনার নিমিত্ত শ্বতত্ত্রর্ূপে একথানি মাপিক গ্রামবার্তীও প্রকাশিত হইত । [১৪7৫ পূঃ] "'
"কেবল সংবাদদাতা, পত্রপ্রেরক ও শ্রুতিকথার প্রতি নির্ভর করিয়া গ্রামবার্তী প্রকাশিত হইত না। আমরা গ্রামবার্তার উপযুক্ত বার্তা জানিবার নিমিত্ত কথনও গোপনে, কখনও প্রকাশ্তে নান! স্থান পরিদর্শন ও দুরস্থ গ্রামপন্মী অবসরমত সময়ে সময়ে ভ্রমণ করিয়াছি এবং এই প্রকার ভ্রমণ করিয়া শাস্তিপুর, উলাদি উপনগর পরিদর্শনে তাহার নামোৎ্পত্তির কারণ ও প্রাচীন বৃত্তান্ত এবং মেহেরপুর, চাকদহ ও উল! প্রভৃতি স্থানের মহামারীর অবস্থা অনেক সংগ্রহ করিয়াছিলাম। উক্ত উপায়ে নিজে যাহ সংগ্রহ করি ও হিমালয় প্রভৃতি নান! দিক্ দর্শন করিয়া ভ্রমণ কারিগণ যাহা সংগ্রহ করিতেন, তাহা সমস্তই মাসিক গ্রামবার্তায় প্রকাশিত হইত। নান। প্রদেশের ভ্রমণবৃত্তাস্ত গ্রামবার্তায় প্রকাশিত হইয়া গ্রাম ও পল্লীবাসীদিগের যতদূর উপকার সাধন করিয়াছিল, আমি ততদূর অত্যাচারী লোকের বিষনেত্রে পড়িয়া নাঁনা প্রকারে উৎপীড়িত ও অত্যাচারিত হইতে লাগিলাম। [ ১৪৬২-৩) ***
“চারিদিকে পুস্তকবিক্রয়ের দোকান যত বৃদ্ধি হইতে লাগিল, আমার জীবিকান্বপ্ধপ পুন্তকালয়ের আয় ক্রমে অল্প হইয়া আমিল। যদি গ্রামবার্তীর প্রতি উক্ত ভার অর্পণ করি, তবে সে চলিতে পারে না, নিজের ভার নিজে বহন করিবারও আর কোন প্রকার উপায় নাই ।***এই সময়ে রংপুর তুষভাগারের রাজা রমণীমোহন রায়চৌধুরীর দান [ মাসিক ১০২ ] রহিত হওয়ায় মানিক গ্রামবার্তী বন্ধ হইয়াছিল [ ১৪৯১ পৃঃ ]-*
“রাজীবলোচন মজুমদার আমার অতিবৃদ্ধ প্রপিতামহ সারগ্রাহী পরম বৈষ্ণব কুঞ্জবিহারী মজুমদারের প্রপৌত্র। রাজীবলোচন মন্তুমদার আমার ছাত্র কৃষ্ণচন্দ্র মৈত্রের মুখে শুনিয়াছিলেন, একটি প্রেস অর্থাৎ মুদ্রীযন্ত্
৮
১১৪ জলধর সেনেক আত্মজীবনী
'হইলে কুমারথাঁলীর সংবাদপত্রিক! “গ্রামবার্তীপ্রকাশিকা” ইহা অপেক্ষা ভাঙ্ভাবে চলিতে পারে এবং উক্ত প্রেস ধরিয়৷ আমাদিগের নায় অন্যুন সাত আটটি পরিবার অনায়াসে অন্ন সংগ্রহ করিতে পারে। তিনি বুন্দাবন-গমনের সময় কলিকাতায় কয়েক দিন অবস্থান করিয়াছিলেন । [ ১৬৭৩ পৃঃ ] সেই সময় গ্রামবার্ভার প্রেস ক্রয় করিতে আমার নিমিত্ত ৬০০২ ছয়শত টাঁকা"'*আমার খুড়া নবীনচন্দ্র সাহার নিকটে রাখিয়া গিয়াছিলেন।...উক্ত টাকায় প্রেস করিবার নিমিত্ত শ্রীবৃন্দাবনে পত্র লিখিয়া তাহার নিকট অনুমতি প্রার্থনা! করিলাম। তদুত্তরে তিনি লিখিলেন, “উক্ত টাকায় প্রেস করিবার নিমিত্ত আমি তোমাকে দান করিয়াছি ।' তুমি প্রেস স্থাপন করিয়। কৃষ্চন্দ্রের কথানুলারে বত জন নিরন্ন দুঃখী পরিবার প্রতিপালিত এবং ভালরূপে গ্রামবাত্তার কার্য চালাইতে পারিবে, আমি তোমার প্রতি ততই সন্তুষ্ট হইব |” আমি উক্ত পত্রা্থপারে টাকার অধিকারী হইলে [ ১৬৭৪ পৃঃ ] 'মথুরানাথ-যস্ত্রঁ নামে এই বর্তমান প্রেসটি, তৎকালে কলিকাতাস্থ বন্ধুগণ ক্রয় করিয়া পাঠান। | ১৬৭৫ পৃঃ 1."
“আমি প্রেসম্থাপন ও তাহ হইতে “গ্রামবার্তা” প্রকাশ এবং নিজ পরিবার ও প্রেসের কম্মচারী অন্ত ৬।৭টি পরিবারের অন্নসংগ্রহ করিয়া খুড়া রাজীবলোচন মজুমদারের আদেশ পালন করিতে লাঁগিলাম । কিন্তু আমার অর্থকম্ুতা। পূর্বে যেমন ছিল, তাঁহ! অপেক্ষা বরং ক্রমেই বৃদ্ধি হইতে লাগিল। পূর্বে কেবল গ্রামবার্তীর নিমিত্ব চিন্তা ছিল, এখন তদ্সঙ্গে প্রেস চালাইবার চিন্তা উপস্থিত হইল । [ ১৬৮১ পৃঃ]
“আমি প্রেসস্থাপন ও কতিপয় বৎসর গ্রামবার্তার কার্য নির্বাহ করিয়। ক্রমেই খগগ্রন্ত হইতে লাগিলাম,_-দেখিয়া আমার ছাত্র কুমারখালীর বাল! পাঠশালার প্রধান শিক্ষক গ্রসন্নকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্ত
জলধর় সেনের আত্মজীবনী ১১৫
কয়েকজন বন্ধুবান্ধব, আমার হস্ত হইতে গগ্রামবার্তা” গ্রহণ এবং তাহার কাধ্য নির্বাহ করিতে লাগিলেন । তাহারা কয়েক বৎসর কাধ্য নির্বাহ করিলে, আমি কাগজপত্র আলোচনা করিয়া দেখিলাম, পূর্ব ও পরে একত্রিত হইয়া সর্ধ্বশ্তীদ্ধ ১২৯০. বাঁরশত টাকা খণ হইয়াছে । এদ্দিকে আমার শরীর ক্রমেই বার্ধক্য জরার নিকটবর্তী হইতেছে । অতএব, আর খণবৃদ্ধি হওয়া উচিত হয় না! মনে করিয়া গ্রামবার্তার কার্ধ্য বন্ধ করিয়া দিলাম । [ ১৬৮৪ পৃঃ 1”
শ্রীমান্ ব্রজেন্দ্রনাথ কাঙাল হবিনাথের স্বহণ্ত-লিখিত ডায়েরী থেকে কয়েকটা স্থান উদ্ধৃত করেছেন! কাঁঙালের এই বিস্তৃত ডায়েরী আমাদের এক অমূল্য সম্পদ্। কিন্ত সেই ডায়েরী আত্বোপাস্ত প্রকাশ কর! সম্ভবপর নয়। তাহাতে নান! বিপদ-আপদের সম্ভাবনা আছে। সেই কাবণে কাঙালের ডায়েবী তার পরলোকগমনের পর এই সুদীর্ঘকাল অপ্রকাশিত অবস্থায় পড়েই রয়েছে । আমবা কেউই সেই ডায়েরী আমূল প্রকাশের চেষ্টা করিনি এবং ভবিম্বতেও করব না। সেই ডাক়েরীতে গ্রামবার্তী গ্রকাশিকা” সম্বন্ধে যে কথাগুলি আছে, শ্রীমান্ ব্রজেন্দ্নাথ অনেক স্থল বাদ দিয়৷ প্রকাশ কবেছেন।
এ ডাষেবী-উদ্ধত অংশের শেষ দিকে তিনি বলেছেন, “পণ্ডিত প্রসঙ্গ কুমার বন্দ্যোপাধ্যাষ এবং আবও ছু'একজন বন্ধু “গ্রামবার্ভীর' শেষ ভার গ্রহণ কবেছিলেন।' সেই আরও ছু'একজন বন্ধুর মধ্যে আমিও একজন । আমি তখন গোয়ালন্দে মাষ্টারী করি। পগ্রামবার্তীপ্র যা কিছু কাজ, পুজনীয় প্রসন্ন পণ্ডিত মশাই কবতেন। আমি প্রতি শনিবার রাত্রে গোয়ালন্দ মেলে কুমারথালিতে আসতাম, পরদিন রবিবারে পণ্ডিত মহাশয়কে যথাসাধ্য সাহাষ্য করতাঁম। পণ্ডিত মহাশয় সম্পাদক পদ
১১৬ জলধর মেনের আত্মজীবনী
গ্রহণ করতে কিছুতেই সম্মত হননি । তাই শেষের দু'বছর আমার নামই সম্পাদক হিসাবে ছিল। কাজ যা কিছু পণ্ডিত মহাশয়ই করতেন-_এবং গ্রীষ্মাবকাশের সময়ে স্ুপ্রসিদ্ধ প্রতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় যখন বাড়ীতে থাকিতেন তথন তার মূল্যবান সাহায্য পণ্ডিত মহাশয় পেতেন ।
এইখানে আর একটা কৃথার উল্লেখ করেই “গ্রামবার্তা গ্রকাশিকা”র সঙ্গে আমার সন্বপ্ধের কথা শেষ করব। আমি যখন পগ্রামবার্ভা্র তথাকথিত সম্পাদক, তখন রাজপ্রতিনিধি লর্ড রিপণ এদেশ ত্যাগ করে" যাঁন। তিনি দাঞজ্জিলিং বেড়াতে গিয়েছিলেন । সেখান থেকে কলিকাতায় ফিরে এসেই দেশে চলে যান।
যে দিন তিনি দাজ্জিলিং থেকে কলিকাতায় যান, সেদিন আমরা একট! গাঁন ছাপিয়ে নিয়ে সদল-বলে পোড়াদহ ষ্টেশনে যাই। লাট সাহেবের স্পেশাল ট্রেণ পোড়াদহে দু'মিনিট থামবার, কথা-__কিন্ক গাড়ী পৌছতে না পৌছতেই, আমরা প্রাটফরমে দাড়িয়ে সেই গান গাইতে আরম্ভ করি। স্পেশাল ট্রেণের সাহ্বরা, হয়ত লাঁট সাহেব স্বয়ংও গাড়ী থেকে মুখ বাড়িয়ে, এই অপূর্বব দৃশ্য দেখতে থাকেন। তাতে স্পেশাল ট্রেণ আরও তিন মিনিট দাড়িয়ে থাকে । আমরা গানটা বাংলায় ছ!পিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম এবং তার ইংরাজী অন্বাদও ছাঁপিয়েছিলাম। স্পেশাল ট্রেণের প্রত্যেক কামরায় সেই ইংরাজী-বাংলা- ছাপানো কাগজ আমরা ১৫২০ খানা ফেলে দিয়েছিলাম । তার পরদিনই আমি কলিকাতায় গিয়ে একথানি আবেদনপত্রের সঙ্গে ছাপান গান গেঁথে নিয়ে গবর্ণমেণ্ট হাউসে গিয়ে বড়লাট বাহাদুরের চীফ, সেক্রেটারির নিকট পাঠাই ।
কয়েকদিন পরেই প্রাইভেট সেক্রেটারী মহাশয় বিশেষ আনন্দ প্রকাশ করে, আমাদের সেই পত্রের উত্তর দেন। নিয়ে সেই
জলধর সেনের আন্মজীবনী ১১৭
বাংলা গানটী উদ্ধৃত করে? দেবার প্রলোভন আমি সম্বরণ করতে
পারলাম না ।
১।
|
৪
৫ |
তু ।
“দেশে চলিলে মহামতি রিপণ !
রাম-রাজ্য-সম প্রজা করিয়ে পালন । সুশাসনে এ ভারতে, ছিল প্রজা! নিরাপদে ( তব ন্তায়পরতায়, সাম্যনীতি )
তোমার বিরহে কাদে নরনারীগণ। আমরা কাঙ্গাল বেশে, এসেছি তৰ উদ্দেশে, (হের কূপণনয়নে, সাধারণ দেশের দশা )
দেশের দশা প্রকাশ বেশে কর নিরীক্ষণ। হৃদয়ের কতজ্ঞতা, দেখাতে নাহি ক্ষমতা, (আমর! পল্লীবাসী হে ), (জ্ঞান-অর্থহীন ) (ধর চক্ষের জল হে), (অন্ত সম্বল নাই)
রাজভক্তি সরলতা ভারতবাসীর ধন। ভিক্টোরিয়া মাতা যখন, জিজ্ঞাসিবে বল তখন। ( কেবল নাম রয়েছে, সোনার ভারত ) ( সকল হাঁরায়েছে )
সোণার খনি নাই আর এখন ভারত-তুবন ! ছুভিক্ষ প্রতি বছরে, অন্ন বিন! প্রজা মরে, (মায়ের কাছে বল এই, ভিক্টোরিয়া)
ম্যালেরিয়! মহাজরে নাশে প্রজাগণ। সহায়হীন। শুকরমণি, পরম সতীরমণী, (তার কি দশ! হল হায়!) ( বলতে হাদয় ফাটে )
হারিয়ে সততীত্বমণি বধিল জীবন ।
১১৮ জলধর সেনের আফ্ধজীহনী
৭। আর যত অত্যাচার, সকলি তব গোচর, (কিবা নিবেদিব হে, তুমি সকল জান ) দেশে গিয়ে গুণাকর, করিবে স্মরণ। ৮। ভারতের কপাল মন্দ, অস্ত্রাইনে হস্ত বন্ধ, (তার্দের এ কি দশা হে) (মহারাণীর প্রজ। হয়ে ) পশুহন্তে প্রজাবৃন্দ হারায় জীবন । ৯। রাজরাজেশ্বরী হয়ে, থাকুক মাতা ভিক্টোরিয়া, (প্রার্থনা! করি এই বিভূপদে )
এ অত্যাচার দয়! করে? করুন নিবারণ । তিনি তোমায় করুন রক্ষে, স্থলে জলে, অন্তরীক্ষে, (যিনি আত্মাতে আত্মাতে, এ চরাচরের)
কাঙ্গাল ফিকিরের এই ভিক্ষে, কাতর নিবেদন । এই খানে ফিকিরঠাঁদ ফকিরের বাউলের দনের একটু বিবরণ দেওয়া আবশ্তক। নিয়ে তাহ উদ্ধত করছি (১৭_-২৯ পৃষ্ঠা )। একবার গ্রীষ্মের অবকাশের সময়ে শ্রীমান্ অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় ভাক়্। বাড়ীতে ( কুমারথালিতে ) আসিয়াছেন। তিনি তখন বি-এল পরীক্ষার জন্য প্রস্তত হইতেছিলেন। আমি তখন স্কুল-মাষ্টার। আমারও গ্রীষ্মাবকাশ। আমরা তখম বাড়ীতে আসিয়। কাঙ্গালের বড় সাধের গ্রামবার্ভ প্রবেশিকা” পত্রিকার সম্পাদন করি, আর অবসর সময়ে আমোদ-আহলাদে কাটাইয়া দিই । এই সময়ে একদিন মধ্যাহ্কালে গ্রীষ্মের জ্বালায় অস্থির হইয়া, 'গ্রামবার্তা”র কাপি লেখা পরিত্যাগ করিয়।, আমরা হাত-প। ছড়াইয়। বিশ্রাম করিতেছি । স্থান “গ্রামবার্তীণর অফিস অর্থাৎ কাঙ্গাল হরিনাথের চত্তীমগ্ডপের একটা কক্ষ । উপস্থিত শ্রীমান অক্ষয়কুমার, “গ্রামবার্তা'র
ছ/ শু
জলধর সেনের আতুজীবনী ১১৯
প্রিন্টার (এক্ষণে পরলোকগত ) প্রফুল্লচন্্র গঙ্গোপাধ্যায়, কুমারখালি বাঙ্গালা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্রীযুক্ত প্রসম্নকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ছাপাখানার ভূতের দল। ভূতের ব্যাকরণে বা সাহিত্যে পণ্ডিত ছিল ন!। কিন্তু তাহারা সকলেই কাঙ্গালের শিপ । সকলেই গান করিতে পাঁরিত। চুপ করিয়! থাকা আমাদের কাহারও কোঠীতে লেখে না ॥ সেই দ্িপ্রহর রৌদ্রে কি করা যায়, ইহ! লইয়াই তর্ক-বিতর্ক আরম্ভ হইল। তর্ক বেশ চলিতে লাগিল, কিন্তু কর্তব্য স্থির হইল না; তর্কের যাহা গতি হইয়া থাকে, তাহাই হইল। অক্ষয় বলিলেন যে, “একটা বাউলের দল করিলে হয় না!” এ কথাটা মনে হইবারও একট। কারণ ঘটিয়াছিল। সেদ্দিন প্রাতঃকাঁলে লালন ফকির নামক একজন ফকির কাজ্জীলের সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিয়াছিলেন। লালন ফকির কুমারখালির অদূরবন্তী কালীগঙ্গার তীরে বাস করিতেন। তাহার অনেক শিষ্ত ছিল। তিনি কোন্ সম্প্রদায়ভূক্ত ছিলেন, তাহ বল বড় কঠিন; কারণ তিনি সকল সম্প্রদায়ের অতীত রাজ্যে পৌছিয়াছিলেন। তিনি বক্তৃত! করিতেন না, ধর্মকথাও বলিতেন না'। তাহার এক অমোঘ অস্ত্র ছিল, তাহা বাউলের গান। তিনি সেই সকল গান করিয়া সকলকে মুগ্ধ করিতেন। শুনিয়াছি শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিলাইদহের কুটিতে লালন ফকির একবার গান করিয়া সকলকে মন্্রমুগ্ধ করিয়া রাখিয়াছিলেন। প্রাতঃকাল হইতে আরম্ত করিয়া অপরাহ্ন তিনটা পর্যন্ত গান চলিয়াছিল ; ইহার মধ্যে কেন স্থান ত্যাগ করিতে পারেন নাই। সেই লালন ফকির কাঙ্গালের কুটারে, আমরা যে দিনের কথা বলিতেছি, সেইদ্িনই আসিয়াছিলেন এবং কয়েকটা গান করিয়াছিলেন । সব কয়টা গান এখন আর আমার সঠিকভাবে মনে নাই; একটী গান মনে আছে, যথা
৯২9
জলধর সেনের আত্মজীবনী
«আমি একদিনও ন! দেখিলাম তারে ; আমার ঘরের কাছে আরসী-নগর, তাতে এক পড়সী বসত করে। গ্রাম বেড়ে অগাধ পাঁশি, তাঁর নাই কিনারা, নাই তরণী পারের; আমি মনে দেখব তারি,
আমি কেমনে সেথা যাই রে বলব কি পড়লীর কথা তার,
হন্তঃ পদ, স্বন্ধ কিছুই নাই রে) সে ধে ক্ষণেক থাকে শুন্যের উপর,
আবার ক্ষণেক থাকে নীরে। সেই পড়লী যদি আমার হ'ত
তবে যম-যাতন। সকল যেত দূরে; আবার, সেই আর লালন এক স্থানেই রয়,
তবু লক্ষ যোজন ফাক রে ॥”
প্রাতঃকালে যখন গান হয়, তখন আমরাও সেখানে উপস্থিত ছিলাম,
গানও শুনিয়াছিলাম; কিন্তু আমরা সে গানের মর্ম ধরিতে পারিয়াছিলাম, তাহা! বলিতে পারি না। দ্বিগ্রহরের রৌদ্রে শ্রীমান্ অক্ষয়ের মনে হয়ত হঠাৎ সেই লালন ফকিরের গানের কথ! উদ্দিত হুইয়াছিল। তাই সে বলিয়। বসিল “একট! বাউলের দল করিলে হয়
না?" “বেশ, বেশ” বলাটা খুব সহজ; কিন্তু গান কোথায়? বাউলের
সকলেই তখন বলিয়া! উঠিলেন “বেশ, বেশ !*
গান তখন তেমন প্রচলিত হয় নাই । ক্চিৎ কখনও ছুই একজন ফকির ব। দরবেশের মুখে এক আধট। দেহতত্বের গান আমরা শুনিয়াছি। সে
কলধর সেনের আতুজীবনী ১২১
সকল গান কাহারও মনে ছিলনা । পণ্ডিত প্রসন্নকুমার বলিঙ্গেন “নূতন করিয়! গান প্রস্ততি করিতে হুইবে।” শ্রীমান্ অক্ষয়কুমার না পারেন, এমন কার্য্যই নাই । তখনও তিনি যেমন ছিলেন এখনও তাই। বয়সের পরিণতিতে সে ভাবটা এখনও যায় নাই। তিনি যাহা! ধরেন, তাহাই করিতে পারেন। অক্ষয়কুমার বণিলেন, “তার জন্ত ভয় কি? ধৃত জলদা, কাগজ; বাউলের গানই লেখা যাক!” আমি তখন কাগজ-কলম লইয়া! বসিলাম। 'গ্রামবার্তী'র কাপি লিখিবার জন্ত যে কাগজ গুছাইক্বা বদগিয়াছিলাম তাহারই শ্রাদ্ধ করিতে বসিলাম। অক্ষয়কুমার বলিলেন--
“ভাব মন দিবানিশি, অশিবনা শি,
সত্যপথের সেই ভাবনা । / ষে পথে চোর-ডাকাতে কোনমতে,
ছেবে না রে সোণাদানা ॥ সেই পথে মনোসাধে চল্রে পাগল,
ছাড়, ছাড় রে ছলনা । সংসারের বাঁকাঁপথে দিনে রেতে,
চোর-ডাকাতে দেয় ধাতনা; আবার রে ছয়টী চোরে ঘুরে ফিরে
লয়রে কেড়ে সব সাধনা ॥*
এই পর্য্স্ত লেখা হলেই অক্ষয় বলিলেন, “এতদূর তো৷ হল, তাঁর পর?” তাঁরপর-- আবার কি? গানটা! গাওয়া হবে। পণ্ডিত মহাশয় বলিলেন “কথাটি বুঝলে না! বাউলের গানের নিয়ম হচ্ছে এই যে গানের শেষে একট ভণিতা দিতে হয় । কেমন?” অক্ষয় বলিলেন, “সেই কথাই ত ভাবছি!” তখন এক এক জন এক একটা নাম বলিতে লাগিলেন ।
১২২ জলধর সেনের আত্ুজীবনী
কিন্ত কোনটাই ভোটে' টিকিল না। আমি বলিলাম, “অত লোকে কাজ কি! গানটি নিয়ে কাঙ্গালের কাছে যাই, তিনি শেষ অন্তরা এবং ভণিত! ঠিক ক'রে নেবেন |” অক্ষয় বলিলেন, “ত। হবে না; তাঁকে একবারে 95175 (অবাক ) করতে হবে। রও না, আমিই একটী নৃতন নাম ঠিক করেছি।” এই বলিযা একটু মাথা চুলকাইয়! বলিলেন “লেখ জলদা” । আমি কলম ধরলাম, অক্ষয় শেষ অন্তরা ধরি.লন : “ফিকির চাদ ফকির কয় তাই, কি কর ভাই, মিছামিছি করি ভাবনা-- চল বাই সত্য পথে, কোন মতেঃ_- এ যাতনা আর রবে না ।”
ব্যস্। গানের ভণিতা হইয়া গেল। সকলেই একবাক্যে স্বীকার করিলেন “ফিকির চাদ” নামটি ঠিকই হইয়াছে । আমাদের ত ধর্ম্ভাব ছিল না, কোনও ““ফিকিরে” সময় কাটানই আমাদের উদ্দেশ্য । “ফিকির টাদ” নামের ইহাই ইঠিহাস।
গানটা হইয়। গেল; তখন আমাদের মধ্যে পাকা ওক্তাদ প্রফুল্লচন্দ্ গানের সুর দ্রিলেন। স্ুরটী নূতন কি পুরাতন, তাহ! আমি বলিতে পারিব না। কিন্তু পুরাতন হইলেও, এ সুর বড়ই বাঞজিয়া উঠিল। পরে সমন্ত বাঙ্গালাদেশ এ স্থরেই মাতিয়। উঠিয়াছিল।
সেই দ্বিপ্রহরে আমাদের মজলিসে যথন গানের রিহসেল দেওয়] শেষ হইল, তখন স্থির হইল গানটা একবার কাঙ্গালকে শুনাইতে হইবে। আমরা সকলে তখন দল বীধিয়া] বাড়ীর মধ্যে কাঙ্গালেশ্ব জীর্ণ খড়ের ঘরে যাইয়া উপস্থিত হইলাম। তিনি তখন কি যেন 'লিখিতেছিলেন। এত বড় একটা রেজিমেণ্টকে অসময়ে দেখিয়া! তিনি বলিলেন, “কি, তোদের আবার তর্ক বেধেছে নাকি! তোদের
জলধর সেলের আত্বজীবনী ১২৩
জ্বালায় দেখছি একটু স্থির হইয়া কাজ করবারও যো নাই। কি ব্যাপার বল্ত ?” তখন শ্রীমান্ অক্ষয়কুমার আমাদের মুখপাত্রম্বরূপ (কারণ তিনি তখন বি, এল পড়েন, লায়েক হইয়াছেন ) বলিলেন, “আমর একট বাউলের দল করব। তার জন্ত একটা গান লিখছি ।” গানের কথা গশুনিলে কাঙ্গাল শত রাজার ধন হাতে পাইতেন। তিনি অমনি পরম উৎসাহে বলিলেন “গান লিখেছিস্? স্থর বসানে। হয়েছে?” প্রফুল্ল বলিলেন “সব হয়েছে; এখন শুধু আপনার শোনা বাকি ।” তথন তিনি বলিলেন “বেশ, বেশ; সকলে মিলে গা দেখি । আমর! সকলে গান ধরলাম । গানের মুখটুকু তিনি বপিয়া বসিয়]ই শুনিলেন; তারপর যখন অন্তরা ধরা হইল, তথন আর তিনি বসিয়া! থাকিতে পাঁরিলেন না, উঠিয়া পড়িলেন। আমরা ত দীড়াইয়াই আছি। তাহার পর গান আর নৃত্য-নৃত্য আর গান ! সে এক অপাথিব দৃশ্য ! শেষে গান থামিলে কাঙ্গাল বলিলেন--«দেখ, এই গানে দেশ ভেসে যাবে। তা” একটা গান নিয়ে ত আর বাহির হওয়া যায় না! আমিও একট] গান দিই । অক্ষয়, কাগজ-কলম ধয়্ ত1% তখন অক্ষয় কাগজ-কলম ধরিলেন। কাঙ্গাল প্রথমে একটু গুণ-গুণ করিয়া স্থর ভাজিলেন; তারপর গাইতে লাগিলেন, অক্ষয় লিখিতে লাগিলেন :-_- “আমি করব এ রাখালী কত কাল! পালের ছটা গকু ছুটে করছে আমায় হাল-বেহাল আমি গাদ! করে নাদা পুরে রে, কত যত করে খোল বিচালী থেতে দিরে ঘরে ; তাঁর! ছটা যে গু-থেকে!গরু রে ; তার! নরক খায় রে হামেহাল।
কাঙ্গাল কাদে প্রভুর সাক্ষাতে, তোমার রাখালী নেও আর পারিনে গরু চয়াতে £
আমি আগে তোমার য! ছিলাম হে, তাই কর দীন-দয়াল।”
38 জলধর সেনের জান্জীধনী
এইটা দ্বিতীয় গান। এই ছুইটী গান লইয়া প্রথম প্রেসের তৃতেরা সন্ধ্যার সময়ে গ্রামের বাহির হইলেন। সেই নির্দাঘের সন্ধ্যার সময়ে যখন আলথাল্ল। পরিধান করিয়া, মুখে কৃত্রিম দাড়ী লাগাইয়া, নগ্পপদে গ্রামবার্তার প্রেস হইতে ভূতের দল বাহির হইল এবং থঞ্জনী, একতার। ও গোপীযন্ত্র বাজাইয়। গান ধরিল-.
ভাব মন দিবানিশি”
ছুইটী গান লইয়! বাউলের দল প্রথমে বাহির হইল; কিন্ত তুইটী গানে লোকের পিপাসা মিটিল না) ছুই তিন দিন যাইতে না যাইতেই কুমারখালী গ্রামের এবং নিকটবত্বী কুড়ি-পঁচিশখানি গ্রামের আবালবৃদ্ধ গান দুইটী কণ্স্থ করিয়। ফেলিল। আমরা ষখন যেথানে যাইতাম, শুধু শুনিতাম, কেহ গাহিতেছে-_
«ভাব মন দিবানিশি” অথবা আর কেহ গাহিতেছে-_ “আমি করব এ রাখালী কত কাল 1৮
তখন শ্রীমান্ অক্ষয়কে আরও গান বীধিবার জন্ত বল! হইল। অক্ষয় অস্থীকার করিলেন। তিনি বলিলেন “আমি আর বাীধিব না; দেখিতেছ না এ গানে শক্তি সঞ্চারিত হইয়াছে । এখন “কাঙ্গাল” ব্যতীত এ ম্োতের মুখে আর কেহ ধাড়াইতে পারিবে না! এথন ইহার পশ্চাতে সাধনার বল থাকা চাই, নতুবা চলিবে না ।”
অক্ষয় যখন জবাব দিলেন, তখন আমাদের ভূতের দলের সর্দার প্রসিদ্ধ গায়ক ( এক্ষণে পরলোকগত ) প্ররফুল্লচন্ত্র গঙ্গোপাধ্যায় অগ্রসর হইলেন; তিনি বলিলেন “আমি গান বাধিব।” ষে বলা, সেই কাজ। প্রফুল্ল গান গাহিতে পারিত। প্রেসের প্রিপ্টারের প্রাণে যে ভাবের সঞ্চার হইয়াছে, তাহা আমরা বুঝিতে পারি নাই। প্রফুল্ল
জলধর সেনের আত্মজীবনী ১২৫
পনর মিনিটের মধ্যে একট! গান বীধিয়া ফেলিলেন! আমরা দেখিয়া অবাক্ হইয়া গেলাম ; বুঝিলাম, তাহার কূপ হইলে, অসস্ভবও সম্ভর হয়। প্রফুল্লের গানট। আমি নিয়ে উদ্ধত করিলাম । গানটী এই-_- “ভাবীদিন কি ভয়ঙ্কর, ভেবে একবার, দেখ রে আমার যন পামরা ! ১। আত্মীয় ডাক্তার বণ্দি, নিরবধি, উধধ আদি দেবে তার! ; যখন তোর হাত ধরিতে, তর্জনীতে, ন! করিবে নাড়াচাড়া । ২। যখন ডোর সকল অঙ্গ অবশ হ'য়ে, প'ড়ে রবে ধর। ; যথন তোর আত্মলোকে, ডেকে ডুকে না পাইবে সাঁড়া। ৩। যে গলার মধুর স্বরে , জগতেরে মাতাস্ ওরে ঘাটে পড়! ; তথন তোয় সেই স্বরেতে থেকে থেকে রব করিবে ঘড়াৎ-্ঘড়া। ৪ | তাই বলি, যাই দেখি চল্ সত্য পথে নিত্য-নগরেতে মোরা ; শুনেছি সেই ধামেতে এই রূপেতে মরে নারে মানুষ যারা 1” প্রফুল্লচন্ত্র এই গানটী রচনা! করিলেন বটে, কিন্তু ইহাতে কোন ভণিতা দিলেন না। তিনি বলিলেন, “আমি আমার এই প্রথম গানে ভণিতা দিব না। এ-গান আমার রচনা নহে; আমার সাধ্য কি যে, আমি এই গান রচনা করি। যিনি আমার মুখ দিয়ে, আমার মত মহাপাপী ও দুশ্চরিত্রের মুখ দিয়ে এ গান বাহির করে দিয়েছেন, তাঁর যদি ইচ্ছা হয়, তবে ভণিতা দিবেন।” তাই এই গানটার কোন ভণিত! নাই; কিন্ত তৃতীয় দিনে যখন এই গানটী লইয়া ফকিরের দল গ্রামে বাহির হইলেন, তখন এই গান শুনিসা লোকে একেবারে অধীর হইয়া গেল। যে একবার শুনিল, সে দ্বিতীয়বার গুনিবার জন্য দলের পশ্চাতে পশ্চাতে চলিতে লাগিল। কাঙগ!লের কুটার হইতে গ্রামের দল বাহির হহয়া যখন বাজারে পৌছিল, তথন লোঁকারণ্য, দূর গ্রাম হইতে লোকেরা এই দলের
১২৬ জলধয় সেনের আত্মন্মীবনী
গান শুনিবার জন্য বেল! দ্বিপ্রহর হইতে আপিয়া অপেক্ষা করিয়। আছে। বাজারের উপর যখন এই গানটা আগাগোড়া গীত হুইল, তখন কাহারও চক্ষু শু ছিল না; সকলেরই প্রাণের মধ্যে এক অভূতপূর্ব ভাবের সঞ্চার হইয়াছিল । আমি অনেক দিন এমন জন- সমারোহ দেখি নাই। আর বলিতে কি এমন প্রাণম্পর্শী গানও আমি কথনও শুনি নাই। এখনও আমার নয়ন সন্মুথে সেই দৃশ্য বর্তমান দেখিতেছি। সে আজকালকার কথা নহে। ফিকিরচাদ ফকিরের দূল বাঙ্গাল! ১২৮৭ সালে গঠিত হয়। আজ ৩৩ বৎসর পরেও আমি সেই দিনের দৃশ্ঠ অবিকল দেখিতে পাইতেছি। দেখিতেছি--একদল ফকির; সকলেরই গৈরিক আলখাল্লা পরা) কাহারও মুখে কৃত্রিম দাড়ী, কাহারও মাথায় কৃত্রিম বাবরী চুল, সকলেই নগ্রপদদ ৷ সম্মুখভাগে প্রফুল্লচন্ত্র, তাহার বাম পার্থে তাহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা বানবারীলাল, দক্ষিণ পার্থে তাহার খুল্লতাত-পুত্র শ্রীমান্ নগেন্দ্রনাথ । প্রফুল্লচন্দ্র কৃত্রিম দাঁড়ী বা চুল পরিধান করিত না। সে গৌরকায় পুরুষ ছিল; তাহার মুখে দাড়ী ছিল। আমি এখনও দেখিতে পাইতেছি, তিন ভাইয়ের হস্তে তিনখানি থঞ্জনী। সেই তিনখানি খঞ্জনীতে এক সঙ্গে ঘ। পড়িতেছে, আর তিন ভাই প্রেমে মত্ত হইয়। বাহজ্ঞানশুন্ত হইয়! নাচিতেছে, আর গাহিতেছে-_ “ভাবী দিন কি ভয়ঙ্কর-_”
বলিতে কি, সে সমযে আমাদের অঞ্চলের লোকে উজ্সত্ত হইয়! উঠিফ্রাছিল। কেজানিত যে, আমাদেব অবসর সময়ের খেয়াল হইতে ষে সামান্ত গানটী বাহির হইয়াছিল, তাহার তেজ এত অধিক! কে জানিত যে, এই কাঙ্গাল ফিকির টাদের সঙ্গীতে সমস্ত পূর্ববঙ্গ, মধ্যবঙ্গ, উত্তর বঙ্গ এবং আসাম প্রদেশ ভাসিয়। যাইবে! কেজানিত ষে সামান্ত
জালধর সেনের আত্মজীবনী ১২৭
বীজ হইতে এমন প্রকাণ্ড বৃক্ষ জগ্মিবে ! প্রিয়তম অক্ষয়কুমীর সত্য সত্যই বলিয়াছেন ষে, “এমন যে হইবে, তাহা ভাবি নাই ! এমন করিয়া যে দেশের জনসাধারণের হ্ৃদয়-তন্ত্রীতে আঘাত করা যায়, আমি জানিতাম না|” প্রফুল্লচন্দ্রের গান বেশ হইয়াছে শুনিয়া সকলেরই ননে সাহসের সঞ্চার হইল। তখন প্রফুল্লচন্ত্র পরম উৎসাহে আর একটী গান রচন1 করিল এবং “ফিকিরটাদ” ভপিত! ব্যবহার করিল । সে গানটাও আমি এখানে উদ্ধত করিতেছি । গানটা এই-_ “দেখ, দেখি ভেবে ভেবে, কেবা রবে, যে দিন সে তলব দিবে। ১1 কোথা তোর রবে বাড়ী, টাকাকড়ি জুড়ী-গাঁড়ী কে হাকাৰে বল্ দেখি চেন ঝুলান ঘড়ী তোমার সেই দিনেতে কে পরিবে ! ২1 কোথা তোর রবে মালা, কৌগীন-ঝোলা, যে দিনে তোমায় বাধিবে ; তার কাছে ছাপাবার যো নাই রে যাদু, ছাপা দিয়ে কে ছাপাবে ! ৩। ফিকিরঠাদ ফকিরে কয়, তা' হবার নয়, ঘুন দিয়ে কাজ হাসিল হবে! বিপদে তর্বি যদি, নিরবধি, সেবিগে চল্ সত্য দেবে (ও ভোলা! মন ) " এখানে একটী কথা বলিবার প্রয়োজন হইয়াছে । উপরিলিখিত গানটিতে তথাকথিত বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের উপর একটু ইঙ্গিত আছে বলিয়। অনেকে মনে করিতে পারেন ; তিনি, যিনি এই গানের রচয়িতা, তিনি সত্য সত্যই কাহারও উপরে কটাক্ষ করেন নাই । আমাদের গ্রামটী বৈষ্ঞবপ্রধান গ্রাম । গ্রামে ব্রাঙ্গণ-কায়স্ত্বের সংখ্যা বেশী নহে; তিপি এবং তন্তবায়গণের সংখ্যাই অধিক। কাঙ্গাল হরিনাথ তিলিকুলে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। আমাদের গ্রামে তিলিজাতিই বিশেষ সমৃদ্ধিসম্পন্ন ; তীঁহারা সকলেই বৈষ্ণবধন্শীবল্বী। তাতি, কুমার, কামার ও অন্তান্ত সকলেই বৈষ্ণব। স্থতরাং আমাদের গ্রামে বৈষ্ণব ধর্মের বিশেষ প্রাছুর্তাব ছিল এবং এখনও আছে। এ অবস্থায় ধর্শের
১২৮ জলধর মেনের আত্মজীবনী
স্থন্ধে কথা বলিতে হইলে শ্বতঃই কদাচারী বৈষ্কবগণের কথাই মনে উঠিয়া থাঁকে, স্কৃতরাঁং ইহ! ব্যক্তি বা সম্প্রনায়বিশেষের উপর আক্রমণ বলিয়। আমরা স্বীকার করি নাই এবং এখনও করি না ; প্রফুল্পচন্ত্রও তখন এ কথার প্রতিবাদ করিয়াছিলেন । এন্ব্ূপ একটু প্রতিবাদ হইয়াছে শুনিয়া কাঙ্গাল হরিনাথ ছুইটী গান দিলেন। এই ছুইটী গান বড়ই সুন্দর। আমি নিম্ে উদ্ধত করিবার প্রলোভন সংবরণ করিতে পারিলাম লা । প্রথম গানটা এই-_- “বল কে চিনিবে আর, মন রে তোমার, মনের মাঝে রোগের হাড়ী। চিনিবে কার সাধ্য, ডান্তীর-বৈষ্ঠ হন্দ হ'ল টিপে নাড়ী | ১। তুমি যে সাধুর গান গাও, জগত মাতাও, উগদেশ দাও নেড়ে দাড়ি; তোমার যে আপন বেলায় মহাপ্রসাদ, পরের বেলায় ভাতের কাড়ি। ২1 তুমি এ রোগের আলায় বলছ সাই, দেখে লোকের টাকাকড়ি ; ' তোর এ জ্বরবিকারে বৈদ্য ঘোরে, ভেবে মরে কি দেবে বডি | ৩। কাঙ্গাল কয় হও রে দু, ছাড়, ছাড কুপথ্য, মিথ্যা-ছল-চাতুরী , এ রোগের আবাল! যাবে, প্রাণ জুড়াবে, খাও রে হরিনামের বডি।” দ্বিতীয় গাঁনটী এই-- “মজে তুই হরিনামে, মাতি প্রেমে, কেন না মন সং সাজিলি ! ১। মনরে সংসারে এসে, হেসে হেসে, আগে কেশে কালী দিলি; ওরে মন বয়স-দোষে, রপে রসে, অবশেষে চণ মাথিলি ! ২। হরিনামে সাজ লে রে সং, ফিরত না ঢং, থাকৃত এক রং চিরকালই ; এখন তোর, কতক রাঙ্গা, কতক পাঙ্গা, ঠিক যে মাহ্রাঙ্গা হ'লি। ৩। যাবি তুই লেংঠা হ'য়ে লজ্জা খেয়ে, লে'ঠ| হয়ে ষেমন এলি; ওরে তোর কৌগীন-কৌচা, জামা মোজা, ঘোলে গৌজ। হয় সকলই । ৪। কাঙ্গাল কয়, প্রেমভরে, সং সাজরে, গান কর রে বাহু তুলি; যাদের নাই হরি-ভজন, সত্য.কথন, তারাই রে সং হয় কেবলই ।” ফিকিরটাদের গান সম্বন্ধে কাঙ্গাল হরিনাথ তাহার তৎসময়ের
জলধর সেনের আল্মজীবনী ১২৯
দিনলিপিতে যে কয়েকটা কথা লিপিবদ্ধ করিয়াছিলেন তাহা আমি এই স্থলে উদ্ধৃত করিয়া! দিতেছি । কাঙ্গাল লিখিতেছেন-__
“শ্রীমান্ অক্ষয় ও শ্রীমান্ প্রফুল্লের গানগুলির মধ্যে আমি যে মাধুর্য পাইলাম, তাহাতে স্পষ্টই বুঝিতে পারিলাম, এভাবে সত্য, জান ও প্রেম-সাধনার তত্ব প্রচার করিলে, পৃথিবীর কিঞিৎ সেবা হইতে পারে অতএব কতিপয় গান রচন। দ্বার তাহার শ্রোত সত্য, জ্ঞান ও প্রেম- সাধনের উপাযন্বরূপ পরমাআ্স পথে ফিরাইয়া আনিলীম এবং ফিকিরটার্দের আগে “কাঙ্গাল নাম দিয়া দলের নাম “কাঙ্গাল ফিকিরাদ' রাখিয়। তদন্সারেই গীতাবলীর নাম করিলাম । কাঙ্গাল ফিকিরঠাদ ফকিরের দলম্থ গায়কেরা বাউল সম্প্রদায়ের ন্যায় বেশ ও পরিচ্ছদ ধারণ করিয়া গান করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন। হৃদয় যতই পবিত্র হইতে লাগিল, ততই সত্য, জ্ঞান ও প্রেমময় গীতিসকল উদ্ভাসিত হইয়! হৃদয়ক্ষেত্র সত্য, জ্ঞান ও প্রেমানন্দে পূর্ণ করিতে লাগিল। দলস্থ ধাহারা থতদূর পবিজ্রতা রক্ষা করিতে লাগিলেন, তাহারা নিজ নিজ কৃত বিষয়ে ততদূর এক 'আশ্চর্ঘয শক্তি লাভ করিতে লাগিলেন। অল্পদিনের মধ্যেই কাঙ্গাল ফিকিরঠাদের গান নিম্ন শ্রেণী হইতে উচ্চ শ্রেণীর লোকের আননকর হইয়া উঠিল। মাঠের চাষা, ঘাটের নেয়ে, পথের মুটে, বাজাদুরর দোকানদার এবং তাহার উপর-শ্রেণী সকলেই প্রার্থনাসহকারে ডাকিয়া কাঙ্গাল ফিকিরাদের গান শুনিতে লাগিলেন। কিন্ত নানা কারণে দেশস্থ কয়েকজন প্রধান ব্যক্তি বিপক্ষ হইয়! উঠিলেন এবং নানা প্রকারে হৃদয়ে বেদন। প্রদান করিতে লাগিলেন । আমি একাকী সকল আদ্াাত সহা করিতে লাগগিলাম। তিলার্ধ মাত্রও অবসর নাই । সংসারধর্ম ও সংসারধর্মের অতীত পরমার্থ পর্য্স্ত যিনি যে কোন কার্ধ্য না করুন, জগৎ তাহার প্রতিবাদ করিবে । প্রতিবাদ আছে বলিয়া এ জগতে এগনঙ
৯
১৩০ জলধর সেনের আত্মজীবনী
কিছু দৃঢ়তা, পবিত্রতা রহিয়াছে, অন্থা ইহাঁও থাঁকিত না । কৃতকাধ্যে যতই প্রতিবাদ হইতে থাকে, কার্য্যে ততই ম্বতঃ দৃঢ়তা জন্মে। যিনি ফিকির করিয়া হাপরে স্বর্ণ দগ্ধ করিয়! খাটি করিবার জন্ত এইরূপ দগ্ধ করিতেছেন, বিরলে কেবল তাঁহার উদ্দেশে ক্রন্দন করিয়া চক্ষের জলে বক্ষদেশ ভাসাইতে লাগিলাম |”
“আমি যে সময়ে এই অসহ্য যন্ত্রণায় নিম্পেষিত হইতেছি, সেই সময় সাধারণ ব্রাহ্মসমাঁজের প্রচারক ভক্তচুড়ামণি বিজয়কৃষ্ণ গোম্বামী মহাশয় ব্রাহ্ম সমাজের উৎসবে নিমন্ত্রিত হইয়! কুমারখালিতে আসিয়া কাঙ্গালের কুটীরে সপরিবারে অবস্থান করিলেন। আমি তাহাকে না বলিলেও, তিনি নিজ প্রভাবেই আমার যন্ত্রণা বুঝিতে পারিয়! সান্বনাপূর্বক এইভাবে উপদেশ প্রদান করিলেন যে, সর্বপ্রকার উত্তাপ সহা করিয়া ক্ষেত্র কর্ষণ ও পরিষ্কার কর। অমুত ফল ফলিবে ।”
“এই সময় একদিন আমার জর বোধ হওয়ায় কুশাসনে শয়ন করিয়। আছি। ইহা ত শারীরিক কোন প্রকার জর নহে, ইহ] মর্্াঘাত ও চিন্তাজ্বর, অনলদদ্ধের মত দগ্ধ করিতেছে । সথতরাং নিদ্রা নাই । কিন্ত চক্ষু মুদ্রিত এবং নিদ্রায় অভিভূত । স্বন্ধদেশ হইতে চরণ পর্যন্ত অব্যক্ত মহাঁদেবী জগন্মীতাঁর একথানি অভূতপূর্ব মুখ আমার মুখের উপরে প্রকাশিত হইল। শরীর চমকিত হইয়া উঠিল। এ কি ব্যাপার! চক্ষুর জলে দগ্ধ হৃদয় শীতল হইতে লাগিল। তখন রাত্রি প্রায় শেষ হইয়াছে । যিনি আমার মুখের উপর মুখ প্রকাশ করিয়া সাস্বনা প্রকাশ করিয়াছিলেন, এ সকল ত্তাহারই খেলা । তিনি অব্যক্ত হইয়াও, যে তাহার নিকট ব্যক্ত হইয়া তাহাকে সাত্বনা করেন। তখন আমার এই বিশ্বাস এত বলবতী হুইয়। উঠিল যে, আমি যে রূপ দেখিয়াছিলাম, সেই চিন্ময় রূপ দেখিবার নিমিত্ত অতিশয় ব্যাকুল হইলাম ; এবং এক্ষণে
জলধর সেনের আত্মজীবনী ১৩১
সারে সকল প্রকারের জালাযস্ত্রণ ভূলিয়া গিয়। তাহাকে দেখিবার নিমিত্ত প্রতিদিন বিরলে বপিয়া তীহার নিকটেই কাদিতে আরম্ত করিলাম। আমি কি ছিলাম, কে আমাকে এরূপ করিল? সংশোধন করিয়া আমার হৃদয়ফলক এমন নির্মল করিল যে তাহ। অবাক্তের স্বরূপশক্তি প্রকাশের মত করিয়া তুলিল ।৮ সেই দিনের অবস্থা স্মরণ করিয়! কাঙ্গাল যে গানটী লিখিয়াছিলেন, তাহা উদ্ধত করিয়! দিতেছি । গানটী এই £ “অপরূপের রূপের ফাদে, প'ড়ে কাদে প্রাণ যে আমার দিবানিশি । ১। কীদ্লে নির্জনে বসে, আপনি এসে দেখ! দেয় সে রূপরাশি; সে যে কি অতুল্য রূপ, নয় অনুরূপ শত শত নুর্ধয শশী। ২। যদি রে চাই আকাশে, মেঘের পাশে সে-রূপ আবার বেড়ায় ভাসি; আবার রে তারায় তারায় ঘুরে বেড়ায়; ঝলক লাগে হৃদে আসি । ৩। হৃদয় প্রাণ ভ'রে দেখি, বেঁধে রাখি, চিরদিন এই রূপশশী ; ওরে, তায় থেকে থেকে ফেলে ঢেকে কু-বাসন৷ মেঘ রাশি । ৪। কাঙ্গাল কয়, যে জন মোরে দয়। ক'রে দেখ। দেয় রে ভালবাসি; আমি যে সংসার-মায়ায় ভুলিয়ে, তায় প্রাণভ'রে কৈ ভালবাদি।” ফিকিরঠাদের গান আর আমাদের ক্ষুদ্র গ্রামে আবদ্ধ থাকিতে পারিল না। পূর্বেই বলিয়াছি, প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় এই গান গুনিবার জন্ত চার পাচ ক্রোশ হইতে অনেক লোক আসিতে আরম্ভ করিল। এদিকে রেল-পথেও বহুদূর হইতে অনেক লোক আসিতে লাগিল। সকলেরই অন্থরোধ তাহাদের গ্রামে একবার ফিকির্াদের দলের পদার্পণ করিতে হইবে। শ্রীমান্ অক্ষয়কুমার কয়েক দিন বাড়ীতে থাঁকিয়াই রাজসাহী চলিয়া গেলেন। আমি তখন গোয়ালন্দে স্কুলমাষ্টারী করি । আমিও কর্দস্থলে চলিয়া গেলাম । কিন্ত ফিকিরঠাদ্দের এমন আকর্ষণ যে, প্রতি শনিবারের
১৩২ জলধর সেনের আত্মজীবনী
রাত্রিতে বাড়ী যাইতাঁম এবং যে একদ্দিন থাকিতাম, সমস্ত কার্য্য ফেলিয়া নৃতন নৃতন গান শুনিতাঁম। আমরা তখন বাহিরে পড়িয়া গেলাম। ফিকিরটাদের গানের দলের ব্যবস্থার ভার কাঙ্গালের উপরই পড়িল।
চারিদিক হইতে যখন নিমন্ত্রণ অ।দসিতে লাগিল, তখন কাঙ্গাল এই নিয়ম করিয়া দিলেন যে, ফিকিরাদের দল গ্রামেই হউক বা! বিদেশেই হউক, যেখানেই যাঁইবেন, সেখানে কাহারও গৃহে অতিথি হইতে পারিবেন না, সামান্ত এক ছিলিম তামাকও বাড়ী ভইতে লইয়া যাইতে হইবে । তবে দলের লোকদিগের গৃহে গেলে এ নিয়ম খাটিবে না। পাছে ইহা একট] ব্যবসায়ে পরিণত হয়, এই আশঙ্কা করিয়াই কাঙ্গাল এই নিয্বম করিয়। দিলেন ।
এই সময় একদিন পরলোকগত মীন মশারফ হোসেন মভাঁশয় কুমারখালীতে আসিলেন। ঠিনি কাঙ্গালের সাহিত্য-শিশ্য ছিলেন । মীর সাহেবের বাড়ী কুম|রথালীর অবূরবন্তী গৌরনদীর তটে লাহিনীপাড়া গ্রামে। জাতিতে মুসলমান হইলেও তিনি বাঙ্গালীভাঁষাঁকে মাতৃভাঁষ। বলিয়া ভক্তি করিতেন। কাঙ্গাল হরিনাথ মীর মশাঁরফ হোসেনকে পুত্রবৎ (নুহ করিতেন এবং বাঙ্গালা লেখা সম্বন্ধে উপদেশ প্রদান করিতেন। এই উৎসাহের ফলেই মীর সাহেব বাঙ্গালাসাহিত্যের একজন লন্ধপ্রতিষ্ঠ লেখক হইয়াছিলেন। তাহার “বিষাদ-সিদ্ধু' তাহাকে অমর করিয়া রাখিবে। মীর মশারফ কাঙ্গালের প্রকাশিত “গ্রামবার্তা প্রকাশিকা” পত্রিকার লেখক ছিলেন। আমরা যখন স্কুলে পড়িতাম, তখন প্রতি সপ্তাহে মীর সাহেবের লেখা পড়িবাঁর জন্য যে কত আগ্রহ হইত তাহা ধলিতে পাবি নাঁ। তিনি প্রবন্ধের নিয়ে নিজের নাম দিতেন না-লিখিতেন “গৌরতটবাসী মশা” এই মশার লিখিত গগ্ধ-পঞ্ভ সন্দর্ড পাঠ করিয়া আমরা যে কত উপকৃত হইয়াছি তাহ! বলিতে পারি
জলধর সেনের আহুজীবনী ১৩৩
না । ত্ীস্থার “গৌরী-সেতু”, তীহার “উদ্দাসীন পথিকের মনের কথা”, তাহার “গাজী মিয়ার বস্তানী”, আর তীহার অমূল্য রত্ব "বিধাদ-সিদ্ধুৎ যে আমরা কতবার পড়িয়াছি তাহার সংখ্যা করা যায় না । বুদ্ধ বন্থলেও তিনি বাঙ্গাল সাহিত্যের জন্্ কত পরিশ্রম করিয়াছেন। আমাকে বলিয়াছিলেন, “তোমাকে নীল-বিদ্রোহ সম্বন্ধে অনেক “নোট' দিয়া যাইব, তুমি একথানি ইতিহাস লিখিও।” আমি এ বয়সে আর পারিলাম না । আলম্যবশতঃ মে “নোট আর লওয়া হইল না। তিনিও আমাকে ফাঁকি দিয়! দুই বৎসর হইল সাধনোচিত ধাঁমে চলিয়া গিয়াছেন। এতদিনের মধ্যে এমন একজন সাহিত্যসেবকের নাম কেহই করেন নাই। আমাদের সৌভাগ্যক্রমে চুঁঢুভায় পঞ্চম বঙ্গীয় সাহিত্য- সম্মিলনের অধিবেশনে অভার্থনা-সমিতির সভাপতি শ্রদ্ধাম্পদ সাহিত্যাচার্ষা শ্রীবুক্ত অক্ষয়চন্্র সরকার মহাঁশয মীর মশারফ হোসেনের পরলোকগমনে শোক প্রকাশ করিয়াছিলেন এবং তাহার গুণ বর্ণনা! করিয়াছিলেন ।
যাক সেকথা । আমি যে সময়ের কথা বলিতেছি, সেই সময়ে একদিন মীর মশারফ হোসেন কুমারথালীতে কাঙ্গালের কুটারে উপস্থিত হইলেন এবং ফিকিরটাদ্দের দলকে তাহ1র বাড়ীতে লইয়া যাইবার অভিপ্রায় গ্রকাশ করিলেন। কাঙ্গাল সম্মত হইলেন। তিনি বলিলেন, “দলের নিয়মান্ুসারে দলের লোকেরা তোমার বাড়ীতে আতিথ্য গ্রহণ করিবেন না। তোমার বাড়ীতে গান শেষ করিয়া দলের লোকেরা মেই রাত্রেই বাড়ী ফিরিয়া! আদিবেন, তোমার বাড়ীতে তাহারা এক ছিলিম তামাকও খাইবেন না। মশীরফ বলিলেন, “সে কি রকম কথা? তাকি হয়?” কাঙ্গাল বলিলেন, “তবে তুমি বদি এই দলতৃক্ত হও তবে তাহারা তোমার বাড়াতে আতিথ্য গ্রহণ করিতে পারিবে |” মশারফ হাসিয়া বলিলেন, “আমি ত গান করিতে জানি না”। কাঙ্গাল উত্তর কর্গিলেন,
১৩৪ জলধর সেনের আঞ্জুজীবনী
“গান করিতে জান না বটে, কিন্তু গান ত লিখিতে জান।” মীর মশারফ বলিলেন, “তাহা হইলে আমি দলভুক্ত হইলাম । এখনই গান লিখিয়া দিতেছি ।” এই বলিয়া তিনি তখনই গান লিখিতে বসিলেন। আমরা সেই গানটা নিষ্পে উদ্ধত করিলাম ; মীর সাহেব এই দলের জন্ত আর কোন গান পরে দেন নাই । গানটী এই £
“রবে না চিরদিন হুদিন কুদিন, একদিন দিনের সন্ধ্যা হবে ! ১। এই ষে আমার আমার সব ফক্িকার, কেবল তোমার নামটা রবে । হবে সব লীলা! সাঙ্গ, সোনার অঙ্গ ধুলায় গড়াগড়ি যাবে । সংসারের মিছে বাজী, ভোজের বাঁজী, সব কারসাজি ফুরাইবে, তখন রে এক পলকে: তিন ঝলকে সকল আশা ঘুচে যাবে। তোমার এই আত্ুজন, ভাই পরিজন, হায় হা ক'রে কাদবে সবে, তারা ত পেয়ে ব্যথা, ভাঙ্গবে মাথা তুমি কথা না কহিবে। ৪। তোমার সব টাকাকড়ি, ঘরবাড়ী, যুড়িগাড়ী পড়ে রবে;
আবার রে প। থাকিতে, হাত রহিতে পরের কাদে যেতে হবে।
আগে রে ক'রে হেলা, গেল বেলা সন্ধ্যাবেল৷ আর কি হবে, জগতের কার যিন, দয়ার থনি, তিনি “মশা 'র ভরসা ভবে 1
তাহার পরই একদিন ফিকিরটাদের দল মীর সাহেবর লাহিনীপাড়ার বাড়ীতে যাইয়। গান করিয়া আঁদিলেন। আমাদের গ্রামের নিকটবর্তী এমন গ্রাম অতি অন্পই ছিল, যেখানে ফিকিরঠাদের দলকে গান করিবার জন্ত াইতে হয় নাই।
ং
৩
চু [ জলধরদাদ! তাহার আত্মজীবনী এই পর্্যস্ত বলিয়া থামিয়া যান। তখন আমার বদিরাছিলেন,--'আমার শৈশব, বাল, কৈশোর ও প্রথম যৌবনের সব কথাই তোমায় বল্লুম; এ আর অন্য কেউ বলতে পারবে না। আমার কলকাতায় আসা থেকে পরবন্তাঁ জীবনের কথা হেমেন্সপ্রসাদ ঘোষ সব জানে | তার কাছ থেকেই তুমি সে-দব খবর যোগাড় করতে পারে ।--লিপিকার ]
স্বর্গত জলধর সেনের সংক্ষিপ্ত জীবন-কথ৷
১২৬৬ বঙ্গাৰের (ইং ১৮৬০) ১লা চৈত্র কুষ্টিয়ার নিকটবর্তী কুমারথালি গ্রামে কায়স্থ-পরিবারে জলধর জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের তিন বৎসর পবে পিতা! হলধরের মৃত্যু ঘটে । এই সময় জোষ্ঠা ভগিনীর বয়স ৫ বংসর ও অনুজ পশধরের বয়স ৬ মাস মাত্র। প্রথমে জ্যেষ্ঠতাত ও পরে তীয় পুত্র ইহাদের প্রতিপালনের ভার গ্রহণ করেন। ইহাদের বাল্যজীবন অতিশয় দারিপ্র্ের মধ্য দিয়া অতিবাভিত হয়।
পাঠারন্ত-_কুমারখালির বাংল! স্কুলে, কাঙ্গাল হরিনাথের নিকট। ১৮৭৫ শ্রী: গোষালন্দ মাইনর স্কুল হইতে মাইনর পাশ ও ৫২ টাকা! বৃত্তি লাভ। এই বৎসরেই ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা অধিক নঘ্বর পাওয়ার একটী রৌপ্যপদক প্রাপ্তি । ১৮৭৮ শ্রী: কুমারখাঁলি ইংরেজী স্কুল হইতে এণ্টান্দ পাশ ও ১০২ টাকা বৃত্তি লাভ। ১৮৮* খ্রীঃ প্রেনারেল এসেম্র্রিজ ইনষ্টিটিউশন হহতে এফ. এ. পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হন, কিন্ত গ্রবল জ্বরে পরীক্ষায় অনুপস্থিত হওয়ায় অরুতকাধ হন।
অর্থাভাবের দরুণ অধ্যয়ন ত্যাগ করিয়া তক্ষণাবস্থান্ব গোয়ালন্দ ইংরেজী স্কুলে তৃতীয় শিক্ষকের চাকুরী গ্রহণ। ছয়-সাত ব্সর এই চাকুরীতে নিয়োজিত ছিলেন। এই চাকুরী করিবার সময় ১৮৮৩ খর: মহারাজ রুষ্চন্দ্রের দেওয়ান রঘুনদ্দন মিত্রের প্রপৌত্রীর সহিত বিবাহ। ১৮৮৫ খ্রীঃ ( বৈশাখ ১২৯৩ ) পন্বীবিয়োগ, অতঃপর এক মাস পরেই মাতৃবিয়োগ ।
কনিষ্ঠ ভ্রাতা শশধর বি. এ. পাঁশ করিয়া গভর্ণমেন্ট স্কুলে চাকুরী
১৩৮ জলধর সেনের আতুজীবনী ঃ পরিশিষ্ট
পাইলে শোকবিহবল জলধর নিজেকে বন্ধনমুক্ত মনে করিয়া ১২৯৬ বঙ্গাব্ষের গোড়ার দিকে (১৮৮৮ শ্রীঃ) প্রবাসযাত্রা করেন। প্রথমে ডেরাদুনে গিয়া শিক্ষকত। কার্ষে নিযুক্ত হন। অতঃপর ১৮৯০ শ্রী ৫€ই মে হিমালয়যাত্রা শুরু হয়। বৈরাগীর বেশে নানা তীর্থ ও দুর্গম স্থান পর্যটনে বহু দিন কাটাইয়া দেন।
১৮৯৩ খ্রীঃ হিমালয় হইতে প্রত্যাঁগমন এবং মহিযাঁদপ-রাজ-্কুলের ও মহারাজকুমারদ্বয়ের শিক্ষক নিযুক্ত হন। মহিষাদলে ১৮৯৪ শ্রী: ডায়মণ্ুহারবারের রায় বাহাছুর গিরীশচন্দ্র দত্তের ভ্রাতুক্পুত্রীকে বিবাহ করেন। ১৮৯৭ শ্রী; ইহাদের প্রথম পুত্র অজয়ের জন্ম হয়। মহিষাদলে € বংসর কাটাইয়। কলিকাতায় আগমন এবং সংবাদপত্র ও সাঠিত্য-সেবায় আত্মনিয়োগ ।
অল্প বয়স হইতেই বাঙল! সাহিত্যে ইহার বিশেষ জন্ুরাগ ছিল। কাঙ্গাল হরিনাথের প্রতিষ্ঠিত “গ্রামবার্তী প্রকাশিকা” নামক সংবাদপত্রে ইহার সাহিত্যচঙ্চার হাতে-খড়ি। মাত্র পনেব বৎসর বয়সে ইনি “দুঃখিনী” নামক উপন্ণাসপ রচনা করেন। ইহাই জলধর-রচিত প্রথম পুস্তক।
গ্রামবার্তী” ও 'সোমপ্রকাশে নিয়মিত ইনি লিখিতেন। গোয়ালন্দে শিক্ষকতা! কার্ষে রত থাকিবার সময় কাঙ্গাল হরিনাথ অন্পুস্থ হইযা পড়ায় এক বৎসরকাল গ্রামবার্ভার সম্পাদকতাও করিয্বাছিলেন। সহিষাদলে শিক্ষকতা করিবার সময় হিমালয়-ভ্রমণবৃভীস্ত “ভারতী”তে গ্রকাশিত হয়। সেই সময় সুরেশচন্দ্র সাজপতির “সাহিত্য” পত্ধিকাযও ভ্রসণবৃত্তাস্ত এবং ছোট গল্প লিখিতে আরম্ভ করেন।
সমাজপতি, পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় ও হেমেন্ত্রগ্রসাদ ঘোষ মহাশয়ের পরা মর্শানুযায়ী মহিষাদলের চাকুরী ছাড়িয়া আসিয়া 'বঙগবাসীর সহকারী
জলধর সেনের আড্ুজীবনী £ পরিশিষ্ট ১৩৯
সম্পাদক হন এবং ছয় মাঁস কার্য করেন। ১৮৯৮ খ্রীঃ 'বস্থমতী”র সহকারী সম্পাদকের কার্ধ গ্রহণ করিবার অল্লকাল পরেই এ পত্রিকার সম্পাদক নিযুক্ত হন (১৮৯৯ )। স্ুদীর্ঘকাল ইনি “বন্ুমতী*র সম্পাদক ছিলেন। পরে, কাব্যবিশারদের মৃত্যু হইলে এহতবাদী”র সম্পাদকীয় বিভাগে কার্ধ গ্রহণ করেন এবং কিছুকাল পরে উক্ত পত্রের সম্পাদক হন ( ১৯০৮ জানুয়ারী )। ছুই বৎসর পরে এঁহতবাদী'র সম্পাদকত৷ ছাড়িয়া দিয়! সস্তোষের স্থপ্রসিদ্ধ জমিদার ও কবি প্রমথনীথ রায় চৌধুরীর পুত্রকন্তাদের গৃহশিক্ষকরূপে তাহাদের দেশে গমন করেন। শেষে এ জমিদার ষ্টেটের দেওয়ান নিযুক্ত হইয়াছিলেন। ২ বৎসর সেখানে কাটাইক ম্যালেরিয়ায় বিশেষভাবে পীড়িত হইয়া পুনরায় কলিকাতায় ফিরিয়া আসেন এবং গভর্ণমেণ্ট-প্রকাশিত “স্থলভ সমাচার” পত্রের সহকারী সম্পাদক নিষুক্ত হন। তিন মাস পরে উক্ত পত্রের সম্পাদক নরেন্দ্রনাথ সেনের মৃত্যু হইলে সম্পাদকের পদ গ্রহণ করেন (১৯১১ )।
১৩২০ বঙ্গান্দে 'ভারতবর্ষের'র সম্পাদক হন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত উহার সম্পাদক ছিলেন।
ভ্রমন-বৃত্তীস্ত, উপস্কাস ছোট গল্প ইত্যাদিতে ইহার রচিত পুস্তকের সংখ্যা ৬* খানিরও অধিক। তল্মধযে প্রবাসচিত্রঃ হিমালয়, নৈবেস্, ছুঃখিনী, বিশুদাঁদা, অভাগিনী প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য । কয়েক- খানি শিশুপাঠ্য এবং বিগ্ঠালয়ের পাঠ্য পুস্তকও রচনা করিয়াছেন । অর্ধশতাবী কাল ধরিয়া বিভিন্ন পত্রিকায় ইহার অস্থ্য লেখ! বাহির হইয়াছে ।
১৩২৯-১৩৩০ বঙ্গাব্দে বঙ্গীয় সাহিত্য-পরিষদের সহকারী সভাপতি, বঙ্গীয় সাহিত্য-সশ্মিলনের পঞ্চদশ অধিবেশনে ১৩৩১ বঙ্গান্দে এবং
১৪০ জলধর সেনের আস্মজীববী £ পরিশিষ্ট
প্রবাসী বঙ্গ-সাহিত্য সন্গিলনের ইন্দোর অধিবেশনে ১৩৩৫ বঙ্গান্ধে সাহিত্য-শাখার সভাপতি হন।
বহু সাহিত্য-সভার সহিত ইহার বিশেষ সংশ্রব ছিল। “রবি- বাসরের ইনি সর্বাধ্যক্ষ এবং গ্রীণম্বরূপ ছিলেন । ১৩২৩ হইতে ১৩৪১ বঙ্গাব্দ পধ্যন্ত হাওড়ার গোবর্ধন-সাহিত্য ও সঙ্গীত-সমাজের সভাপতিত্ব করেন।
বনু প্রতিষ্ঠান হইতে জলধরসেনকে সংবধিত কর! হইয়াছিল ৷ তন্মধ্যে ১৩৩৯ বঙ্গাব্দের, ১২ই ভাদ্র রবিবার, “রবি-বাঁসর”-কর্তৃক সংবর্ধনা এবং ১৩৩৪ বঙ্গাব্দের ২রা হইঠে £ঠ1 ভাদ্র নিখিল-বঙ্গ-জলধর সংবদ্ধনা বিশেষ উল্লেখযোগ্য । রাজ-সরকার হইতে ইনি ১৯২২ খ্রীষ্টাবে “রায় বাহাদুর, উপাধি পান। দেশবাঁদীর নিকট হইতে ইনি যে প্দাঁদা উপাধি লাভ করেন, সেই গৌরবময় উপাধিলাভ আর কাহাবও ভাগ্যে ঘটে নাই।
১৩৪৫ বঙ্গাব্দের ৮ই মাঘ দ্বিতীয়া স্ত্রার মৃত্যু হয় এবং অল্লকাঁল পরেই ৭৯ বৎসর বয়সে ২৬শে চৈত্র রবিবার বেল! তিন ঘটিকার সময় কলিকাতা বাগবাঁজারম্থ বাসাবাটিতে ইনি পরলোৌকগমন করেন ।
জলধরবাবু সাত পুত্র ও চারি কন্ত। রাখিয়া যান। জ্যেষ্ঠ পুত্র অজয়কুমার
শ্রীযুক্ত অমূল্যচরণ বিগ্াভূষণ মহাশয়ের জ্োষ্টা কন্যা হেমলতাকে বিবাহ করিয়াছেন । আরও তিনটী পুত্রও বিবাহিত । বন্যা সকলেরই বিবাহ হইয়! গিয়াছে । *
* ('রবি-বাসরে'র প্রথম বার্ষিক জলধর শ্ৃতি-তর্পণ সভায় €২৫শে চৈত্র, ১৩৪৬) বিতরিত।)
জলধর-সংবর্ধন।
ভ্ীনরেক্দ্রনাথ বনু
বঙ্গসাহিত্যের একনিষ্ঠ সেবক “দাদা? রায় শ্রীজলধর সেন বাহাদুরের পঞ্চসপ্ততিতম জন্মোৎসব উপলক্ষে বশস্বী কথা-শিল্পী শ্রীধুক্ত শরংচক্জ চট্টোপাধ্যায় মহাশয়ের নেতৃত্বে সমগ্র দেশবাসী তাহাকে বিপুলভাবে সংবদ্ধিত করিয়াছেন। কলিকাত। বিশ্ববিষ্ঠালয়ের “আশুতোষ হজে* বিগত ২রা ভাদ্র বিশ্ববিগ্তালয়ের ভাইনচ্যান্সেলর শ্রীবুক্ত শ্যামাপ্রসাঁদ মুখোপাঁধায় মহাশযেব পোৌরহিত্যে স'বর্ধন।-সভার প্রথম অধিবেশন হয়। বঙ্গের বিচিন্ন সাহিত্যিক প্রতিষ্ঠান হইতে প্রতিনিধিগণ সংবর্ধনায় যোগদান করেন। দেশবাসীর পক্ষ হইতে অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি শ্রীধুক্ত শবৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মহাশয় প্রথমে একটা সুন্দর অভিনন্দন পাঠ করেন। বাঙ্গাল। দেশের মহিলাগণের পক্ষ হইতে শীযুক্তা মানকুমারী বস্থও একটী অভিনন্দন পাঠ করিয়াছিলেন । অনস্তর সভাঙ্ক বঙ্গীয় সাহিত্য-পরিষদের ও কলিকাতা বিশ্ববিষ্তালয়ের শুভেচ্ছা! জাপন কর! ভয় এবং বিশ্ববিগ্ভালয়ের পক্ষ হইতে বিশ্ববিগ্ঠালয়ের বঙ্গভণযায় ও ইংরাজীতে প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ তাহাকে উপহার দেওয়া হয়। ববি-বাসর, ভারতীয় সংবাঁদপত্রসেবী সঙ্ব, বঙ্গীয় সাহিত্য ও সঙ্গীত সঙ্ঘ, বঙ্গীয় সাঠিত্য-পরিষদ্দের বিভিন্ন শাখাসমূহ, প্রবাসী-বঙ-সাহিতা-সন্মেলন, স।হিত্য-সেবক সমিতি, বঙগদেশীয় কাযস্থ-সভ এবং আরও বনু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হইতে নান! অভিনন্দন প্রদত্ত হয়। অভিনন্দনপত্রগুলি ও তাহাদের আঁধারসমূহ নানাবিধ শিল্প-পরিকল্পনার দ্বারা সুদৃশ্য কর! হইয়াছিল ।
১৪২ জলধর সেনের আত্মজীবনী £ পরিশিষ্ট
সভাপতি শ্রীবুক্ত শ্ঠামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় মহাঁশয় বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলেন: “চিরদিন দারিদ্র্যের সহিত সংগ্রাম করিয়া ধাহারা শুধু সেবার আনন্দের জন্তই বঙ্গভারতীর সেবা! করেন, প্রফুল্লহৃদয়ে দুঃখ- কণ্ঠকে বরণ করিয়া লয়েন তাহারা যে বাঙ্গালীর কত শ্রদ্ধার পাত্র, কত গৌরবের পাত্র, তাহ] ভাষায় বর্ণনা! করার যোগ্যতা আমার নাই। রায় বাহাদুর জলধর সেন আমাদের সেই আদরের, সেই গৌরবের বস্তু; তাহাকে আমি অন্তরের অভিবাদন জানাইতেছি ।”
“তাহার অদ্ধশত বৎসরের সাধন! বাংলা! সাহিত্যের উজ্জ্বল পৃষ্ঠায় সুবর্ণ অক্ষরে লিখিত থাকিবে । “সোমপ্রকাশ” “গ্রামবার্ভা”, তথা “ছিতবাদী”ঃ “বস্থুমতী” ও “ভারতবর্ষ” প্রভৃতি পত্রিকা তাহার যৌবন ও পরিণত বয়সে অক্লান্ত সেবার প্রকু্ই নিদর্শন চিরদিন ধারণ করিয়া রহিবে। তীহার সরস ও সুখপাঠ্য উপন্তাসগুলি, বিশেষতঃ তাহার “হিমালয় ভ্রমণ”-_সহজ ও প্রাণস্পর্শা রচনাশক্তির পরিচয় বহন করিয়া বাঙ্গলার ঘরে ঘরে চির-আঘৃত থাকিবে । তাহার ভাষা, তাহার বর্ণনার প্রাঞ্জলতা, বিশেষত তাহার লিখিবার নিজস্ব ভঙ্গি--বাঙ্গলার নরনারী-সমাজে তাহাকে চিরস্মরণীয় করিয়া রাখিবে |”
“আজ এই আনন্দ-যজ্ঞে আপনাদের উপস্থিতিতে সত্যই আমি আনন্দে অভিভ্থৃত ও আশায় উৎফুল্ল হইয়াছি। আমার আনন্দ_ আমাদের বাঙ্গল। ভাষ। একদিন বিশ্ব জয় করিবে,-করিবেই করিবে 1”
গ্রতিভাষণে জলধর দাদ? তাহার নিবেদন প্রসঙ্গে বলেন £--“আমার ভাই ভগিনীগণ! আপনাদের এই জরাজীর্ণ বৃদ্ধ সেবকের যথাযোগ্য প্রণাম, নমস্কার অভিবাদন ও আশীর্বাদ গ্রহণ করুন। আপনাদের আশীর্বাদ যে ভাবে আমার শিরে বর্ধিত হইল, তার জন্ত আমার শ্রদ্ধাপূর্ণ প্রণাম গ্রহণ করুন”
জলধর সেনের আত্মজবনী : পরিশিষ্ট ১৪৩
“আমার এই সুদীর্ঘ জীবনকাঁলে আপনাদের নিকট হইতে আমি যে আশাতীত, কল্পনাতীত অস্ুগ্রহ, গ্লেহ, ভালবাসা পাইয়াছি, আপনার! যে আমাকে আপনাদের “দাদা” পদবীতে উন্নীত করিয়াছেন, বাংল! দেশে বাঙ্গালী সাহিত্যিকদের মধ্যে আমি বাপের দাদা, ছেলের দাঁদ, পৌজ্রের দাদ, জ্যোষ্ঠের দাদা, কনিষ্ঠের দাদা, জঙগধর রায় বাহাঁছুর নয়, জলধর সাহিত্যিক নয়, জলধর সম্পাদক নয়, জলধর সংবাদ- লেখক নয়, জলধর পুস্তক-লেখক নয়, জলধর সেন বাঙ্গালীর “দাদা”। এমন সৌভাগ্য কাহার হইয়াছে? আমি যে আপনাদের স্নেহ-খণে আকণ্ঠ নিমগ্ন ।”
“আপনারা বলুন, আমাকে উপলক্ষ্য করে আপনারা বঙ্গবাণীকে অভিনন্দিত করিয়াছেন। তাহা হইলে আমি ষে বঙ্গবাণীর সেবাক্র আমার জীবনের ৭৫ বৎসর কাটাইয়াছি, তাহার চরণে আপনাদের এই সমস্ত অভিনন্দন-পত্র ও উপহার পৌছাইয়! দিবার ভার গ্রহণ করিতে প্রস্তুত আছি ।”
দ্বিতীয় দিন স্থগ্রসিদ্ধ সাহিত্যিক শ্রীযুক্ত প্রমথ চৌধুরী মহাশক্কের সভাপতিত্বে হাওড়া শালিখা “নাট্যুপীঠে, সাহিত্য-সম্মেলন হয়। এই সম্মেলনে বহু সাহিত্যিক শ্বরচিত প্রবন্ধার্দি ও কবিতা পাঠ করেন এবং তৎপরে গোবদ্ধন সঙ্গীত ও সাহিত্য সমাজের সভ্যগণ কর্তৃক দক্ষতার সহিত “মহানিশার” অভিনয় হয়।
তৃতীয় দিন কলিক1ত এলবার্ট ইনিষ্টিটিউট হলে গ্লীতি-সম্মিলন ও সঙ্গীতের জলসায় বিপুল জনলম!গম হয়| এ দিন রাজ। শ্রীক্ষিতীন্দ্রদেব 'রায়মহাশয সভাপতির আসন পরিগ্রহণ করেন। স্যার শ্রাদেবপ্রসাদ সর্বাধিকারী ছিলেন প্রধান অতিথি । ভারতের শ্রেষ্ঠ ুপদী প্রাচীন সঙ্গীতাচাধ্য শ্রীযুক্ত গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের নায়কত্বে জলস। পরিচালিত হয় ।
১৪৪ জলধর সেনের আত্মজীবনী 2 গ্রিশিষ্ট
বহু শ্ুপ্রসিদ্ধ গায়ক ও বাদক বোগদান করিয়া এই জলসা সাফল্য- মণ্ডিত করেন।
জলসার পর জলধর দাদ! তাহার এই বিপুল সংবদ্ধনার জন্ সংবদ্ধনা-সমিতিকে, উপস্থিত জন-মগুলীকে এবং সমগ্র দেশবাসীকে তাহার আত্তরিক কৃতজ্ঞতা জাপন করেন । *
*[ “কায়স্থ পত্রিকা” (আশ্বিন, ১৩৪১) হহতে উদ্ধত ]
জলধর সেন প্রীহেমেক্দ্প্রসাদ ঘোষ
“কাঙ্গাল” হরিনাথ মন্ত্রমদার তাহার প্রথম সময়ের শিল্পপ্রয়কে তিনরূপে বিঘোৌষিত করিয়াছেন £
তন্ত্রের রহস্তাভেদনিপুণ শিবচন্দ্র বিগ্যার্ণব-দারিদ্র্যবরণকারী, সুতরাং “ফকির”; পরবস্তীকালে প্রসিদ্ধ এঁতিহাসিক অক্ষয়কুমার মেত্রেয়--
উকীল, সুতরাং “ফিকির” ; আর জলধর সেন পরিব্রাজক, সুতরাং “মুসাফীর?? |
আমার সহিত জলধরবাবুর বখন প্রথম পরিচয়, তথন তিনি আর মুসাঁফীর নহেন ; স্ত্রীকে হারাইয়া শ্মশানবৈরাগ্যবশে দেশে দেশে ঘুরিয়া আসিয়া আবার সংসারী হইয়াছেন_-সংসারের প্রয়োজনে মহিষাদলে শিক্ষকের চাকরী লইয়াছেন। আমার সহিত তাহার পরিচয়ের স্থত্র__অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়-_-পরিচয়ের কেন্্র সুরেশচন্দ্র সমাজ- পতি। সে ১৮৯৬ খুষ্টাব্ধের কথা । সেবার কঞ্চনগরে বঙ্গীয় রাজনীতিক সন্মেলন। সম্মেলন, কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হওয়ায়, কয় বৎসর বর্থা ছিল এবং ১৮৯৫ খুষ্টাব্দে নূতনভাবে পুনজ্জীবিত হয়_তাহার অধিবেশন আর কলিকাতায় ন! হইয়া! মফঃস্বলে সহরে সহরে হইতে থাকে । প্রথম অধিবেশন বহরমপুরে--বৈকুগ্ঠনাথ সেনের আহ্বানে, তাহার সভাপতি আনন্দমোহন বস্থু। দ্বিতীয় অধিবেশন কুষ্কনগরে । সেই অধিবেশনে অক্ষয়কুমারের সহিত আমাদের পরিচয় । এই “আমাদের”-_গোৌরবে
১৪৬ জলধর সেনের আত্মজীবনী ; প্ররিশিষ্ট
বহুবচন নহে; তখনই সাঁহিত্যিকদিগের ভিন্ন ভিন্ন দল হইয়াছে-_-এক দলের সদস্য স্থুরেশচন্ত্র সমাজপতি--“জাহিত্য” পত্রের সম্পাদক । আমি সেই দলে আকুষ্ট হইয়াছি-_-আমার প্রথম প্রকাশিত পুস্তক “উচ্ছাস* কবিতাসংগ্রহ স্থরেশচন্দ্রের ছাঁপাখানায় মুদ্রিত হইয়াছে এবং স্ুরেশচন্দ্রের চেষ্টায় কবি নবীনচন্দ্র সেন কবিতাগুলি সম্বন্ধে মত যে পত্রে প্রকাশ করিয়াছিলেন-_-তাহাই ভূমিকাক্ষপে ব্যবহৃত হইয়াছে । কৃষ্ণনগরে অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি মনোমোহন ঘোষ জনগণকে আকুষ্ট করিবার জন্য ব্যবস্থা করিয়াছেন-_ প্রত্যেক প্রস্তাবে প্রস্তাবক ইংরেজীতে ও সমর্থক বা অন্ুমোদক বাঙ্গালায় বক্তৃতা করিবেন। রাজসাহী হইতে আগত প্রতিনিধি অক্ষয়কুমারের বাঙ্গালা বক্তৃতা আমাদিগকে আকুষ্ট করে। তাহাতেই পরিচয় হয়। পরিচয়কালে তিনি “সাহিত্য* পত্রের অন্কতুম লেখক হয়েন। অক্ষয়কুমারের গ্রতিহাঁসিক খ্যাতি তখনও ব্যাপ্তিলাভ করে নাই এবং পরবন্তীকাঁলে বদ্ধুবর শরৎকুমার রায়ের সহিত সম্মিলন- ফলে তিনি এ্তিহাসিক প্রতিভার অনুশীলনের বে সুযোগ লাভ করিয়া- ছিলেন, তাঁহাও তখন ঘটে নাই। কিন্তু তাহার রচনায় নূতন এতিহাসিকের বৈশিষ্ট্য পরিচয় ছিল ।
তিনিই জলধর বাবুর সহিত আমাদের সাহিত্য-গোস্টীর পরিচয় করাইয়া দেন। জলধর বাবুর ছুই চারিটি ভ্রমণ খিবরণে যে সাহিত্যান্থ- রাগের পরিচয় ছিল, তাহা ছাত্র “ঠেঙ্গাইয়া” নষ্ট না হয় ইহ1ই অক্ষয়- কুমারের অভিগ্রেত ছিল এবং সেইজন্ত তিনি একবার জলধর বাবুকে কলিকাতায় “সাহিত্য গোষ্ঠীতে আনয়ন করেন। স্ুুরেশচন্দ্র বিষ্ভাসাগর মহাশয়ের প্রিয় দৌহিত্র ছিলেন_-মাতামহের সামাজিক গুণ পাইয়া তাহার অনুশীলন করিয়াছিলেন । তাহার গৃহে সাহিত্যিক সম্মেলন নিত্য- নৈমিত্তিক ব্যাপার ছিল। নবীনচন্ত্র তাহার গৃহকে “মুক্তিমগ্ূপ” বলিয়।
জলধর সেনের আজুজীবনী £ পরিশিষ্ট ১৪৭
অভিিত করিতেন। দে গৃহে নবীনচন্ত্রের মত প্রবীন ও লব্প্রতি্ঠ সাহিত্যিকও অতিথি হইতেন। রবীন্ত্রনাথও তথায় আলিতেন। আর ধাহাঁরা আনিতেন তীহাদিগের মধ্যে ছিলেন-__রামেজ্্নুন্দর ত্রিষেদী, নিত্যরু বনু, অক্ষয়কুমার বড়াল, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রভৃতি । সেই সাহিত্যতীর্থে অক্ষয়কুমার তাঁহার বন্ধু জলধরবাবুকে আনিলেন । আমরা জলধরবাবুর ব্যবহারে মুগ্ধ হইলাম । তিনি যাহাতে কলিকাতায় আঁপিয়। সাহিত্য সেবায় আত্মনিয়োগ করিতে পারেন, সেই চেষ্টা চলিতে লাগিল।
এই সময় একটি ঘটনায় অক্ষয়কুমারের সহিত "সাহিত্য? গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠতা বঙ্ধিত তইল। তিনি তখন নাটোরের মহারাজা জগদিন্্রনাধ রায়ের প্ররোচনায় মারাঁণী ভবানীর জীবনকথ। ও সেই সময়ের বাঙ্গালার ইত্তিহাঁস লিখিতেছিলেন। কথা ছিল, মহারাজার ব্যয়ে পুস্তকখানি মুদ্রিত হইবে । “হাফটোন”' ছবি তথন নৃতন ; এ দেশে তাহার ব্লকও হয় না, ব্লক ছাঁপিবার স্থব্যবস্থাও হয় নাই। অক্ষয়কুমারের পুত্তকের জন্য পতাঁফটোন ব্লক” ইংলণ্ডে গ্রস্তত করান হয়; তথা হইতে তাহ! ছাঁপাইয়া আনা হইবে। এইবপ অবস্থায় “কাঙ্গাল” হরিনাথের মৃত হইল এবং অক্ষয়কুমার তাহার সম্বন্ধে যে প্রবন্ধ লিখিলেন, তাহ। সাহিত্যে” প্রকাশিত হইল (বৈশাখ, ১৩০৩ বঙ্গীৰ )। সেই প্রবন্ধে লিখিত হইয়াছিল যে, এগ্রামবার্তা-প্রকাশিক।” নামক ত্বাহার সপ্তাহিক পত্রে নির্ভীকভাবে লোকের ক্রটির উল্লেখ করায় হরিনাথের বিরুদ্ধে জিলার ম্যাজিষ্রেটে ও পরগণার জমিদার উভয়েই “খড়ীহত্ত” হইয়া উঠেন। ১২৮৫ বঙ্গান্ে হরিনাথ জমিদারের অত্যাচার সম্বন্ধে অক্ষয়কুমারকে থে পত্র লিখিয়াছেন-__তাহা বেদনার্ভ হৃদয়ের শোণিতে লিখিত বলিলেও অতুযুক্তি হয় না। তাহা উদ্ধত করিয়া অক্ষয়কুমার প্রবন্ধের উপসংহারে লিখিয়াছিলেন £
১৪৮ জলধর সেনের আত্মজীবনী : পরিশিষ্ট
“যে জমিদারের অত্যাচারে হরিনাথ এরূপ সকরুণ আর্তনাদ করিয়া গিয়াছেন, কোনও স্থানে তাহার নামোল্লেখ করেন নাই। আকারে ইজিতে যাহা জানাইয়া গিয়াছেন, তাহাতে ধাহাদিগের কৌতুহল দূর হইবে না, আমর! তাহাদিগের কৌতৃছল চরিতার্থ করিতে অসমর্থ। হরিনাথ ধাঁহাকে লক্ষ্য করিয়া স্থতীব্র সমালোচনায় রাজদ্বারে পল্লীচিত্র বর্ণনা করিয়! গিয্াছেন, তিনি এ দেশের সাহিত্য-সংসাঁরে এবং ধর্ম- , জগতে চিরপরিচিত, তাহার নামোল্লেখ করিতে হৃদয় ব্যথিত হয়ঃ লেখনী অবসন্ন হইয়। পড়ে 1৮
এই মন্তব্যে জমিদারের বংশধরগণ অক্ষয়কুমারের প্রতি রুষ্ট তইয়া উঠেন) কিন্ত মন্তবোর প্রতিবাঁদ ন! করিয়।৷ 'অন্য পথ অবলম্বন করেন । তাহাঁদিগের সহিত মহারাজ জগদিন্্রনাথ রায়ের বিশেষ ঘনিষ্ঠত1 ছিল। তাঁহাদিগের অনুরোধে মহারাজ! মভারাণী ভবানীর চরিত ছাঁপাইবাঁর ভার ত্যাগ করিলেন। তাহাতে এ পুস্তক ক্রমশ: “সাহিত্যে” প্রকাশিত হয়। হাফটোন ব্লক ছাপাইবার সুব্যবস্থা না থাঁকায় সেগুলির ছাপা ভালও হয় নাই।
সাহিত্যের যে সংখ্যায় অক্ষয়কুমারের পূর্বোক্ত প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়, তাহাতেই অক্ষয়কুমারে মীরজাফর সম্বন্ধীয় রচনার প্রথমাঁংশ ও জলধর বাবুর “গেঙ্গোত্রীর পথে” প্রবন্ধের একাংশ প্রকাশিত হয় এবং তাহাতে হরিনাথের উল্লেথ করা হয়।
জলধর বাবুকে কলিকাতায় আনিয়া সাহিত্য সাধনার স্থযোগদানের যে চেষ্টা হইতেছিল, তাহা সফল ভইল। প্রধানতঃ স্ুরেশচন্দ্রের চেষ্টায় তিনি 'বস্থুমতী' সপ্তাহিক পত্রের সম্পাদকীয় বিভাগে স্কানলাভ করিলেন। 'বস্থমতীর? প্রবর্তক উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় হুরেশচন্দ্রের বন্ধু ছিলেন এবং তিনিই “সাহিত্য” গ্রতিঠিত করিয়া উহা সম্পাদক সুরেশচন্কে প্রদান
জলধর দেনের আত্মজীবনী £ পরিশিষ্ট ১৪৪
করেন । উপেন্দ্রনাথ পরমহংস রামকষ্ণের শিগ্ ছিলেন । তিনি বনু লোককে তাহার প্রতিষ্ঠানে গ্রহণ করিতে পারিলেই যেন আনন্দলাঁভ করিতেন।
জলধরবাবু কলিকাতায় আসিলে সুরেশচন্্রের গ্রহেই সাদরে গৃহীত হইলেন এবং দীর্ধকাঁল-_অর্থাৎ কলিকাতায় বাড়ী ভাড়। করিয়! ্ত্ী-পুত্র-পরিব!র আনিবার পূর্ব পধ্যস্ত সুরেশ বাবুর গৃহেই ছিলেন।
সেই সময় যে তাহার সহিত আমাদিগের বিশেষ ঘনিষ্ঠতা জন্মে তাহা বলাই বাহুল্য ।
তখন জলধরবাবুর বন্ছ ভ্রমণ-বুত্তাস্ত গ্রকাঁশিত হয়।
সেই সময় হইতে তাহার মৃত্যুকাল পর্য্স্ত জলধর বাবুর সহিত আমার বন্ধুত্ব কথনও ক্ষুন্ন হয় নাই। এমন কি যখন তিনি জরাজনিত দৌর্ব্বল্য কাতর-তীাহার কথা “কাঁণে ত অনেকদিন থেকেই ভাল শুনি না এখন আবার চোখেও ভাল দেখিতে পাই না”--তখন তিনি “ভারতবর্ষের, সম্পাদন-কার্য্যে সহকারী মনেনীত করিয়া দ্রিবার ভার আমাকেই দিয়াছিলেন।
বল! প্রয়োজন, যে দীর্ঘকাল আনাঁদের এই বন্ধুত্ব অক্ষু্ণ ছিল, তাহার মধ্যে বাঙ্গালার সাহিত্যক্ষেত্রে অনেক দলের ভাঙ্গাগড়। হইয়াছিল এবং দলাদলির প্রভাব যে সাহিত্যে পতিত ও অনুভূত হয় নাই, তাহা! নহে। রবীন্দ্রনাথ ও তাহার ভক্তর্দিগের সহিত আমার ও “সাহিত্য” গোঠীর বিবাদ, এবং সেই বিবাদের ফলে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের পপ্রদ্দীপ” ত্যাগ ও “প্রবাসী” প্রবর্তন ; বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের কাধ্যালয় স্থানান্তরিত করায় বিবাদ ও ফলে ধনীর আনুকুল্যে “সাহিত্য সভা” প্রতিষ্ঠা ; দ্বিজেন্্লালের সহিত রবীন্দ্রনাথের মতভেদ ও তদজনিত তিক্ততার উদ্তভব--এইরূপ নানা ঘটনা সেই সময়ের সাহিত্যক্ষেত্রে ঘটিয়াছিল। লক্ষ্য করিবার বিষয়--এ সকল
১৫০ জলধর সেনের আঁয্পলীবনী 2 পরিশিষ্ট
জলধরবাবুকে বিচলিত করিতে পারে নাই--ভিন্ন ভিন্ন--এমন কি বিবদমাঁন--দলেও তাঁহার আদর ছিল--মতীস্তর ও মনাস্তর যেন তাকে স্পর্শ করে নাই। তিনি সাহিত্যিক মাত্রকেই ভালবাসিতেন ও আদর করিতেন; মনে করিতেন, সাহিত্য সকল দ্বন্দের উদ্ধে অবস্থিত ।
বস্ম্তীতে” কিছুদিন কাজ করিবার পরে তিনি অল্পদিনের জন্য “বঙ্গবাসীতে” (সম্পাদকীয় বিভাগে ) কাজ করেন। সে-ও স্ুুরেশচন্দ্ সমাজপতির চেষ্টায় ।
কিন্তু জলধরবাবুকে সংবাদপত্রের কাজের জন্য তাগর বন্ধুরা কলিকাতায় আনেন নাই। যে সময়ের কথা বলিতেছি, তখনও বোধহয়, জঙ্গধরবাবুর ভ্রমণকাহিনীর কোন পুস্তক প্রকাশিত হয়, নাই ; স্থতরাং সেদিক হইতে তাহার কোন আষের উপাঁয় ছিল না। আবার মাসিকপত্রের লেখকরা প্রায় কেহই পারিশ্রমিক চাহিতেন না। অর্থাৎ মাসিকপত্রের জন্ত রচনা তথনও “সখের” ছিল। যদিও বঙ্কিমচন্দ্র লিখিয়াছেন (তাহার আত্মচরিতের পাওুলিপিতে ) যে, “বজদর্শনের' লেখকগণ রচনাৰ জন্য পারিশ্রম চীহিতেন ( অক্ষয়চন্দ্র সরকার সে জন্য “উপযুক্ত” পারিশ্রমিক দাবী করিয়াছিলেন ) তথাপি অধিকাংশ লেখকই তখনও পারিশ্রমিক লইতেন না-সকলকে পারিশ্রমিক দেওয়া সম্ভবও হইত না। আমার যতদূর মনে পড়ে জলধরবাবু যখন কলিকাতায় আসেন, তখন “সাহিত্যের লেখকদিগের মধ্যে মাত্র তিন জনকে পারিশ্রমিক দেওয়া হইত- চন্দ্রশেখর মুখোপাধ্যায়, সখারাম গণেশ দেউস্কর ও দীনেন্্রকুমীর রায়। সেই- জন্তই অর্থের প্রয়োজনে জলধবাবুকে সংবাদপত্রে কাজ করিতে হইয়াছিল। সে কাজ তাহার রুটিপ্রদ হয় হয় নাই--যে সকল গুণ
জলধর সেনের আত্মজীবনী : পরিশিষ্ট ১৫১
থাকিলে সংবাদপত্র সেবায় সাফল্য লাভ করা যায়, সে সকলেরও অন্গণীলন তিনি কথন করেন নাই।
জলধরবাবুর পুস্তক প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তাহার পক্ষে সংবাদপত্র সেবা ত্যাগ করা সম্ভব হয়। তখন তিনি বাড়ী ভাড়া করিয়া সপরিবারে কলিকাতায় বাস করিতে আরম্ভ করেন। পরিণত বয়সে তিনি কুমারখালীতে জমী লইয়া বাড়ী করিয়াছিলেন। তাহা সম্ভোগ কর! তাহার ভাগ্যে হয় নাই। এখন কুমারখালী পাকিস্তানে ।
প্রসিদ্ধ পুস্তক-প্রকাশক গুরুদ্দাস চট্টোপাধ্যায় প্রকাশক হইয়! জলধরবাবুর সহিত তাহার হিতৈষী অভিভাবকের মত ব্যবহার করিতেন। একবার জলধরবাবু পৃশ্তক বিক্রয়ে তাহার প্রাপ্য আনিতে যাইলে-যখন তাহাকে হিসাব ও প্রাপ্য টাকা দেওয়া হইল, তখন গুরুদাসবাবু তাহার প্রিয় কর্মচারীকে ডাকিয়া বপিলেন, “অনন্ত, আন ত।” অনন্ত একগাছি স্বর্হার আনিলে গুরুদাসবাবু তাহ! জলধরবাবুকে দিয়া বলিলেন, “এটি বৌমাকে দিবেন।৮ সেই অপ্রত্যাশিত ব্যবহারে জলধরবাবু কৃতজ্ঞতায় অভিভূত হইয়।৷ পড়িলেন। গুরুদালবাবু মৃদুত্বতাব ছিলেন--জলধরবাবুকে বলিলেন, “সাবধানে নিয়ে বা'বেন--পথে যেন না হারান ।” |
গুরুদাসবাবুর দোকান হইতে জলধরবাবু ধে টাক পাইতেন তাহাতে তাহার সংসারযাত্রার ব্যয়-নির্বাহ হইত। সংসারও বড় ছিল ।
সেই সময় গুরুদাসবাবুর জোষ্ঠ পুত্র হরিদাসবাবুর নহিত জলধরবাবুর যে পরিচয় হয়, তাহ। ঘনিষ্ঠতায়-_আত্মীয়তায় পরিণত হয়। অরদ্ধেয় বন্ধু দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সহিত পরামর্শ করিয়া হরিদাসবাবু 'ভারতবর্ষ* মাদিকপত্র প্রচারের আয়োজন করেন। তখন বঙ্গালা .মাসিকপত্রের
১৫২ জলধর সেনের আত্মজীবনী £ পরিশিষ্ট
মধ্যে ভারতী” নানা পরিবর্তনের ব। বিপর্যয়ের মধ্য দিয় কোনরূপে অস্তিত্ব রক্ষা করিতেছে; স্থুরেশচন্দ্রের “সাহিত্য'_ রবীন্দ্রনাথের “সাধনার মত লুপ্ত হইয়া যায় নাই বটে, কিন্তু পূর্ধবগৌরবহীন। প্রাদীপে* আমার সম্বন্ধে গ্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের একটি কবিতা প্রকাশিত হইবার ব্যবস্থা হওয়ায় রামানন্দ চট্রোপাধ্যার "প্রদীপের সম্পারদন-ভার ত্যাগ করিয়া 'প্রবাসা” প্রবস্তিত করিয়াছেন । “ভারতবর্ষকে” নৃতন ভাঁবে- পূর্ণাগ ও উৎকষ্ট সাহিত্যপত্ররূপে প্রকাশ করাই দ্বিজেন্্রলালের ও হরিদাসবাবুর অভিগ্রেত ছিল। তাহার সব আয্োেজন যখন সম্পূর্ণ, তখন অতাঁকত ভাবে ধিজেন্দ্রলালের লোকাস্তর ঘটে। হরিদাসবাবু তখন “ভারতবর্ষ আদশীন্গরূপভাঁবে প্রকাশের জন্য সচেষ্ট হইলেন। একাধিক সম্পাদক পরিবর্তনের পরে জলধরবাবুকেই সে ভার প্রদান করা হয়। মৃত্যুদিন পর্যন্ত জলধরবাবু দেই ভার বহন করিয়। গিয়াছিলেন। “ভারতবর্ষ, তাহার প্রিয় ও আশ্রয় ছিল। শারীরিক অক্ষমতাহেতু যখন তাহার পক্ষে একক সে ভার বহন কর! দুঃসাধ্য হইয়া উঠিয়াছিল, তখন তিনি যাহা করিয়াছিলেন, তাহার উল্লেখ পূর্বেই করিয়াছি।
জলধরবাবু ভ্রমণ-ৃত্বন্ত, উপন্যাস, ছোট গল্প, নান! বিষয়ে প্রবন্ধ অনেক লিখিয়। গিয়াছেন। সে সকলের মধ্যে তাহার ভ্রমণ-বৃত্তান্তই তাহাকে সাহিত্যজগতে স্মরণীয় করিয়া রাখিবে। বাঙ্গালায় থে বহু ভ্রমণ-বৃন্তাত্ত প্রকাঁশিত হইয়াছে, তাহাতে সন্দেহ নাই। কিন্ত অলধরবাধু যখন সাহিত্যের সেই বিভাগে কাজ আরম্ভ করেন, তথন তাহা বিশেষ পরিচিত নহে। যৌবনে তিনি যে সকল স্থানে গিয়াছিলেন, সে সকল সম্বন্ধে তখনও অধিক বিবরণ লিখিত হয় নাই। বহুদিন তিনি সেই সকল কথ লইয়া রচনা করিয়াছেন ।
জলধর সেনের আন্মজীবনী $ পরিশিষ্ট ১৪৩
মেকলে জন বানিয়ান সম্বন্ধে যাহ! লিখিয়াছিলেন, তাহাই জলধরবাবুর পরবর্তী ভ্রমণ-বৃত্বান্তের কথায় মনে হয় ঃ
“পুত 00201010860 00 ৬/০1] 006 £০10-26103 1) 1980 018. ০০৬০:০১ 270 00০ 0125৬ 2০0 5606৬ 0558063১00৮ 10650 %/10) 0106 500) 6836 200. 111 00169 5101) 2১07 09770 93 ৮1761 (115 0:608003 501] 23 3081] 1709 08 61. ৬/1018 38100693 ৬/1)101) 1666 211 0072)066101010 20918110025
জলধরবাবু যখন বাঙ্গালা সাহিত্যের সেবায় নিযুক্ত তথন বনু প্রতিভাবান সাঁইত্যিক খ্যাতি লাভ করিয়া গিয়াছেন। তখন বস্ষিমচন্ত্ বিদায় লইয়াছেন--অক্ষয়চন্ত্র সরকার প্রমুখ পাহিত্যিকরাও আর সোতৎসাঁহে সাহিত্যসেবা করিতেছেন না। কিন্ত রবীন্ত্রাথ হইতে শরতচন্ত্র পর্যন্ত ধাহাদ্দিগের কীত্তি অক্ষয় তাহারা দ্িকপালের মত আপিয়াছেন। তাঙাদ্দিগের সকলেরই সহিত জলধরবাবুর ঘনিষ্ঠতা ছিল। শরৎচন্দ্র “দাদা” জলধরকে অগ্রজের মতই ভাঁলবাসিতেন। তিনি নবান ও প্রবীণ উভয় লেখক-সম্প্রদায়ের মধ্যে দীর্ঘকাল সংযোগসেতু ছিলেন বলিলে অসঙ্গত হয় না। সেই সংযোগ-সাধন জন্য “রবিবাসর সাহিত্য প্রতিষ্ঠান” প্রতিষ্ঠিত হয়--তিমি তাহার সভাপতিই ছিলেন না- প্রাণশ্বরূপ ছিলেন।
জলধরবাবুর নিয়মাচ্ছগ ভাব ও সময় সম্বন্ধে লক্ষ্য বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল। ঠিক সময়ে তিনি প্রতিদিন “ভারতবর্ষ কাধ্যালয়ে আসিতেন-_সব সভাতে, দমিতিতে ও সামাজিক অনুষ্ঠানে যাইতেন।
সমসাময়িক সাহিত্য-সমাঁজে তাহার একটি বিশিষ্ট স্থান ছিল। তিনি তাহার অবিচলিত সাহিত্যান্গরাগের ও সুমধুর ব্যবহারের জন্ত সে স্থান লাভ করিয়াছিলেন এবং তাঁহার গৌরব বর্ধিত করিয়াছিলেন।
১৫৪ জলধর সেনের আত্মজীবনী £ পরিশিষ্ট
আজ তাহার সমসাময়িক ও বন্ধুদিগের মধ্যে প্রায় সকলেরই তিরোভাঁব হইয়াছে । আজ তীহাদিগের ও তাহাদিগের সময়ের বাঙ্গাল! সাহিত্য-সমাজের কথা স্মরণ করিলে আমার মনে হয়--- আমি যেন ভ্রমি এক! রঙ্গমঞ্চপ?রে ; নিবেছে আলোক তার, শুকায়েছে ফুলহার ; সঙ্গী যাঁরা ছিল--গেছে কোন্ দূরাস্তরে । বাঙ্গালার' লাহিত্য-সমাঁজে জলধরবাবু একটি স্বতন্ত্র আদর্শ রাখিয়া গিয়াছেন। সে আদর্শ গান্ভীর্যের সারল্যের প্রেমের ও নিষ্ঠার আদর্শ। সে আদর্শের প্রয়োজন আজ আমরা সাহিত্যকরা বিশেষভাবেই অনুভব করিতেছি ।